ঢাকা ২৪ আষাঢ় ১৪৩২, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে ইরানের প্রতিরক্ষা

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫, ১১:২১ এএম
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে ইরানের প্রতিরক্ষা
ছবি: সংগৃহীত

ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের একাধিক পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার মধ্য দিয়ে পাল্টে যাচ্ছে এ যুদ্ধের গতিপথ। পাল্টাপাল্টি হামলা অব্যাহত থাকলেও ইরানের আকাশসীমায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের দাবি করছে ইসরায়েল। অর্থাৎ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় ইরানের দুর্বলতার বিষয়টি এখন বিশেষজ্ঞদের চর্চায়। 

বিশ্লেষকদের আলোচনায় রয়েছে, ইরান কীভাবে তাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে পারত। কোন দুর্বলতার কারণে ইসরায়েল সহজেই ইরানের আকাশসীমা দখলে নিতে পারছে। ইসরায়েল অতীতেও ইরানকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তবে সর্বশেষ চলমান এই অভিযান পূর্ববর্তী হামলাগুলোর চেয়ে অনেক বেশি বিস্তৃত। ইরান কেবল উল্লেখযোগ্য প্রাণহানির শিকার হয়নি, বরং তাদের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক মেরিন ও ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্রায়ান বারলেটিকের বরাতে মিলিটারি ওয়াচ ম্যাগাজিন ইরানের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কিছু বিশ্লেষণ তুলে ধরেছে। এতে বলা হয়, বিভিন্ন বিশ্লেষণে উঠে এসেছে ইরান দেশের অভ্যন্তরে পশ্চিমা ও ইসরায়েল-সমর্থিত মিলিশিয়াদের কার্যক্রম মোকাবিলায় তুষ্ট ছিল। পাশাপাশি ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে পর্যাপ্ত সমন্বয়ের অভাব নিয়েও সমালোচনা আছে। এতে বলা হয়, ইরানের প্রতিরক্ষার অন্যতম বড় দুর্বলতা হলো আধুনিক যুদ্ধবিমানের অভাব। দেশটির ১৬টি যুদ্ধবিমান স্কোয়াড্রন বহু আগেই প্রযুক্তিগতভাবে অপ্রচলিত হয়ে পড়েছে। ফলে জাতীয় আকাশসীমা রক্ষার দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে মাটিভিত্তিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোননির্ভর পাল্টা হামলার ওপর নির্ভরশীল। ফলে যুদ্ধবিমান থেকে কোনো কার্যকর সহায়তা মেলেনি। এই প্রেক্ষাপটে ইরানের সমর্থকরা কেবল ইরান সরকারের প্রতি নয়, রাশিয়া ও চীনের প্রতিও সমালোচনামূলক মনোভাব দেখিয়েছেন। কারণ তারা আধুনিক যুদ্ধবিমান সরবরাহে যথেষ্ট ভূমিকা নেয়নি। যদিও ইরান ইতোমধ্যেই এসইউ-৩৫ যুদ্ধবিমানের অর্ডার দিয়েছে। তার পরও তা সরবরাহ না হওয়ায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে সমালোচনা হচ্ছে। 

এই সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রায়ান বারলেটিক বলেন, রাশিয়া বা চীনের পক্ষে ইরানকে কার্যকর যুদ্ধবিমানের বহর সরবরাহ করা বাস্তবসম্মত ছিল না। তিনি যুক্তি দেন- ধরুন, রাশিয়া এসইউ-৩৫ নিজেরা উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে বিনামূল্যে ইরানকে দিলেও কয়েক বছর পর্যন্ত ইরান সেগুলো কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারত না। এমনকি এসইউ-৩৫ পেলেও সেগুলোর পক্ষে এফ-৩৫-কে প্রতিহত করাটা অবাস্তব। কেবল সাম্য অর্জন করতেও ইরানকে ১০০-৩০০টি যুদ্ধবিমান, প্রশিক্ষিত পাইলট, গ্রাউন্ড ক্রু, জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণ অবকাঠামো- সবকিছু প্রয়োজন হতো। ১০ বছর আগে শুরু করলেও তারা এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারত না বলে দাবি বারলেটিকের। এই বক্তব্যের পেছনে বারলেটিক আরও বলেন, চীন যদি ইরানে নতুন যুদ্ধবিমান রেখে যায়, তা ব্যবহারেও একই মাত্রার প্রস্তুতি দরকার হবে। কারণ কয়েকটি বিমান যথেষ্ট নয়, শতাধিক লাগবে।

তার বক্তব্য অনুযায়ী, রাশিয়া ও চীন ইতোমধ্যেই তাদের সাধ্যের সবকিছু দিয়ে ইরানকে সাহায্য করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা ব্লকের সমালোচক হিসেবে পরিচিত বারলেটিকের এই মূল্যায়নকে অনেকেই রাশিয়া ও কিছুটা চীনের দায় এড়ানোর চেষ্টা বলে মনে করছেন।

বারলেটিকের বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তার কিছু দাবি যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ। সবচেয়ে লক্ষণীয় হলো- তিনি বলেছেন, ইরানকে একটি কার্যকর যুদ্ধবিমানের বহর গড়তে ১০ বছরেরও বেশি সময় লাগবে। বাস্তবে, ইরান এরই মধ্যে বৃহৎসংখ্যক যুদ্ধবিমান পরিচালনা করে। যার মধ্যে আছে রুশ মিগ-২৯, এসইউ-২৪ এম, এসইউ-২২ ও চীনা জে-৭। এমনকি তারা ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে মার্কিন এফ-১৪ পরিচালনা করে আসছে, যেটি বিশ্বের অন্যতম জটিল ও রক্ষণাবেক্ষণনির্ভর বিমান। তাই মিগ-২৯ বা এফ-১৪ থেকে এসইউ-৩০এসএম বা মিগ-৩৫-এর মতো আধুনিক বিমানে রূপান্তর করতে ১০ বছর লাগবে- এই দাবি বাস্তবতা-বিবর্জিত।

মিলিটারি ওয়াচ ম্যাগাজিন তাদের বিশ্লেষণে আরও বলে, ভারতের মতো দেশ, যেখানে ২০০০-এর দশকে মাত্র দুই বছরের মধ্যে মিগ-২৯ থেকে এসইউ-৩০এমকেআইয়ের মতো ভারী, আধুনিক যুদ্ধবিমানে রূপান্তর করা সম্ভব হয়েছে, সেখানে ইরানের মতো অভিজ্ঞ দেশও দ্রুত এই পরিবর্তন করতে সক্ষম। বারলেটিকের প্রশ্নবিদ্ধ আরেকটি দাবি হলো- ইরানকে কার্যকর প্রতিরক্ষা গড়তে ১০০-৩০০টি যুদ্ধবিমান এবং মার্কিন-ইসরায়েলি পর্যায়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পাইলট দরকার। বাস্তবে, তুলনামূলকভাবে কমসংখ্যক (৫০টির মতো) উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ‘৪+ জেনারেশন’ যুদ্ধবিমানও ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারত। কারণ যুদ্ধ ইরানের সীমান্তবর্তী এলাকায় হচ্ছে। যেখানে ইসরায়েলি বিমানগুলোর জন্য ট্যাংকার-নির্ভরতা রয়েছে এবং দীর্ঘ দূরত্বে জ্বালানি ট্যাংক বহন করতে হচ্ছে। এদিকে আধুনিক ইরানি যুদ্ধবিমানগুলোর পক্ষে দেশীয় আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা সম্ভব। এ ছাড়া ইসরায়েলের প্রায় ২০০টি এফ-১৫ ও এফ-১৬ বিমান ১৯৯০-এর দশকের প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। যেগুলো আধুনিক চীনা জে-১০সি, জে-১৬ বা রুশ এসইউ-৩৫-এর তুলনায় অনেক পিছিয়ে। আধুনিক বিমানের দূরপাল্লার রাডার ও ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা ইসরায়েলের ট্যাংকার বিমানের জন্যও হুমকি হতে পারত। এমনকি যদি ইসরায়েল হামলা চালাত, তবুও এই আধুনিক যুদ্ধবিমানগুলো ইসরায়েলকে বাধ্য করত তাদের এফ-৩৫ স্কোয়াড্রনকে আকাশে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যস্ত রাখতে। যার ফলে মাটিভিত্তিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বা স্থাপনা লক্ষ্যবস্তুতে হামলার সক্ষমতা কমে যেত।

যদিও বারলেটিক যথার্থভাবে বলেছেন যে একটি কার্যকর যুদ্ধবিমানবহর রাতারাতি গড়ে তোলা যায় না, তবু ইরানের সামনে সময় ছিল। জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা ২০২০ সালে প্রত্যাহার হওয়ার পর প্রায় পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে। এই সময়ের মধ্যে ইরান চাইলে যুদ্ধবিমান কিনতে পারত। মাত্র ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগেই পাকিস্তানের মতো দেশ জে-১০সি যুদ্ধবিমান কিনেছে। ইরান যদি সেই পথে হাঁটত, তাহলে আজ হয়তো এ বিপর্যয় এড়ানো যেত। সূত্র: মিলিটারি ওয়াচ ম্যাগাজিন

ইরানকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করল চীন

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৯:৩০ পিএম
ইরানকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করল চীন
চীনের তৈরী এইচকিউ-৯ আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত

ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা চীনের কাছ থেকে হাতে পেয়েছে ইরান। ইসরায়েলের সঙ্গে টানা ১২ দিনের সংঘাতের পর আকাশ প্রতিরক্ষা আরও জোরদার করতে তেহরান তার অস্ত্রভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে।

মিডল ইস্ট আই-কে এক আরব গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, গত ২৪ জুন ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পর তেহরানে পৌঁছেছে চীনের তৈরি ওই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক আরব কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র রাষ্ট্রগুলো আগে থেকেই জানত যে ইরান তার আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রগতি সম্পর্কে হোয়াইট হাউসকেও জানানো হয়েছে।

তবে যুদ্ধবিরতির পর চীন থেকে ইরান ঠিক কতগুলো ক্ষেপণাস্ত্র পেয়েছে, এবং কোন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র পেয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য দেননি সংশ্লিষ্ট কেউ। তবে এক আরব কর্মকর্তা জানান, ইরান তেলের বিনিময়ে এসব ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ইরানের সবচেয়ে বড় তেল ক্রেতা হচ্ছে চীন। মার্কিন জ্বালানি তথ্য সংস্থা ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মে মাসে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ইরানের প্রায় ৯০ শতাংশ অপরিশোধিত তেল ও কনডেনসেট রপ্তানি হয় চীনে। উল্লেখ্য, কনডেনসেট হলো প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের সময় সংগৃহীত হালকা তরল জ্বালানি।

দ্বিতীয় আরব কর্মকর্তা বলেন, নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ইরান বিভিন্ন সৃজনশীল কৌশলে বাণিজ্য করে থাকে। এই সামরিক চালান চীন-ইরান সম্পর্কের গভীরতাকেই নির্দেশ করে।

বর্তমানে ইরান রাশিয়ার তৈরি এস-৩০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করছে, যা বিমান ও ড্রোন ধ্বংসের পাশাপাশি কিছুটা ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতেও সক্ষম। পাশাপাশি চীনের পুরোনো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার পাশাপাশি ইরান নিজেদের তৈরি খোরদাদ সিরিজ এবং বাভার-৩৭৩ ব্যবস্থাও ব্যবহার করছে। সূত্র: মিডল ইস্ট আই

 

তালেবানের ২ শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৮ পিএম
তালেবানের ২ শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
ছবি: সংগৃহীত

নারী ও মেয়েদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) তালেবানের শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) আইসিসির বিচারকরা জানিয়েছেন, তালেবান সুপ্রিম লিডার হিবতুল্লাহ আখুন্দজাদা এবং প্রধান বিচারপতি আবদুল হাকিম হাক্কানির বিরুদ্ধে লিঙ্গভিত্তিক নিপীড়নের অভিযোগে মামলা চালানোর মতো ‘যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ’ রয়েছে।

এক বিবৃতিতে আদালত জানায়, ‘তালেবান সমগ্র জনগণের ওপর কিছু নিয়ম ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও তারা বিশেষভাবে নারীদের লক্ষ্যবস্তু করেছে কেবলমাত্র তাদের লিঙ্গের কারণে এবং তাদের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করেছে।’

আইসিসির বিচারকরা বলেন, ‘তালেবান মেয়েদের শিক্ষা, গোপনীয়তা ও পারিবারিক জীবনের অধিকার এবং চলাফেরা, মতপ্রকাশ, চিন্তা, বিবেক ও ধর্মের স্বাধীনতা থেকে চরমভাবে বঞ্চিত করেছে।’

তারা আরও জানান, এছাড়া, এমন কিছু ব্যক্তিকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে যাদের যৌনতা ও লিঙ্গ পরিচয়ের কিছু অভিব্যক্তি তালেবানের লিঙ্গনীতি পরিপন্থী বলে মনে হয়েছে।

আদালতের মতে, এসব অপরাধ ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালেবান ক্ষমতা দখলের সময় থেকে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আইসিসি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ অপরাধ যেমন যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করে। তবে আদালত নিজস্ব কোনো পুলিশ বাহিনী চালায় না এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ওপর নির্ভর করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে - যার ফলাফল মিশ্র।

বিধি অনুযায়ী, আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আওতাভুক্ত কোনো ব্যক্তি সদস্য রাষ্ট্রে ভ্রমণ করলে তাকে গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকি নিতে হয়। সূত্র: আল জাজিরা

মাহফুজ/

গাজার সব বাসিন্দাকে ‘ক্যাম্পে বন্দি’ করার পরিকল্পনা ইসরায়েলের

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৬:৫২ পিএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৬:৫৩ পিএম
গাজার সব বাসিন্দাকে ‘ক্যাম্পে বন্দি’ করার পরিকল্পনা ইসরায়েলের
ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ জানিয়েছেন, গাজার সব ফিলিস্তিনিকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলের একটি শিবিরে স্থানান্তরের জন্য সামরিক বাহিনীকে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। দেশটির গণমাধ্যমগুলো সোমবার (৭ জুলাই) এ তথ্য জানিয়েছে।

কাটজ সাংবাদিকদের বলেন, রাফাহ শহরের ধ্বংসস্তূপের ওপর একটি ‘হিউম্যানিটারিয়ান সিটি’ অর্থাৎ মানবিক আশ্রয় শিবির হিসেবে একটি এলাকা গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তার, যেখানে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৬ লাখ ফিলিস্তিনিকে রাখা হবে, এবং পরে গাজার পুরো ২১ লাখ জনগোষ্ঠীকে সেখানে স্থানান্তর করা হবে।

ইসরায়েল কাটজ জানান, সবার আগে নিরাপত্তা যাচাই করে নিশ্চিত করা হবে তারা হামাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। যাচাইয়ের পর তাদের ভেতরে আনা হবে এবং বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, যদি পরিস্থিতি অনুকূল হয়, তাহলে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে প্রস্তাবিত ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির সময় এই নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।

এ পরিকল্পনাকে এক ইসরায়েলি মানবাধিকার আইনজীবী সরাসরি ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের একটি প্রক্রিয়াগত পরিকল্পনা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

মানবাধিকার আইনজীবী মাইকেল স্ফার্ড ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে বলেন, এটা গাজার দক্ষিণ প্রান্তে জনগণকে স্থানান্তরের মাধ্যমে পরবর্তীতে তাদের বহিষ্কারের প্রস্তুতি।

জাতিসংঘও এর আগে সতর্ক করেছে, কোনো দখলকৃত ভূখণ্ডের বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক স্থানান্তর বা বহিষ্কার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী এবং ‘জাতিগত নির্মূলের শামিল’।

এ বিষয়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বা হামাসের পক্ষ থেকে কোনো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

এদিন পরে, হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবের কথা বলেন, যেখানে যুদ্ধোত্তর গাজা শাসনে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ ও ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের কথা বলা হয়েছে।

নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমি মনে করি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি অসাধারণ। এটা 'স্বাধীন পছন্দ' নামে পরিচিত। কেউ থাকতে চাইলে থাকুক, আর কেউ যদি চলে যেতে চায়, তাহলে তাদের যাওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত… আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি এমন দেশ খুঁজতে, যারা ফিলিস্তিনিদের জন্য ভালো ভবিষ্যৎ চায়।’

ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা আশেপাশের দেশগুলোর কাছ থেকে অসাধারণ সহযোগিতা পেয়েছি… প্রতিটি দেশের কাছ থেকেই দারুণ সমর্থন এসেছে। তাই, কিছু ভালোই ঘটবে।’

গত মার্চে আরব রাষ্ট্রগুলো ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিকল্প হিসেবে মিশরের ৫৩ বিলিয়ন ডলারের গাজা পুনর্গঠন পরিকল্পনাকে সমর্থন করে, যেখানে ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমিতেই থেকে যাওয়ার সুযোগ থাকবে।

তারা একে ‘ফিলিস্তিনি জনগণের যেকোনো প্রকার স্থানান্তরের ঘোরতর বিরোধতা’ বলে অভিহিত করে এবং এটিকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং জাতিগত নির্মূল’ হিসেবে আখ্যায়িত করে।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং হামাস মিশরের এই পরিকল্পনাকে সমর্থন জানালেও, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল বলেছে, এ পরিকল্পনা গাজার বাস্তবতা বিবেচনায় নেয়নি।

এদিকে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ভয় বাড়ছে আরেকটি নাকবার আশঙ্কায়। আরবি ভাষায় যার অর্থ ‘বিপর্যয়’, যখন ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের আগে ও পরে লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান বা উৎখাত হন।

সেই সময়ের অনেক শরণার্থীই গাজায় এসে আশ্রয় নেন, এবং তাদের সন্তান-সন্ততিসহ তারা গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আরও ৯ লাখ নিবন্ধিত শরণার্থী পশ্চিম তীরে এবং ৩৪ লাখ ফিলিস্তিনি জর্ডান, সিরিয়া ও লেবাননে বাস করছেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন সীমান্ত পেরিয়ে হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হলে, ইসরায়েল হামাসকে নিশ্চিহ্ন করতে সামরিক অভিযান শুরু করে।

হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এরপর থেকে গাজায় ৫৭ হজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

গাজার অধিকাংশ মানুষ একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বাড়িঘরের ৯০ শতাংশেরও বেশি ধ্বংস হয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে স্বাস্থ্যব্যবস্থা, পানি, স্যানিটেশন এবং পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থা। তীব্র সংকটে রয়েছে খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও আশ্রয়। সূত্র: বিবিসি

মাহফুজ/

 

কায়রোর টেলিকম ভবনের আগুনে নিহত ৪, ব্যাহত ইন্টারনেট ও ফোন সেবা

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৫:২৯ পিএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৫:২৯ পিএম
কায়রোর টেলিকম ভবনের আগুনে নিহত ৪, ব্যাহত ইন্টারনেট ও ফোন সেবা
ছবি: সংগৃহীত

মিশরের রাজধানী কায়রোয় একটি প্রধান টেলিকমিউনিকেশন ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে চারজন কর্মী নিহত হয়েছেন এবং অন্তত ২২ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন মিশরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হোসাম আবদেল ঘাফফার।

সোমবার (৭ জুলাই) টেলিকম ইজিপ্টের (Telecom Egypt) একটি গুরুত্বপূর্ণ ডেটা সেন্টারে আগুন লাগার ঘটনায় কায়রোর বিভিন্ন এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে জানানো হয়, আগুন সোমবারই নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে মিশরের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী আমর তালাত জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধাপে ধাপে সব সেবা স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

টেলিকম ইজিপ্ট মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে নিহত কর্মীদের জন্য শোক প্রকাশ করে এবং তাদের পরিবারকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আগুনের কারণে ফোন কল ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ইন্টারনেট পর্যবেক্ষণ সংস্থা Netblocks জানায়, আগুনের পর জাতীয় ইন্টারনেট সংযোগ স্বাভাবিকের তুলনায় ৬২ শতাংশে নেমে আসে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, যারা জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সেবা পেতে হটলাইন নম্বরে পৌঁছাতে পারছেন না, তাদের জন্য বিকল্প নম্বর চালু করা হয়েছে।

ফোন সেবা ছাড়াও, এই অগ্নিকাণ্ডের প্রভাবে কিছু ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা, যেমন ক্রেডিট কার্ড, এটিএম মেশিন এবং অনলাইন লেনদেন ব্যাহত হয় বলে সোমবার জানিয়েছেন ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে সেদিন ব্যাংকগুলো বন্ধই ছিল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, অধিকাংশ আহত ব্যক্তি ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা MENA সোমবার জানায়, আগুন পুরো ভবন এবং আশপাশের ছাদগুলোতে ছড়িয়ে পড়ার আগেই নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

দেশটির নিরাপত্তা সূত্র জানায়, প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, আগুনের সূত্রপাত হয় বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে। সূত্র: আনাদুলো এজেন্সি

মাহফুজ/

 

এবার নিজের টিভি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চালু করলেন ট্রাম্প

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৩:৩০ পিএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৩:৩৪ পিএম
এবার নিজের টিভি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চালু করলেন ট্রাম্প
ছবি: সংগৃহীত

নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল চালুর পর এবার নতুন টিভি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ প্লাস’ চালু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের মালিকানাধীন ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপ (টিএমটিজি) এটি পরিচালনা করবে।

সোমবার (৭ জুলাই) ট্রাম্পের মিডিয়া কোম্পানি ট্রুথ প্লাস নামে্র এই টেলিভিশন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম উন্মোচন করে ঘোষণা করে যে, নিউজম্যাক্স - ট্রাম্প-পন্থী কন্টেন্টের জন্য পরিচিত একটি প্রচারণামূলক একটি ফ্ল্যাগশিপ চ্যানেল হবে।

প্ল্যাটফর্মটি কনজারভেটিভ (রক্ষণশীল) সংবাদমাধ্যম নিউজম্যাক্সের সঙ্গে অংশীদারত্বে শুরু হয়েছে। ট্রাম্প মিডিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্ল্যাটফর্মটি ‘পরিবারবান্ধব লাইভ টিভি চ্যানেল ও অন ডিমান্ড কনটেন্ট’ সম্প্রচারে গুরুত্ব দেবে।

আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ছাড়াও ইন্টারনেট, অ্যাপল টিভি, অ্যান্ড্রয়েড টিভি, অ্যামাজন ফায়ার ও রোকু কানেকটেড টিভিতে অ্যাপটি ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যাবে। এলজি ও স্যামসাংয়ের স্মার্ট টিভির জন্যও অ্যাপটি শিগগির চালু হবে এবং এটি অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

গত জুনের শেষ দিক থেকে এই প্ল্যাটফর্মের বেটা সংস্করণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে ট্রাম্প মিডিয়া।

এক বিবৃতিতে ট্রাম্প মিডিয়ার সিইও ও চেয়ারম্যান ডেভিন নুনেস জানান, ‘ট্রুথ প্লাস’ এত দ্রুত আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে পেরে আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা সব ডিভাইস ও অপারেটিং সিস্টেমে এটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করতে কাজ করছি।
 
নিউজম্যাক্সের সিইও ক্রিস রুডি জানান, ডেভিন নুনেস যুক্তরাষ্ট্রে ট্রুথ সোশ্যাল এবং এখতাই তাদের বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণ একেবারেই স্বাভাবিক। এই সম্প্রসারণে ট্রাম্প মিডিয়ার সঙ্গে অংশীদার হতে পেরে তিনি গর্বিত।

এদিকে ট্রুথ সোশ্যাল ও ট্রুথ প্লাস ছাড়াও ট্রাম্প মিডিয়া শিগগিরই ‘ট্রুথ ডট ফাই’ নামে একটি নতুন আর্থিক ও ফিনটেক ব্র্যান্ড চালু করতে যাচ্ছে। সেখানে থাকবে ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে বিনিয়োগের সুযোগ।

সুলতানা দিনা/