
গাজায় হামলার মাত্রা বৃদ্ধি করেছে ইসরায়েল। সেই সঙ্গে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। সর্বশেষ ৪৮ ঘণ্টায় উপত্যকাটিতে ১৩০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে তথ্যগুলো।
গত মঙ্গলবার যুদ্ধবিরতি ভেঙে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তার পর থেকে গত শুক্রবার পর্যন্ত অবরুদ্ধ উপত্যকায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬৩৪ জন। আহত হয়েছেন ১ হাজার ১৭২ জন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় মোট প্রাণ হারিয়েছেন ৪৯ হাজার ৭৪৭ জন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৩ হাজার ২১৩ জন।
গাজা সিটিতে ইসরায়েল গত শুক্রবার যে হামলা চালায়, তাতে পাঁচ শিশু মারা গেছে। এ ছাড়া একই পরিবারের আরও আটজন সদস্য ইসরায়েলি হামলার পর ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছিলেন।
লেবাননে বিমান হামলা
শুধু যে গাজায় এ পরিস্থিতি চলছে, তা নয়। লেবাননের সঙ্গেও ক্রমেই উত্তেজনা বাড়ছে ইসরায়েলের। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাওয়াফ সালাম সতর্ক করেছেন যে, তার দেশ ‘নতুন যুদ্ধে’ জড়িয়ে পড়ছে।
নাওয়াফ সালামের এ মন্তব্যের আগে ইসরায়েল দাবি করে, তাদের লক্ষ্য করে পাঁচটি রকেট ছোড়া হয়েছে এবং তারা সেটির জবাব দেবে। পরে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দক্ষিণ লেবাননকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
লেবাননের ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি (এনএনএ) বলছে, উত্তর ইসরায়েলে রকেট বিস্ফোরণের পর দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান উড়তে দেখা গেছে।
এনএনএ আরও জানায়, ইসরায়েলি স্থল সেনাদের অস্ত্র হাতে এল-হামামেস পাহাড়ে দেখা গেছে। এ ছাড়া নাবাতিয়েহ জেলার দক্ষিণ ও খিয়াম শহরকে লক্ষ্য করে ইসরায়েল গোলাবর্ষণ করেছে। সীমান্তবর্তী গ্রাম হুলা, মারকাবা ও কফর কিলাকে লক্ষ্য করেও গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে গত বছরের ২৭ নভেম্বর যুদ্ধবিরতি হয়। এর আগে দুই মাস পুরোদমে যুদ্ধ চলেছিল দুই পক্ষের। সে যুদ্ধে হিজবুল্লাহর অনেক নেতৃস্থানীয় প্রাণ হারান। লেবাননেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সে সময় স্থল সেনা পাঠিয়েছিল ইসরায়েল।
ওই যুদ্ধের পর উত্তর ইসরায়েলের বাসিন্দারা সেভাবে ফেরত আসেননি। তবে ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ওই সীমান্তবর্তী এলাকা সুরক্ষিত করেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, ইসরায়েল আসলে দুই মাসের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ঠিক কী অর্জন করেছে?
ইসরায়েলে সর্বশেষ যে রকেট হামলা হয়েছে, সেটির দায় তারা দিচ্ছে হিজবুল্লাহর ওপর। তবে এখনো হিজবুল্লাহ ওই হামলার দায় স্বীকার করেনি।
ইসরায়েল গত কয়েক সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও হিজবুল্লাহর যোদ্ধা, অবকাঠামো, সম্পদ লক্ষ্য করে আক্রমণ চালিয়েছে। হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা এখনো শক্তিশালী এবং আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত। লেবাননের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পর্যবেক্ষক কমিটির সঙ্গে বৈঠক করছেন উত্তেজনা নিরসনের জন্য।
ইউরোপের তিন দেশের উদ্বেগ
এদিকে জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য গাজার বেসামরিকদের হতাহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা নিজেদের উদ্বেগ তুলে ধরে।
ইসরায়েলি আক্রমণের কারণে গাজার পরিস্থিতির নাটকীয় অবনতি হয়েছে বলেও জানায় তারা। পাশাপাশি আবারও যুদ্ধবিরতি চেয়েছে জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। তিন রাষ্ট্র সব পক্ষকেই আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার অনুরোধ জানিয়েছে। সূত্র: আল-জাজিরা।