
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে গত বুধবার থেকে কারাবন্দি দিবস স্মরণে বিভিন্ন আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতি বছর দেশটিতে ১৭ এপ্রিল কারাবন্দি দিবস পালিত হয়। আল-জাজিরার তথ্যানুসারে, ১৯৪৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ মানুষ ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কারাগার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে গেছে। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে পুরুষের পাশাপাশি নারী ও শিশুরাও আছে। বর্তমানেও প্রায় দশ হাজার ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি কারাগারে রয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় সাতশ জন শিশু।
প্রতিবছরই ৪০০ থেকে ১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি শিশু ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হয়। তাদের কারও কারও বয়স ১২ বছর বা তার চেয়েও কম। পুরো বিশ্বের মধ্যে ইসরায়েল একমাত্র দেশ; যারা শিশুদের জন্যও সামরিক আদালতের ব্যবস্থা রেখেছে। এই শিশুদের যখন হেফাজতে নেওয়া হয়, তখন তাদের আইনজীবীও থাকে না। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় পরিবারকেও উপস্থিত থাকার অনুমতি দেওয়া হয় না।
এই শিশুরা পরবর্তী সময়ে নির্যাতন, হয়রানি, চাপ প্রয়োগ, যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথাও জানিয়েছে। বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে তাদের বয়ানের রেকর্ড আছে।
আল-জাজিরার এক বিশ্লেষণ বলছে, ইসরায়েলি কারাগার তৈরিই করা হয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকে দমানোর মতো করে। অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লাহভিত্তিক বিসান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক উবাই আল-আবৌদি জানান, ইসরায়েলি কারাগার-ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য আসলে ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণে আনা।
আল-আবৌদি বলেন, যখন আপনার কাছে পরিসংখ্যান থাকবে যে প্রতি পাঁচ ফিলিস্তিনের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আপনি আমলে নেবেন যে, আমাদের জনগোষ্ঠীর ৫০ শতাংশ শিশু ও তাদের বয়স ১৮-এর নিচে- তখন হিসাবটা দাঁড়াবে এ রকম যে, আমাদের প্রতি দুজন পুরুষ প্রাপ্তবয়স্কের একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন ছিলেন এবং ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অপরাধী ঘোষিত হয়েছেন।
আল-আবৌদি নিজেও ২০১৯ সালে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক ছিলেন। তার মতে, এই কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ ভেঙে দেওয়া। তিনি বলেন, ইসরায়েলি কারাগারে আপনি ডাক্তার, অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, পদার্থবিদ পাবেন- ফিলিস্তিন সমাজের নাগরিকশ্রেণিকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে, তাদের দমানো হচ্ছে। কারণ ইসরায়েল চায় না কোনো ধরনের ফিলিস্তিনি সংস্থা গড়ে উঠুক, সামগ্রিকভাবে কোনো ফিলিস্তিনের কিছু গড়ে উঠুক, কোনো নেতৃত্ব গড়ে উঠুক।’ সূত্র: আল-জাজিরা