
ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও রাজি। তবে যুদ্ধবিরতি চুক্তির সঙ্গে শর্তজুড়ে দিতে চান তিনি। ইউক্রেনের প্রস্তাব প্রসঙ্গে নিজের মত জানাতে গিয়ে ওই কথা বলেন পুতিন। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন,
মস্কোয় গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখার সময় পুতিন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব সম্পর্কে বলেন, ‘ধারণাটি সঠিক এবং আমরা এটিকে সমর্থন করি, তবে এমন প্রশ্ন রয়েছে যেগুলো নিয়ে আমাদের আলোচনা করা দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি এমন হওয়া উচিত যা একটি স্থায়ী শান্তির দিকে পরিচালিত করবে এবং এই সংকটের মূল কারণগুলো দূর করবে। আমাদের যুক্তরাষ্ট্র সহকর্মী এবং অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। সম্ভবত আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলব।’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি ইউক্রেনের জন্য ভালো হবে। আমরা এর পক্ষে। তবে এর কিছু অস্পষ্টতাও রয়েছে।’
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, বিবাদের ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে একটি রাশিয়ার কারস্ক অঞ্চল। পুতিনের দেওয়া তথ্যানুসারে, সেখানে ইউক্রেন গত বছর একটি সামরিক আগ্রাসন শুরু করে এবং কিছু অঞ্চল দখল করে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তারা সেখানে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। রাশিয়া কারস্কের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার কারস্ক সফর করেন পুতিন। সেখানে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী পুতিনকে জানান, কারস্ক পুনরুদ্ধার অভিযানের শেষ ধাপে রয়েছেন তারা। পুতিন এখন বলছেন, ‘কারস্কে ইউক্রেনীয়দের জন্য দুটি বিকল্প রয়েছে- আত্মসমর্পণ অথবা মৃত্যু।’
যুদ্ধবিরতি কীভাবে কাজ করবে সে বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন পুতিন, ‘৩০ দিনের এই সময়টা কীভাবে কাজে লাগবে? ইউক্রেনকে সংগঠিত করার জন্য? পুনরায় অস্ত্র দিতে? মানুষকে প্রশিক্ষণ দিতে? নাকি এর কোনোটিই নয়?’
কীভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সেটিও জানতে চান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ শেষ করার নির্দেশ কে দেবে? কী মূল্যে? কে সিদ্ধান্ত নেবে যে, দুই হাজার কিলোমিটারেও বেশি এলাকায় কে কোন সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করেছে? এসব প্রশ্নের জন্য উভয় পক্ষের সূক্ষ্মভাবে কাজ দরকার। এসবের নীতি কে ঠিক করবে?’
এদিকে পুতিনের এই মত প্রকাশ ও প্রতিক্রিয়াকে ‘ধুর্ততা’ হিসেবে অভিহিত করছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এরই মধ্যে রাশিয়ার তেল, গ্যাস ও ব্যাংক খাতে আরও কিছু নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে তিনি রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়ানোর দাবি তুলেছেন।
জেলেনস্কি মনে করছেন, পুতিন সরাসরি না বলেননি। কিন্তু তিনি প্রত্যাখ্যানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে এক ভিডিও বার্তায় নিজের মনোভাব তুলে ধরেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
জেলেনস্কি বলেন, ‘পুতিন অবশ্যই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সরাসরি বলতে ভয় পাচ্ছেন যে তিনি এই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান এবং ইউক্রেনীয়দের হত্যা করতে চান।’ পুতিনের এত পূর্বশর্ত বেঁধে দেওয়ার ফলে কিছুই কার্যকর হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পুতিনের মন্তব্য এবং এ বিষয়ে জেলেনস্কির প্রতিক্রিয়ার পরে এখন দুই পক্ষের মধ্যকার পার্থক্যটা স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে। ইউক্রেন দুই স্তরের একটি প্রক্রিয়া চায়। প্রথমে দ্রুত যুদ্ধবিরতি, পরে দীর্ঘমেয়াদি নিষ্পত্তির আলোচনা।
তবে রাশিয়া মনে করছে এই দুটি প্রক্রিয়া আলাদা করা সম্ভব না এবং সব সমস্যা একটি একক চুক্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা উচিত। দুই পক্ষই নিজ নিজ চুক্তির পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছে।
ইউক্রেন রাজি হওয়ার পর ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘বল এখন রাশিয়ার কোর্টে’ এবং তিনি আশা করেছিলেন যে মস্কো সঠিক কাজ করবে ও প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে। সূত্র: বিবিসি