
ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধের মধ্যে টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রে ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (০৬ জুন) নিজের এক্স-একাউন্টে এই মার্কিন ধনকুবের একটি পোল পোস্ট করে তার ২২ কোটি অনুসারীকে জিজ্ঞাসা করেন তারা কি মনে করেন যে, ‘আমেরিকাতে এমন একটি নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি করার সময় এসেছে যা আসলে মধ্যবর্তী ৮০%-এর প্রতিনিধিত্ব করে।’
এর একদিন পর শুক্রবার (০৭ জুন), মাস্ক জানান, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮০ শতাংশ মানুষ এই ধারণাটিকে সমর্থন করেছেন। এরপর তিনি আবার পোস্ট করেন, ‘এটাই ভাগ্য!’
এরপর মাস্ক একজন তার এক অনুসারীর পরামর্শে দলের নাম ‘আমেরিকা পার্টি’ রাখার পরামর্শ দেন। নামটি আমেরিকা প্যাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাস্ক এই রাজনৈতিক অ্যাকশন কমিটি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ২০২৪ সালে ট্রাম্প এবং অন্যান্য রিপাবলিকান প্রার্থীদের নির্বাচিত করতে ২৩৯ মিলিয়ন ডলার নির্বাচনী তহবিল প্রদান করে।
নতুন রাজনৈতিক দল শুরু করা বলা যতটা সহজ, করা ততটাই সহজ হবে। তবে ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান দল এবং কিছু বৃহৎ তৃতীয় পক্ষের ইতিমধ্যেই প্রায় প্রতিটি রাজ্যে ব্যালট পেপার ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তাই প্রতিযোগিতার ময়দানে আসতে হলে একটি নতুন দলকে তার প্রার্থীদের ব্যালটে আনার জন্য রাজ্য-ভিত্তিক নিয়মের শর্ত পূরণ করেই আসতে হবে।
সেক্ষেত্রে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মাস্ক -আইনত আমেরিকা পিএসিতে সীমাহীন অর্থ ঢালতে পারবেন কারণ এটি একটি স্বাধীন পিএসি হিসাবে সংগঠিত। ফেডারেল নির্বাচন কমিশনের ২০২৫-২০২৬ সালের ফেডারেল নির্বাচনের জন্য অবদানের সীমা অনুসারে, আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক দলগুলোতে অনুদানের পরিমাণ ১ মিলিয়ন ডলারেরও কম। যা ইলন মাস্কের হাতের ময়লা!
এদিকে, নতুন রাজনৈতিক দল শুরু করার বিষয়ে মাস্কের চিন্তাভাবনা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, তিনি রাজনীতিতে জড়িত থাকার পরিকল্পনা করছেন এবং ট্রাম্পের প্রভাবকে টেক্কা দিতে চান।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মাস্ক নিজের এক্স একাউন্টে এক পোস্টে কংগ্রেসের রিপাবলিকানদের উদ্দেশ্যে রীতিমতো স্পষ্ট প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘যারা এখনও নিশ্চিত নন যে তিনি তার পক্ষে থাকবেন নাকি রাষ্ট্রপতির পক্ষে থাকবেন, তারা সিদ্ধান্ত নিন। ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ৩.৫ বছর বাকি আছে, কিন্তু আমি ৪০ বছর ধরে থাকব।’
গত বছর ট্রাম্পকে জোরালোভাবে সমর্থন করলেও এবার মাস্ক তার অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। গত মার্কিন নির্বাচনে তিনি ট্রাম্পপন্থী একটি রাজনৈতিক গ্রুপ গঠন ও তাতে ২৬০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুদান দিয়েছিলেন। এমনকি চলতি বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্প তাকে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি’ (ডোজ) এর সহ-প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। বিশেষ এই বিভাগের কাজ ছিল, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অকার্যকর ব্যয় কমানো এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অবসান ঘটানো।
কিন্তু ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্য বিবাদে জড়িয়ে এই সবকিছু থেকে সরে এসেছেন ইলন মাস্ক। এই পরিস্থিতির মধ্যেই মাস্ক তার এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ২২ কোটি অনুসারীর মধ্যে একটি জরিপ চালান। ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন—‘আমেরিকায় কি এমন একটি নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি করার সময় এসেছে যা আসলে মাঝামাঝি অবস্থানে থাকা ৮০ ভাগ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করবে?’
এই জরিপে ৫৬ লাখের বেশি সাড়া পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই মাস্কের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন।
এদিকে মাস্ক- ট্রাম্পের বিরোধ এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সবচেয়ে বেশি চর্চার বিষয়। মাস্ক সেখানে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জেফরি অ্যাপস্টেইনের কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনেন এবং তার অভিশংসনের দাবিও জানান।
এই বিরোধ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানান প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ বলেন, ‘এই দুটি বিশাল ইগো একসঙ্গে থাকার জন্য জন্মায়নি। এই বিচ্ছেদ বহু আগেই হওয়া উচিত ছিল।’
সুলতানা দিনা/