যুক্তরাজ্যের লেবারদলীয় এমপি টিউলিপ সিদ্দিক অভিযোগ করে বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তাকে টার্গেট করে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির ভিত্তিহীন প্রচারণা চালাচ্ছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে লেখা এক চিঠিতে তিনি এই অভিযোগ করেন।
টিউলিপ বলেন, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা একেবারেই ‘মিথ্যা ও অযৌক্তিক’। তিনি অভিযোগ করেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক তদন্ত করা হয়নি। কিন্তু তার আগেই মিডিয়ায় তার দুর্নীতি নিয়ে ব্রিফ করা হয়েছে।
টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে গত জানুয়ারিতে তিনি যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার) পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
লন্ডনের দ্য হ্যাম্পস্টিড ও হাইগেট এলাকার এমপি টিউলিপ তখন জোর দিয়ে বলেন, তিনি কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন। তবে সরকার যাতে কোনো বেকায়দায় না পড়ে, সে জন্য তিনি মিনিস্টার পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর ব্রিটিশ সরকারের নৈতিকতা রক্ষাবিষয়ক কমিটির উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাসের কমিটির মুখোমুখি হন টিউলিপ সিদ্দিক। পরে স্যার লরি ম্যাগনাস সরকারের কাছে একটি রিপোর্ট পেশ করেন। সেখানে তিনি লিখেন ‘দুর্নীতির অভিযোগের সঙ্গে টিউলিপের কোনো যোগসূত্র বা অসদুপায় অবলম্বনের তথ্য পাওয়া যায়নি।’ তবে তিনি সেখানে উল্লেখ করেন, ‘এসব বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের আগে থেকে আরও বেশি সতর্ক না হওয়া ছিল দুঃখজনক। তা হলে তাকে সুনামহানির ঝুঁকির মুখে পড়তে হতো না।’
গত জুলাই-আগস্টের ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিউলিপ সিদ্দিকের খালা।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ডের অর্থ তছরুপের অভিযোগ এনেছে। দুদক সেই অভিযোগ তদন্ত করছে। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ববি হাজ্জাজের কয়েক দফা অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক বিষয়টির তদন্ত করছে।
আদালতের নথিপত্রে বিবিসি দেখতে পেয়েছে, ববি হাজ্জাজ অভিযোগ করেছেন, ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে নতুন পরমাণু বিদ্যুৎ প্লান্টের চুক্তির মধ্যস্থতা করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। আর এর পরই এই পাওয়ার প্লান্টের নির্মাণ ব্যয় অনেক বেড়ে যায়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে পাঠানো চিঠিতে টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবী স্টিফেনসন হারউড বলেছেন, তার মক্কেল (টিউলিপ) পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তির সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নন। যদিও ২০১৩ সালে মস্কোয় চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাকে দেখা গেছে। তিনি বলেন, সরকারপ্রধানদের রাষ্ট্রীয় সফরে আত্মীয়স্বজনদের আমন্ত্রণ জানানো বা সফরসঙ্গী করা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। অভিযোগ করা আর্থিক অনিয়মের ব্যাপারে টিউলিপ কোনোভাবেই অবগত ছিলেন না।
চিঠিতে বলা হয়েছে, লন্ডনের কিংস ক্রসে দুর্নীতির মাধ্যমে টিউলিপ সিদ্দিকের একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা অর্জনের কথা বলা হয়েছে। তিনি ফ্ল্যাটটি উপহার হিসেবে পেয়েছেন ২০০৪ সালে। আর পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে এর ১০ বছর পর। পরমাণু প্লান্ট চুক্তির সুফল হিসেবে তিনি ওই ফ্ল্যাট পেয়েছেন এটা বলা একেবারেই অবিশ্বাস্য। এটি কোনোভাবেই সত্যি হতে পারে না।
স্যার লরি তার তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন, ফ্ল্যাটটি পাওয়ার পর দীর্ঘ সময় টিউলিপ সিদ্দিক মালিকানার উৎস সম্পর্কে অসচেতন ছিলেন। তিনি এমন একটি ধারণার মধ্যে আচ্ছন্ন ছিলেন যে, তার বাবাই তার ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন। তবে টিউলিপ মন্ত্রী হওয়ার পর এ সংক্রান্ত রেকর্ড সংশোধন করেন। এটাকে স্যার লরি ‘দুর্ভাগ্যজনক ভুল বোঝাবুঝি’ বলে উল্লেখ করেছেন রিপোর্টে।
আইনজীবী স্টিফেনসন হারউড দুদককে লেখা চিঠিতে বলেছেন, টিউলিপকে ওই ফ্ল্যাটটি উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন আব্দুল মোতালিফ, যাকে টিউলিপের পারিবারিক বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সূত্র: বিবিসি