
ভারতের সংঘাত-বিক্ষুব্ধ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মণিপুরে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার এই পদক্ষেপ নিল।
প্রায় ২১ মাসের জাতিগত সংঘাতে মণিপুরে ২৫০ জনের বেশি মানুষ মারা যান। শত শত বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। স্থানচ্যুত হন হাজার হাজার মানুষ।
এই পরিস্থিতিতে গত রবিবার সহিংসতাপ্রবণ রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং পদত্যাগ করেন। পরের দিন সোমবার রাজ্যের বিধানসভায় সম্ভাব্য অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি হওয়ার আগেই বিজেপির এই মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়ান। বিজেপির বিধায়করাই অনাস্থা প্রস্তাবটি উত্থাপন করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
হিন্দুস্থান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, গতকাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে দেখা করতে দিল্লিতে তলব করা হয়েছিল বীরেন সিংকে। মন্ত্রীর বাসভবনে দুই নেতার মধ্যে ১৫ মিনিটের একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে বীরেনের সঙ্গে বিজেপি এবং নাগা পিপলস ফ্রন্টের (এনপিএফ) ১৪ জন বিধায়ক ছিলেন। বৈঠক থেকে বেরিয়ে বীরেন সিং সাংবাদিকদের জানান, তিনি মণিপুরে ফিরে পদত্যাগ করবেন। বিকেলে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে ফেরার পর রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন বীরেন সিং। সে সময় তার সঙ্গে মণিপুরে বিজেপির দায়িত্বে থাকা ওড়িশার নেতা সম্বিত পাত্র এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি এ শারদা দেবী ছিলেন।
পদত্যাগপত্রে বীরেন সিং লিখেছেন, তিনি প্রত্যেক মণিপুরির স্বার্থ রক্ষার জন্য সময়মতো পদক্ষেপ নিয়েছেন। উন্নয়নমূলক কাজ ও বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।
গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিজ্ঞপ্তিতে মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর বলেছেন, ‘আমি মণিপুরের রাজ্যপালের থেকে রিপোর্ট পেয়েছি। ওই রিপোর্ট দেখে এবং অন্য তথ্যগুলোর ভিত্তিতে আমার মনে হয়েছে, সংবিধান অনুসারে সেখানে সরকার চালানো সম্ভব হচ্ছে না।’
ভারতের স্বাধীনতা-পরবর্তী ইতিহাসে বীরেন সিংয়ের সময়কালকে মণিপুরের অন্যতম রক্তক্ষয়ী সময় হিসেবে চিহ্নিত করতে শুরু করেছে ভারতের সাংবাদিক ও ইতিহাসবিদদের একাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, বীরেন সিংহের পদত্যাগ মণিপুরের চলমান সংকটের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।