ঢাকা ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫
English

উত্তর মেসিডোনিয়ায় নাইটক্লাবে আগুন, নিহত ৫১

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৪:০৭ পিএম
উত্তর মেসিডোনিয়ায় নাইটক্লাবে আগুন, নিহত ৫১
ছবি: সংগৃহীত

উত্তর মেসিডোনিয়ার একটি নাইটক্লাবে অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ৫১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ ছাড়া ১০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

রবিবার (১৬ মার্চ) দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ও অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রবিবার ভোরে উত্তর মেসিডোনিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কোচানির পালস ক্লাবে আগুন লাগে। এতে ৫১ জন নিহত ও ১০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পাঞ্চে তোশকোভস্কি।

তোশকোভস্কি জানান, স্থানীয় একটি পপ গ্রুপের কনসার্ট চলাকালীন রাত ২টা ৩৫ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত হয়। নাইটক্লাবে ব্যবহৃত আতশবাজির যন্ত্র থেকে আগুনের সূত্রপাত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ভবনটি আগুন পুড়ে যাচ্ছে এবং রাতের আকাশে ধোঁয়া উড়ছে।

সালমান/

আফগানিস্তানে জাতিসংঘের নারী কর্মীদের হত্যার হুমকি, কর্মক্ষেত্রে যেতে বাধা

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৫, ১০:৪৮ পিএম
আপডেট: ০৬ জুন ২০২৫, ১০:৫১ পিএম
আফগানিস্তানে জাতিসংঘের নারী কর্মীদের হত্যার হুমকি, কর্মক্ষেত্রে যেতে বাধা
ছবি: সংগৃহীত

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে জাতিসংঘের বেশ কয়েকজন আফগান নারী কর্মী ভয়াবহ হয়রানি ও প্রাণনাশের হুমকির মুখে পড়েছেন।অজ্ঞাতনামা কিছু ব্যক্তি তাদের পিছু নিয়ে বাড়ি পর্যন্ত অনুসরণ করে তাদের আর অফিসে না যাওয়ার হুমকি দিয়েছে। এসময় তাদের বলা হয়, ‘আগামীকাল অফিসে এসো না, আসলে মেরে ফেলব।’

জাতিসংঘের অন্তত তিনটি সংস্থার সূত্রের বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক বার্তা সংস্থা দ্য ইনডিপেনডেন্ট জানায়, মে মাসের শেষ দিকে এসব ঘটনার সূচনা হয়। অফিস শেষে নারীরা যখন কাবুলে জাতিসংঘ কম্পাউন্ড থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন তাদের একদল অজ্ঞাত পুরুষ অনুসরণ করে। এরপর বাড়ির বাইরে অস্ত্রের মুখে দাঁড় করিয়ে তাদের কাজ বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়।

এমনকি তাদের বাবা, স্বামী ও ভাইদেরও হুমকি দিয়ে নারীদের কাজ বন্ধে প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য করা হয় এবং এই প্রতিশ্রুতি দেওয়ার ঘটনাটি ভিডিও করে রাখা হয়।

জাতিসংঘের কর্মীরা জানান, হুমকি পাওয়া নারীরা তাদের সংস্থার কার্যক্রমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। খাদ্য বিতরণ, চিকিৎসা সেবা ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য তাদের উপস্থিতি অপরিহার্য। 

জাতিসংঘ সূত্র বলছে, এভাবে নারী কর্মীদের সরিয়ে দিলে মানবিক সহায়তার প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে এক নির্দেশনার মাধ্যমে নারীদের অধিকাংশ কর্মস্থলে কাজ করা নিষিদ্ধ করে দেয় আফগানিস্তানের বর্তমান শাসক গোষ্ঠী তালিবান। শরিয়া আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে তারা এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তখন এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘অগ্রহণযোগ্য ও অকল্পনীয়’ বলে মন্তব্য করেন।

এদিকে জাতিসংঘে কর্মরত নারীদের হুমকির বিষয়ে তালেবান সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এ ধরনের হুমকির ঘটনা সম্পর্কে অবগত এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

কাবুলে জাতিসংঘ সহায়তা মিশন (ইউএনএএমএ) এক বিবৃতিতে জানায়, নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় নারী কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য সাময়িকভাবে অফিসে না আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানায়, তারা নারীদের বাড়ি থেকে কাজ করার ব্যবস্থা করেছে এবং নারীদের নেতৃত্বাধীন পরিবারগুলোর কাছে সহায়তা পৌঁছাতে কাজ অব্যাহত রেখেছে। ২০২৪ সালে আফগানিস্তানে প্রায় ১ কোটিরও বেশি নারী ও শিশুকে সহায়তা দিয়েছে সংস্থাটি।

আফগানিস্তানে প্রায় ৪ কোটির বেশি জনসংখ্যার মধ্যে ২ কোটিরও বেশি মানুষ জাতিসংঘের সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। নারী কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হলে এই মানবিক সহায়তা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

সুলতানা দিনা/

কাশ্মীরে ভারতের আইফেল টাওয়ারের চেয়ে উঁচু রেলসেতু নির্মাণ

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৫, ১০:০২ পিএম
কাশ্মীরে ভারতের আইফেল টাওয়ারের চেয়ে উঁচু রেলসেতু নির্মাণ
চেনাব রেলওয়ে সেতু। ছবি: সংগৃহীত

জম্মু ও কাশ্মীরে আইফেল টাওয়ারের চেয়ে উঁচু একটি রেলসেতু নির্মাণ করেছে ভারত। জম্মু ও কাশ্মীরের চেনাব নদীর ওপর নির্মিত এই রেলসেতুর উচ্চতা ভূমি থেকে ৩৫৯ মিটার (আইফেল টাওয়ার ৩৩০ মিটার)। সেতুটির দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার।

সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি রুপি। 

শুক্রবার (৬ জুন) জম্মু ও কাশ্মীর গিয়ে ‘চেনাব রেলসেতু’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাহালগামে সন্ত্রাসী হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে এটিই ছিল তার প্রথম সফর।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যারের প্রতিবেদনে বলা হয়, চেনাব রেল সেতু নির্মাণ করা হয়েছে উদমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেললাইন প্রকল্পের অংশ হিসেবে। ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের মাধ্যমে কাশ্মীরকে দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সরাসরি রেলপথে যুক্ত করা হয়েছে। পুরো ২৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই লাইনটিতে রয়েছে ৩৬টি সুড়ঙ্গ ও ৯৪৩টি সেতু।

২০০২ সালে এই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হলেও সেতু তৈরির কাজ শুরু হয় ২০১৭ সাল থেকে। ২০২২ সালের মধ্যে শেষ হয় সেতু তৈরির কাজ। পরের বছরই নতুন সেতুর ওপর রেলপথ তৈরির কাজ শুরু হয়। 

এক বছর পর অর্থাৎ ২০২৪ সাল থেকে চেনাব সেতুর ওপরে শুরু হয় রেলের ট্রায়াল রান। চলতি বছর জানুয়ারি মাসেই সফলভাবে এই সেতুর ওপরে ট্রায়াল রান শেষ করে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। এখন থেকে চেনাব ব্রিজ ও সেখানে অবস্থিত রেলপথের মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ হবে শ্রীনগর ও কাটরার। 

নতুন এই লাইনে চলবে এক জোড়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। এর ফলে শ্রীনগর থেকে বৈষ্ণোদেবী মন্দিরের নিকটবর্তী কাটরা স্টেশনে যাওয়া যাবে মাত্র তিন ঘণ্টায়।

চেনাব সেতু একটি স্টিল আর্চ বা ধনুকাকৃতির নকশায় তৈরি, যা প্রকৌশলীদের জন্য ছিল এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পেও টিকে থাকবে এই সেতু। 

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে কনকন রেলওয়ে করপোরেশন এবং নির্মাণ করেছে আফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার, দক্ষিণ কোরিয়ার আলট্রা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি এবং ভারতের ভিএসএল ইন্ডিয়া।

সেতুটির নকশা ও ভিত্তি তৈরিতে কাজ করেছে ভারতের আইআইটি, ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসআই), ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও), ফিনল্যান্ডের ডব্লিউএপি গ্রুপ ও জার্মানির লিওনার্ড অ্যান্ড্রার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো।

কাশ্মীরের কঠিন ভূপ্রকৃতি, তীব্র তাপমাত্রা ওঠানামা, উচ্চগতির ঝোড়ো হাওয়া ও ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চল হওয়ায় এটি নির্মাণ ছিল অত্যন্ত কঠিন। সেতুটিকে ভূমিকম্প ও প্রবল বাতাসের ধাক্কা সামাল দেওয়ার মতো করে নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে এটিকে প্রকৌশল জগতের এক অনন্য অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জম্মু ও কাশ্মীরের রিয়াসি জেলার চন্দ্রভাগা নদীর নির্মিত এই ব্রিজটি স্টিল ও কংক্রিট দিয়ে এমনভাবে তৈরি, যা রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পেও টিকে থাকবে। বড়সড় বিস্ফোরণেও তেমন ক্ষতি হবে না এই সেতুর।

চেনাব সেতু ও উদমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেললাইন প্রকল্প কাশ্মীরের পর্যটন, কর্মসংস্থান এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে পাহালগামে সন্ত্রাসী হামলার পর পর্যটন খাতে যে ভাটা নেমেছিল, এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো তা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে।

প্রধানমন্ত্রী মোদি এদিন শ্রীনগর-কটরা বন্দে ভারত এক্সপ্রেসেরও উদ্বোধন করেন। এটি কাশ্মীরে প্রথম আধুনিক উচ্চগতির ট্রেন। এই ট্রেনগুলোতে রয়েছে হিটিং প্যাড, গরম পানির পাইপলাইন এবং বরফ প্রতিরোধী জানালার কাচ—যা অঞ্চলটির কড়া শীত উপযোগী। উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা, উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহা ও রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবও উপস্থিত ছিলেন।

সুলতানা দিনা/

চাঁদের প্রথম বাড়ি স্থাপনে ব্যর্থ জাপানি আইস্পেসের ল্যান্ডার

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৫, ০৮:৫৪ পিএম
আপডেট: ০৬ জুন ২০২৫, ০৯:০৪ পিএম
চাঁদের প্রথম বাড়ি স্থাপনে ব্যর্থ জাপানি আইস্পেসের ল্যান্ডার
টেনাসিয়াস রোভারটি ‘দ্য মুনহাউস’ নামের একটি ছোট বাড়ি বহন করছে, যা চাঁদের পৃষ্ঠে স্থাপন করার কথা ছিল। ছবিটি রোভারটি মহাকাশে উৎক্ষেপণের আগে তোলা হয়। ছবি: সংগৃহীত

চাঁদে বেসরকারি মিশনে আবারও ব্যর্থ হলো জাপানি মহাকাশ কোম্পানি আইস্পেস। চাঁদে অবতরণের চেষ্টার সময় বৃহস্পতিবার রাতে (০৫ জুন) জাপানের বেসরকারি মহাকাশযান ‘রেজিলিয়েন্স’-এর সাথে পৃথিবীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। 

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) হঠাৎ করেই এই মহাকাশযানের সাথে স্থল নিয়ন্ত্রণের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এটি ইউরোপের প্রথম চন্দ্র রোভার বহনকারী একটি বেসরকারি জাপানি ল্যান্ডার। ঠিক চাঁদে অবতরণের চেষ্টা করার সময় এটির সাথে মিশন কন্ট্রোলার (যা ‘রেজিলিয়েন্স’ নামে পরিচিত) ল্যান্ডারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

টেনাসিয়াস নামে পরিচিত এই রোভারটি জাপানি কোম্পানি আইস্পেস দ্বারা তৈরি এবং পরিচালিত দ্বিতীয় হাকুটো-আর ল্যান্ডার, রজিলিয়েন্সে বহন করা বেশ কয়েকটি পেলোডের মধ্যে একটি। মহাকাশযানটি চাঁদের কক্ষপথে এক মাসেরও বেশি সময় কাটানোর পর চাঁদের উত্তর গোলার্ধের একটি অনাবিষ্কৃত অঞ্চলে, যা মারে ফ্রিগোরিস বা "শীতল সমুদ্র" নামে পরিচিত, অবতরণের চেষ্টা করছিল ।

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার বেশ কয়েক ঘন্টা পরেও, স্থল নিয়ন্ত্রণ  ল্যান্ডারের সাথে আর যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেনি এবং এর পেলোডের অবস্থা বর্তমানে অজানা।

আইস্পেসের প্রতিনিধিরা এক্স-এ পোস্ট করা এক বিবৃতিতে লিখেন, ‘আমরা এখনও রেজিলিয়েন্সের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারিনি, তবে আমাদের মিশন কন্ট্রোল সেন্টারের আইস্পেস ইঞ্জিনিয়াররা ল্যান্ডারের সাথে যোগাযোগের জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা আগামী কয়েক ঘন্টার মধ্যে সর্বশেষ তথ্য সহ একটি আপডেট শেয়ার করব।’

রেজিলিয়েন্স হলো চাঁদে অবতরণের চেষ্টাকারী তৃতীয় জাপানি ল্যান্ডার, যা আইস্পেসের প্রথম হাকুটো-আর ল্যান্ডারের পরে, যা ২০২৩ সালের এপ্রিলে কক্ষপথে তার অপারেটরদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়। 

এর আগে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির স্লিম ল্যান্ডার বা মুন স্নাইপা্র উল্টে অবতরণ করে। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে এটি দুই চন্দ্র রাত বেঁচে যায়।

টেনাসিয়াস প্রায় ২১ ইঞ্চি (৫৪ সেন্টিমিটার) লম্বা এবং মাত্র ১১ পাউন্ড (৫ কিলোগ্রাম) ওজনের ছোট একটি পেলোডে। কিন্তু এটি সবচেয়ে আলোচিত হয় এটির পেলোড -‘দ্য মুনহাউস’ নামে পরিচিত ছোট একটি লাল ঘরের কারণে। এইলাল ঘর মাত্র ৪ ইঞ্চি (১০ সেমি) লম্বা। ‘চাঁদের প্রথম বাড়ি’ নামে পরিচিত এই শিল্পকর্মটি তৈরি করেছেন সুইডিশ শিল্পী মিকেল জেনবার্গ। তিনি এই প্রকল্পটির প্রথম ১৯৯৯ সালে কল্পনা করেন।

রেজিলিয়েন্স ল্যান্ডারটি আরও বেশ কয়েকটি পেলোড বহন করছে, যার মধ্যে রয়েছে ওয়াটার ইলেক্ট্রোলাইজার এক্সপেরিমেন্ট। যার লক্ষ্য ছিল চাঁদের পানি থেকে অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেন উৎপাদনের সম্ভাব্যতা প্রদর্শন করা এবং শৈবাল-ভিত্তিক খাদ্য উৎপাদন মডিউল, যা চন্দ্র মহাকাশচারীদের জন্য সম্ভাব্য ভবিষ্যতের খাদ্য উৎস হিসাবে সালোকসংশ্লেষণকারী জীবকে বৃদ্ধি করার চেষ্টা করবে। 

টোকিওভিত্তিক এই কোম্পানিটি জানায়, ল্যান্ডারটি চাঁদের পৃষ্ঠের উচ্চতা সঠিকভাবে পরিমাপ করতে না পারায় নির্ধারিত গতিতে অবতরণে ব্যর্থ হয় এবং এর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

আইস্পেসের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা রিও উজিইয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এখানে বিভিন্ন ধরণের প্রযুক্তিগত সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। যেমন, প্রপালশন সিস্টেম, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার কিংবা সেন্সরের ত্রুটি।

রেজিলিয়েন্স ব্যর্থ হওয়ার মাধ্যমে জাপানের বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধানে আবারও বহু বছরের বিরতি দেখা দিলো। তবে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আর্টেমিস কর্মসূচিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে এবং বহু জাপানি প্রতিষ্ঠান এখনও চাঁদকে ব্যবসার নতুন দিগন্ত হিসেবে বিবেচনা করছে।
চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের প্রায় দুই মিনিট আগেই ফ্লাইট ডেটা হারিয়ে যায়। ফলে টোকিওর সুমিতোমো মিৎসুই ব্যাংকের মিশন-অংশীদার কেন্দ্রে একত্রিত ৫০০-এর বেশি কর্মী, বিনিয়োগকারী ও সরকারি কর্মকর্তার মধ্যে হঠাৎ নীরবতা নেমে আসে।

আইস্পেসের শেয়ার বাজারে বিক্রির চাপ সামলাতে না পেরে লেনদেন স্থগিত করা হয়। দিনে শেয়ারের সর্বোচ্চ পতনের সীমা ছুঁয়ে ফেললে প্রায় ২৯ শতাংশ দাম পড়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দেয় সংশ্লিষ্ট সূত্র। 

বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষ হওয়া পর্যন্ত কোম্পানিটির বাজারমূল্য ছিল ১১ হাজার কোটি ইয়েন (৭৬৬ মিলিয়ন ডলার)।

তবে কোম্পানির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা জুমপেই নোজাকি জানান, এই দুর্ঘটনা সত্ত্বেও কোম্পানির সামনে কোনও আর্থিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা নেই, বরং তারা নিয়মিত বিনিয়োগকারীদের সহায়তা পাচ্ছে।

২০২৩ সালেও আইস্পেসের প্রথম চন্দ্র ল্যান্ডার একইভাবে দুর্ঘটনার শিকার হয়। তখন উচ্চতা নির্ধারণে ত্রুটি থাকায় সফটওয়্যার আপডেট করা হলেও রেজিলিয়েন্সের হার্ডওয়্যারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়নি।

অবতরণ সফল হলে ২.৩ মিটার উচ্চতার ল্যান্ডার ও রোভারটি ১৪ দিনব্যাপী নমুনা সংগ্রহসহ বিভিন্ন অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করত। এই কাজ যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসার চুক্তির আওতায় করা হতো।

রেজিলিয়েন্স জানুয়ারিতে স্পেসএক্স রকেটের মাধ্যমে মহাকাশে যাত্রা শুরু করে। একই রকেটে যুক্ত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফায়ারফ্লাই এর ব্লু গোস্ট ল্যান্ডার, যা দ্রুতগতির কক্ষপথে যেয়ে মার্চে সফলভাবে অবতরণ করে।চ

এর আগে, বাণিজ্যিকভাবে চাঁদের মাটিতে প্রথম সফলভাবে অবতরণ করে যুক্তরাষ্ট্রের ইনটুইটিভ মেশিনস। চলতি বছর তাদের দ্বিতীয় ল্যান্ডার অ্যাথেনাও অবতরণ করে, যদিও সেটিও উল্টে পড়েছিল।

গত বছর জাতীয় মহাকাশ সংস্থা জাকসার মাধ্যমে ‘স্লিম’ ল্যান্ডারের সফল অবতরণের মধ্য দিয়ে জাপান বিশ্বের পঞ্চম দেশ হিসেবে সফট ল্যান্ডিং সম্পন্ন করে। এরপর জাপান ও নাসার মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষর হয়, যাতে জাপানি নভোচারীরা আর্টেমিস কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন এবং বেসরকারি গবেষণার ক্ষেত্রেও সহযোগিতা চালানো হবে।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা এক্সে পোস্ট করে লিখেন, আইস্পেসকে ঘিরে আমাদের প্রত্যাশা শেষ হয়ে যায়নি।
তবে রিৎসুমেইকান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজুতো সাইকি মনে করেন, যেহেতু বেসরকারি মিশনে একাধিকবার ব্যর্থতা দেখা যাচ্ছে, তাই জাপানের কিছু প্রতিষ্ঠান এখন বিদেশি কোম্পানির সেবাও বিবেচনা করতে পারে।

আইস্পেস ২০২৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত বড় আকারের তৃতীয় ল্যান্ডার পাঠাতে চায়, যা হবে নাসার কমার্শিয়াল লুনার পে-লোড সার্ভিসেস প্রোগ্রামের অংশ। তারা ২০২৯ সাল পর্যন্ত জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র মিলিয়ে ছয়টি মিশনের পরিকল্পনা করছে।

সুলতানা দিনা/

আইসিসির প্রতিবাদকারী ৪ বিচারকের ওপর ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৫, ০৫:২৭ পিএম
আপডেট: ০৬ জুন ২০২৫, ০৬:২৩ পিএম
আইসিসির প্রতিবাদকারী ৪ বিচারকের ওপর ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা
হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প (বামে), ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) চার বিচারকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ওয়াশিংটন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ান জারি এবং আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তোলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) একহাত দেখে নিল ট্রাম্প প্রশাসন।

এদিকে হেগ-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এটিকে ‘অবৈধ’ এবং ‘রাজনীতিকরণ’ আখ্যায়িত করে এই উদ্যোগের তাৎক্ষণিক নিন্দা জানিয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষিত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে- মার্কিনমুলুকে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা এবং যুক্তরাষ্ট্রে রক্ষিত সম্পদ জব্দ করা।

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, এই চার ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে আইসিসির অবৈধ এবং ভিত্তিহীন কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে জড়িত।

শুক্রবার ( ৬ জুন) এক প্রতিবেদনে এই খবর জানায় বার্তাসংস্থা ল'ওরিয়েন্ট টুডে ।

আইসিসির বিরুদ্ধে নজিরবিহীন প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, আইসিসি রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে আদালতের পক্ষ থেকে খেয়াল খুশিমতো তদন্ত পরিচালনা, অভিযোগ গঠন, এমনকী রায় পর্যন্ত দেওয়া হয়।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ওই চার বিচারক হচ্ছেন উগান্ডার সোলোমি বালুঙ্গি বোসসা, পেরুর লুয দেল কারমেন ইবানেয কারানযা, বেনিনের রেইনে আদেলাইদে সোফিই আলাপিনি গানসোউ এবং স্লোভেনিয়ার বেতি হোলের।

রুবিও অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও আমাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ও অবৈধ পদক্ষেপ নিয়েছে আইসিসি। আর ওই চার বিচারক প্রত্যক্ষভাবে আদালতের কর্মকাণ্ডে জড়িত।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তীব্র নিন্দা জানিয়ে আইসিসি বলেছে, বিশ্বজুড়ে অবর্ণনীয় নিপীড়ন সহ্য করা লাখ লাখ মানুষের ন্যায়বিচার ও আশার প্রতীক হচ্ছে আইসিসি। যুক্তরাষ্ট্র তাদের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিচারিক ব্যবস্থার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করল।

আইসিসি বিচারক বোসসা ও ইবানেয কারানযা ২০১৮ সাল থেকে আদালতের সঙ্গে যুক্ত আছেন। ২০২০ সালে তারা এমন একটি আপিল রায়ে অংশ নেন, যা মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে যুদ্ধাপরাধ তদন্ত শুরুর অনুমতি দেয়। 

যদিও ২০২১ সাল থেকে আদালত মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে তদন্তকে অগ্রাধিকার না দিয়ে আফগান সরকারি বাহিনী ও তালেবানের অপরাধ তদন্তে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

বাকি দুই বিচারক গানসোউ ও হোলের ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং ইসরায়েলের তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজা সংঘর্ষে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনুমোদনে ভূমিকা রাখেন। পাশাপাশি হামাস নেতা ইব্রাহিম আল-মাসরির বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

আইসিসির সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে তিক্ততা এই নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে আরও বৃদ্ধি পেল। আগের মেয়াদেও আন্তর্জাতিক আদালতের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছিলেন ট্রাম্প। ২০২০ সালে আফগানিস্তান ইস্যুতে আইসিসির কিছু পদক্ষেপ পছন্দ না হওয়ায় তৎকালীন কৌঁসুলি ফাতৌ বেনসৌদা এবং তার অন্যতম প্রধান সহযোগীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন তিনি।

এর আগে ফেব্রুয়ারিতে, যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির প্রসিকিউটর করিম খানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, যিনি ইসরায়েলি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এই প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। 

এদিকে আইসিসি দ্রুত এক বিবৃতিতে প্রতিক্রিয়া হিসেবে জানায়, এই পদক্ষেপগুলো বিশ্বব্যাপী ১২৫টি সদস্য রাষ্ট্রের অধীনে পরিচালিত একটি আন্তর্জাতিক বিচারিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করার স্পষ্ট প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। 

সংস্থাটি আরও জানায়, আইসিসি তার কর্মীদের সম্পূর্ণ সমর্থন করে এবং অবিচলভাবে তাদের কাজ চালিয়ে যাবে।

এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মানবাধিকার রক্ষাকারী সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের লিজ ইভেনসন জানান, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য আইসিসিকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনে সংঘটিত গুরুতর অপরাধের জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করতে বাধা দেওয়া। মার্কিন সহযোগিতায় গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতা বন্ধ করার জন্য ব্যবহার করা উচিত। সবচেয়ে গুরুতর অপরাধের জন্য বিচার চাইছেন এমন ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়ার জন্য নয়।

তিনি এএফপিতে পাঠানো এক বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল কেউই আইসিসির সদস্য নয়। গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার ও বিচারের দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি স্থায়ী এখতিয়ার। তারা তাদের নাগরিকদের বিচার করার জন্য এর ক্ষমতা স্বীকার করে না।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে আইসিসির তৎকালীন প্রসিকিউটর ফাতু বেনসুদাকেও আমেরিকান নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। ২০২১ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই যা জো বাইডেন তুলে নেন।

এদিকে, শুক্রবার ভোরে এই উদ্যোগের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। 

নিজের এক্স-হ্যান্ডেলে এক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘রাজনীতিক আইসিসি বিচারকদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওকে ধন্যবাদ। আপনি সঠিকভাবে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং সমস্ত গণতন্ত্রের বিপরীতে নৃশংস সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার রক্ষা করেছেন।’

সুলতানা দিনা/অমিয়/

এবার রীতিমতো যুদ্ধে জড়ালেন ট্রাম্প-ইলন মাস্ক

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৫, ০৩:০২ পিএম
আপডেট: ০৬ জুন ২০২৫, ০৩:০৬ পিএম
এবার রীতিমতো যুদ্ধে জড়ালেন  ট্রাম্প-ইলন মাস্ক
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইলন মাস্কের বিরোধ এখন প্রকাশ্য। অথচ কয়েকদিন আগেও তাদের 'বন্ধুত্ব' ছিল সবার আলোচনার বিষয়। এবার তাদের মধ্যকার দূরত্বের গুঞ্জন মুহূর্তেই 'বাগযুদ্ধ' হিসেবে সবার সামনে আবির্ভূত হলো।

সরকারি একটি বিলকে কেন্দ্র করে  ট্রাম্পের সঙ্গে রীতিমতো ঝগড়া শুরু হয়েছে ইলন মাস্কের।  প্রেসিডেন্টকে ‘অকৃতজ্ঞ’ বলে উল্লেখ করে মার্কিন এই ধনকুবের দাবি করেন, তিনি যদি আর্থিক সহায়তা না দিতেন— তাহলে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যেতেন ট্রাম্প।

নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় মাস্ক বলেন, ‘আমি না থাকলে ট্রাম্প নির্বাচনে হেরে যেতেন, রিপ্রেজেন্টেটিভের (মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ) নিয়ন্ত্রণ থাকত ডেমোক্র্যাটদের দখলে আর সিনেটে (কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ) রিপাবলিকান-ডেমোক্র্যাটদের অনুপাত থাকত ৫১-৪৯।’

এরইমধ্যে, ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর ভর করে ইলন মাস্কের যেসব ব্যবসা চলছে সেগুলো নিয়ে তাকে হুমকিও দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এসব ব্যবসাকে মাস্কের স্পেসএক্স কর্মসূচির প্রাণ বলা চলে।

নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেন, ‘আমাদের বাজেটে কোটি কোটি ডলার সাশ্রয়ের সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ইলনের সরকারি ভর্তুকি এবং চুক্তি বাতিল করা। ’  

আর ট্রাম্প যদি সত্যিই তার সরকারকে মাস্কের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন, তাহলে এই টেক বিলিয়নেয়ারের চিন্তিত হওয়ার কারণ আছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (০৫ জুন) বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, এদিন ওভাল অফিসে জার্মান নেতার সাথে দেখা করার সময়, ট্রাম্প মাস্কের প্রতি তার হতাশার কথা খোলামেলাভাবে বলেন।

এর জবাবে,মাস্ক এক্স-এর পোস্ট করে, ট্রাম্পকে একের পর এক আক্রমণ শুরু করেন, যেখানে তিনি প্রমাণ ছাড়াই ইঙ্গিত দেন যে প্রয়াত যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টাইনের সাথে সম্পর্কিত অপ্রকাশিত ফাইলগুলিতে ট্রাম্পের কারসাজি রয়েছে।

এরপর ট্রাম্প বেশ কয়েকবার পাল্টা আক্রমণ করে বলেন যে, মাস্ক  ‘ পাগল ’ হয়ে গেছেন এবং এরপর তাকে ট্রাম্প প্রশাসন ছেড়ে দিতে বলা হয়। এছাড়া তিনি মাস্কের কোম্পানিগুলোর সাথে সরকারি চুক্তি বাতিল করার হুমকিও দেন ।

এদিকে এই লড়াইয়ের মধ্যে, টেসলার শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে ১৪% কমে গেছে, যা মাস্কের ইভি জায়ান্টকে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের সীমার নিচে নামিয়ে দিয়েছে।

২০২৪ সালের জুলাই থেকে শুরু হওইয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার সময় থেকেই ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের ঘনিষ্ঠতার শুরু । সে সময়  রিপাবলিকান পার্টির ট্রাম্পের বিভিন্ন প্রচারণা সভায় মাস্ককে নিয়মিত দেখা গেছে। 

এক প্রতিবেদনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জানায় , ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা তহবিলে কমপক্ষে ২৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার চাঁদা দিয়েছেন মাস্ক।

নির্বাচনে জয়ী হয়ে শপথ নেওয়ার পর সরকারি কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও সরকারি ব্যয় সংকোচন করতে ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি বা ডোজ নামের একটি দপ্তর খোলে ট্রাম্প প্রশাসন। সেই দপ্তরের প্রধান করা হয় মাস্ককে।

মাস্ক ডোজর প্রধান নির্বাহী হওয়ার পর কয়েক মাস ধরে সরকারি অর্থ অপচয় রোধের নামে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও বিভাগের হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়, স্থগিত করা হয় প্রায় সব ধরনের বৈদেশি সহায়তা প্রদান।

এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন বিভিন্ন গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থাতেও সরকারি ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ফলে স্বাভাবিকভাবেই জনপ্রিয়তা কমতে থাকে ট্রাম্পের। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে একাধিক আদালতে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেন চাকরিচ্যুত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ সহায়তা প্রদান স্থগিত করায় দেশের ভেতরেও সমালোচনায় বিদ্ধ হতে থাকে ট্রাম্প প্রশাসন।

মাস্কের নিয়োগ নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের এমপিদের একাংশ এবং ট্রাম্পের রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পার্টির নেতা-কর্মীদের একাংশ অসন্তুষ্ট ছিলেন। কংগ্রেস এখনও ডোজকে সরকারি বিভাগ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।

এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল মাস্কের। এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক একটি বিল স্বাক্ষরকে ঘিরে নতুন তিক্ততার সৃষ্টি হয় ট্রাম্প ও মাস্কের মধ্যে।

গত মাসে কর হ্রাস সংক্রান্ত ‘জনকল্যাণমূলক’ বিলে অনুমোদন দেওয়ার পরে ট্রাম্প বলেন, ‘এটি একটি বড় এবং সুন্দর বিল’ (ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট)। তার পরেই ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের মতবিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে।

মাস্ক দাবি করেন, তিনি এবং তার সহকারীরা ট্রাম্প প্রশাসনের অন্দরে থেকে এত দিন ‘অপ্রয়োজনীয় ব্যয়’ কমাতে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, সেসব ব্যর্থ হয়ে যাবে ওই একটি বিলের কারণে। বিলটি তাকে দেখানোর আগেই ট্রাম্প মার্কিন কংগ্রেসে পাশ করানোর জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন বলেও সমাজমাধ্যমে অভিযোগ করেন মাস্ক।

সুলতানা দিনা/