
ওয়াশিংটন সফরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুজনের আলোচনায় উঠে এসেছিল বাণিজ্য, শুল্ক, অভিবাসী, পারস্পরিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো প্রযুক্তিতেও যৌথভাবে উৎপাদন শুরু করতে সম্মতি প্রকাশ করেছে দুই দেশ।
বৈঠকের পর যে যৌথ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্ন করেন ভারতীয় এক সাংবাদিক।
তিনি সরাসরি জানতে চান, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপ স্টেটের’ ভূমিকা প্রসঙ্গে।
ট্রাম্প সাফ বলে দেন, ‘সেখানে আমাদের ডিপ স্টেটের কোনো ভূমিকা ছিল না।’
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, বাংলাদেশ নিয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি এবং ভারত এই পরিস্থিতিকে যেভাবে দেখছে, সে বিষয়ে নরেন্দ্র মোদি তার মতামত ও উদ্বেগের কথা ট্রাম্পকে জানিয়েছেন।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে ‘ডিপ স্টেট’ বলতে ছায়া রাষ্ট্রকে বোঝানো হয়। এটিকে সাধারণত সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারি প্রভাবশালী ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের কথিত গোপন নেটওয়ার্কও মনে করা হয়, যেটিতে এফবিআই ও সিআইএর কর্মকর্তারাও থাকেন। রাজনৈতিক সরকারের সমান্তরালে নিজেদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে এ ধরনের নেটওয়ার্ক কাজ করার চেষ্টা করে।
ট্রাম্প-মোদি বৈঠকে আরও কিছু বিষয় উঠে এসেছে। এর মধ্যে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের তেল-গ্যাস কিনতে রাজি হয়েছে। এ ছাড়া দেশটির কাছ থেকে প্রতিরক্ষাবিষয়ক সামগ্রীও কিনবে।
দুই দেশের মধ্যে প্রাথমিক বাণিজ্য চুক্তি এবং শুল্ক নিয়ে অচলাবস্থা নিরসনের জন্যও আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসার ক্ষেত্রে ভারত বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির ওপর শুল্ক আরোপকারী দেশগুলোর পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন তিনি।
তবে শুল্ক নিয়ে উত্তেজনা কমাতে এরই মধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। নিজেদের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের খামারজাত পণ্যের প্রবেশাধিকার বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে আগেই। ভারতের এসব সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ওয়াশিংটন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতিকেও ‘স্বাগত’ জানিয়েছেন মোদি। পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক কমাতে, সামরিক যুদ্ধবিমান কিনতে এবং যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী নথিহীন ভারতীয় নাগরিকদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ভারত প্রস্তুত রয়েছে। ট্রাম্প ভারতের কাছে এফ৩৫ বিমান বিক্রি করতে পারেন। এটি বাদেও তেল ও গ্যাস ভারতের কাছে বিক্রি প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘ওদের (ভারতের) এটা প্রয়োজন এবং আমাদের কাছে এটা আছে।’
ট্রাম্প-মোদি বৈঠকে স্থান পেয়েছিল অভিবাসন ইস্যুও। এই বিষয়ে ভারতের কাছ থেকে আরও সাহায্য চেয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে বিপুলসংখ্যক ভারতীয় অবৈধ অভিবাসী আছেন বলে অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প।
অভিবাসন ইস্যুতে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহযোগিতা আরও মজবুত করে অবৈধ অভিবাসন ও মানব পাচার মোকাবিলা করতে সম্মত হয়েছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। সূত্র: বিবিসি।