
গাজায় ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র জোটের বর্বরতা ও ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনসহ বিশ্বে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে। স্নায়ুযুদ্ধের মারপ্যাঁচে প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য বেসামরিক নাগরিক। গণহত্যার ভুক্তভোগী শিশুদের চিৎকার নিয়ত ভারী করছে গুমট পৃথিবীর বিষাক্ত বাতাস। বর্বরতার ধারাবাহিকতায় নির্মম হত্যায় জড়িত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও। সম্প্রতি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসন থামাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার কথা শোনা যাচ্ছে গণমাধ্যমগুলোতে। তবে নব্য সাম্রাজ্যবাদের অন্যতম ঝাণ্ডাবাহক পুতিন আদৌ শান্তির বার্তা ধারণ করেন, নাকি ফাঁপা বুলির পেছনে লুকিয়ে আছে অনুকম্পাহীন কঠোর রাজনীতি? দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন বিষয়টির কাঁটাছেড়া করেছে।
রুশ সাংবাদিক মিখাইল জাইগারের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিরসনে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ সত্ত্বেও পুতিন সহিংসতা বর্ধিত করতেই বেশি আগ্রহী।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন চলমান যুদ্ধ নিরসনে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের আলোচনায় শান্তি বাস্তবায়নের সম্ভাবনা দেখছেন না বিশ্লেষকরা।
এ প্রসঙ্গে মিখাইল বলেন, ‘যারা এখনো শান্তির আশায় অপেক্ষা করছেন- তারা নিসন্দেহে হতাশ হবেন।’ তার মতে, রাশিয়ার অর্থনীতি, সরকার ব্যবস্থা ও সামরিক বাহিনীর ওপর পুতিনের পাকড় টিকিয়ে রাখতে এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই।
স্বার্থ উদ্ধারে চেষ্টার কমতি রাখছেন না পুতিন। ক্রেমলিনের অভ্যন্তরীন সূত্রে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জানতে পেরেছে, পুতিন এখনো কিয়েভ দখলে নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আটকের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। এমন কিছু ঘটার সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের ঊর্ধ্বগতি ও যুক্তরাষ্ট্রের মস্কোপন্থি পররাষ্ট্রনীতির কারণে অঘটনের আশঙ্কা পুরোপুরি সরানোও যাচ্ছে না।
এদিকে যুদ্ধের কারণে রুশ প্রশাসনে পশ্চিমঘেঁষা কর্মকর্তাদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরানোর পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক রদবদল সাধিত হয়েছে। ‘যুদ্ধের প্রয়োজনে’ দেশের সামরিক উৎপাদন খাতেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
মিখাইলের আশঙ্কা, যুদ্ধ বন্ধ হলে মস্কো প্রশাসনে মতভেদ তৈরি হতে পারে- এমন ধারণা থেকে শান্তি বাস্তবায়ন যতটা সম্ভব পিছানোর পাঁয়তারা করছেন পুতিন। প্রেসিডেন্টের ভয়, যুদ্ধ থামলে দেশের ক্ষমতাবঞ্চিত সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তার জন্য রাজনৈতিক হুমকি হয়ে দাঁড়াবেন।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পুতিন শান্তিচুক্তিতে আগ্রহ দেখালেও তার মূল উদ্দেশ পশ্চিমা ক্ষমতাজোটকে খন্ডিত করা। ওপরে ওপরে নিজেকে শান্ত প্রতিপন্ন করে ইউক্রেনকে খেপিয়ে সহিংসতার সব দায় কিয়েভের ওপর চাপানোর পরিকল্পনা পুতিনের। বলতেই হয়, এতে অনেকটা সফল তিনি।
এই পরিস্থিতিতে আসন্ন যুদ্ধবিরতি আদতে বাস্তবায়িত হয় কি না- হলেও তা ধ্বংস্তূপের চূড়া থেকে সম্প্রীতির ডেইজি ফুল ফোঁটাতে পারে কি না তা সময়ই বলে দেবে। সূত্র: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট
নাইমুর/