বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনে (ইসলামাবাদের ভাষায় বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা) যারা অংশ নিচ্ছেন যারা তারা সবাই ভারতের মদতপুষ্ট এবং তারা ‘ভারতের ক্রীতদাস’- বলে অভিযোগ করেছেন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর জনসংযোগ দপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী।
বেলুচ স্বাধীনতাকামীদের ‘ভারতের ক্রীতদাস’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'বেলুচিস্তান পাকিস্তানের অংশ হিসেবেই থাকবে, কখনও বিচ্ছিন্ন হবে না।’
সোমবার (০২ জুন) রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তান সেনা সদর দপ্তর মিলনায়তনে স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন আহমেদ শরিফ চৌধুরী।
সম্প্রতি স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের নৈতিক মান উন্নয়নে ‘হিলাল টকস’ নামের একটি প্রকল্প শুরু করেছে পাকিস্তান। সোমবার (০২ জুন) রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তান সেনা সদর দপ্তর মিলনায়তনে স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে মত বিনিময় করেন আহমেদ শরিফ চৌধুরী।
সেখানে এই মেজর জেনারেল বলেন, ‘যেসব বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীরা বেলুচিস্তানে তৎপরতা চালাচ্ছে, তারা শুধু ভারতের মদতপুষ্টই নই, বরং ভারতের ক্রীতদাসও। বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ— বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী গোষ্ঠী)-এর পুরো আর্থিক ব্যয় নির্বাহ করে ভারত। বিএলএ হলো ফিৎনা-ই-হিন্দুস্তান (ভারত থেকে আগত ঝামেলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী); আরও স্পষ্টভাবে বললে— বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ভারতের ক্রীতদাস। ভারত তাদের অর্থ দিয়ে কিনে নিয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, ‘বিএলএকে মদত দেওয়ার মাধ্যমে ভারত শুধু পাকিস্তানের নয়, উপরন্তু এই দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলছে। আমরা বিএলএ এবং তাদের প্রভু ভারতকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই— বেলুচিস্তান পাকিস্তানের অংশ এবং পাকিস্তানেরই থাকবে। পাকিস্তানের অর্থনীতি ও সমাজের সঙ্গে বেলুচিস্তানের সম্পর্ক নিবিড় এবং একদিন বেলুচিস্তান পাকিস্তানের সবেচেয়ে ধনী প্রদেশ হবে।’
১৯৪৭ সালের আগস্টে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই বেলুচিস্তানে স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু। ব্রিটিশ আমলে এই প্রদেশে মাকরা, লাস বেলা, খারান এবং কালাতমোট-এই ৪টি করদ রাজ্য বা প্রিন্সলি স্টেট ছিল।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় মাকরা, লাস বেলা এবং খারান পাকিস্তান ইউনিয়নে যোগ দিলেও খালাতের তৎকালীন রাজা আহমেদ ইয়ার খান বালোচ তখন পাকিস্তানে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান।
পরের বছর ১৯৪৮ সালে তিনি পাকিস্তানে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন, কিন্তু এবার বেঁকে বসেন আহমেদ ইয়ার খান বালোচের ভাই প্রিন্স আগা আবদুল করিম খান বালোচ। পাকিস্তানে যোগদানের পরিবর্তে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সেই থেকে বেলুচিস্তানে স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু।
এরপর ৭ দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও বেলুচিস্তানের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্কের কোনো উন্নতি তো হয়ইনি, বরং উত্তরোত্তর অবনতি হয়েছে। রাজ্যটির স্বাধীনতাকামী রাজনৈতিক গোষ্ঠী বালোচ লিবারেশন আর্মিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। তবে এতে পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন হয়নি। বেলুচিস্তানজুড়ে বিএলএর সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সংঘাত এখন নিত্যদিনের ঘটনা।
কিন্তু পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রতিদিন সংঘাত ঘটলেও বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা সুদূরপরাহত। কারণ বেলুচিস্তানের কিছু অংশ ইরান ও আফগানিস্তানের ভূখণ্ডে পড়েছে এবং স্বাধীন বেলুচিস্তানের জন্য প্রতিবেশী ইরান ও আফগানিস্তানের সমর্থন প্রয়োজন।
কিন্তু ইরান ও আফগানিস্তানের পক্ষে ওই সমর্থন দেওয়া কখনও সম্ভব নয়। তার কারণ, পাকিস্তানের বেলুচরা স্বাধীনতা অর্জন করলে ইরান ও আফগানিস্তানের বেলুচরা স্বাধীন বেলুচিস্তানে যোগ দিতে চাইবে। তাছাড়া বর্তমানে বেলুচ আন্দোলনের নেতৃত্ব বহু ধারায় বিভক্ত, নেতাদের মধ্যে মতবিরোধও তীব্র। সূত্র : জিও টিভি
সুলতানা দিনা/