
বিভিন্ন দেশে গুপ্তচরবৃত্তি নতুন ঘটনা নয়। তবে অপারেশান সিঁদুরের পর থেকেই রীতিমতো অস্বাভাবিক হারে গুপ্তচর সন্দেহে গ্রেপ্তার হচ্ছেন বেশ কিছু ভারতীয় নাগরিক। সেই লম্বা নামের তালিকায় রয়েছেন, হরিয়ানার ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রা, সিআরপিএফ জওয়ান মোতি রাম জাট, রাজস্থানের সরকারি কর্মী শকুর খান-সহ একাধিক সন্দেহভাজন। তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির বিভিন্ন থানার পুলিশ এবং গোয়েন্দা বিভাগ।
তবে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি, সিআরপিএফ জওয়ান মোতি রাম জাটের গ্রেপ্তারের ঘটনাটিকে সুরক্ষা বাহিনীর কর্তৃপক্ষকে বেশি চিন্তায় ফেলেছে।
বুধবার (০৪) মোহালি থেকে গ্রেপ্তার হন আরেক ইউটিউবার জসবীর সিং। পাঞ্জাব পুলিশ জানায়, জ্যোতি মালহোত্রার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল জসবীরের।
সোমবার (০২) কলকাতার বেশ কিছু জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে এনআইএ। এর পর মহম্মদ মাসুদ আলম নামে এক ট্র্যাভেল এজেন্টকে জেরা করেন এনআইএ কর্মকরতারা। তাকে সন্দেহভাজন টাকা লেনদেনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। দিল্লি থেকে গ্রেপ্তার সিআরপিএফ জওয়ান মোতি রাম জাটের সূত্র ধরেই এই তল্লাশি চালানো হয়।
এছাড়া মঙ্গলবার (০৩)পাঞ্জাব এবং রাজস্থান থেকে গ্রেপ্তার হন আরো দুই ব্যক্তি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গুপ্তচরেরা সব দেশেই থাকেন। তবে রাজনৈতিক বা সামরিক শান্তি বিঘ্নিত হলে তাদের গতিবিধি বাড়ে।
তবে ভারতের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশের গুপ্তচরের ধরপাকড় নতুন নয়। সাধারণত অর্থ, ধর্মীয় মত বা রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রভাব ইত্যাদির টোপে সাধারণ মানুষ এই কাজে জড়িয়ে দেন। সব সময় গোপন তথ্য পাচার নয়, সাধারণ দৈনন্দিন তথ্য সরবরাহ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।’
তার মতে, ‘কারো কাছে তথ্য থাকলে এবং কোথায় বা কার সেই তথ্য প্রয়োজন তা জানা থাকলেই, সে বিপজ্জনক।’
সুরক্ষা বাহিনীতে গুপ্তচর!
সিআরপিএফ জওয়ান মোতি রাম জাটের গ্রেপ্তারের ঘটনায়, গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা ডিডাব্লিউকে জানান, ‘চর যেই হোক না কেন, তাদের হ্যান্ডলাররা সাধারণ মানুষ হন। ফোর্সের কেউ হন না। সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা বিভাগ শক্তিশালী। এখন প্রায় সব তথ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাওয়া যায়। তবে যে কোনো অপারেশনের আগে অঞ্চল প্রস্তুত করার জন্য গুপ্তচরদের কাজে লাগানো হয়। তাই যে কোনো সুরক্ষা বাহিনীর কেউ মোল বা অন্য দেশের চর হলে তা বিপদের।’
সাধারণত সুরক্ষা বাহিনীর তথ্যের গোপনীয়তার বিভিন্ন স্তর আছে। সামরিক বাহিনীর সংখ্যা কত হবে বা পারমাণবিক ওয়ারহেডসের ঠিকানা কী হবে, তা গোপন বা ক্লাসিফায়েড তথ্য। এ ধরনের তথ্য সম্পূর্ণ গোপনীয়তার মোড়কে মুড়ে ফেলা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতার রাজনৈতিক মহলের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা অবশ্য বলেন,‘গুপ্তচর হওয়ার জন্য সামরিক বাহিনী বা পুলিশ বাহিনীতে থাকার প্রয়োজন হয় না। হ্যাঁ, কেউ যদি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকে তা হলে তথ্যের উপর তার নিয়ন্ত্রণ বেশি থাকবে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে দিয়েও যথেষ্ট তথ্য পাচার করা সম্ভব।’
সুলতানা দিনা/