
সিরিয়া প্রজাতন্ত্র দেশটির নতুন একটি জাতীয় প্রতীক উন্মোচন করেছে। নতুন জাতীয় প্রতীক 'সোনালী ঈগলকে' কর্তৃত্ববাদের উত্তরাধিকার থেকে বিরতি, সেবা, ঐক্য এবং বৈধতা দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা একটি রাষ্ট্রের এগিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাজধানী দামেস্কের প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা নতুন এই প্রতীক উন্মোচন করেন।
পূর্বের বাজপাখির পরিবর্তে এবার প্রতীকে স্থান পেয়েছে সোনালি ঈগল। প্রতীকের মাথায় রয়েছে তিনটি তারা, যা সিরিয়ার জনগণের মুক্তিকে প্রতীকীভাবে তুলে ধরে। ঈগলের লেজের পাঁচটি পালক দেশটির পাঁচটি ভৌগোলিক অঞ্চল—উত্তর, পূর্ব, পশ্চিম, দক্ষিণ ও কেন্দ্রকে নির্দেশ করে।
আর ডানার ১৪টি পালক প্রতিটি প্রদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, এই ১৪টি পালকের প্রতিটিই বিগত ১৪ বছরের ‘বিপ্লবের প্রতিরোধের গল্প’ বহন করে। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা জানায়, নতুন জাতীয় পরিচয় চালুর ফলে শিগগিরই জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্টসহ সরকারি কাগজপত্রে নতুন এই নকশা যুক্ত করা হবে।
অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা বলেন, ‘আজ আমরা যে পরিচয় চালু করছি, তা আমাদের ঐক্য এবং নতুন ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি। সোনালি ঈগল আমাদের শক্তি, দৃঢ়তা, গতি ও উদ্ভাবনের প্রতীক।’
তিনি আরও বলেন, ‘দামেস্কের ইতিহাস বিশ্ব ইতিহাসের সূচনা ও শেষের গল্প। আমরা যে অপমানজনক সময় পার করেছি, সেটি দামেস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত অধ্যায়। সেই অধ্যায় শেষ হয়েছে। আমাদের পতনের সময় পেরিয়ে গেছে, শুরু হয়েছে পুনর্জাগরণের সময়।’
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সিরিয়ার অবস্থান শক্তিশালী করতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কথাও জানান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শাইবানি। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক মাসে বিশ্বের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে বৈঠকে সিরিয়ার নতুন পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। আর আমরা বিশ্বের কাছে এখন আর শুধুই আশা নয়, বাস্তবতার অংশ।’
আল-শাইবানি আরও বলেন, ‘আগের সরকারের ফাঁকা স্লোগান নয়, এখন আমাদের লক্ষ্য জনগণের সম্মান ও দেশের প্রকৃত অবস্থান নিশ্চিত করা।’
নতুন জাতীয় পরিচয় ঘিরে রাজধানী দামেস্কসহ বিভিন্ন শহরে বর্ণাঢ্য উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। দামেস্কের উমাইয়া স্কয়ার, বীর অজানা সৈনিকের সমাধি, ফেয়ারগ্রাউন্ড, লাতাকিয়া, আলেপ্পো, ইদলিব, দেইর আল-জোর, হামাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আনন্দ উদ্যাপন হয়।
দেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা নতুন জাতীয় প্রতীকের ঘোষণাসংক্রান্ত বার্তা পেয়েছেন, যেখানে একে ‘স্বাধীনতার আকাশে দৃঢ়তা ও মুক্তির নবায়নকৃত প্রতীক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
প্রায় ২৫ বছর সিরিয়া শাসন করার পর সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ গত ডিসেম্বর মাসে রাশিয়ায় পালিয়ে যান। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন আহমেদ আল-শারা। তার নেতৃত্বে সিরিয়া নতুন এক রাজনৈতিক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে।
সুলতানা দিনা/