গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার নিন্দা জানিয়েছে চিকিৎসাবিষয়ক সহায়তা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ)। এক বিবৃতিতে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারের জরুরি সমন্বয়ক আমান্ডে বাজেরোলে বলেন, গাজাকে ফিলিস্তিনিদের ও তাদের সহায়তায় যারা এগিয়ে আসছে, তাদের গণকবরে পরিণত করা হচ্ছে। আমরা গাজার পুরো জনগোষ্ঠীর ধ্বংস ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি সরাসরি দেখছি।’
তিনি আরও জানান, ফিলিস্তিনিদের ও তাদের সহায়তা করছে এমন ব্যক্তিদের জন্য কোনো নিরাপদ স্থান না থাকায় এবং মানবিক সহায়তাও সংকটের মুখে থাকায় মানুষের সেবা পাওয়ার তেমন আর কোনো সুযোগ নেই।’ গাজায় ইসরায়েলি হামলা থামছে না। অবরুদ্ধ উপত্যকাটির উত্তরের অংশে ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাফা অঞ্চলেও বাড়িঘর ধ্বংস করা অব্যাহত রেখেছে তারা।
ফিলিস্তিনের চিকিৎসাকর্মীরা জানান, ইসরায়েলি হামলায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে গাজার সুপরিচিত লেখক ও আলোকচিত্রী ফাতেমা হাসৌনাও রয়েছেন। নিজ কাজের মধ্য দিয়ে গাজাবাসীর দৈনন্দিন জীবনের সংগ্রাম তুলে ধরতেন তিনি। এ ছাড়াও উত্তরের অংশের আরেকটি বাড়িতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে আরও তিনজন মারা যান। ইসরায়েলি বাহিনী এখনো হামলা প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করেনি। এ ছাড়া আল-জাজিরার প্রতিবেদন বলছে, ইসরায়েলি হামলায় উপত্যকায় আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।
গাজা উপত্যকার দক্ষিণে রাফায় ইসরায়েলি বাহিনী বাড়িঘর ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা। শহরটি এখন ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে। ইসরায়েলের নেতারা বলছেন, তারা নিরাপত্তা অঞ্চল রাফা পর্যন্ত সম্প্রসারিত করছে। তারা আরও জানান, মূলত হামাসের ওপর জিম্মি মুক্তির জন্য চাপ আরও বৃদ্ধি করার লক্ষ্যেই এ কাজ করা হচ্ছে।
মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীরা গাজায় আবার যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা ও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত তাতে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ইসরায়েল ও হামাস দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। আল-জাজিরার প্রতিবেদক গাজা থেকে জানিয়েছে, গাজাবাসী যুদ্ধের ভয়াবহতায় ও ইসরায়েলি হামলায় ক্লান্ত, উদ্বিগ্ন। তারা স্বস্তির অপেক্ষায় আছে। যুদ্ধবিরতির আলোচনা তাদের মধ্যে আশা সঞ্চার করেছে যে হয়তো আবারও কিছুটা স্বস্তিকর পরিবেশে ফিরতে পারবেন তারা।
হামাস জানিয়েছে, জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় যে ধাপ হওয়ার কথা ছিল, সেটিতে ফিরতে চায় তারা। গোষ্ঠীটি চায়, ইসরায়েল গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করুক এবং এ যুদ্ধের অবসান হোক।
জরুরি রসদ
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মার্চ থেকে ইসরায়েল গোটা উপত্যকা ঘিরে রাখায় জ্বালানি, ওষুধ ও খাবারের সরবরাহের প্রবেশ বন্ধ হয়ে গেছে। অল্প যে কয়েকটি হাসপাতাল খোলা আছে, সেগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, চিকিৎসার রসদও ফুরিয়ে যাচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, শত শত রোগী ও আহত ব্যক্তিরা জরুরি ওষুধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সীমান্ত বন্ধ থাকায় তাদের পরিস্থিতি ক্রমশ প্রতিকূল হচ্ছে। এদিকে ইসরায়েলের দাবি, এটি করারও মূল কারণ হলো হামাসকে চাপে রাখা। তবে আরব রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি আসলে সংঘবদ্ধ শাস্তিতে পরিণত হয়েছে।
মার্চে যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবারও হামলা শুরুর পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে এক হাজার ছয় শরও বেশি ফিলিস্তিনি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তথ্যটি নিশ্চিত করেছে। ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে বাস্তুচ্যুতও হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। তাদের তাঁবুতে আশ্রয় নিতে হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন স্থানে তাঁবু লক্ষ্য করেও হামলা চালাচ্ছে।
এখনো হামাসের হাতে ইসরায়েলের ৫৯ জন জিম্মি আছে। ইসরায়েলের ধারণা, তাদের মধ্যে ২৪ জন বেঁচে আছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ যুদ্ধে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৬১ হাজার সাতশরও বেশি মানুষ মারা গেছেন বলে উল্লেখ করেছে উপত্যকাটির সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে নিখোঁজ ব্যক্তিদেরও তারা মৃতের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। সূত্র: আল-জাজিরা, রয়টার্স