
ইউরোপের দেশগুলোকে লক্ষ্য করে কড়া বক্তব্য রেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। তিনি বলেছেন, মহাদেশটির হুমকি রাশিয়া বা চীন নয়, বরং তারা ‘নিজেরাই’। এরই মধ্যে তার বক্তব্য নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে গত শুক্রবার বক্তব্য রাখার সময় ওই আক্রমণাত্মক মন্তব্যগুলো করেন তিনি। বক্তব্য চলাকালে হলজুড়ে ছিল নীরবতা। পরে সম্মেলনে যোগ দেওয়া রাজনীতিবিদরা এর নিন্দা জানান। জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টরিয়াস বলেছেন ভ্যান্স যা বলেছেন তা ‘গ্রহণযোগ্য’ নয়।
ইউরোপের নেতৃস্থানীয়রা ধারণা করেছিলেন যে, ভ্যান্স ইউক্রেন যুদ্ধের নিরসনের বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। কিন্তু তার বক্তব্যের অল্প অংশজুড়ে ছিল ওই প্রসঙ্গ। তিনি প্রায় পুরো বক্তব্যটাই দিয়েছেন ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোর সরকারকে লক্ষ্য করে। ভ্যান্সের অভিযোগগুলোর মধ্যে ছিল, মূল্যবোধ থেকে সরে আসা এবং অভিবাসন ও মুক্ত মতের বিষয়ে ভোটারদের উদ্বেগকে উপেক্ষা করা। ট্রাম্প প্রশাসনের চিন্তাধারা তুলে ধরতে গিয়ে ভ্যান্স বলেছেন যে, ‘ইউরোপকে তার নিজের নিরাপত্তার জন্য বড় পদক্ষেপ নিতে হবে।’
ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে ভ্যান্স বলেছেন, একটি যৌক্তিক সমঝোতায় পৌঁছানো যেতে পারে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছেন। খুব বেশি কিছু না বললেও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে তার।
ভ্যান্স নিজ বক্তব্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধিদের মুক্তমত দমন করার জন্য দায়ী করেন। পাশাপাশি তিনি ব্যাপক অভিবাসনের জন্য ইউরোপকে দায়ী করেন। ইউরোপের নেতারা ‘কিছু মৌলিক মূল্যবোধ’ থেকে সরে এসেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ভ্যান্স যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ তোলেন। বক্তব্যে এক মামলার প্রসঙ্গ টেনে আনেন। ওই মামলায় একটি গর্ভপাত ক্লিনিকের বাইরে প্রার্থনা করে ১৫০ মিটার সেফ জোনের নিয়ম লঙ্ঘন করার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা।
২০২২ সালের অক্টোবরে সেফ জোনের বিষয়টি চালু হয়। এতে গর্ভপাতের পক্ষে বা বিপক্ষে যেকোনো তৎপরতা, প্রতিবাদ, হয়রানি কিংবা নজরদারি নিষিদ্ধ করা হয়। তবে ভ্যান্স দাবি করেন, ‘ব্রিটেনের ধর্মপালনকারীদের মৌলিক স্বাধীনতা’ হুমকির মুখে পড়েছে ওই মামলার ঘটনায়।
জার্মানিতে জাতীয় নির্বাচনের আর খুব বেশিদিন বাকি নেই। এরকম একটি সময়ে দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কট্টর ডানপন্থি অলটারনেটিভ ফর জার্মানিকে (এএফডি) সহযোগিতা না করার বিষয় নিয়ে যে তীব্র বিতর্ক হচ্ছে, তা নিয়ে কথা বলেছেন ভ্যান্স।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, নাৎসিদের পরাজয়ের পর গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের কয়েক দশক ধরে দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একেবারে ডানপন্থি দলগুলোর সঙ্গে কাজ না করার বিষয়ে একটি ঐকমত্য ছিল।
তবে ভ্যান্স বলেছেন, গণতন্ত্র এমন একটি নীতি যেখানে, মানুষের কণ্ঠস্বর গুরুত্বপূর্ণ। দেওয়াল তৈরির কোনো জায়গা নেই। আপনি হয় নীতি মানবেন কিংবা মানবেন না। এদিকে, এএফডির চ্যান্সেলর প্রার্থী অ্যালিস ভাইডেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ভ্যান্সের বক্তব্যের একাংশ শেয়ার করে লিখেছেন ‘চমৎকার’। পরে দুইজন সাক্ষাৎ করেছেন বলেও খবর এসেছে গণমাধ্যমে।
রোমানিয়ার নির্বাচনের কথাও উঠে আসে ভ্যান্সের বক্তব্যে। গত ডিসেম্বরে ওই দেশের নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়। কিছু নথি থেকে জানা গিয়েছিল, নির্বাচনটি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের শিকার হয়েছে। ভ্যান্স সম্মেলনে বলেন, ‘যদি আপনাদের গণতন্ত্র বিদেশি কোনো দেশের ১ লাখ ডলারের ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের কারণে ধ্বংস হয়, তাহলে সেটি আসলে শুরু থেকেই যথেষ্ট শক্তিশালী নয়।’
ভ্যান্সের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া
জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টরিয়াস তার বক্তব্যে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট পুরো ইউরোপের গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন এবং আমি যদি ঠিকমতো বুঝে থাকি, তাহলে তিনি ইউরোপের একাংশ যেখানে স্বৈরতন্ত্র চলছে তার সঙ্গে তুলনা করেছেন- এটি অগ্রহণযোগ্য।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কাজা কাল্লাস ভ্যান্সের বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেছেন, ভাষণ শুনে মনে হচ্ছিল ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র লড়াই শুরু করতে চাইছে। রাশিয়ায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাইকেল ম্যাকফাউল বলেছেন, ভ্যান্সের মন্তব্য ছিল ‘অপমানজনক’ এবং ‘অভিজ্ঞতার দিক থেকে অসত্য’। সূত্র: বিবিসি