
রাশিয়ার বিমানবাহিনীর ওপর অন্যতম সাহসী হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। ড্রোন ব্যবহার করে এ হামলায় ৪০টিরও বেশি রুশ বোমারু বিমান ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা (এসবিইউ)।
রবিবার (১ জুন) এই হামলা চালানো হয় বলে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন এসবিইউর এক কর্মকর্তা।
রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির আলোচনাকে এগিয়ে নিতে তুরস্কের ইস্তানবুলে বৈঠকে বসার আগে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এমন হামলার খবর দেওয়া হলো। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, একটি পূর্ণ ও শর্তহীন যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছার লক্ষ্যে রবিবার সকালেই একটি প্রতিনিধিদল তুরস্কে রওনা হবে। অন্যদিকে, রুশ গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আলোচনায় যোগ দিতে ক্রেমলিনের একটি প্রতিনিধিদল তুরস্কের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছে।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই হামলার ব্যাপারে তেমন কিছু বলা হয়নি। রয়টার্সের পক্ষ থেকেও ইউক্রেনের ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবির সত্যতা তাৎক্ষণিকভাবে তারা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
বিবিসি জানিয়েছে, হামলাটির খবর জানিয়ে নাটকীয় একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে এসবিইউ। এই ভিডিওতে সাইবেরিয়ার ইরকুৎস্ক অঞ্চলের বেলায়া বিমানঘাঁটিতে ড্রোন হামলার দৃশ্য দেখা যায়। ফুটেজে বিস্ফোরণের আওয়াজ, আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আরেকটি হামলা চালানো হয়েছে মুরমানস্কের কাছে ওলেনিয়া বিমানঘাঁটিতে। রুশ সংবাদমাধ্যমও হামলার খবর নিশ্চিত করেছে এবং দাবি করেছে, তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে। ইরকুৎস্কের ঘটনাও তারা রিপোর্ট করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসবিইউর এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘রুশ টিইউ-৯৫ এবং টিইউ-২২ স্ট্র্যাটেজিক বোমারু বিমান ড্রোন হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়। এ যুদ্ধবিমানগুলো দিয়ে রাশিয়া ইউক্রেনের বিভিন্ন জায়গায় প্রায়ই দূরপাল্লার মিসাইল ছুড়ে।’
যুদ্ধের সম্মুখ সারি থেকে প্রায় ৪ হাজার ৩০০ কিলোমিটার দূরের রুশ ঘাঁটিতে প্রথমবারের মতো এই ধরনের হামলা চালিয়েছে কিয়েভ।
এক বিবৃতিতে এসবিইউ বলেছে, ‘শত্রু রাশিয়ার কৌশলগত বোমারু বিমানগুলো একের পর এক আগুনে পুড়ছে। বোমারু বিমান ধ্বংসের লক্ষ্যে একটি বড় পরিসরের বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এই অভিযানের আওতায় ৪০ টিরও বেশি বিমানকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়, সাইবেরিয়ার ইরকুৎস্কের উত্তরে বেলায়া বিমানঘাঁটিতে রাশিয়ার কৌশলগত বোমারু বিমানগুলোতে আগুন জ্বলছে। এসব বোমারু বিমান সাধারণত দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের জন্য ব্যবহার করা হয়।
রাশিয়ার ইরকুৎস্ক অঞ্চলের গভর্নর ইগোর কোবজেভ বলেছেন, উসোলস্কি জেলার স্রেদনি গ্রামের কাছের একটি সামরিক ইউনিটে ড্রোন হামলা হয়েছে। তবে তিনি কৌশলগত বিমান ঘাঁটির বিষয়ে কিছু জানাননি। টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক ভিডিওতে তিনি বলেন, ঘাঁটির আকাশে ড্রোনের শব্দ শোনা গেছে। এ সময় আকাশে বিশাল ধোঁয়ার কুণ্ডলি উড়তে দেখা যায়।
কোবজেভ বলেন, সাইবেরিয়ার এই অঞ্চলে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর প্রথম হামলার ঘটনা এটি। তবে হামলায় কতসংখ্যক ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে তা এখনো পরিষ্কার নয়। তার দাবি, ড্রোনগুলো একটি ট্রাক থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।
ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যম কিয়েভ ইন্ডিপেনডেন্টকে জানান, রাশিয়া যেসব যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে তাদের অঞ্চলে হামলা চালায় আজ তারা সেসব বিমানে ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছেন।
সংবাদদাতারা বলছেন, এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের ড্রোন হামলার বিষয়টি সরকারিভাবে নিশ্চিত করা হয়নি। যদি প্রকৃতই এমন ঘটে থাকে, তা হলে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে যতগুলো হামলা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম বড় মাপের হামলা হবে এটিই।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন। কিন্তু এতে সফল হননি তিনি। তবে দেশ দুটিকে আলোচনার টেবিলে বসাতে সমর্থ হয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু যুদ্ধবিরতির আলোচনা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।