
কিয়েভে শনিবার (১০ মে) ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও পোল্যান্ডের নেতারা। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিজয় দিবসের প্যারেডের পরদিনই সামনে এসেছে এ খবর। ধারণা করা হচ্ছে, একতা প্রদর্শনেই ওই দেশ সফর করেছেন চার দেশের নেতারা।
মূলত কিয়েভে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে তাদের। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে। মস্কো যদি ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, তা হলে আবারও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে তাদের ওপর। ফরাসি এক কূটনৈতিক সূত্র তথ্যটি জানান। তবে তিনি এটিও উল্লেখ করেন যে ওই ধাপটি এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।
রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, এবারই প্রথম ইউক্রেনে একত্রে সফর করলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডেরিক মার্জ এবং পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক।
এক যৌথ বিবৃতিতে চার নেতা বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি আমরা রাশিয়াকে একটি পরিপূর্ণ ও নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে ন্যায্য ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠার আলোচনায় বসার সুযোগ তৈরি হয়।’
চার নেতা কিয়েভের এক সৌধে যুদ্ধে নিহত ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় চার নেতার সঙ্গে জেলেনস্কিও উপস্থিত ছিলেন। এমন একটি সময় এ সফর হচ্ছে যখন ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা কোনদিকে গড়াবে তা অনেকটাই অনিশ্চিত। ইউক্রেন প্রশ্নে পূর্বসূরি জো বাইডেনের পথে হাঁটছেন না যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি যুদ্ধের অবসান চাইছেন। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠকও করেছেন ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ইউরোপের নেতাদের শঙ্কা যে ট্রাম্প হয়তো রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের জন্য এমন কোনো চুক্তিতে রাজি হয়ে যাবেন, যাতে কিয়েভের স্বার্থ রক্ষা হবে না।
চুক্তি নিয়ে এ পর্যন্ত বিলম্বও কম হয়নি। রাশিয়া ও ইউক্রেন দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর আশানুরূপ ফল না আসায় যুক্তরাষ্ট্র মাঝে হুঁশিয়ারিও দিয়েছিল যে দ্রুতই অগ্রগতি না হলে আলোচনা থেকে তারা সরে দাঁড়াবে।
ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ গত শুক্রবার বলেছেন, কিছু বিষয় আমলে নেওয়া হলে রাশিয়ারও ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সমর্থন রয়েছে। এ ছাড়া গতকাল শনিবার পেসকভ বলেছেন, ‘সাময়িক যুদ্ধবিরতি হওয়ার জন্য ইউক্রেনকে পশ্চিমের সহায়তা দেওয়া থামাতে হবে। না হলে এটি শুধু ইউক্রেনের জন্য একটি সুবিধা হিসেবেই কাজ করবে।’
পেসকভ আরও জানান, রাশিয়ার সেনারা বেশ আত্মবিশ্বাসী প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হচ্ছে। ফলে এটি তাদের (ইউক্রেনের) জন্য সুবিধাজনক হবে। তিনি এটিও উল্লেখ করেন, ইউক্রেন তাৎক্ষণিকভাবে আলোচনার জন্য প্রস্তুত নয়।
রাশিয়া ইউক্রেনের এক-পঞ্চমাংশ অঞ্চল দখলে নিয়েছে এবং সেগুলো তারা ফিরিয়ে দিতে চাইছে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও বলেছেন, ইউক্রেনের এলাকা ছেড়ে দিতে হবে। তিনি রুশ অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপ ছেড়ে দেওয়ার কথাও বলেছেন। তবে রাশিয়া লড়াই থেকে এখনো সরে না আসা নিয়ে ট্রাম্প অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকবার।
এদিকে কিয়েভে সম্মেলনের আগে সেখানে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে ‘সম্ভাব্য উল্লেখযোগ্য বিমান হামলার’ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। তারা বলছে, আগামী দিনগুলোতে ওই হামলা হতে পারে। হামলার সময় কিয়েভের বাসিন্দাদের সতর্কসংকেত শোনার সঙ্গে সঙ্গে আশ্রয় নিতেও বলা হয়েছে।
জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রেই ইয়েরমাক বলেছেন, ‘এখনো অনেক কাজ বাকি, অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা করতে হবে। আমাদের অবশ্যই এ যুদ্ধের অবসান ন্যায্য শান্তির মধ্য দিয়ে ঘটাতে হবে। আমাদের অবশ্যই জোরপূর্বকভাবে মস্কোকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে হবে।’
চার দেশের নেতার সফর এমন একটি সময় হচ্ছে, যখন রাশিয়ার এককভাবে ঘোষিত তিন দিনের যুদ্ধবিরতি শেষ হতে চলেছে। ৮ থেকে ১০ মে পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি থাকার কথা জানিয়েছিল রাশিয়া।
তবে যুদ্ধবিরতির মধ্যেও হামলা ও আক্রমণ চলছে এমন প্রমাণ পেয়েছে রয়টার্স। ইউক্রেনের ঝাপোরিঝিয়া অঞ্চলে রুশ হামলায় আহত সেনাদের ফিল্ড হাসপাতালে আসতে দেখেছেন রয়টার্সের সাংবাদিকরা।
স্টানিস্লাভ নামের এক আহত সেনা বলেন, ‘কোনো যুদ্ধবিরতি হয়নি। গোলাবর্ষণ আগের মতোই হচ্ছে, ড্রোনও আগের মতোই উড়ছে, একই ঘটনা ঘটেছে গোলাবর্ষণের ক্ষেত্রেও। কোনো কিছুরই পরিবর্তন হয়নি।’ সূত্র: রয়টার্স, আল-জাজিরা।