গাজা উপত্যকার মেডিকেল সূত্রগুলো জানিয়েছে, বুধবার (১৬ জুলাই) সকাল থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজা জুড়ে অন্তত ৭৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অন্তত ২০ জন ছিলেন খাদ্যসাহায্য নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে মারা যান।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনুস এলাকায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF)-এর একটি সাহায্য বিতরণ কেন্দ্রে চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে পদদলিত হয়ে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে GHF এবং একটি স্থানীয় হাসপাতাল।
GHF জানায়, এদের মধ্যে ১৯ জন পদদলিত হয়ে এবং একজন ছুরিকাঘাতে মারা গেছেন একটি বিশৃঙ্খল ও বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে। তারা অভিযোগ করে, ‘হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সশস্ত্র ব্যক্তিরা’ এই অবস্থাকে উসকে দেয়।
তবে হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার সরকারি গণমাধ্যম অফিস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং দাবি করেছে, GHF ‘অপরাধ ধামাচাপা’ দেওয়ার চেষ্টায় হামাসের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।
খান ইউনুসের নাসের হাসপাতাল জানিয়েছে, তারা এমন ২১ জনের মরদেহ গ্রহণ করেছে, যারা গ্যাসে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে এবং পদদলিত হয়ে মারা গেছে।
এই প্রথম GHF নিজেই স্বীকার করল যে তাদের পরিচালিত কোনো সাহায্য কেন্দ্রে প্রাণহানি ঘটেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়- নাসের হাসপাতালের একটি ঠেলাগাড়িতে ৬ শিশু ও যুবকের মরদেহ রাখা, এবং একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, ‘তারা খাদ্যের জন্য মারা গেছে। শিশুদের কী দোষ ছিল?’
তিনি বলেন, ‘GHF-এর দরজার সামনে ও পেছনে তারা লোহার বেড়া বসায়। ছেলেরা সামনের দিকে ছিল, আর পেছনের মানুষজন চাপে তাদের উপর দিয়ে হেঁটে যায়।’ আর এতেই এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২১ বছর বয়সী আহত যুবক মাহমুদ ফুজো রয়টার্সকে বলেন, ‘আমি যখন সাহায্যকেন্দ্রে পৌঁছাই, তখন দেখলাম গেট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। লোকজন গাদাগাদি করতে থাকে। কেউ চাপ সহ্য করতে না পেরে পড়ে যায় এবং তাদের পিষে ফেলা হয়।’
GHF–এর এক মুখপাত্র এসব অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
GHF ইসরায়েলি সেনা নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে সাহায্য বিতরণ করে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র বলছে, হামাস যাতে ত্রাণ লুট করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা।
জাতিসংঘ এই ব্যবস্থার সমালোচনা করেছে এবং বলেছে, এটি অনৈতিক।
GHF গত মে মাসের শেষ থেকে কার্যক্রম শুরু করার পর থেকেই প্রায় প্রতিদিনই খাদ্য নিতে গিয়ে ফিলিস্তিনিদের নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, তাদের অনেকেই ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে মারা গেছেন।
জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর জানায়, গত ছয় সপ্তাহে GHF-এর দক্ষিণ ও মধ্য গাজার চারটি বিতরণকেন্দ্রের আশপাশে মোট ৬৭৪ জন নিহত হয়েছেন। আর জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থার ত্রাণ বহরের রুটে আরও ২০১ জন নিহত হওয়ার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধ এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৮ হাজার ৫৭৩ জনকে হত্যা করেছে এবং ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬০৭ জনকে আহত করেছে।
অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলে চালানো হামলায় আনুমানিক ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হন এবং ২০০-র বেশি মানুষকে জিম্মি করে নেওয়া হয়। সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি