
ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র হামলা করায় বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও গণবিক্ষোভ। গত রবিবার ভোররাতে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বিমান হামলার পর ওই দিন ইরানের রাজধানী তেহরানে হাজারও মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানান। শুধু ইরান নয়, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, যুক্তরাজ্যের লন্ডন, ফ্রান্সের প্যারিস, জাপানের টোকিও, ভারতের কলকাতা, পাকিস্তানের ইসলামাবাদ, ইরাকের বাগদাদসহ বিভিন্ন শহরে এই হামলার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ মিছিল ও প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তেহরানে তীব্র প্রতিবাদ, প্রেসিডেন্টও পথে
রবিবার সকাল থেকেই ইরানের রাজধানী তেহরানজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। আজাদি স্কয়ার, ফার্দৌসি স্কয়ার, ইমাম হোসেইনি মসজিদের সামনের এলাকা ও পার্লামেন্ট ভবনের সামনে জমায়েত হন হাজারও মানুষ। প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান নিজেই আজাদি স্কয়ারে এসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেন। বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না’, ‘আমাদের নিরাপত্তা ফিরিয়ে দাও’।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া
ইরানে হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও দেখা গেছে ব্যাপক জনরোষ। নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, ওয়াশিংটন ডিসি, বোস্টন, সান ফ্রান্সিসকো, শিকাগো, ওরেগনের বেন্ড এবং ভার্জিনিয়ার রিচমন্ড শহরে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। সিএনএনের তথ্যমতে, রোববার এসব শহরে হাজার হাজার মানুষ ‘ইরান থেকে হাত সরাও’, ‘চাকরি চাই, যুদ্ধ নয়’ স্লোগান নিয়ে রাস্তায় নামেন।
বিক্ষোভকারীদের অনেকে জানান, তারা আশঙ্কা করছেন এই হামলা একটি বড় পরিসরের যুদ্ধের সূচনা হতে পারে। অনেকেই অভিযোগ করেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত জনগণের দৈনন্দিন সংকট-যেমন শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসা ভাড়ার সমস্যাগুলো থেকে দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা।
লস অ্যাঞ্জেলেসের এক বিক্ষোভকারী নুর আবদেল-হাক বলেন, ‘আমার পরিবার মধ্যপ্রাচ্যে থাকে। তাই এই যুদ্ধ আমার ব্যক্তিগত ভয় ও আশঙ্কার উৎস।’
নিউইয়র্ক ও বস্টনে বিক্ষোভকারীদের বার্তা
নিউইয়র্ক শহরের মিডটাউনে শতাধিক মানুষ ‘হ্যান্ডস অব ইরান’ লেখা ব্যানার নিয়ে মিছিল করেন। আয়োজক ইভেট ফেলারকা বলেন, ‘এই হামলা বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।’ বস্টনের কমন পার্কেও শতাধিক মানুষ সমবেত হয়ে সিটি হল পর্যন্ত মিছিল করেন। ম্যাসাচুসেটস পিস অ্যাকশন সংগঠনের পরিচালক ব্রায়ান গারভে বলেন, ‘আমরা বছরের পর বছর ধরে একই ভুল করছি।’
ইউরোপ ও এশিয়ায় প্রতিবাদ
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ইরানি দূতাবাসের সামনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার পর থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয়। একপর্যায়ে ইরানের পক্ষে ও বিপক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হলে পুলিশ সেখানে নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং আটজনকে গ্রেপ্তার করে।
ফ্রান্সের প্যারিস, নেদারল্যান্ডসের হেগ শহর এবং জাপানের টোকিওতে মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। হেগ শহরে ন্যাটো সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত বিক্ষোভে ‘ইরান যুদ্ধ নয়’ লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে।
ভারতের প্রতিবাদ মঞ্চেও ইরান
ভারতের কলকাতায় সোশ্যাল ইউনিটি সেন্টার অব ইন্ডিয়ার (এসইউসিআই) উদ্যোগে মার্কিন হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে মার্কিন আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানান।
সমালোচনার মুখে ট্রাম্প প্রশাসন
বিক্ষোভকারীদের বড় অংশ ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছেন। নির্বাচনি প্রচারে তিনি বলেছিলেন, ‘বিদেশে সামরিক জড়িত থেকে সরে আসবেন।’
অথচ বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি আবার এক নতুন সংঘাতের দ্বার উন্মোচন করছেন।
ওরেগনের বেন্ড শহরের এক আয়োজক বলেন, ‘এই ধরনের সিদ্ধান্ত কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া নেওয়া বেআইনি। প্রেসিডেন্ট নির্বাহী ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন।’