
রাশিয়া ও ইউক্রেন চুক্তির খুব কাছে রয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মস্কোতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা পর এ কথা বলেন তিনি।
ট্রাম্প জানান, আলোচনার ‘ভালো একটি দিন’ পার হয়েছে। অন্যদিকে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে পুতিন ও উইটকফের আলোচনাকে গঠনমূলক হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। ইউক্রেন আলোচনায় ছিল না।
এর আগে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, বেশির ভাগ প্রধান পয়েন্টে একমত হওয়া সম্ভব হয়েছে। তিনি রাশিয়া ও ইউক্রেনকে উচ্চপর্যায়ে সাক্ষাৎ করতে এবং এই চুক্তির কাজ শেষ করতেও তাগাদা দেন।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত শুক্রবার রাতে এক বক্তব্যে বলেন, নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার জন্য রাশিয়ার ওপর আসল চাপ প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এ ছাড়া শুক্রবার দিনের ভাগে রাশিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেন, পরিপূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি নিয়ে কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে আলোচনা হতে পারে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শান্তিচুক্তিতে ইউক্রেনকে রাশিয়ার হাতে নিজেদের ভূখণ্ডের বড় একটি অংশ ছেড়ে দিতে হতে পারে।
ট্রাম্প শনিবার (২৬ এপ্রিল) রোমে পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে যান। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়া ক্রিমিয়া উপদ্বীপ রাখতে চাইলে তাতে তিনি সমর্থন দেবেন। জেলেনস্কি অবশ্য এ বিষয়টির বিরোধিতা শুরু থেকেই করে আসছেন। ক্রিমিয়া ২০১৪ সালে রাশিয়া অবৈধভাবে দখল করে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।
রোমে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বৈঠক
রোমে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বৈঠকও হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে হোয়াইট হাউসে হয়ে যাওয়া নজিরবিহীন বাদানুবাদের পর এটিই তাদের প্রথম প্রত্যক্ষ বৈঠক। দুজনের আলোচনাকে এরই মধ্যে ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ বলে অভিহিত করেছে হোয়াইট হাউস।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) হোয়াইট হাউসের যোগাযোগবিষয়ক পরিচালক স্টিভেন চেউঙ বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও জেলেনস্কি আজ ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করেছেন এবং তাদের মধ্যে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের বিষয়ে আরও বিস্তারিত শিগগিরই জানানো হবে।
জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রেই ইয়েরমাক ১৫ মিনিটের ওই বৈঠককে ‘গঠনমূলক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তবে এ বিষয়ে আর কোনো বিস্তারিত তথ্য দেননি তিনি।
মূলত পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে যোগ দিতেই রোমে অবস্থান করছেন ট্রাম্প ও জেলেনস্কি। তাদের এ বৈঠক এমন একটি সময়ে হলো, যখন ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত নিরসনের পথ খোঁজা হচ্ছে।
জেলেনস্কির দপ্তর থেকে ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের বৈঠকের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। একটি ছবিতে দেখা গেছে, দুই নেতা একে অপরের বিপরীতে একটি হলরুমে বসে আছেন। একে অন্যের সঙ্গে নিবিড়ভাবে আলোচনা করছেন। এ সময় তাদের পাশে কোনো সহায়তাকারী দেখা যায়নি।
আরেকটি ছবিতে দেখা গেছে, ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে বসে আছেন।
এর আগে হোয়াইট হাউসে নজিরবিহীন বাদানুবাদের বৈঠকের পর ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা গেছে। সে সময় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের কাছ থেকে সমালোচনার শিকার হন। তারা জেলেনস্কির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিষয়ে যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন না। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের এক সাংবাদিকও জেলেনস্কির বেশভূষা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কেন তিনি স্যুট পরেননি, তা তার কাছে জানতে চান। উত্তরে জেলেনস্কি জানান, হয়তো যুদ্ধ শেষে তিনি ‘কস্টিউম’ পরবেন। সূত্র: বিবিসি, আল-জাজিরা