ইসরায়েল হামলার ক্ষেত্রে কোনো আন্তর্জাতিক নিয়মকানুনের তোয়াক্কা করছে না। আমলে নিচ্ছে না বিশ্বের অন্যান্য দেশের উদ্বেগ, হুঁশিয়ারিকেও।
বুধবার (৩০ জুলাই) ভোর থেকে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৬ জন। নিহতদের মধ্যে ১৩ জন সহায়তাপ্রত্যাশী বলে জানায় এক সূত্র। এখন পর্যন্ত মোট ৭০ জন সহায়তাপ্রত্যাশী নিহত হয়েছেন।
গাজার যুদ্ধে ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা এরই মধ্যে ৬০ হাজারের ঘর পার করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হয় এ যুদ্ধ। এ পর্যন্ত মোট ৬৬২ দিন যুদ্ধ হয়েছে। সে হিসাবে ইসরায়েলি হামলায় প্রতিদিন গড়ে ৯০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। গাজার মোট জনসংখ্যার সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে, প্রতি ৩৬ গাজাবাসীর একজন ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েল দীর্ঘ একটা সময় গাজায় সহায়তা ঢুকতে দেয়নি। সম্প্রতি তারা সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। সীমিত সময়ের জন্য গাজায় সহায়তা ঢুকতে দিতে রাজি হয়েছে। তবে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে অবস্থানরত আল-জাজিরার সাংবাদিক জানিয়েছেন, গাজায় সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়ার ওই বিষয়টি শুধু কাগজে-কলমেই রয়েছে। কারণ সহায়তা নিয়ে যেসব ট্রাক গাজায় প্রবেশ করছে, সেগুলো মানুষের হাত পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না।
আল-জাজিরার সংবাদদাতা জানান, বিপুলসংখ্যক মানুষের খাবারে সরাসরি কোনো প্রবেশাধিকার নেই। তারা বিকল্প পথের ওপর নির্ভর করছে। অনেক ক্ষেত্রে বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিয়ে সহায়তা সংগ্রহ করতে যাচ্ছে। যেমন- জিকিম এলাকায় ট্রাকের প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে, আবার উপত্যকার দক্ষিণ ও মধ্য অংশে বিতরণকেন্দ্রগুলোতে তারা যাচ্ছে। সেসব স্থানে তাদের ইসরায়েলি সেনাদের গুলির মুখে পড়ার ঝুঁকি প্রবল।
আল-জাজিরার খবর বলছে, গাজার বেশির ভাগ মানুষ ভালোভাবে খেতে পারছে না। মানবেতর পরিস্থিতি পাড়ি দেওয়ার জন্য তাদের যেটুকু খাবারের প্রয়োজন, তা তাদের নেই। গাজার মানুষ এখন নিজেদের মধ্যেই বলাবলি করছে যে চার দিন ধরে গাজায় যে সহায়তা ঢোকার তোড়জোড় করা হয়েছে, তা আসলে লোক দেখানো কাজ ছাড়া আর কিছু নয়।
এদিকে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার বুধবার জানিয়েছেন, ইসরায়েল যদি গাজায় সুনির্দিষ্ট কিছু শর্ত মেনে না চলে, তা হলে আগামী সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাজ্য। এরই মধ্যে বিষয়টির বিরোধিতা করেছে একাধিক পক্ষ। তাদের মধ্যে হামাসের হাতে থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবার ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রয়েছেন।
ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবার বলছে, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রের ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ দাঁড়াবে ‘সন্ত্রাসবাদকে মদদ’ দেওয়া। জিম্মিদের পরিবারের সংগঠন হোস্টেজ অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরাম বলেছে, এ ধরনের স্বীকৃতি শান্তির পথে যাওয়া নয়। বরং আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
ফিলিস্তিনকে বিশ্বের ১৪০টি রাষ্ট্র স্বীকৃতি দিয়েছে। গত সপ্তাহে ফ্রান্সও জানিয়েছে, তারা আগামীতে দেশটিকে স্বীকৃতি দেবে। এদিকে, যুক্তরাজ্য নিজ সিদ্ধান্ত জানানোর পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুরো বিষয়টির নিন্দা ও কড়া সমালোচনা করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলছেন, স্টারমার হামাসের দানবীয় সন্ত্রাসকে পুরস্কৃত করছেন এবং সে সন্ত্রাসের ভুক্তভোগীদের শাস্তি দিচ্ছেন। ইসরায়েল সীমান্তে কোনো জিহাদি রাষ্ট্র আজ প্রতিষ্ঠিত হলে, তা আগামীতে ব্রিটেনকে হুমকির মুখে ফেলবে। নেতানিয়াহু আরও বলেন, ‘জিহাদি সন্ত্রাসীদের তুষ্ট করার প্রচেষ্টা সব সময় ব্যর্থ হয়। এটি আগামীতেও আপনাকে ব্যর্থ করবে। এটি হবে না।’
এমন একটি সময়ে এসব ঘটনা ঘটছে যখন জাতিসংঘ সমর্থিত সংস্থা বলছে, গাজায় দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গত মঙ্গলবার গাজায় একশরও বেশি লরি সহায়তা নিয়ে প্রবেশ করেছিল। কিন্তু সেগুলোর বেশির ভাগই লুট হয়ে গেছে।
ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোকে গাজায় নিজেদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে দিচ্ছে না। বিবিসির মতো সংবাদমাধ্যমেরও গাজার খবর সংগ্রহ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। সূত্র: বিবিসি