রাশিয়ার সর্ববৃহৎ আকাশ হামলায় নাস্তানাবুদ ইউক্রেন। প্রেসিডেন্ট ভলোদেমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাতভর চলা হামলায় একাধিক ধাপে রাশিয়া ৭২৮টি ড্রোন ও ১৩টি ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইউক্রেনজুড়ে বিভিন্ন শহরে। এ হামলা সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় আকাশ হামলা।
এই হামলার কড়া নিন্দা করে জেলেনস্কি বলেন, ঠিক এমন এক সময়ে এই হামলা হলো যখন শান্তি প্রতিষ্ঠা ও যুদ্ধবিরতির জন্য ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু একমাত্র রাশিয়াই প্রতিটি শান্তি প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করে চলেছে।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে নতুন করে অস্ত্র সহায়তা পাঠানোর ঘোষণা দেন - যা গত সপ্তাহে স্থগিত হয়ে গিয়েছিল বলে মার্কিন গণমাধ্যমে দাবি করা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ট্রাম্প নিজে এই স্থগিতাদেশ সম্পর্কে জানতেন না।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ ঝাড়েন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর। সাংবাদিকদের সঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘আলোচনায় পুতিন আমাদের দিকে অনেক বাজে কথা ছুড়ে দেয়। সে সব সময় আমাদের সঙ্গে ভদ্রভাবে কথা বলে, কিন্তু আসলে কিছুই করে না।’
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি বেশ ঠান্ডা মাথায় নিচ্ছি। ট্রাম্প সাধারণত একটু রুক্ষ ভাষায় কথা বলেন।’
দুই নেতার মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ থাকলেও এখন পর্যন্ত তা ইউক্রেন সংঘাতে কোনো যুদ্ধবিরতিতে রূপ নেয়নি-যা একসময় ট্রাম্প বলেছিলেন তিনি একদিনেই বাস্তবায়ন করতে পারবেন।
গত সপ্তাহে পুতিনের সঙ্গে এক ফোনালাপের পর ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি খুব হতাশ। সে (পুতিন) এখনো থামতে চায় না, কেবল মানুষ হত্যা করেই যাচ্ছে। এটা কোনো ভালো বিষয় না।’
ট্রাম্প প্রশাসনের ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মার্কিন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্তে সম্মতি দিয়েছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এবং প্রতিরক্ষা নীতির আন্ডার-সেক্রেটারি এলব্রিজ কলবি।
মঙ্গলবার সাংবাদিকরা ট্রাম্পের কাছ থেকে জানতে চান, ‘এই সিদ্ধান্ত কে নিয়েছিলেন? পাশে বসা হেগসেথের দিকে তাকিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জানি না। আপনি আমাকে বলুন।’
পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার ফলে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ১০টি প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করতে পারে বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম Axios। ইউক্রেন এই আন্তঃবাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহার করে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করার চেষ্টা করছে।
যদিও পূর্ব ইউক্রেন ও রাজধানী কিয়েভ নিয়মিত হামলার মুখে পড়ে, রাশিয়ার আঘাত থেকে দেশটির কোনো অংশই রেহাই পায়নি।
মঙ্গলবার রাতের ভয়াবহ হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লুটস্ক শহর, যেটি পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে মাত্র ৯০ কিলোমিটার দূরে এবং সামরিক ও মানবিক সহায়তা পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
এছাড়া পশ্চিমাঞ্চলের লভিভ ও রিভনে শহরেও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।
চলতি বছর শুরুর দিকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দুই দফা যুদ্ধবিরতির আলোচনা হলেও এরপর আর কোনো বৈঠকের তারিখ নির্ধারিত হয়নি। কিয়েভ কিংবা মস্কো-কোনো পক্ষই বর্তমানে কূটনীতিকে আশাব্যঞ্জক পথ মনে করছে না।
এর মধ্যেই ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার গ্রীষ্মকালীন সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পেসকভ বুধবার (৯ জুলাই) বলেন, ‘আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিনই ইউক্রেনকে নতুন বাস্তবতা মেনে নিতে হচ্ছে।’ সূত্র: বিবিসি
মাহফুজ/