ইউক্রেনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় রাজি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই প্রথম তিনি এ রকম মনোভাব জানালেন। এর আগে তিনি বলেছিলেন, ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনার আগে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির স্থলে নতুন কাউকে আনতে হবে।
পুতিনের এ মন্তব্যের আগ দিয়ে কৃষ্ণসাগরসংলগ্ন ইউক্রেনীয় বন্দর শহর ওডেসায় ব্যাপক ড্রোন হামলা হয়। স্থানীয় কর্মকর্তারা সেখানে হামলা হওয়ার ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পাশাপাশি তারা জানিয়েছেন, এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তিনজন এবং বেশ কয়েকটি বেসামরিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ওডেসার মেয়র হেনাডি ত্রুখানভ মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘শত্রুপক্ষ ওদেসার ঘনবসতি জেলায় আবাসিক এলাকা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।’
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পুতিনের মন পরিবর্তনের বার্তা এমন একটি সময়ে এলো যখন ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের বুধবার (২৩ এপ্রিল) লন্ডনে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে।
জেলেনস্কি ওয়াশিংটনের চাপে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সমঝোতা করতে রাজি হয়েছেন। তিনি বলেছেন, লন্ডনের আলোচনার প্রাথমিক কাজ হলো নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির বিষয়টি সামনে নিয়ে আসা। এটিই হওয়া উচিত প্রথম ধাপ।
তবে যুদ্ধবিরতি আলোচনার কারণে ইউক্রেনে হামলা থেমে নেই। ইউক্রেনের বিমানবাহিনী গতকাল মঙ্গলবার জানায়, রাশিয়া সোমবার রাতে ৫৪ বার ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে ৩৮টি তারা ভূপাতিত করেছে। আরও ১৬টি লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক যন্ত্রের মাধ্যমে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণহীন করে দেওয়া হয়েছিল।
অন্যদিকে রাশিয়াতেও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। গণমাধ্যমের খবর বলছে, ১০টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে দেশটির বিমানবাহিনী। এর মধ্যে অর্ধেকই ক্রিমিয়া উপদ্বীপের আকাশে ধ্বংস করা হয়েছে।
ফাঁস হওয়া তথ্য বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন এমন একটি শান্তি চুক্তি নিয়ে চাপ প্রয়োগ করছে, যা রাশিয়ার জন্য বেশি অনুকূল। ওই চুক্তিতে এক হাজার কিলোমিটার ফ্রন্টলাইন-জুড়ে যুদ্ধ থামানোর কথা বলা হয়েছে, ক্রিমিয়া মস্কোর অধীনে থাকার বিষয়ে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টিও রয়েছে এবং ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেওয়া প্রশ্নে ভেটো দেওয়া হয়েছে।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন বলছে, আরও কিছু তথ্য সামনে এসেছে, যেগুলো এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে যে ঝাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিরপেক্ষ অঞ্চলের অংশ হিসেবে গণ্য হবে। ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রাশিয়া ২০২২ সালে দখলে নিয়েছিল।
এদিকে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টর ভলোদিমির জেলেনস্কিকে বলেছেন যে তিনি পূর্ণ যুদ্ধবিরতির জন্য কিয়েভের আহ্বানকে সমর্থন করেন। যুদ্ধবিরতির সময়টিতে ইউক্রেনে যাতে একটি বাহিনী পুরো বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য থাকে, সে রকম একটি প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য এখনো নিজের পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছে না। তারা ইউরোপের নিরাপত্তা ইস্যুতে নিজেদের দূরে রাখার চেষ্টা করছে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান