
মায়ানমারে ইয়াংগুনের ইউনিভার্সিটি অ্যাভিনিউ রোডের ৫৪ নম্বর প্লটের ০.৮ হেক্টর (১.৯৭ একর) জমি জুড়ে বিস্তৃত ঐতিহাসিক দোতলা বাড়িটি নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চি’র বাড়ি হিসেবেই বিশ্বজুড়ে পরিচিত।
এই বাড়িটি উত্তরাধিকারসূত্রে মায়ানমারের বিদ্রোহী গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে ধারণ করছে। ইনিয়া হ্রদের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত এই বাড়িটিকে খুব স্নেহের সাথে ‘পাওয়ার ৫৪’ নামেও ডাকা হয়। বর্তমানে অং সান সু চি এবং তার বড় ভাই অং সান ও-এর ও মা দাউ খিন চি-এর নামে এই সম্পত্তিটির একটি ছোট আউটবিল্ডিং রয়েছে।
এবার উত্তরাধিকার সূত্রে এই বাড়িটির একটি অংশ বিক্রির জন্য অনুমতি চেয়ে সম্প্রতি আবেদন করেছেন সু চি’র বড় ভাই অং সান ও। তবে ও-এর দাখিল করা ওই আবেদনপত্রের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক আপত্তি জানিয়েছে সুচির আইনি দল।
মিয়ানমার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিজিমা জানায়, গত ৫ জুন ইয়াংগুনের কামায়ুট জেলা আদালতে ওই আপত্তিপত্র দাখিল করা হয়। আদালত আগামী ১২ জুন শুনানির দিন ধার্য করেছে।
এর আগে গত ২৯ মে অনুষ্ঠিত এক শুনানিতে ১.৯২৩ একরের ওই সম্পত্তি থেকে ১ একর জমি বিক্রির অনুমতি চেয়েছিলেন অং সান ও। এ ক্ষেত্রে বাকি ০.৯২৩ একর জমিতে সুচির বাসভবন ও সংলগ্ন জমি আলাদা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।
এদিকে অং সান সু চি বাসভবনসংলগ্ন এই সম্পত্তিটি (প্লট নম্বর ৫৪) এর আগেও চারবার নিলামে তোলা হয়েছিল অং সান ও-এর পক্ষ থেকে। তবে প্রতিবারই এই সম্পত্তি কেউ কিনতে আসেনি। একপর্যায়ে অং সান ও প্রস্তাব দিয়েছিলেন, নিলামের ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করতে অং সান সু চিকে অনুমতি দেওয়া হোক। কিন্তু আদালত সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেয়। এরপরই তিনি জমির একটি অংশ বিক্রির বিকল্প প্রস্তাব দাখিল করেন।
অং সান সু চির আইনি দল বারবার এই সম্পত্তি বিক্রির বিরোধিতা করে আসছে। কারণ আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ বা মামলায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ সু চি’র নেই।
২০১৬ সালে পশ্চিম ইয়াংগুন জেলা আদালত রায় দিয়েছিল, ১. ৯২৩ একরবিশিষ্ট ওই প্লটের দোতলা বাসভবনসহ অর্ধেক জমি অং সান সু চিকে এবং বাকি অংশ ও একতলা একটি ঘর অং সান ও-কে দেওয়া হবে। তবে পরবর্তীতে পুরো সম্পত্তি বিক্রি করে লাভ সমান ভাগে ভাগ করার দাবি জানান অং সান ও। এ ছাড়া তিনি তার মা খিন কি’র ভাগনে খিন মং-এর নামে থাকা বাড়ি ও জমিটিও এই সম্পত্তি বণ্টনের অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেন। তার এই দাবি শুরুতে আদালতের সব পর্যায়ে খারিজ হয়ে যায়।
তবে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর ২০২২ সালে একটি বিতর্কিত রায়ে ইউনিয়ন সুপ্রিম কোর্ট তাঁর আপিল মঞ্জুর করে।
এদিকে, বর্তমানে মিয়ানমারের ছায়া সরকার হিসেবে পরিচিত জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি) ৫৪ নম্বর ইউনিভার্সিটি অ্যাভিনিউয়ের এই ভবনটিকে ‘অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
এই সরকার স্পষ্টকরে জানায়, এই সম্পত্তি বিক্রি, মালিকানা হস্তান্তর বা ভাঙচুর সম্পূর্ণ অবৈধ এবং এর কোনো লঙ্ঘন হলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।
বর্তমানে সু চির রাজধানীর একটি কারাগারের বিশেষভাবে নির্মিত ভবনে আছেন। সেখানে তার সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাতের অনুমতি নেই। এমনকি আইনজীবীদের সঙ্গেও তাকে দেখা করতে বাধা দেওয়া হয়।
পূর্ববর্তী সামরিক শাসনামলে, অং সান সু চি ১৯৮৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ২১ বছরের মধ্যে ১৫ বছর ইয়াঙ্গুনের এই বাসভবনে গৃহবন্দী ছিলেন। এখান থেকেই একসময় তিনি জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিতেন।
এখনও বাড়িটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে রয়ে গেছে। এটি এনএলডির ( সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি) লড়াকু ময়ূরের লোগো দিয়ে সজ্জিত।
এছাড়া বাড়িটি অং সান সু চির বাবা জেনারেল অং সানের ছবি দিয়েও সাজানো আছে। তিনি যুক্তরাজ্য থেকে মায়ানমারের স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৪৭ সালে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হাতে যখন তিনি নিহত হন,তখন তার মেয়ে সু চির বয়স ছিল দুই বছর।
সুলতানা দিনা/