যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসন হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে। ফলে এসব শিক্ষার্থী দেশটিতে থেকে পড়াশোনা করতে পারছেন না। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভারতীয়দের ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এ তালিকায় আছেন বাংলাদেশি, চীনা, নেপালি ও দক্ষিণ কোরীয় শিক্ষার্থীরাও। এসব ভিসা বাতিলের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসন আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি। এ কারণে বেশ কিছু বিদেশি শিক্ষার্থী দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
খবরে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ওভাল অফিসের দায়িত্ব নেওয়ার পর একের পর এক নির্বাহী আদেশ জারি করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে গত কয়েক সপ্তাহে এক হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। দেশটিতে থাকার আইনগত বৈধতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এপির খবরে বলা হয়েছে, এর ফলে এসব ছাত্র কারাগারে বা বহিষ্কারের ঝুঁকির মুখে পড়েছেন।
খবরে বলা হয়েছে, ১৬০টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ২৪ শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বেশ কিছু যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা ঠুকে দিয়েছেন। এসব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে হার্ভার্ড ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
আমেরিকান ইমিগ্রেশন লয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এআইএলএ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ৩২৭ শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিলের তথ্য তাদের কাছে এসেছে। যার মধ্যে ৫০ শতাংশই ভারতীয়, ১৪ শতাংশ চীনা আর বাকিরা হলেন বাংলাদেশি, নেপালি ও দক্ষিণ কোরীয়। মার্কিনিদের এমন আচরণে ভারতীয় শিক্ষর্থীরা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। এসব বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিলের কাজটি করছে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বিভাগ (আইস)। তারা চার মাস ধরে বিদেশি শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। পরীক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। নিরীহ শিক্ষার্থীরা ভুলের শিকার হচ্ছেন, যাদের অপরাধের কোনো তথ্য নেই। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব বিক্ষোভ হয়েছে সেখানেও তাদের সংশ্লিষ্টতা নেই।
গত মার্চে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, তারা ‘ধরা এবং বাতিল’ নীতি অবলম্বন করছেন। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পরীক্ষা করা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে তারা ইহুদিবিদ্বেষী কোনো কিছু করছেন কি না অথবা ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে সমর্থন জানাচ্ছেন কি না।
সাম্প্রতিক সময়ে ৩২৭ শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিলের খবর পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশের ভিসা ছিল এফ-১। এর মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্রে ১২ মাসের বেশি সময় কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। যেহেতু তাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে, তাই তারা এখন দেশটিতে আর কোনো কাজ করতে পারবেন না। ভিসা বাতিলের দিকে এগিয়ে আছে টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক, মিশিগান এবং অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্য।
ভারতে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ সেই তালিকার উল্লেখ করে জানালেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার যে শিক্ষার্থীদের নিশানা করেছে তাদের ৫০ শতাংশই ভারতীয়।
আমেরিকান ইমিগ্রেশন লয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে রমেশ লিখেছেন, ‘ভিসা বাতিলের কারণগুলো অস্পষ্ট ও অস্বচ্ছ। তাই এটি ভারতীয়দের কাছে এটি উদ্বেগ এবং আশঙ্কার কারণ।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার এ নিয়ে চুপ কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
শুধু ভিসা বাতিলই নয়, ওই ৩২৭ শিক্ষার্থীকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ তকমা দিয়েছে ট্রাম্প সরকার। ফলে তারা আর কখনো আমেরিকায় যেতে পারবেন না। যে ছাত্রছাত্রীদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে, তাদের অনেকেই প্যালেস্টাইনিদের অধিকারের দাবিতে মুখ খুলেছিলেন। গাজা দখলের অভিযানে ইসরায়েলকে সহায়তার বিরোধিতায় সরব হয়েছিলেন।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীরা কী করছেন, সেদিকে আমরা প্রতিদিন কড়া নজর রাখছি।’ সূত্র: এনডিটিভি