
ইরানের তিন পরমাণু স্থাপনায় গত রবিবার ভোরে বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। হামলার পর বিজয়ী বক্তব্যে কিছু না বললেও ওইদিন সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে ইরানের ‘সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা’ নিয়ে ফের আলাপ তুলেছেন।
ওই পোস্টে তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিকভাবে ‘রেজিম চেঞ্জ’ এই পরিভাষা ব্যবহার করা ঠিক হয় না, কিন্তু ইরানিদের এখনকার শাসনব্যবস্থা যদি মেইক ইরান গ্রেট অ্যাগেইন না করতে পারে, তাহলে সেখানে রেজিম চেঞ্জ কেনইবা হবে না।’’
তার পোস্টের শেষে ইংরেজি বড় অক্ষরে লেখা এমআইজিএকে ‘মেইক ইরান গ্রেট অ্যাগেইন’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ ধরা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি ও তার সমর্থকরা প্রায়ই তাদের স্লোগান ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’-কে সংক্ষিপ্ত করে এমএজিএ বা মাগা বলে থাকেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প এমন এক সময়ে ইরানে শাসনব্যবস্থা বদলানোর প্রসঙ্গ তুললেন, যখন ইরানে হামলা নিয়ে তার ‘মাগা’ সমর্থকরা দ্বিধাবিভক্ত; তার প্রশাসনের বেশির ভাগ কর্মকর্তাও ইরানে শাসনব্যবস্থা বদলানোর লক্ষ্য ওয়াশিংটনের নেই বলে বারবার আশ্বস্ত করে যাচ্ছেন।
গত রবিবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের ‘বাংকার-বাস্টার’ বোমা ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনার ওপরে থাকা পাহাড়ে আছড়ে পড়েছে।
কেবল ফোর্দো নয়, যুক্তরাষ্ট্র কাছাকাছি সময়ে ইরানের নাতাঞ্জ ও ইস্ফাহান পারমাণবিক স্থাপনায়ও আঘাত হেনেছে।
হামলার পর ট্রাম্প একে ‘চমকপ্রদ সামরিক সাফল্য’ অ্যাখ্যা দিয়ে ইরানের মূল পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা ‘পুরোপুরি ও সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে’ বলে জোর গলায় বলেছিলেন।
কিন্তু তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা এতটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছেন না। উপগ্রহের ছবিতে মাটির অনেক গভীরে থাকা ফোর্দো স্থাপনাটির ওপরে থাকা পাহাড়ের গায়ে গর্ত দেখা গেলেও ভেতরে আদৌ কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান।
গত ১৩ জুন ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় আচমকা আঘাত হানা ইসরায়েলের কর্মকর্তারা গত কয়েকদিন ধরে প্রায়ই বলেছেন, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে ১৯৭৯ সাল থেকে ইরানে শাসন করে আসা কট্টরপন্থি শিয়া মুসলিম মোল্লাতন্ত্রকে উচ্ছেদ করা।
গত রবিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক হুমকি নির্মূল করার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন, তা অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন।
ইরাকে ২০০৩ সালে মার্কিন আগ্রাসনের পর রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের জনপ্রিয়তা কমতে দেখা মার্কিন প্রশাসনের বর্তমান কর্মকর্তাদের অনেকেই জোর গলায় বলছেন, তারা ইরানের সরকার ফেলে দিতে কাজ করছেন না।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছেন, ‘রেজিম চেঞ্জের জন্য এই অভিযান হয়নি, হচ্ছে না।’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে আমাদের জাতীয় স্বার্থের জন্য যে হুমকি সৃষ্টি হয়েছিল তা দূর করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছিলেন।’
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই পোস্ট পিট হেগসেথের দাবিকে প্রতিষ্ঠা করে না।
এদিকে, হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ট্রাম্প খুব সাধারণ অর্থে কথাটি বলেছেন। ট্রাম্পের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ সংক্রান্ত পূর্ববর্তী এক মন্তব্যের সূত্র ধরেই কথাটি বলেছেন। ট্রাম্প বলতে চেয়েছেন, যদি ইরানের বর্তমান সরকার কূটনীতির পথে না আসে, তবে দেশটির জনগণ কেন সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠবে না। সূত্র: বিবিসি।