
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা নতুন দিকে মোড় নিয়েছে। এতদিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি নন। তবে এবার ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে জানানো হলো, প্রয়োজনে জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় বসবেন পুতিন।
যুদ্ধ অবসানের পথ খুঁজতে মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে আলোচনায় বসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। আলোচনায় রাশিয়ার পক্ষ থেকে অংশ নেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ, বিদেশ-নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ এবং রাশিয়ার সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের প্রধান কিরিল দিমিত্রিয়েভ।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উপস্থিত হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ।
এ ছাড়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল-সৌদ এবং দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মুয়াসেদ বিন মোহাম্মেদ আল-আইবান।
৪ ঘণ্টার আলোচনা শেষে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল ওয়ানকে কিরিল দিমিত্রিয়েভ জানান, অত্যন্ত ইতিবাচক ও গঠনমূলক আলোচনা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাইডেন প্রশাসনের মতো কিছু হয়নি, তারা (বাইডেন সরকার) রাশিয়ার অবস্থান শোনার কখনো চেষ্টাই করেনি। এটি ছিল সংলাপ শুরুর, রাশিয়ার অবস্থান বোঝার এবং আমাদের আগ্রহের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার অত্যন্ত স্পষ্ট প্রচেষ্টা।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক পয়েন্ট নিয়ে আমরা সম্মত হয়েছি। আমরা একে অন্যকে আরও ভালোভাবে চিনেছি। নিজেদের এখন আরও ভালোভাবে বুঝতে পারছি।’
অন্যদিকে বিদেশ-নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ বলেন, ‘মন্দ হয়নি… তবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া ঘনিষ্ঠ হচ্ছে কি না, তা বলা কঠিন। আমরা সেগুলো নিয়েই আলাপ করেছি। আমরা একে অন্যের স্বার্থের ইস্যুতে ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তুলতে আলোচনার বিষয়ে সম্মত হয়েছি। মস্কো ও ওয়াশিংটন উভয়ই এ বিষয়ে আগ্রহী।’
বৈঠক শুরু হওয়ার আগে দুই পক্ষের কর্মকর্তাদের নীরবে বসে থাকতে দেখা যায়। বিবিসির এক সাংবাদিক এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, তারা ইউক্রেনকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন কি না এবং রাশিয়ার কাছ থেকে কী ধরনের ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে? কোনো প্রশ্নেরই উত্তর দেননি তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, মঙ্গলবারের বৈঠকটি দরকষাকষির নয়, বরং রাশিয়া যুদ্ধবিরতির বিষয়টিকে আসলেও গুরুত্ব দিচ্ছে কি না তা দেখার বিষয়। অন্যদিকে মস্কোর কাছে বৈঠকের আগে অগ্রাধিকার পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকরণের ইস্যুটি।
এদিকে, সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘যুদ্ধ বন্ধের জন্য প্রয়োজন হলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় বসবেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।’ পেসকভ আরও জানান, ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিতে চাইলে তা নিয়ে আপত্তি নেই তাদের। কিন্তু দেশটি কোনো সামরিক জোটে যোগ দিতে পারবে না।
এ আলোচনার মধ্য দিয়ে শুধু ইউক্রেন যুদ্ধ অবসান নয়, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্কও আবার সচল হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামীতে এ আলোচনার জেরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যেও বৈঠক হতে পারে।
তবে ইউক্রেন এ আলোচনায় অংশ নিতে পারেনি। দেশটিকে এখনো আলোচনা প্রক্রিয়ায় যুক্ত করেনি যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেন জানিয়ে রেখেছে, তাদের অনুপস্থিতিতে হওয়া কোনো শান্তি চুক্তি তারা মেনে নেবে না। আলোচনার টেবিলে নেই ইউরোপও। যদিও ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউরোপীয় দেশগুলোকে সেনা সরবরাহ করতে হতে পারে।
ইউরোপের নেতারা আলোচনার টেবিলে আপাতত স্থান না পেলেও তাদের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করছেন ট্রাম্পের ইউক্রেনবিষয়ক বিশেষ দূত জেনারেল কিথ কেলগ। তিনি বেশ কয়েকটি বৈঠক করবেন। প্রথমটি ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্টা ও ইউরোপীয় কমিশনের নেতা উরসুলা ভন ডের লিয়েনের সঙ্গে। ভন ডের লিয়েন বলেছেন, এ আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেনকে একটি ন্যায্য ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তি দেওয়ার জন্য আমরা যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদার হতে চাই।
কেলগ এরপর পোল্যান্ডে যাবেন। সেখানে তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদার সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখান থেকে যাবেন কিয়েভে।
এসব আলোচনার মধ্যেও বেশ জোরেশোরেই চলছে যুদ্ধ। ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জানিয়েছে, তারা গত সোমবার রাতে রাশিয়ার পাঠানো ১৭৬টি ড্রোনের মধ্যে ১০৩টিকে ভূপাতিত করেছে। রাজধানী কিয়েভসহ দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে ওই ড্রোনগুলো ভূপাতিত করা হয়।
গত সোমবার সন্ধ্যায় কিয়েভের আকাশে কালো ধোঁয়া দেখা গেছে। এ ছাড়া কিরোভোহরাদ, খারকিভ, কিরেভ ও চেরকাসি থেকে ক্ষয়ক্ষতির খবর এসেছে। সূত্র: বিবিসি