
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ নতুন মোড় নিচ্ছে। দুই দেশের পাল্টাপাল্টি শুল্কযুদ্ধের প্রভাবে ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ বিপাকে পড়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্র নাকি চীনের দিকে বেশি ঝুঁকবে, সেই বিষয় নিয়ে চিন্তিত আছে। আর এই পরিপ্রেক্ষিতে চীন নতুন করে যে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, তাতে তাদের কপালে আরও চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। চীন বলেছে, বেইজিংয়ের স্বার্থে আঘাত করে যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি করবে, তারা পাল্টা পদক্ষেপের মুখোমুখি হবে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) ওই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
এদিকে চীন এমন সময় ওই হুঁশিয়ারি দিল, যখন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশকে বেইজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য সীমিত করতে চাপ দিচ্ছে, যাতে তাদের ওপর আরোপিত শুল্কে ছাড় দেওয়া হয়।
চীন ছাড়া অন্যান্য দেশের পণ্যে আপাতত ১০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু চীনের পণ্যে শুল্কের পরিমাণ ধরা হয়েছে ১৪৫ শতাংশ। পাল্টা বেইজিংও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এই পাল্টাপাল্টি শুল্কযুদ্ধের কারণে বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের মধ্যে বাণিজ্য এখন প্রায় বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে যেসব দেশ সমঝোতার পথে হাঁটার পরিকল্পনা করছে, তাদের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখল বেইজিং। চীন বলেছে, যদি অন্য কোনো দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন বাণিজ্যচুক্তি করে, যা চীনের স্বার্থের পরিপন্থি হয়, তাহলে তারা পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। ওই সব দেশের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমেই জটিল হচ্ছে। কিন্তু কোনো পক্ষ থেকেই সমঝোতার বার্তা আসছে না। ট্রাম্প নিজে জানিয়েছেন, একাধিক দেশ তার সঙ্গে শুল্ক-সমঝোতায় আসতে চেয়েছে। সম্প্রতি কয়েকটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য কমালে বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপিত শুল্ক কমিয়ে দেবেন ট্রাম্প। এই মর্মে তিনি বেশ কয়েকটি দেশে প্রস্তাবও দিয়েছেন। সেই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরই পাল্টা হুঁশিয়ারি দিল চীন।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গতকাল বলেছেন, ‘চীনের স্বার্থে আঘাত করে কোনো দেশ যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করার কথা ভেবে থাকে, বেইজিং তার তীব্র বিরোধিতা করবে। এ ধরনের পরিস্থিতি হলে চীন কখনোই তা সহ্য করবে না। যদি এমনটি হয়, তবে বেইজিং কখনো তা মেনে নেবে না এবং দৃঢ়ভাবে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোনো একজনের স্বার্থপরতাকে চরিতার্থ করার জন্য অন্যদের স্বার্থে আঘাত করলে আদতে দুই তরফেই ক্ষতি হবে।’
এ মন্তব্যটি গত সপ্তাহে চীনের রাষ্ট্রীয় পত্রিকা চায়না ডেইলিতে প্রকাশিত একটি সম্পাদকীয়র সঙ্গে সংগতিপূর্ণ, যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘আপস’ না করার জন্য আহ্বান জানানো হয়।
ট্রাম্প এ মাসের শুরুতে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেন। গত ৯ এপ্রিল থেকে তা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর দুদিন আগে তিনি চীন ছাড়া অন্যান্য দেশের ওপর আরোপ করা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। পাশাপাশি চীনের ওপর কয়েকধাপে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক ধার্য করেন। অন্যদিকে চীনও কয়েকধাপে মার্কিন পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশে নিয়ে যায়।