ঢাকা ২৭ আষাঢ় ১৪৩২, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
English
শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২

অস্ত্র-ক্ষেপণাস্ত্র-ড্রোন তৈরিতে অনেক এগিয়ে ইরান

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫, ১২:৩০ পিএম
আপডেট: ২৪ জুন ২০২৫, ০১:২৫ পিএম
অস্ত্র-ক্ষেপণাস্ত্র-ড্রোন তৈরিতে অনেক এগিয়ে ইরান
ছবি: সংগৃহীত

ইরানে চলতি সপ্তাহে পালিত হচ্ছে ইসলামী বিপ্লবের ৪৬তম বার্ষিকী। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই বিপ্লব ইরানের স্বনির্ভরতার ভিত্তি স্থাপন করেছিল। বিশেষ করে সামরিক খাতে দেশটি অনেক দূর এগিয়েছে। বিপ্লবের পর ইরান নিজস্ব প্রযুক্তিতে শক্তি অর্জন করে। 

১৯৭৯ সালে পশ্চিমা-সমর্থিত রেজা শাহ পাহলভির একনায়কতন্ত্রের পতনের পর ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে ইরান ক্রমেই এক শক্তিশালী বৈশ্বিক সামরিক শক্তিতে রূপ নিচ্ছে। দশকের পর দশক কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও বিদেশি চাপের মধ্যেও ইরান ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে বিশ্বের অগ্রণী রাষ্ট্রগুলোর কাতারে পৌঁছেছে। ইরানের উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন অস্ত্রাগার শুধু প্রতিরক্ষার জন্য নয়, এটি শত্রুদের ওপর পাল্টা আঘাত হানার জন্যও প্রস্তুত। তেল আবিবের মতো আগ্রাসী শাসকদের বিরুদ্ধে এই শক্তি প্রয়োগে দ্বিধা করছে না ইসলামিক প্রজাতন্ত্র। কারণ ইহুদিবাদী শক্তি বারবার উসকানি দিয়ে যাচ্ছে।

‘ট্রু প্রমিজ ১’ ও ‘ট্রু প্রমিজ ২-এর সময় ইরান তার ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতার নিখুঁত প্রদর্শন ঘটায়। শত শত নির্ভুল নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র অধিকৃত অঞ্চলে ছোড়া হয়। সেগুলো ইহুদিবাদী বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করে গভীর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এতে ইরানের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও প্রতিরোধ শক্তি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

কীভাবে এটি শুরু হয়েছিল

ইসলামিক বিপ্লবের আগে ইরান ছিল পুরোপুরি পশ্চিমা অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল। মার্কিন-সমর্থিত পাহলভি শাসনামলে দেশটি একচেটিয়াভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে সামরিক সরঞ্জাম আমদানি করত। আঞ্চলিক গুরুত্ব ও বিপুল সম্পদ থাকা সত্ত্বেও ইরানের সামরিক বাহিনীর ভিত্তি ছিল বিদেশি ট্যাংক, যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার ও অস্ত্রব্যবস্থার ওপর। এই নির্ভরতা প্রযুক্তিগতভাবে ইরানকে অত্যন্ত দুর্বল করে তোলে। ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান প্রতিরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেও একই অবস্থা ছিল। অথচ এই খাতগুলোতেই আজ ইরান বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে। অনেক দিক থেকে পশ্চিমাদের থেকেও এগিয়ে।

১৯৭৯ সালের আগে ইরানে কোনো দেশীয় ইউএভি বা ড্রোন কর্মসূচি ছিল না। তারা পুরোপুরি আমদানি করা সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল (এসএএম) ও এয়ার-টু-এয়ার মিসাইলের (এএএম) ওপর নির্ভর করত। প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও সীমিত ছিল। শুধুমাত্র স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার কিছু ব্যবস্থা ছিল। তাদের ভাণ্ডারে ছিল মার্কিন বিচক্রাফ্ট এমকিউএম-১০৭ স্ট্রীকার টার্গেট ড্রোন, আরআইএম-৬৬ স্ট্যান্ডার্ড এসএএম, এআইএম-৫৪ ফিনিক্স এএএম এবং ব্রিটিশ র‌্যাপিয়ার ও মার্কিন এমআইএম-২৩ হক বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। সবই ছিল পশ্চিমা আমদানি, যেগুলো বিদেশি সহায়তা ছাড়া পরিচালনাও সম্ভব ছিল না।

উদ্ভাবনের পথ

১৯৮০-এর দশকে ইসলামী বিপ্লবের পরপরই ইরানের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়। এতে আমদানি-নির্ভর পুরোনোব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ পায়। ইরানের সামরিক বাহিনীর প্রকৃত অবস্থা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তির সহায়তায় ইরাক ইরানের বিরুদ্ধে এক নৃশংস যুদ্ধ শুরু করে। তেহরান তখন একটি কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়- সামরিক স্বনির্ভরতা অর্জন না করলে পরাজয় অনিবার্য। যুদ্ধ যত তীব্র হয়, তত অকেজো হয়ে পড়ে ইরানের পশ্চিমা-নির্মিত অস্ত্র। কারণ নিষেধাজ্ঞার কারণে খুচরা যন্ত্রাংশ পাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন বা পূর্ব ইউরোপীয় ব্লক থেকেও বিকল্প মেলে না। কারণ মস্কো তখন ইরাকের পক্ষে ছিল।

এই পরিস্থিতিতে অভিযোজন ও উদ্ভাবন ছাড়া ইরানের সামনে আর কোনো রাস্তা খোলা ছিল না। তাই দেশটি উচ্চাভিলাষী এক যাত্রা শুরু করে সামরিক স্বনির্ভরতার পথে। শুরু করে নিজস্ব অস্ত্র তৈরির কাজ। কিছু ক্ষেত্রে নিজেদের গবেষণায়, আবার কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশের সীমিত সহায়তায়। ওই সময় ইরানের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ছিল এমন অস্ত্র, যেটা দিয়ে দূরের শত্রুকে টার্গেট করা যায়। পাশাপাশি দরকার ছিল এমন নজরদারিব্যবস্থার, যাতে দামি যুদ্ধবিমান ছাড়াই গোয়েন্দা তৎপরতা চালানো সম্ভব হয়। এই হতাশাজনক পরিস্থিতি থেকেই জন্ম নেয় ইরানের আধুনিক সামরিক কমপ্লেক্স। এটি এমন এক শক্তিতে পরিণত হয়, যেটা ৪৬ বছর পরেও অঞ্চলজুড়ে অন্যতম উন্নত সামরিক শক্তি হিসেবে বিবেচিত।

১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ইরান প্রথম পদক্ষেপ নেয় সামরিক স্বনির্ভরতার পথে। তেহরানে ‘কুদস অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানি’ ও ইস্ফাহানে ‘এইচইএসএ’ (ইরান বিমান উৎপাদন শিল্প কোম্পানি) গড়ে তোলে। এই দুটি প্রতিষ্ঠান পরে ইরানের ড্রোন শিল্পের মেরুদণ্ডে পরিণত হয়। তারা ‘মোহাজের’ রিকনেসান্স ড্রোন, ‘তালাশ’ প্রশিক্ষণ ড্রোন ও ‘আবাবিল’ আক্রমণ ড্রোনের মতো প্রাথমিক ইউএভি তৈরি করে। এই ড্রোনগুলো ছিল প্রাথমিক ও সীমিত ক্ষমতার। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা ছিল গেম-চেঞ্জার। ‘মোহাজের’ একাই শত শত মিশনে অংশ নেয়। তোলে ৫০ হাজারের বেশি গোয়েন্দা ছবি। এমনকি এটি ছিল ইরানের প্রথম যুদ্ধ ড্রোন, যাতে আরপিজি রকেট লাগিয়ে আকাশ হামলা চালানো হয়েছিল। 

ড্রোন প্রযুক্তির অগ্রগতির পাশাপাশি ইরান বন্ধুবান্ধব রাষ্ট্র থেকে পুরোনো ক্ষেপণাস্ত্র মডেল সংগ্রহ করে। পরে সেগুলো বিপরীত-প্রকৌশলের মাধ্যমে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি শুরু করে। যুদ্ধের শেষদিকে এসে ইরান ‘ওঘাব’ ও ‘নাজিয়াত’ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি ও মোতায়েন করে। এগুলো ছিল কঠিন জ্বালানি চালিত স্বল্প পাল্লার ব্যালিস্টিক অস্ত্র। ‘ওঘাব’র পাল্লা ছিল ৪৫ কিলোমিটার, ‘নাজিয়াত’-এর ১০০ কিলোমিটার। যুদ্ধ ছিল ধ্বংসাত্মক। কিন্তু ইরান পিছু হটেনি। 

প্রতিকূলতার মধ্যেও অগ্রগতি

যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের জন্য নতুন হুমকি তৈরি হয়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্র দেশগুলো ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। নিজেদের রক্ষায় ইরান একটি ভিন্ন কৌশল নেয়। ব্যয়বহুল যুদ্ধজাহাজ বা জেটের বদলে তারা বেছে নেয় স্বল্প খরচের, ব্যাপকভাবে উৎপাদনযোগ্য অস্ত্র। এতে গড়ে ওঠে একটি অসম যুদ্ধের কৌশল।
ইরান দৃষ্টি দেয় ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, জাহাজ-বিধ্বংসী অস্ত্র এবং বহুস্তর প্রতিরক্ষাব্যবস্থার দিকে। ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি তখন প্রাথমিক স্তরে থাকলেও, ১৯৯০-এর দশকে ইরান চীন, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া থেকে উন্নত প্রযুক্তি সংগ্রহ করে। পরে সেগুলোর ভিত্তিতে দেশীয় অস্ত্র উদ্ভাবন শুরু হয়। এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ইরান শতাব্দীর শেষ দিকে ‘শাহাব’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ‘জেলজা’ ভারী রকেট সিরিজ তৈরি করে। এসব অস্ত্র কয়েক শ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম ছিল।

১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে ইরান তৈরি করে মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘শাহাব-৩’। এর পাল্লা ছিল ২ হাজার কিলোমিটার। এতে আশপাশের প্রায় সব বিদেশি সামরিক ঘাঁটি এই ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় চলে আসে। একই সময়ে দেখা যায় নতুন ড্রোনের উদ্ভব। উন্নত ফ্লাইট নিয়ন্ত্রণ ও চলাচলের ক্ষমতা ছিল এসব ড্রোনে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘মোহাজের-২’ ও ‘আবাবিল-২’।

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থার পরিবর্তন

নতুন শতাব্দীর শুরুতে ইরান নতুন অস্ত্রব্যবস্থায় বড় অগ্রগতি অর্জন করে। এর কেন্দ্রে ছিল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এই প্রকল্প পরিচালনা করেন হাসান তেহরানি মোকাদ্দাম। তাকে ‘ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির জনক’ বলা হয়। ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর বা আইআরজিসির এই প্রকৌশলী ও সংগঠক ইরানের রকেট উন্নয়নে নেতৃত্ব দেন। তার ভূমিকা অনেকটা জার্মান ও মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রকৌশলী ভন ব্রাউন বা সোভিয়েত রকেট কর্মসূচির সের্গেই করোলেভের মতো।

২০১১ সালে ‘আমির আল-মুমিনিন’ ঘাঁটিতে এক বিস্ফোরণে মোকাদ্দাম তার ১৬ জন সহযোদ্ধাসহ শহিদ হন। তবে তার রেখে যাওয়া দক্ষ প্রকৌশলীদের হাত ধরে কর্মসূচি এগিয়ে যায়। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন থেমে থাকেনি। তখন পর্যন্ত ইরানের প্রধান ব্যালিস্টিক অস্ত্র ছিল শাহাব-৩। এটি বেশ বড় ও ভারী। পরিবহনে অসুবিধাজনক। এতে তরল জ্বালানি ব্যবহৃত হতো। যেটা ভরতে সময় লাগত। এ ছাড়া, লক্ষ্যভেদে সুনির্দিষ্ট ছিল না। বড় ঘাঁটিতে আঘাত হানার জন্য তৈরি হলেও যুদ্ধক্ষেত্রে এটি অনুপযুক্ত ছিল। 

শাহাব-৩ ছিল ব্যয়বহুল। উৎপাদন হতো মাত্র কয়েক শ। শত্রুর বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা থাকা অবস্থায় এই সীমিত অস্ত্র কার্যকর হতো না। এ কারণে ২০০০ দশকের মাঝামাঝি ইরান নতুন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে। এর মধ্যে ছিল গদর-১১০, ফজর-৩, আশুরা ও সাজিল। এই মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো (এমআরবিএম) কঠিন জ্বালানিতে চলে। 

ফলে প্রস্তুতির সময় কমে আসে। নির্ভুলতাও বাড়ে। তবে এসব নতুন ক্ষেপণাস্ত্রও আকারে বড় ও ব্যয়বহুল ছিল। পরে ২০১০-এর দশকে ইরান আরও ছোট ও দ্রুত ছোড়া যায় এমন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে। এর ভিত্তি ছিল ফাতেহ-১১০। এটি ছিল স্বল্প পাল্লার কঠিন জ্বালানির ক্ষেপণাস্ত্র। এর প্রাথমিক পাল্লা ছিল ২০০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার।

ফাতেহ-১১০-এর ভিত্তিতে তৈরি হয় আরও উন্নত সংস্করণ। ফাতেহ-৩১৩-এর পাল্লা ৫০০ কিলোমিটার। জোলফাঘরের পাল্লা ৭০০ কিলোমিটার। দেজফুল যেতে পারে ১ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত। সর্বশেষ সংস্করণ খাইবার শেকানের পাল্লা ১ হাজার ৪৫০ কিলোমিটার। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর পাল্লা প্রায় পুরোনো এমআরবিএমের সমান হলেও এগুলো আরও নির্ভুল। এগুলো মোবাইল প্ল্যাটফর্ম থেকে ছোড়া যায়। সহজে পরিবহনযোগ্য। দ্রুত উৎক্ষেপণযোগ্য। যুদ্ধক্ষেত্রে কৌশলগত সুবিধা দেয়। শত্রুর বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এগুলো শনাক্ত ও ধ্বংস করতে কঠিন হয়। এ ছাড়া এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ব্যাপক হারে উৎপাদন করা যায়। ইরান ইতোমধ্যে ভূগর্ভস্থ ঘাঁটিতে এসব ক্ষেপণাস্ত্রের বিশাল মজুতের ভিডিও প্রকাশ করেছে। তা থেকেই স্পষ্ট, ইরান নিজস্ব প্রযুক্তিতে গড়ে তুলেছে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার।

বিশ্বের শীর্ষ সামরিক শক্তির তালিকায় ইরান

২০১০ সালের মধ্যেই ইরান বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির অধিকারী দেশে পরিণত হয়। বিদেশি সামরিক বিশ্লেষকরা একে বিশ্বের সাতটি সবচেয়ে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র শক্তির একটি বলে স্বীকৃতি দেন। ব্যালিস্টিক অস্ত্রাগারের আকারের দিক থেকে ইরান ছিল শীর্ষ চার দেশের তালিকায়। 

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও আন্তর্জাতিক চাপ থামেনি। তবে ইরান তার অস্ত্র তৈরি থামায়নি। ওয়াশিংটন চেষ্টা করেছে তেহরানকে উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত রাখতে। তারা রাশিয়াকে ‘এস-৩০০’ বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহ না করার জন্য চাপ দেয়। 

জার্মানিকে বলা হয় হালকা ড্রোনের মোটর রপ্তানি বন্ধ করতে। চীনকে নিষেধ করা হয় ক্ষেপণাস্ত্রের যন্ত্রাংশ না দিতে। তবে এসব প্রচেষ্টা সফল হয়নি। ইরান নিজেই প্রতিটি যন্ত্রাংশ ও প্রযুক্তি তৈরি শুরু করে। নিষেধাজ্ঞা ঠেকাতে তারা স্বনির্ভরতার পথে হাঁটে। প্রতিরোধ গড়ে তোলে। স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়। প্রয়োজনীয় উপাদান ঘরে তৈরি করে ইরান আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়। এই ধারা অব্যাহত রেখে তারা নিজেদের সামরিক স্বনির্ভরতা জোরদার করে।

দূরপাল্লার জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতেও ইরান অনেকদূর এগিয়ে গেছে। কাদের, গাদির ও ইয়া আলী ক্ষেপণাস্ত্র এই তালিকায় রয়েছে। এ ছাড়া মেশকাত, সৌমার, আবু মাহদি, পাভেহ, হোভেজেহ এবং কাদর-৪৭৪ নামের ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যেগুলোর পাল্লা ৩ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত। এই ক্ষেপণাস্ত্র শক্তির দিক দিয়ে ইরান এখন বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে। শাহেদ ও আরাশ ধরনের ড্রোনও ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই শক্তি আরও জোরদার হয়েছে। ইরান হাইপারসনিক ‘ফাত্তাহ’ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। তৈরি হয়েছে টার্বোজেটচালিত লোটারিং মিউনিশন ও সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র।

ড্রোন শক্তিতেও ইরান এখন অত্যন্ত সক্ষম। ফোট্রোস, কামান-২২, মোহাজের-১০, শাহেদ-১২৯ এবং শাহেদ-১৪৯ গাজার মতো ড্রোন তৈরি হয়েছে, যেগুলোর পাল্লা ক্ষেপণাস্ত্রের সমান। এসব ড্রোন বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র বহনে সক্ষম। সেগুলো দূরপাল্লার মিশনেও ব্যবহৃত হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা ও বাধা অতিক্রম করেও ইরান তার সামরিক শক্তিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও আধুনিক অস্ত্র তৈরিতে দেশটি এখন বিশ্বের অন্যতম অগ্রণী শক্তি।

বিমান প্রতিরক্ষা ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধে দক্ষতা অর্জন

শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরে ইরান নিজস্ব রাডার ও ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থার একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। এই ব্যবস্থাগুলো বহুবার ইরানের আকাশসীমায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি ড্রোন ও বিমান অনুপ্রবেশ ব্যর্থ করে দিয়েছে।

শুরুতে ইরান ‘মেরসাদ’ নামের পুরোনো প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চালু করে। তবে ২০১০ সালের মধ্যে দেশটি নতুন প্রজন্মের অত্যাধুনিকব্যবস্থা তৈরি করে। এর মধ্যে রয়েছে ‘রাদ-২’, ‘তাবাস’, ‘৩ খোরদাদ’, ‘জোশান’ ও ‘কামিন-২’। এ সবই সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত। দূরপাল্লার প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় ইরান ‘বাভার-৩৭৩’ এবং ‘আরমান’ নামের দুটি শক্তিশালী সিস্টেম তৈরি করেছে। এদের পাল্লা ৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি। লক্ষ্য শনাক্ত ও ট্র্যাকিং সক্ষমতাও উন্নত। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ব্যবস্থাগুলো এখন বিশ্বের সেরা কিছু প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম। এই সব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ইরানের বিস্তৃত রাডার নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সমন্বিত। ফলে শুধু আকাশসীমা নয়, আশপাশের অঞ্চলও নজরদারির আওতায় থাকে।

১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ইরান নানা বাধা মোকাবিলা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তির চাপ, অবৈধ নিষেধাজ্ঞা, অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিক অবরোধ ইরানকে থামাতে পারেনি। বরং এসব প্রতিকূলতার মধ্যেই দেশটি গড়ে তুলেছে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, রাডার এবং বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থার বিশাল অস্ত্রাগার। 

বিশাল ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, হাইপারসনিক প্রযুক্তি ও ক্রমেই শক্তিশালী ড্রোন বহরের মাধ্যমে ইরান আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। দেশটি এখন যেকোনো হুমকির বিরুদ্ধে সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে প্রস্তুত।

লেখক: প্রেসটিভির সংবাদদতা। লেখাটি প্রেসটিভি থেকে অনুবাদ: এম আর লিটন

নাসার প্রশাসক হলেন ট্রাম্পের পরিবহনমন্ত্রী

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৩:২৮ পিএম
আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৩:৩৪ পিএম
নাসার প্রশাসক হলেন ট্রাম্পের পরিবহনমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন মন্ত্রী শন ডাফি। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন মন্ত্রী শন ডাফিকে দেশটির মহাকাশ সংস্থা নাসার অন্তর্বর্তী প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্পেসএক্স প্রধান ইলন মাস্কের একজন ঘনিষ্ঠ মিত্রের নাসার মনোনয়ন প্রত্যাহার করার পর ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত নেন।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) পৃথক দুই প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায় বার্তাসংস্থা এএফপি এবং সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

সিএনএন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফিকে সাময়িকভাবে নাসার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার এটি ঘোষণা করেন।

নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমাদের দেশের পরিবহন ব্যবস্থাপনায় শন অসাধারণ কাজ করছেন, আধুনিক এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম তৈরি থেকে শুরু করে সড়ক ও সেতু পুনর্গঠন পর্যন্ত সবকিছু তিনি দক্ষতার সঙ্গে সামলাচ্ছেন। এখন নাসার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্থার নেতৃত্বও সাময়িক সময়ের জন্য তার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। অভিনন্দন ও ধন্যবাদ, শন।'

এই ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই শন ডাফি এক্সে (সাবেক টুইটার) লেখেন, ‘এই দায়িত্ব পেয়ে সম্মানিত বোধ করছি। এখন সময় মহাকাশের দখল নেওয়ার। চলুন, উৎক্ষেপণ শুরু করি!'

এর আগে, চলতি বছরের মে মাসের শেষ দিকে ট্রাম্প প্রযুক্তি উদ্যোক্তা জারেড আইজ্যাকম্যানের নাসা প্রধান হিসেবে মনোনয়ন বাতিল করেন। অথচ অল্পদিনের মধ্যেই আইজ্যাকম্যানের নিয়োগ অনুমোদনের জন্য সিনেট ভোটে যাওয়ার কথা ছিল।

আইজ্যাকম্যান দুইবার মহাকাশে ব্যক্তিগত মিশনে অংশ নিয়েছেন এবং স্পেসএক্স প্রধান ইলন মাস্কের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ট্রাম্প বলেন, ‘নাসা যখন ইলনের ব্যবসার এত গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তখন তার ঘনিষ্ঠ কোনো বন্ধু এই সংস্থার নেতৃত্বে থাকা অনুচিত হবে।'

ট্রাম্প আরও দাবি করেন, নাসার মতো সংস্থার নেতৃত্বে সাধারণত বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, শিক্ষাবিদ বা অভিজ্ঞ সরকারি কর্মকর্তারা থাকেন, যারা দুই পক্ষের আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে বাজেটসহ প্রকল্পগুলো এগিয়ে নিয়ে যান।

শন ডাফি ছাড়াও ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার আরও কয়েকজন সদস্য একাধিক দায়িত্বে আছেন। যেমন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বর্তমানে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং জাতীয় আর্কাইভ বিভাগের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

সুলতানা দিনা/ 

উসাইন বোল্টের গতিতে দৌড়াল চায়নিজ রোবট কুকুর!

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০২:৪৯ পিএম
আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫, ০২:৫৮ পিএম
উসাইন বোল্টের গতিতে দৌড়াল চায়নিজ রোবট কুকুর!
চায়নিজ রোবোটিক্স স্টার্ট-আপ মিরর মি-এর তৈরি রোবট কুকুর ব্ল্যাক প্যান্থার টু (দ্বিতীয় সংস্করণ)। ছবি: সংগৃহীত

চায়নিজ রোবোটিক্স স্টার্ট-আপ মিরর মি-এর তৈরি রোবট কুকুর ব্ল্যাক প্যান্থার টু (দ্বিতীয় সংস্করণ) অনানুষ্ঠানিকভাবে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে দৌড়ের রেকর্ড গড়েছে। রোবটটির হালকা ওজনের নির্মাণ এবং এআই এটি সম্ভব করেছে।

রবিবার (৬ জুলাই) চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন, চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশনে এই ঘটনা সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এ সময় অ্যাথলেটিক ট্র্যাকে দর্শকদের সামনে রোবট কুকুরটি ১০০ মিটার স্প্রিন্টের জন্য মাত্র ১৩.১৭ সেকেন্ড সময় নেয়।

প্যান্থার টু-এর এই গতি বিশ্বের দ্রুততম মানুষ হিসেবে খেতাবপ্রাপ্ত স্প্রিন্টার উসাইন বোল্টের গতির প্রায় কাছাকাছি। 

চায়নিজ সংবাদমাধ্যম সিজিটিএন এই খবর জানায়।

২০২৩ সালের পূর্ববর্তী আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত গিনেস রেকর্ডটি ১৯.৮৭ সেকেন্ড এবং এটি দক্ষিণ কোরিয়ান কোরিয়া অ্যাডভান্সড ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (KAIST) রোবট কুকুর হাউন্ডের দখলে ছিল।

এছাড়া, এটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান বোস্টন ডায়নামিক্সের ওয়াইল্ডক্যাট রোবটের রেকর্ডও ভেঙেছে।

মাত্র ৩৮ কেজি ওজনের ৬৩ সেন্টিমিটার উচ্চতার রোবটটি ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই ১০ মিটার/সেকেন্ড গতিতে পৌঁছায়। যেখানে উসাইন বোল্ট ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ৯ দশমিক ৫৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে বিশ্বরেকর্ড করেছিলেন। সে সময় তার গতি ছিল ১০ দশমিক ৪৪ মিটার/সেকেন্ড।

রেকর্ডটি তৈরি হয় চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি) আয়োজিত বিশ্ব রোবট প্রতিযোগিতার রোবোটিক ডগ মিশন শো-তে। একই মঞ্চে এক্সটি৭০ নামের আরেকটি রোবট কুকুর উদ্ধার অভিযানে সক্ষমতা প্রদর্শন করে দর্শকদের চমকে দেয়।

প্রকল্পটির পেছনে রয়েছে চ্যচিয়াং ইউনিভার্সিটির হিউম্যানয়েড ইনোভেশন ইনস্টিটিউট এবং হাংচৌ-ভিত্তিক স্টার্ট-আপ মিরর-মি’র যৌথ গবেষণা। সম্প্রতি ব্ল্যাক প্যান্থারের পায়ে কার্বন ফাইবার যুক্ত করে এর শক্তি ও স্থিতিস্থাপকতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে।

সুলতানা দিনা/

লোহিত সাগরে ইসরায়েলগামী জাহাজে হুথিদের হামলায় নিহত ৪, নিখোঁজ ১৫

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০১:৫০ পিএম
লোহিত সাগরে ইসরায়েলগামী জাহাজে হুথিদের হামলায় নিহত ৪, নিখোঁজ ১৫
ছবি: সংগৃহীত

লোহিত সাগরে আবারও একটি পণ্যবাহী জাহাজে হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত সশস্ত্র হুতি গোষ্ঠী। বিধ্বস্ত অবস্থায় দুই দিন ভেসে থাকার পর বুধবার (৯ জুলাই) জাহাজটি ডুবে গেছে।

হুথিদের এই হামলায় কমপক্ষে চারজন নিহত হয়েছে, নিখোঁজ রয়েছে আরও অন্তত ১৫ জন। তবে জাহাজের ছয় ক্রুকে জীবিত উদ্ধার করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নৌবাহিনী। 

বৃহিস্পতিবার (১০ জুলাই) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এই তথ্য জানায়। 

উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৫ জন ফিলিপাইন নাগরিক ও ১ জন ভারতীয় নাগরিক। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অপারেশন অ্যাসপিডেসের তথ্যমতে, জাহাজটিতে মোট সদস্য ছিল ২২ জন। হুতি হামলার শিকার লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী গ্রিস মালিকানাধীন ওই জাহাজটির নাম এটারনিটি সি।

গত সোমবার জাহাজটিতে হামলা চালানোর দায় স্বীকার করে এক বিবৃতি দেয় হুথি বিদ্রোহীরা। মানববিহীন নৌকা আর ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এই হামলা চালানো হয়েছে। 

হুতি মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি জানান, জাহাজটি ইসরায়েলের দিকে যাচ্ছিল। সেকারণেই জাহাজটিতে হামলা চালানো হয় বলে জানান তিনি। তার দাবি—জাহাজের একাধিক ক্রুকে নিরাপদে সরে যেতে সহায়তা করেছে হুতিরা। এমনকি আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবাও দিয়েছে তারা।

এছাড়া, হামলার একটি ভিডিও ফুটেজও প্রকাশ করেছে হুতিরা। প্রকাশিত সেই ভিডিওতে দেখা যায়, হামলার আগে জাহাজের চালক ও ক্রুদের সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। আর তারপরই জাহাজটিকে বিস্ফোরিত হতে দেখা যায়।

এদিকে, হুতিদের বিরুদ্ধে জীবিত বেশ কয়েকজন ক্রুকে অপহরণ করার অভিযোগ তুলেছে ইয়েমেনের মার্কিন মিশন। অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে তারা।

ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ইউনাইটেড কিংডম মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস সেন্টার গত মঙ্গলবার জানায়, হামলায় জাহাজটি গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর প্রপালশন ব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে অকার্যকর করে দিয়েছে হুতিরা।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক নিরাপত্তা সংস্থা অ্যামব্রে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানায়, ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটি ইয়েমেনের হুতি-নিয়ন্ত্রিত হোদেইদা বন্দর নগরীর উপকূলে ডুবে গেছে।

সুলতানা দিনা/ 

এত সুন্দর ইংরেজি কোথায় শিখেছেন,লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্টকে ট্রাম্প

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০১:২৪ পিএম
এত সুন্দর ইংরেজি কোথায় শিখেছেন,লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্টকে ট্রাম্প
ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার হোয়াইট হাউসে একদল আফ্রিকান নেতার সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিচ্ছিলেন। আলোচনার একপর্যায়ে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোয়াকাই কথা বলা শুরু করলে ট্রাম্প চমকে যান এবং প্রশ্ন করেন, ‘এত ভালো ইংরেজি আপনি শিখলেন কোথায়?’

পশ্চিম আফ্রিকর দেশ লাইবেরিয়ার সরকারি ভাষা ইংরেজি হওয়া সত্ত্বেও ট্রাম্প তাকে জিজ্ঞেস করেন, এত সুন্দর ইংরেজি কোথায় শিখেছেন? ট্রাম্পের এমন প্রশ্নে অপমান বোধ করেছেন অনেক লাইবেরিয়ান।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায় সিএনএন।

বার্তাসংস্থাটি বলছে, হোয়াইট হাউসে পাঁচজন আফ্রিকান নেতাকে স্বাগত জানাতে গিয়ে ট্রাম্প বোয়াকাইকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘এত সুন্দর ইংরেজি! এটা দারুণ। আপনি এত সুন্দরভাবে কথা বলতে শিখলেন কোথায়?’ তখন বোয়াকাই তার শিক্ষার স্থান সম্পর্কে ট্রাম্পকে অবহিত করেন।

এরপর ট্রাম্প বলেন, ‘এটা খুবই আকর্ষণীয়,, এই টেবিলেই এমন লোক আছেন, যারা এত ভালো ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন না।’

লাইবেরিয়া ১৮২২ সালে আমেরিকান কলোনাইজেশন সোসাইটির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়, যার লক্ষ্য ছিল মুক্ত দাসদের আফ্রিকায় পুনর্বাসন করা। দেশটি ১৮৪৭ সালে ওই সোসাইটির কাছ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। বর্তমানে লাইবেরিয়ায় বিভিন্ন ভাষা প্রচলিত হলেও ইংরেজিই দেশটির সরকারি ভাষা।

ট্রাম্পের মন্তব্যে অনেক লাইবেরিয়ান ক্ষোভ প্রকাশ করেন, বিশেষ করে অতীতে আফ্রিকান দেশগুলো নিয়ে ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঔপনিবেশিক প্রভাবের প্রেক্ষাপটে।

লাইবেরিয়ার যুবকর্মী আরচি টামেল হ্যারিস সিএনএনকে বলেন, ‘আমি অপমানিত বোধ করেছি, কারণ আমাদের দেশ তো ইংরেজিভাষী। প্রেসিডেন্ট যখন এমন প্রশ্ন করেন, আমি সেটাকে প্রশংসা হিসেবে দেখি না। এতে মনে হয়, পশ্চিমারা এখনো আফ্রিকানদের গ্রাম্য, অশিক্ষিত মানুষ হিসেবেই দেখে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন লাইবেরিয়ান কূটনীতিক সিএনএনকে বলেন, মন্তব্যটি ‘উপযুক্ত ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, ‘একজন ইংরেজিভাষী আফ্রিকান প্রেসিডেন্টের প্রতি এটা কিছুটা অবজ্ঞাসূচক আচরণ ছিল।’

সুলতানা দিনা/ 

জুলাই-আগস্টের মানবাধিকার লঙ্ঘন, আইসিসিতে বিচার চায় অ্যামেনেস্টি

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ১২:৫১ পিএম
জুলাই-আগস্টের মানবাধিকার লঙ্ঘন, আইসিসিতে বিচার চায় অ্যামেনেস্টি

যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। 

গতকাল বুধবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর এই আহ্বান জানায় সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া শাখা। বিবিসির ওই প্রতিবেদনে একটি ফাঁস হওয়া অডিও বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে, আন্দোলন দমনে গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সাউথ এশিয়া তাদের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত  বিবৃতিতে বলেছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের বিক্ষোভে প্রাণঘাতী দমন-পীড়নের নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কথিত অডিও-প্রমাণ বিশ্লেষণের পর এই নতুন তথ্য সামনে এনেছে বিবিসি। এই তথ্যের ভিত্তিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহিংসতার জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে আবারও কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত জাতিসংঘের একটি তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল যে, ওই বিক্ষোভ চলাকালে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়ে থাকতে পারেন। যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত প্রাণঘাতী রাইফেল ও শটগানের গুলিতে নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী সাধারণত এগুলো ব্যবহার করে। এ ছাড়া হাজারও মানুষ গুরুতর জখম হয়েছেন, যার প্রভাব আজীবন রয়ে যেতে পারে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। সরাসরি সহিংসতাকারী কিংবা নির্দেশদাতা যেই হোন না কেন, দোষীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এবং মৃত্যুদণ্ডবিহীন বিচার-প্রক্রিয়া চালাতে হবে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনের প্রস্তাব অনুসারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যেন রোম সংবিধির ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ঘটনাগুলো আইসিসিতে পাঠানোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জোরালো আহ্বান জানায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।