
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা থামছেই না। গত মার্চে যুদ্ধবিরতি চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার পর ইসরায়েলি বাহিনী যেন আরও নির্মম হয়ে উঠেছে। তাদের হামলার তীব্রতা দেখে এটিই প্রতীয়মান হয় যে গাজাবাসীকে সম্পূর্ণ নির্মূলের লক্ষ্যেই তারা অভিযান চালাচ্ছে। প্রতিদিনই হামলার ঘটনা ঘটছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে আরও ৪০ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল পর্যন্ত ৫১ হাজার ৬৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ১৬ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়।
এদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না বাস্তুচ্যুত গাজাবাসীর তাঁবুও। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার পর থেকে নতুন করে আবারও বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আনুমানিক পাঁচ লাখ মানুষ।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলছেন, ‘তার দেশের নীতি স্পষ্ট।’ হামাসকে চাপে ফেলার হাতিয়ার হিসেবে তারা গাজায় মানবিক সহায়তা ঢুকতে দিচ্ছেন না। একদিকে ইসরায়েলি হামলা, অন্যদিকে প্রয়োজনীয় সহায়তাপ্রবাহ বন্ধ থাকায় মানবেতর পরিস্থিতি পার করতে হচ্ছে গাজাবাসীকে।
এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৫১ হাজার ৬৫ জনের মৃত্যুর তথ্য দিলেও গাজার গণমাধ্যম দপ্তর বলছে, মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। ওই দপ্তর জানায়, ৬১ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ ব্যক্তিদেরও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তাঁবুতে হামলা
ইসরায়েলের সর্বশেষ আক্রমণগুলো গাজার দক্ষিণাংশে থাকা ফিলিস্তিনিদের আরও প্রতিকূল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। সর্বশেষ খান ইউনিসের বেশ কয়েকটি তাঁবুতে হামলা চালিয়ে ১০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ওই ঘটনায় আহত হয়েছেন সাতজন। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এক শিশু ছিল। সে হামলার পর তাঁবুতে সৃষ্ট আগুনে পুড়ে মারা গেছে। ওই শিশুর তাঁবুর আগুন নেভাতে আশপাশ থেকে মানুষ ছুটে গিয়েছিলেন, কিন্তু তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হন।
হামলায় আহতদের এখন গাজার নাসের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের শরীরে গুরুতর জখম রয়েছে। আহতদের যে অবস্থা, তাতে তাদের জরুরি ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসাসেবা প্রয়োজন। গাজায় সে রকম চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই।
তাঁবুতে এ রকম হামলার ঘটনায় এরই মধ্যে নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো। তারা জানিয়েছে, এ ধরনের আক্রমণের পুনরাবৃত্তি ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন করছে।
গাজায় প্রতিদিন ২৭ শিশু নিহত, এতিম ৩৯ হাজার
গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন গড়ে ২৭ শিশু মারা গেছে। অন্যদিকে এ পর্যন্ত ৩৯ হাজার শিশু এতিম হয়েছে। ফিলিস্তিনে ইউনিসেফের একজন প্রতিনিধি এ তথ্য জানিয়েছেন।
আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুসারে, ইউনিসেফের ওই প্রতিনিধি বলেছেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় প্রতিদিন নিহত শিশু ও কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা ২৭ জনে পৌঁছেছে। ইউনিসেফের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে গাজায় অন্তত ১৬ হাজার ফিলিস্তিনিকে জরুরি চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে সরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। জরুরি চিকিৎসা সহায়তার প্রয়োজন- এমন লোকদের মধ্যে ৪ হাজার শিশু রয়েছে।
জানুয়ারিতে সম্পাদিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ১৮ মার্চ ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় পুনরায় গণহত্যা শুরু করে এবং আক্রমণের তীব্রতা বাড়ায়। সূত্র: আল-জাজিরা