
ইউক্রেনে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে রাশিয়া। গত বুধবার শেষ ভাগে ইউক্রেনের দক্ষিণপূর্বের শহর দিনিপ্রোতে রাশিয়ার চালানো হামলায় তিন জন মারা গেছেন। ওই হামলায় নিহতদের একজন শিশু।
ফ্রান্সের প্যারিসে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের ঠিক আগ দিয়ে এ হামলাটি হলো ইউক্রেনে। ওই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এবং অন্য ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্যারিসে রয়েছেন। তবে ঠিক কার কার সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে, সে বিষয়টি স্পষ্ট করে জানায়নি কিয়েভের প্রতিনিধিদল।
আল-জাজিরার প্রতিবেদন বলছে, মস্কো জ্বালানি অবকাঠামোর জন্য ৩০ দিনের যে সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিল, সেটির মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে। আরও বড় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে চলমান আলোচনায় অগ্রগতি তেমন হয়নি। ফলে এটি না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
রাশিয়া একাধিকবার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। তবে কিয়েভ সে দায় কখনো স্বীকার করেনি। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, এই সাময়িক বন্দোবস্ত ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনী মেনে চলেনি এবং মানছে না।
আল-জাজিরার প্রতিবেদন বলছে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎচালিত সাবস্টেশনে ও গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ লাইনে ড্রোন হামলার অভিযোগ তুলেছে রাশিয়া। তারা বলছে, ইউক্রেন খেরসনের রুশ অধিকৃত অঞ্চলের বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনে ও কারস্কে দুটি নিম্নচাপের গ্যাস পাইপলাইনে হামলা চালিয়েছে।
মস্কোর বাহিনীর দাবি, তারা গত বুধবার আইভানোভো অঞ্চলের শুয়া এলাকার কাছে সাতটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এলাকাটি মস্কো থেকে ২৬০ কিলোমিটার দূরে এবং ইউক্রেন সীমান্ত থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। রাশিয়ার বিভিন্ন অংশ থেকে মোট ২৬টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছে রুশ বাহিনী।
রাশিয়া আজ শুক্রবার থেকে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালানো শুরু করবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে পেসকভ বলেন, সব কিছু নির্ভর করবে সুপ্রিম কমান্ডার ইন চিফের নির্দেশনার ওপর। মূলত এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দিকে ইঙ্গিত করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১০ মার্চ পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব রাখেন। তার সে প্রস্তাবের জবাবে পুতিন ১৮ মার্চ জ্বালানি অবকাঠামো সংক্রান্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন। এতে বলা হয়, ৩০ দিনের জন্য কোনো দেশই একে অপরের জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালাবে না। ইউক্রেন সে প্রস্তাবে রাজি হয়। অন্যদিকে ট্রাম্প জানান, শুধু জ্বালানি নয়, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোও যুদ্ধবিরতির আওতায় থাকবে। তবে রাশিয়া বিষয়টি কখনো নিশ্চিত করেনি। সে সময়ই বিশ্লেষকরা চুক্তিটির অস্পষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র তা আমলে নেয়নি। তারা মস্কো ও কিয়েভ- দুই পক্ষের সঙ্গেই পৃথক চুক্তি করে।
তবে এ সময়ের মধ্যে রাশিয়া ও ইউক্রেনকে একে অপরকে লক্ষ্য করে হামলা চালাতে দেখা গেছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সব দিক থেকেই ইউক্রেনকে চাপে ফেলেছে রাশিয়া। গত মঙ্গলবারও জাপোরিঝিয়াতে রুশ ব্যাটালিয়ন ইউক্রেনীয় বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল।
এসবের মধ্যেই ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তারা দশটি প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চেয়েছে। গত রবিবার রাশিয়া ইউক্রেনের সুমি শহরে ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোর পর ওই ইচ্ছা প্রকাশ করেন জেলেনস্কি। ওই হামলায় ইউক্রেনে ৩৫ জন মারা যান। আহত হন এক শরও বেশি। সূত্র: আল-জাজিরা