ঢাকা ৩ চৈত্র ১৪৩১, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
English

মন ও আত্মাকে অসুস্থ রেখে দেহের সুস্থতা কী সম্ভব?

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫২ পিএম
মন ও আত্মাকে অসুস্থ রেখে দেহের সুস্থতা কী সম্ভব?
প্রতীকী ছবি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুস্বাস্থ্যের এক অভূতপূর্ব সংজ্ঞা দিয়েছে- ‘Health is a state of complete physical, mental and social well-being and not merely the absence of disease or infirmity’. যার অর্থ, কেবল রোগ বা অক্ষমতার অনুপস্থিতিই সুস্বাস্থ্য নয়। বরং একজন মানুষকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী তখনই বলা যাবে যখন তিনি শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে সুস্থ থাকবেন।

আসলে আমরা সুস্থ থাকতে গিয়ে শুধু দৈহিক সুস্থতার ওপর জোর দেই, সুস্থতার বাকি অনুষঙ্গগুলোর যত্ন নেই না। পরিপূর্ণ সুস্থ হতে পারছি না এ কারণেই।

বর্তমানে দেশে এত হাসপাতাল, চিকিৎসক, সুযোগ-সুবিধা। যা আগে ছিল না। এত হাসপাতাল, তবু রোগী ধরে না। এত চিকিৎসা সুযোগ-সুবিধা, তবু মানুষ পরিপূর্ণ সুস্থ হতে পারছে না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের এত উন্নতির পরও আমরা অসুস্থ হচ্ছি। কিন্তু কেন? 

বিষয়টি নিয়ে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন কী বলছে?

সংস্থাটির অফিসিয়াল জার্নাল ‘সার্কুলেশন’-এ প্রকাশিত একটি আর্টিকেলে বলা হয়েছে, চিকিৎসক হিসেবে আমরা ভালো শুধু রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে। পুরো ব্যক্তিটির চিকিৎসা করতে আমরা ততটা ভালো নই! চিকিৎসকদের মনোযোগ থাকে নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থা তথা রোগের ওপর। রোগীর পুরো অস্তিত্বকে বা সামগ্রিক বিষয়কে বিবেচনা করা হয় না।

আর্টিকেলে আরও বলা হয়েছে- হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে নেতিবাচক আবেগ যেমন- স্ট্রেস, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, টেনশন, ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা।

আধুনিক মানুষের বড় সমস্যা ক্রনিক স্ট্রেস। রাগ, ক্রোধ, হতাশা তার ভেতরে বাসা বেঁধেছে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন বলছে, কোনো ব্যক্তির ভেতরে যদি এগুলো থাকে তাহলে তার হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক হওয়া সময়ের ব্যাপার!

এখন আপনিই বলুন, রোগীর সামাজিক, মানসিক, আত্মিক এই দিকগুলো বাদ দিয়ে শুধু ওষুধ দিয়ে কি পরিপূর্ণ সুস্থ করা সম্ভব?

সুস্থ রাখতে হবে মন ও আত্মাকে

মানুষ হলো দেহ, মন এবং আত্মার সমন্বয়ে। দেহ দেখা যায়, দেহের অসুস্থতা পরিমাপও করা যায়। দেহকে সুস্থ করে তুলতে করণীয় বুঝতেও সমস্যা হয় না কারো। কিন্তু মন এবং আত্মা দেখা, ধরাছোঁয়া যায় না। ফলে এদের গুরুত্ব আমরা বুঝি না যতক্ষণ না মানসিক বা আত্মিকভাবে রোগী হই। দিনের পর দিন মন খারাপ থাকলে একটা সময় মানুষ আক্রান্ত হয় বিষণ্ণতায়। শরীরের সুস্থতা তখন হয় বিপন্ন। আর সমস্ত প্রাপ্তিই অর্থহীন হয়ে যায় যখন আত্মিক শূন্যতা কারো মধ্যে থাকে। এজন্যেই সাফল্যের স্বর্ণশিখরে আরোহণ করার পরও অনেককেই আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠে। তাই মন এবং আত্মাকে অসুস্থ রেখে দেহের সুস্থতা বজায় রাখা অসম্ভব।

পরিপূর্ণ সুস্থতায় করণীয়

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন বলছে, মন এবং আত্মাকে পরিচ্ছন্ন রাখতে মেডিটেশন বা ধ্যানচর্চা অনুশীলন করতে হবে। কারণ মেডিটেশন নেতিবাচক আবেগ দূর করে।

ধরুন, আপনার রাগ বেশি, আর রাগের কারণে আপনি হৃদরোগী। মেডিকেল সায়েন্স এটা বলছে। এখন ডায়াগনসিস তো হলো, কিন্তু নিরাময়? কোনো ডাক্তার, কোনো হাসপাতাল, কোনো ওষুধ কি আপনার রাগ কমাতে পারবে? পারবে না। 

আবার ব্যবসায়ে কোটি টাকা ক্ষতি হওয়ার দুঃখে আপনি হার্ট অ্যাটাক করেছেন। সুস্থ থাকতে হলে আপনার হৃদয়ের উপশম ঘটাতে হবে। কিন্তু ডাক্তার, হাসপাতাল কিংবা ওষুধ আপনার মনের ব্যথা কমাতে পারবে না। সমস্যাগুলো মনের, তাই মন থেকেই এগুলো দূর করতে হবে। 

স্ট্রেস, রাগ, ক্রোধ, হতাশা দূর করতে মেডিটেশন কার্যকর

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন বলছে, মেডিটেশনের মাধ্যমে নেতিবাচক আবেগগুলো দূর করা সম্ভব। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ ড. স্টিভেন লরিস। বেলজিয়ামের লিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজিস্ট প্রফেসর ছিলেন তিনি। অত্যন্ত সফল মানুষ। কোনোকিছুরই কমতি নেই। সুখী এই মানুষটির জীবনে অকস্মাৎ নেমে এলো বিপদ! পরকীয়ার জেরে স্ত্রী আরেকজনের সঙ্গে চলে গেলে তিন সন্তানকে নিয়ে অথৈ সমুদ্রে পড়লেন ড. লরিস। আক্রান্ত হলেন বিষণ্ণতায়। যত চিকিৎসা আছে, সব নিলেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান হলো না। উদ্বেগ কষ্ট হতাশা দূর হচ্ছিল না কিছুতেই। 

বন্ধুর পরামর্শে মেডিটেশন শুরু করে যা ঘটল!

আধুনিক মেডিকেল সায়েন্স যেখানে হার মানল, সেখানে মেডিটেশন করে তিনি ধীরে ধীরে বিষণ্ণতা থেকে মুক্ত হলেন। এ থেকে তিনি এতটাই অনুপ্রাণিত হলেন যে মেডিটেশন নিয়ে রীতিমতো গবেষণা শুরু করলেন। গবেষণার আলোকে লিখলেন ‘No Nonsense Meditation Book’ নামে একটি ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট সেলার বই। 

বইয়ে মেডিটেশনকে যেভাবে ব্যাখ্যা করেন তিনি 

ড. লরিস মেডিটেশনের কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করেছেন নিউরোসায়েন্সের আলোকে। তিনি মেডিটেশনকে আখ্যায়িত করেছেন মস্তিষ্কের ব্যায়াম। আপনি মেডিটেশনে যখন চোখ বন্ধ করে কোনোকিছু কল্পনা করছেন তখন আপনি কিছুই করছেন না, তা নয়। বরং জেগে থাকা অবস্থায় ব্রেনকে যতটা কাজে লাগাচ্ছিলেন, মেডিটেটিভ লেভেলে কাজ করাচ্ছিলেন তার চেয়ে বেশি।

কেউ যখন নিয়মিত দৌঁড়ান, তার কাফ এবং থাইয়ের মাসল শক্তিশালী হয়। যখন নিয়মিত সাঁতার কাটেন, তার কাঁধের পেশী শক্তিশালী হয়। তেমনি কেউ যখন নিয়মিত মেডিটেশন করেন তখন তার মস্তিষ্কের আবেগ নিয়ন্ত্রণকারী অংশ প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স, এমিগডালা, হিপোক্যাম্পাস শক্তিশালী হয়। গ্রে ম্যাটারের পরিমাণ এবং ঘনত্ব বাড়ে। ফলে এগুলো দারুণভাবে কাজ করতে শুরু করে। ফলশ্রুতিতে আমরা থাকি সুস্থ ও প্রাণবন্ত।

ড. লরিসের ক্ষেত্রে কী হয়েছিল? 

তিনি ভেঙে পড়েছিলেন। হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু যখন মেডিটেশন করতে শুরু করলেন তখন ক্রমান্বয়ে সুস্থ হতে থাকলেন। নেতিবাচক আবেগ নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন ও নিউরোট্রান্সমিটারের নিঃসরণ কমতে শুরু হলো। নিঃসরণ বাড়তে শুরু হলো সুখের অনুভূতি সৃষ্টিকারী কেমিকেল ডোপামিন, সেরেটনিন, অক্সিটসিন, এন্ডরফিন। ফলে ভেতরে একটা আনন্দ অনুরণন তৈরি হয়ে গেল। কিছুদিন পর তিনি অনুভব করলেন পারিপার্শ্বিক দুঃখ-কষ্ট সেভাবে তাকে স্পর্শ করছে না। এটাই মেডিটেশনের গুণ!

তাই এই সফল নিউরোসায়েন্টিস্টের মতো আপনিও নিয়মিত মেডিটেশন করুন, সুস্থ সবল প্রাণবন্ত থাকুন।

নিত্যদিনের সঙ্গী হোক শত হাদিস

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৫, ০৭:৩৯ পিএম
আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৫, ০৭:৪১ পিএম
নিত্যদিনের সঙ্গী হোক শত হাদিস
ছবি: সংগৃহীত

‘তোমার মনে কখনো কারো প্রতি কোনো বিদ্বেষ বা অমঙ্গল চিন্তা থাকবে না- এটাই আমার সুন্নত’ কিংবা ‘কর্মের দিক থেকে যার দুটি দিনই সমান গেল সে ক্ষতিগ্রস্ত হলো আর যার আজকের দিনটি কর্মের দিক থেকে গতকালের চেয়ে খারাপ গেল সে হতভাগা’- নিজের ও অপরের কল্যাণ করার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্বলিত এমন শত হাদিসের সংগ্রহ নিয়েই প্রকাশিত ছোট্ট পকেট বই 'নিত্যদিন শত হাদিস’।

হাদিসের বিশাল ভাণ্ডার থেকে এমন সব হাদিস এখানে তুলে আনা হয়েছে যার চর্চা নিত্যদিন জরুরি। যার চর্চায় বাড়বে ভ্রাতৃত্ববোধ, কমবে হানাহানি। উদাহরণ দেওয়া যাক। বইটির ৫৫ পৃষ্ঠার হাদিসটি এমন– (তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না।) ‘অতীতে ধর্মচর্চা নিয়ে যারা বাড়াবাড়ি করেছে, তারা নিহত ও ধ্বংস হয়েছে।’ নবীজী (স) তিন বার একথার পুনরাবৃত্তি করেন।

আবুযর গিফারী (রা) বর্ণিত হাদিস ‘অন্যের এমন সব দোষত্রুটি দেখা ও বলা থেকে বিরত থাকো যা তোমার মধ্যেও আছে’ অথবা আবু হুরায়রা (রা) বণিত ‘প্রজ্ঞা ১০ ভাগে বিভক্ত। নয় ভাগ জড়িত নিরাসক্তির সঙ্গে আর একটি ভাগ জড়িত মৌনতার সঙ্গে’ ইত্যাদি পাঠ পাঠকমনে প্রতিফলিত করবে সুস্থ জীবনাচার। করবে সফল ও সুখী। দুনিয়া ও আখেরাতে তিনি হবেন সম্মানিত।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন প্রকাশিত সবুজ কলাপাতা প্রচ্ছদে তুলির প্রলেপে দৃষ্টিনন্দন বইটি হাতে বা পকেটে সহজে বহনযোগ্য।

গ্রন্থকার শহীদ আল বোখারীর মতে, সংকলিত হাদিসগুলো পবিত্র বাণীর শাব্দিক অনুবাদ নয়, মর্মান্তর। সহজ সাবলীল এই মর্মান্তর পাঠকের অন্তরে সৃষ্টি করবে এক অভাবিত অনুরণন। বাণীর প্রাসঙ্গকিতায় শিহরণ জাগবে। দৈনন্দিন পাঠে বদলাবে জীবনের বাঁক। পাঠক পেতে পারেন পথের দিশা।

আসলে সফল সুখী জীবন সবারই চাই। সেজন্য প্রয়োজন সঠিক জীবনাচার। আর সফল সুখী জীবনের উজ্জ্বল উদাহরণ হযরত মুহাম্মদ (স)। নবী জীবনাচারের নিত্যদিন শত হাদিস সবসময় থাকুক হাতের নাগালে। দৈনন্দিন জীবনে হাদিসের জ্ঞানগুলো অনুসরণ সহজ হোক সবার জন্য। বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ৫৫ টাকা। তবে এটি রমজানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৪০ টাকায়।

এমএ/

রমজানে আত্মশুদ্ধি জীবনকে নিয়ে যেতে পারে সর্বোচ্চ মহিমায়

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৫, ১২:১৩ এএম
রমজানে আত্মশুদ্ধি জীবনকে নিয়ে যেতে পারে সর্বোচ্চ মহিমায়
প্রতীকী ছবি

মাহে রমজান আত্ম-অনুসন্ধান ও আত্মউপলব্ধির মাস। আত্মসমালোচনার মধ্য দিয়ে আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাস। কিছু করণীয় ও বর্জনীয় অনুসরণের মধ্য দিয়ে আমরা রমজান মাসকে নিজেদের জন্য স্বার্থক করে তুলতে পারি। একটি স্বার্থক রমজান আমাদের দিতে পারে আত্মশুদ্ধির পরম স্বাদ। জীবনকে নিয়ে যেতে পারে সর্বোচ্চ মহিমায়।

বেশি বেশি ইবাদত

রমজান মাসের নফল ইবাদত ফরজ আদায়ের সমান সওয়াবের। তাই নফল ইবাদতের চর্চা বাড়ান। তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় উত্তম ইবাদত। তাই সেহরির জন্যে একটু আগে আগে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ুন। রমজান মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিয়তে আত্মিক ফিটনেস অর্জনকেই বেশি গুরুত্ব দিন। সঠিক নিয়মে রোজা রাখার সঙ্গে সঙ্গে অনুষঙ্গিক ইবাদতকে প্রাধান্য দিন।

সহমর্মী-সমমর্মী হোন

রমজান সমমর্মিতা অনুশীলনের মাস। বিশ্বজনীন মমতা জাগ্রত করার মাস। নবীজী (স) সৃষ্টির সেবায় কাজ করাকে রমজানে এতেকাফের চেয়েও বেশি সওয়াবের বলে উল্লেখ করেছেন। তাই এই মাসে সৃষ্টির সেবায় যথাসম্ভব সময় ব্যয় করুন। দুস্থ অসহায়দের দারিদ্র ও দুর্দশা লাঘবে সচেষ্ট থাকুন। নবীজী (স) রোজার মাসে দানের পরিমাণ অনেক বাড়িয়ে দিতেন। কারণ এ মাসে দানের সওয়াব অন্য সময়ের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি। তাই আপনিও বেশি বেশি দান করুন। অধিক সওয়াবের জন্য করতে পারেন সঙ্ঘবদ্ধ দান। সঙ্ঘবদ্ধ দানের বদৌলতে আপনি পাবেন ৪,৯০০ (৭০ X ৭০) গুণ সওয়াব!

পরনিন্দা, পরচর্চা ও গীবত বর্জন করুন

ধৈর্য ও সহনশীলতা অনুশীলনের মাসও রমজান। আর ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত। তাই রমজানে পরনিন্দা, পরচর্চা ও গীবত পুরোপুরি বর্জন করুন। অপ্রয়োজনীয় কথা, বিতর্ক, ঝগড়া, উত্তেজনা ও দুর্ব্যবহার করা থেকে সচেতনভাবে বিরত থাকুন। অন্যেরা করলেও আপনি অংশ নেবেন না। আপনার সঙ্গে কেউ যেচে এসে বিবাদ করতে চাইলেও আপনি প্রশান্ত থাকুন। বলুন আমি রোজাদার।

খাদ্যে ভেজাল, মজুদদারি, ওজনে কম দেওয়া, নকল পণ্য বিক্রি থেকে বিরত থাকুন

আপনি যদি ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন তাহলে এ মাসে খাদ্যে ভেজাল, মজুদদারি, ওজনে কম দেওয়া, নকল পণ্য বিক্রি করা থেকে বিরত থাকুন। বেশি লাভের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করবেন না। নিম্ম আয়ের মানুষও যেন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে পারে সে পরিবেশ বজায় রাখুন।

আর চাকুরিজীবী হলে ঘুষ বা অবৈধ লেনদেন, দীর্ঘসূত্রিতা, অসততা, দুর্নীতি, অধস্তনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকুন।

আসক্তি থেকে মুক্ত থাকুন

সব ধরণের আসক্তি থেকে মুক্ত হবার সবচেয়ে ভাল সময় রমজান। ধূমপান, মাদকাসক্তি, ফেসবুক আসক্তি, স্মাটফোন আসক্তি, সেলফি সিন্ড্রোম আসক্তি বা অন্য কোনো আসক্তি থাকলে তা পুরোপুরি বর্জন করুন এ মাসে।

ভার্চুয়াল আসক্তি থেকে মুক্ত হতে স্মার্টফোনের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার বন্ধ করুন। বর্জন করুন ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, টিভি সিরিয়াল, ওয়েব সিরিজ, অনলাইন গেমসহ সবধরণের বিনোদন। 

শপিং আসক্তি থেকে মুক্ত হোন, রমজানকে কেনাকাটাসর্বস্ব বানাবেন না। ঈদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা রোজার আগেই সেরে ফেলুন। আপনি একদিকে ইবাদতের জন্য বাড়তি সময় পাবেন, আবার বাঁচবে অর্থ, সময় ও শ্রমের অপচয়।

কোরআনের মর্মবাণী অনুধাবন

সময় বের করুন আত্ম-অনুসন্ধানের জন্য আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী পড়ুন। পাশাপাশি নিয়মিত অধ্যায়ন করুন হাদীস শরীফ বাংলা মর্মবাণী। উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন নবীজীর (স) শিক্ষাকে। আত্মনিমগ্ন হোন সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে। নিয়মিত মেডিটেশন বা ধ্যানচর্চা করুন। প্রার্থনা ও জিকিরে নিমগ্ন থাকুন যথাসম্ভব।

নাজাতের অনুসন্ধান করুন

হাদীসে শরীফে বলা আছে রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আর তা হলো শবে কদর। নবীজী (স) রমজানের শেষ ১০ বেজোড় রাতে শবে কদর অনুসন্ধান করতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও আত্মশুদ্ধির নিয়তে কদরের রাতে নফল ইবাদতে মগ্ন হও, তোমাদের অতীতের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।’ (আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম)

তাই এই রাতগুলোকে কদর-এর মহিমান্বিত রাত মনে করে ফজর পর্যন্ত ইবাদতে মগ্ন থাকুন। নবীজী (স) সুন্নত অনুসরণে রমজানের শেষ ১০ দিন এতেকাফ করতে সচেষ্ট থাকুন।

জীবন বদলে দিতে পারে যে ৪০টি হাদিস

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৫, ১০:২২ পিএম
আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৫, ০৮:৪৮ পিএম
জীবন বদলে দিতে পারে যে ৪০টি হাদিস
প্রতীকী ছবি

হাদিস শরীফ মুসলিম মিল্লাতের এক অমূল্য সম্পদ। ইসলামী শরীয়তের অন্যতম অপরিহার্য উৎস এবং ইসলামী জীবন বিধানের অন্যতম মূলভিত্তি। কুরআন মাজীদ যেখানে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মূলনীতি পেশ করে, হাদিস সেখানে এ মূনীতির বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও তা বাস্তবায়নের কার্যকর পন্থা বলে দেয়। কুরআন ইসলামের আলোকস্তম্ভ, হাদিস এর বিচ্ছুরিত আলো। ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানে কুরআন যেন হূদপ্লি, আর হাদিস এ হূদপি্লের সঙ্গে সংযুক্ত ধমনী। জ্ঞানের বিশাল ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত তাজা তপ্ত শোণিতধারা প্রবাহিত করে এর অঙ্গ-প্রতঙ্গকে অব্যাহতভাবে সতেজ ও সক্রিয় রাখে। হাদিস একদিকে যেমন কুরআনুল আযীমের নির্ভুল ব্যাখ্যা দান করে, অনুরূপভাবে তা পেশ করে কুরআনের ধারক ও বাহক মোহাম্মদের (স.) পবিত্র জীবনচরিত, কর্মনীতি ও আদর্শ এবং তাঁর কথা ও কাজ, হিদায়াত ও উপদেশের বিস্তারিত বিবরণ। এজন্যই ইসলামী জীবন বিধানে কুরআনে হাকীমের পরপরই হাদিসের স্থান।

মানব জীবনে যেকোন সমস্যা সমাধানে হাদিসগুলো আপনাকে আলোর পথ দেখাবে। তাই জীবন বদলের এই ৪০টি হাদিসগুলো হতে পারে আপনার সফল জীবনের পাথেয়।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন প্রকাশিত ‘হাদীস শরীফ বাংলা মর্মবাণী’ থেকে নেওয়া ৪০টি হাদিস:    

১. তোমাদের পরস্পরের প্রতি সাতটি দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে—১. কারো সঙ্গে তোমার দেখা হলে তাকে আগে সালাম দেবে। ২. কেউ তোমাকে দাওয়াত দিলে তা কবুল করবে। ৩. কেউ পরামর্শ চাইলে সৎ-পরামর্শ দেবে। ৪. ওয়াদা করলে তা পালন করবে। ৫. হাঁচি দিয়ে কেউ ‘আলহামদুলিল্লাহ’ (অর্থাৎ সকল প্রশংসা আল্লাহর) বললে তুমি জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ (অর্থাৎ আল্লাহ তোমাকে রহম করুন) বলবে। ৬. অসুস্থ হলে দেখতে যাবে। ৭. মারা গেলে জানাজায় শরিক হবে। -আবু হুরায়রা (রা); বারা ইবনে আজিব (রা); বোখারী, মুসলিম।

২. নবীজী (স.) আমাকে নয়টি উপদেশ দেন—১. আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না। ২. ফরজ নামাজ আদায়ে গাফেলতি করবে না। ৩. কোনো অবস্থাতেই মদ বা মাদক গ্রহণ করবে না। মদ বা মাদক সকল পাপের চাবি। ৪. পিতা-মাতাকে মান্য করবে। ৫. শাসকদের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হবে না। ৬. নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও জেহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে যাবে না। ৭. পরিবারের জন্য তোমার সম্পদের উত্তম অংশ ব্যয় করবে। ৮. পরিবারের সদস্যদের শুদ্ধাচারী 
করার প্রচেষ্টায় দৃঢ় হতে দ্বিধা করবে না। ৯. পরিবারের সদস্যদের আল্লাহ-সচেতন হিসেবে গড়ে তুলবে। -আবু দারদা (রা); মুফরাদ (বোখারী)।

৩. তিন শ্রেণির মানুষ জান্নাতে যাবে—১. ন্যায়পরায়ণ শাসক, যে তার সাধ্যমতো কল্যাণ কাজ করে। ২. হৃদয়বান মানুষ, যার সমমর্মিতার ছোঁয়া পায় আত্মীয় থেকে শুরু করে চারপাশের সবাই। ৩. এমন ধর্মপরায়ণ মানুষ, সংসারী হয়েও যে সংযমী। -আয়াজ ইবনে হিমার (রা); মুসলিম।

৪. ঘুমাতে যাওয়ার আগে ওজু করে (বিছানায় ডান কাতে শুয়ে) তুমি দোয়া করবে : ‘হে আল্লাহ! তোমার কাছেই আমি নিজেকে সমর্পণ করছি। আমার পুরো মন সঁপে দিচ্ছি তোমার স্মরণে। আমার সবকিছু সোপর্দ করছি তোমার হেফাজতে। ভালবাসা ও শঙ্কা সহকারে আশ্রয় গ্রহণ করছি তোমার পবিত্র সত্তার কাছে। তোমার দয়া ছাড়া আমার কোনো নিরাপত্তা নেই। তোমার আজাব থেকে একমাত্র তুমিই মুক্তি দিতে পারো। আমি বিশ্বাস করি তোমার কিতাবে, তোমার রসুলে।’

এই দোয়া পড়ে তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। যদি রাতে তুমি মারা যাও, তবে বিশ্বাসী হিসেবে মারা যাবে। আর সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠলে কল্যাণ তোমার জন্যে অপেক্ষা করবে। -বারা ইবনে আজিব (রা); বোখারী, মুসলিম

৫. খাবার গ্রহণ করার পর তুমি বলো, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর। তিনি আমাকে খাওয়ালেন। আমাকে রিজিক দিলেন, যা (শুধু) আমার প্রয়াস ও ক্ষমতায় সম্ভব ছিল না। সবটাই তাঁর দয়া।’ তোমার সকল গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। -মুয়াজ ইবনে আনাস (রা); আবু দাউদ, তিরমিজী

৬. মজলুমের অভিশাপে অভিশপ্ত হয়ো না। মজলুমের প্রার্থনা সরাসরি আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। আর আল্লাহ কারো ওপর অত্যাচার অনুমোদন করেন না। -আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা); মেশকাত

৭. বিশ্বাস বা ঈমানের পর তোমার প্রতি স্রষ্টার সবচেয়ে বড় নেয়ামত হচ্ছে স্বাস্থ্য ও সুস্থতা। -আবু বকর সিদ্দীক (রা); আহমদ

৮. আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যখন কেউ আপন ভাই বা কোনো অসুস্থ মানুষকে দেখতে যায়, তখন একজন ঘোষক তাকে বলে, ‘তুমি আনন্দিত হও, তোমার যাত্রা শুভ হোক, জান্নাতে তোমার মর্যাদা সুউচ্চ হোক’। -আবু হুরায়রা (রা); তিরমিজী, ইবনে মাজাহ, আহমদ

৯. যারা সৎ কাজের কথা বলে কিন্তু নিজেরা তা করে না, আর খারাপ কাজ করা থেকে অন্যদের বিরত থাকতে বলে কিন্তু নিজেরা সেই খারাপ কাজ করে, আখেরাতে তাদের শাস্তি হবে কঠিন। -উসামা ইবনে জায়েদ (রা); বোখারী, মুসলিম

১০. নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখো, আল্লাহর রাগ থেকে তুমি সুরক্ষিত থাকবে। -আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা); আহমদ

১১. মহাবিচার দিবসে তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই তার প্রতিপালক কথা বলবেন। এই কথাবার্তায় কোনো দোভাষী থাকবে না। যখন ডানে তাকাবে, তুমি তখন তোমার অতীত ভালো কাজ দেখতে পাবে। বামে তাকালে তুমি তোমার অতীত মন্দ কাজ দেখবে। আর সামনে দেখবে জাহান্নামের লেলিহান আগুন। তাই সময় থাকতে, এমনকি এক টুকরা খেজুর দান করে হলেও নিজেকে বাঁচাও। আর তা-ও যদি না পারো, তবে হাসিমুখে কথা বলে, ভালো কথা বলে ও ভালো ব্যবহার করে নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। -আদী ইবনে হাতিম (রা); বোখারী, মুসলিম

১২. তোমরা রোগ নিরাময়ের জন্যে সাদাকা দাও। -জামে উস-সগীর

১৩. প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হন। একজন (সকালে যে দান করেছে এমন) দাতার জন্যে প্রার্থনা করেন :‘হে আল্লাহ! দাতাকে সর্বোত্তম পুরস্কার দান করো।’ আর অন্যজন (দান করা থেকে বিরত কৃপণের জন্যে) প্রার্থনা করে : ‘হে আল্লাহ! কৃপণের ধন বিনষ্ট করো।’ -আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম

১৪. পানি যেভাবে আগুনকে নিভিয়ে ফেলে, দানও তেমনি পাপমোচন করে। -আনাস ইবনে মালেক (রা), মুয়াজ ইবনে জাবল (রা); তিরমিজী, ইবনে মাজাহ

১৫. সাতটি কাজের নেকি একজন মানুষ তার মৃত্যুর পরও পেতে থাকবে। ১. জ্ঞানাগার (অর্থাৎ বই বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান), ২. খাল খনন, ৩. পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, ৪. বৃক্ষরোপণ, ৫. মসজিদ নির্মাণ, ৬. কোরআনের কপি বিতরণ, ৭. নেক সন্তান, যে তার জন্যে দোয়া করবে।

[সদকায়ে জারিয়ার ধারণা বাংলার মুসলমানদের অন্তরে এত বদ্ধমূল ছিল যে, ইংরেজরা বাংলা দখল করার আগে বাংলার এক-তৃতীয়াংশ স্থাবর সম্পদই ছিল ওয়াকফ সম্পত্তি। এই ওয়াকফ সম্পত্তি দিয়েই মুসলমানদের শিক্ষাব্যবস্থা, এতিমখানা, মুসাফিরখানা ও সেবামূলক কাজ পরিচালিত হতো। ইংরেজরা বাংলা দখল করে প্রথমেই এই বিশাল ওয়াকফ সম্পত্তি গ্রাস করে। ফলে মুসলমানদের পুরো শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।]
-আনাস ইবনে মালেক (রা); বাজ্জার

১৬. কোনো মানুষ পাপ করে অনুতপ্ত হলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। আবারও পাপ করে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা করে দেন। আবারও যদি পাপ করে ক্ষমাপ্রার্থনা করে তখনো ক্ষমা করে দেন। তুমি যদি অনুশোচনা ও ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে ক্লান্ত না হও, আল্লাহ কখনো ক্ষমা করতে ক্লান্তবোধ করেন না। -উকবা ইবনে আমির (রা); তাবারানী

১৭. সকল সৃষ্টি হচ্ছে আল্লাহর পরিবার। আল্লাহর পরিবারের সঙ্গে ভালো ব্যবহারকারী আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয়। -আনাস ইবনে মালেক (রা); আবু ইয়ালা, বায়হাকি

১৮. স্রষ্টার ইবাদত করা যেমন তোমার কর্তব্য, একইভাবে নিজের প্রতিও তোমার দায়িত্ব রয়েছে। দায়িত্ব রয়েছে পরিবারের প্রতি। তোমার কর্তব্য হচ্ছে—পরিবারের সকলের প্রতি তোমার দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করা। -আবু জুহাইফা (রা); বোখারী

১৯. ধর্মপালনকে মানুষের জন্যে সহজ করো। একে মানুষের জন্য কঠিন কোরো না। তাদের সুসংবাদ দাও। ভীতসন্ত্রস্ত করে ধর্ম থেকে তাদের দূরে সরে যাওয়ার কারণ হয়ো না। -আনাস ইবনে মালেক (রা), বোখারি

২০. ঋণশোধ না হওয়া পর্যন্ত একজন বিশ্বাসীর আত্মা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। প্রবেশপথে আটকে থাকবে। -আবু হুরায়রা (রা); তিরমিজী

২১. সর্বোত্তম জীবন হচ্ছে সংগ্রামী জীবন। আল্লাহর পথে যে চলে অবিরাম। ন্যায়ের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে মুহূর্তে। বিপদ বা শত্রুর মোকাবেলায় থাকে অগ্রভাগে। কামনা করে শহিদী মৃত্যু (যাতে সহযোদ্ধারা বেঁচে গিয়ে লাভ করতে পারে বিজয়ীর জীবন)। অথবা তার জীবন, যে চলে যায় কোনো পাহাড় চূড়ায় বা কোনো উপত্যকায়। কায়েম করে নামাজ, আদায় করে যাকাত, সদাচরণ করে মানুষের সঙ্গে, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না কোনোভাবেই। আর আমৃত্যু নিবেদিত থাকে আল্লাহর ইবাদতে। -আবু সাঈদ খুদরী (রা), আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম

২২. কোরআনে পাঁচ ধরনের আয়াত রয়েছে—১. হালাল (বৈধ)। ২. হারাম (অবৈধ)। ৩. মুহকামাত (সুস্পষ্ট বিধিবিধান)। ৪. মুতাশাবেহাত (রূপক)। ৫. কেসাস (উদাহরণ)। তোমরা হালালকে হালাল মানবে। হারাম থেকে দূরে থাকবে। আল্লাহর সুস্পষ্ট বিধিবিধান মোতাবেক কাজ করবে। মুতাশাবেহাত আয়াতেরওপর বিশ্বাস রাখবে (এ নিয়ে কোনো বিতর্কে যাবে না)। কেসাস  বা উদাহরণ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে। -আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম

২৩. আল্লাহ বহু জাতির উত্থান ঘটাবেন কোরআনের মাধ্যমে। আবার (অনুসরণ না করার কারণে) বহু জাতির পতনের কারণও হবে কোরআন। -ওমর ইবনে খাত্তাব (রা); মুসলিম

২৪. পৃথিবী বিশ্বাসীর জন্যে পরীক্ষাগার আর অবিশ্বাসীরা একেই মনে করে স্বর্গ। -আবু হুরায়রা (রা); তিরমিজী

২৫.  যেদিন আমি তোমার কাছে তোমার বাবা-মা সন্তানসন্ততি এমনকি তোমার নিজের চেয়ে বেশি প্রিয় হবো, সেদিনই তুমি যথার্থ বিশ্বাসী হবে। -আবু হুরায়রা (রা); বোখারী

২৬. অন্যায় ও পাপ দেখলে তোমার অন্তরে যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘৃণা সৃষ্টি না হয় এবং অবস্থার পরিবর্তন কামনা না করো তাহলে বুঝতে হবে তোমার অন্তরে একবিন্দু ঈমানও অবশিষ্ট নেই। -আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা); মুসলিম

২৭. তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো মানুষ হচ্ছে : ১. যাকে দেখলে আল্লাহর কথা মনে পড়ে। ২. যার কথা শুনলে বিশ্বাস জোরদার হয়। ৩. যার কাজ পরকালের জন্যে কাজ করার আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। -আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা); হাকেম, আশকালানী

২৮. একজন বিশ্বাসীর তিনটি বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় : ১. রাগে ফেটে পড়লেও কখনো অন্যায়ের আশ্রয় নেয় না। ২. আনন্দে ভেসে গেলেও সত্যের সীমা লঙ্ঘন করে না। ৩. ক্ষমতা-কর্তৃত্ব পেলেও অন্যের অধিকারকে অস্বীকার করে না। -তাবারানী, মাজমাউস জাওয়াজিদ

২৯.‘হে আল্লাহর রসুল! আমাদের অন্তরে এমন সব প্রশ্ন, এমন সব কথা ঘুরপাক খেতে থাকে যা মুখে প্রকাশ করা কখনোই সম্ভব নয়। এমনকি কেউ দুনিয়ার সব সম্পদ দিতে চাইলেও তা প্রকাশ করতে পারব না। নবীজী (স) জিজ্ঞেস করলেন, সত্যিই কি তোমাদের অন্তরে এ ধরনের কথা আসে? তারা বললেন, জ্বি হাঁ। তিনি বললেন, এটাই সত্যিকার বিশ্বাসের বৈশিষ্ট্য। আসলে বিশ্বাসীদের অন্তরেই শয়তান কুমন্ত্রণা দেয় বেশি। কুমন্ত্রণার চাপে তারা বিরক্ত। বিশ্বাসীদের বিশ্বাসের পরীক্ষায় উত্তরণের বৈশিষ্ট্যই এটা। অতএব চিন্তার কিছু নেই। অন্তরে কুমন্ত্রণা এলে বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করবে (আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রাজিম) আর কাজে মন দেবে। অথবা অন্তরে তেমন কোনো কুমন্ত্রণা অনুভব করলে তিন বার বলবে ‘আল্লাহ মহান!’-আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা), আবু হুরায়রা (রা), আয়েশা (রা); মুফরাদ (বোখারী)

৩০. বিশ্বাসী ও বিশ্বাসের উপমা হচ্ছে খুঁটির সঙ্গে বাঁধা ঘোড়া। ঘোড়া যে-দিকেই যাক, শেষ পর্যন্ত খুঁটির দিকেই ফিরে আসে। একইভাবে বিশ্বাসী ব্যক্তিও ভুল করতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে বিশ্বাসের দিকেই ফিরে আসে। -আবু সাঈদ খুদরী (রা); বায়হাকি, আহমদ

৩১. কোনো বিশ্বাসীর পার্থিব কোনো কষ্ট দূর করলে মহাবিচার দিবসে আল্লাহ তার একটি বড় কষ্ট দূর করে দেবেন। কোনো অভাবীর অভাবের কষ্ট লাঘব করলে আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার কষ্ট লাঘব করবেন। অন্যের কোনো দোষ গোপন রাখলে আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। অন্যকে সাহায্য করলে আল্লাহও তাকে সাহায্য করা অব্যাহত রাখবেন। -আবু হুরায়রা (রা); মুসলিম

৩২. দুনিয়ার পেছনে ছুটো না, তাহলে আল্লাহ তোমাকে ভালবাসবেন। আর সাধারণ মানুষ যা নিয়ে মত্ত থাকে তা কামনা কোরো না, তাহলে তারা তোমাকে ভালবাসবে। -সহল ইবনে সাদ (রা); ইবনে মাজাহ

৩৩. ‘হে আল্লাহর রসুল! জিকিরের মজলিসের পুরস্কার কী? নবীজী (স) বললেন, ‘জিকিরের মজলিসের পুরস্কার হচ্ছে জান্নাত।’ -আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা); আহমদ

৩৪. কেউ যদি প্রতিদিন একশত বার বলে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ (মহাপবিত্র আল্লাহ! সকল প্রশংসা শুধুই তাঁর), তাহলে তার সকল গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। -আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম

৩৫. প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর যে ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ!’ (আল্লাহ মহাপবিত্র!), ৩৩ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ!’ (সকল প্রশংসা আল্লাহর!) এবং ৩৪ বার ‘আল্লাহু আকবর!’ (আল্লাহ মহান!) পাঠ করবে, সে কখনো ব্যর্থ হবে না।
-কাব ইবনে উজরাহ (রা); মুসলিম

৩৬. যখন তোমরা প্রার্থনা করো, তখন প্রথমে আল্লাহ মহামহিমের মহিমা ঘোষণা করো। তারপর নবীর ওপর দরুদ পড়ো। তারপর ইচ্ছেমতো দোয়া করো। -ফাদালা ইবনে ওবায়েদ (রা); আবু দাউদ, তিরমিজী

৩৭. একজন বিশ্বাসী যখন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, তখন তিনি তা কবুল করেন। সে যা চায় তিনি তাকে তা দান করেন অথবা সমপরিমাণ বিপদ-মুসিবত-অকল্যাণ দূর করে দেন। অবশ্য সে যদি অন্যায় কিছু চায় বা কোনো আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করতে চায়, তাহলে ভিন্ন কথা। -উবাদা ইবনে সামিত (রা); তিরমিজী

৩৮. নবীজী (স) রাতে বিছানায় শোয়ার আগে দুই হাত একত্র করে তালুতে ফুঁ দিতেন। তারপর সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস পড়ে হাত দুটি শরীরে বুলিয়ে নিতেন। -আয়েশা (রা); বোখারী, মুসলিম

৩৯. নবীজী (স) আমাকে এই দোয়াটি শিক্ষা দেন : ‘আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়ারহামনি ওয়াহদিনী ওয়ারজুকনি’ (হে আল্লাহ! আমায় ক্ষমা করো! আমায় দয়া করো! আমায় হেদায়েত করো! আমায় রিজিক দান করো!) -সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রা); মুসলিম

৪০. বেশি বেশি দরুদ পড়ো। যত পারো দরুদে নিমগ্ন থাকো। তোমার সকল অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তা ভেসে যাবে। তোমার গুনাহরাজি ক্ষমা পাবে। -উবাই ইবনে কাব (রা); তিরমিজী

তথ্যসূত্র: ‘হাদীস শরীফ বাংলা মর্মবাণী’ hadiith.qm.org.bd, কোয়ান্টামমেথড ডট ওআরজি ডট বিডি (quantummethod.org.bd)

নিজে বদলালেই বদলে যাবে দেশ!

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫৭ পিএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৭ পিএম
নিজে বদলালেই বদলে যাবে দেশ!
প্রতীকী ছবি

বাসের জন্যে অপেক্ষা এক তরুণের। দেরি দেখে শৌচকর্ম সারতে বাসস্টপেজে পাবলিক টয়লেটে ঢুকলেন। ব্যবহার অযোগ্য অস্বাস্থ্যকর নোংরা টয়লেট দেখে মেজাজটা গেল বিগড়ে। যেহেতু নিজের না তাই ব্যবহার শেষে ফ্ল্যাশ করার প্রয়োজন মনে করে না কেউ। ‘মানুষের কমনসেন্স বলতে কিছু নেই’ বলতে বলতে কোনোমতে হালকা হয়ে বেরিয়ে গেলেন কমোডে পর্যাপ্ত পানি না ঢেলেই। এরই মধ্যে বাস এসেছে; তিনি ‘বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থায় কোনো নিয়মকানুন নেই’ বলে গজ গজ করতে করতে কাউন্টার থেকে টিকেট কাটল লাইন না ধরেই। অথচ নিয়ম হলো লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কাটা।

এবার বাসে উঠে তরুণটি সিটে বসেই স্মার্টফোন অন করল। অনলাইন নিউজ পোর্টালের একটা লেখা নজর কাড়ল তার- এক জাপানি শিশু তার পোষা কুকুর নিয়ে রাস্তায় হাঁটছিল। কুকুরটা পথে টয়লেট করলে শিশুটি নিজেই বেলচা নিয়ে ময়লা তুলে ডাস্টবিনে ফেলে। রাস্তাটা ছিল ঝকঝকে তকতকে। সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ভাবছিল, ওদের রাস্তা কত পরিষ্কার; আর বাংলাদেশের পথঘাট কী নোংরা! অথচ একটু আগেই সে কলা খেয়ে বাসের জানালা দিয়ে রাস্তার ওপর ছুঁড়ে ফেলেছিল খোসাটা।

জাপানিরা খুব নিয়মানুবর্তী আত্মসচেতন জাতি এটি সে জানে। তার মনে পড়ল বিশ্বকাপে জাপান ফুটবল খেলায় হেরে যাওয়ার পরও জাপানি দর্শকদের স্টেডিয়াম পরিষ্কার করে আসার কথা। নিউজটা দেখে তার আক্ষেপ হচ্ছিল, ওরা কত সভ্য জাতি! আর আমরা! অথচ তার এলাকায় প্রায়ই স্বেচ্ছাসেবায় যে পরিচ্ছন্নতায় কাজ হয় তাতে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা কখনো জাগেনি তার মনে।

তরুণটি অসৎ সরকারি চাকুরিজীবীদের মুণ্ডুপাত করেন নির্দ্বিধায়। অথচ তার অসচেতনতায় এক হাজার টাকার জাল নোট আরেকজনকে গছিয়ে দেন অবলীলায়। 

আসলে বিদ্যমান এই অসঙ্গিতগুলোর জন্য দায়ী এমন অসংখ্য তরুণ!

অনেকেই অন্যের দোষ ধরতে পছন্দ করেন। ভাবেন ‘এই’ সমস্যা ‘এর’ কারণেই হলো; অথচ নিজের ভুলটা দেখেন না বা দেখেও উপেক্ষা করেন।

একই অবস্থা দেশ নিয়ে ভাবনাতেও। দেশের নানাবিধ সমস্যাই শুধু চোখে পড়ে। কিন্তু সমস্যা নিরসনে নিজের করণীয়টুকু নিয়ে ভাবি না। ফলে উন্নতিও আসে না। 

উদাহরণস্বরূপ- তরুণটি টয়লেট শেষে ফ্লাশ করে বেরোলেই তো পরের ব্যবহারকারী পরিষ্কার কমোড পেত! কলার খোসা ডাস্টবিনে ফেললে অন্তত একটা খোসা রাস্তায় কম জমত। স্বেচ্ছায় পরিচ্ছন্নতা সেবায় অংশ নিলে আরেকটু পরিচ্ছন্ন হতো সড়ক। লাইন ভঙ্গ করে টিকেট কাটার অনিয়মের শুরুটা হয়তো তাকে দিয়েই হয়েছিল। নিজের ভুলে হস্তগত জাল নোট আরেকজনকে না দিলে আরেকটা অন্যায় কাজ অন্তত হতো না।

এমন অজস্র তরুণ প্রত্যেকেই ভাবছে, আমি একা বদলালেই কী হবে? বা আমি একা কয়জনকে শোধরাবো?

আসলে অন্যকে শোধরানো আপনার কাজ নয়, সেটা হয়তো পারবেনও না। তবে পারবেন নিজেকে শোধরাতে। প্রত্যেকেই যখন নিজেকে শোধরানোর দায়িত্বটুকু সুন্দরভাবে পালন করবে তখনই আসবে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন।

আপনার দেখানো পথে হাঁটতে পারে অনেকে

হ্যাঁ, ভালো কাজও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর অসংখ্য নজির আপনিও হয়ত দেখেছেন। করোনাকালে যখন বহু মানুষ উপার্জনহীন হয়ে পড়ল, সুপারশপগুলোতে ‘প্যানিক পারচেস’ হচ্ছিল হরদম। সে সময়ের একটি ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রের এক চেইনশপে ক্রেতারা কেনাকাটা শেষে লাইনে দাঁড়িয়ে বিল পরিশোধ করছিল। এসময় এক ক্রেতা তার বিলের সঙ্গে অতিরিক্ত ৫ ডলার তার পরের ক্রেতার জন্যে নীরবে রেখে গেলেন। পরের ক্রেতার আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান থাকায় তিনি সেটা তো নিলেন-ই না, বরং উল্টো আরও ৫ ডলার রেখে গেলেন তার পরের ক্রেতার জন্য। একই কাজ করলেন তার পরের ক্রেতাও। এভাবে অল্প সময়ে সুপারশপ প্রতিনিধির হাতে জমল বড় অংকের অর্থ। শুরুটা করেছিল কিন্তু একজন!

আপনার ছোট্ট একটু বদল পরিবর্তন সূচিত করতে পারে সামগ্রিক সচেতনতায়

১৯৫২ সালে জাপানের কোজিমা দ্বীপের ম্যাকাকে শ্রেণির বানরের ওপর বিজ্ঞানীরা একটি গবেষণা চালান। এই বানরগুলোকে খেতে দেওয়া হতো মিষ্টি আলু। সৈকতের ওপর পড়ে থাকায় আলুগুলোতে লেগে থাকত বালি। এই বালিমিশ্রিত আলু খেতে ভালো না লাগলেও উপায় কী? বানরগুলো এভাবেই আলু খাচ্ছিল। একদিন দেড় বছর বয়সী একটি বানর দেখল সাগরের পানিতে আলু ধুয়ে নিলেই সেগুলোতে বালি থাকে না, মজা করে আলু খাওয়া যায়। টেকনিকটি সে তার দলের অন্যদের শেখাল। ছোটদের কাছ থেকে শিখল বড় বানরগুলোও। এভাবে আলু ধুয়ে খাওয়ার টেকনিক জানা বানরের সংখ্যা বাড়ছিল, তবে তা ধীরে ধীরে। কিন্তু একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বানর যখন টেকনিকটি শিখল তখন ব্যাখ্যাতীত উপায়ে ঘটল এই শিক্ষার অভূতপূর্ব সম্প্রসারণ। অল্প সময়ের মধ্যে দেখা গেল কোজিমা দ্বীপের সব বানর আলু ধুয়ে খাচ্ছে!

এরচেয়ে বড় বিস্ময় হলো কিছু দিনের মধ্যেই আলু ধুয়ে খাওয়ার অভ্যাস ছড়িয়ে পড়ল আশেপাশের দ্বীপগুলোর বানরের মধ্যেও, যাদের সঙ্গে কোজিমা দ্বীপের কোনো যোগাযোগ নেই! বিজ্ঞানীরা বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেছেন ‘The Hundredth Monkey Phenomenon’ তত্ত্ব দিয়ে সংক্ষেপে বললে, যখন কোনো চেতনা একটি তাৎপর্য সংখ্যক মানুষ গ্রহণ করে তখন ঘটে চেতনাগত বিস্ফোরণ। চেতনাটি তখন পরিণত হয় Collective Consciousness বা সামগ্রিক চেতনায়। আপনাআপনি-ই তা ছড়িয়ে পড়ে জন থেকে জনে। হাজার হাজার, লাখ লাখ এমনকি কোটি কোটি মানুষ গ্রহণ করে সেই চেতনা। শুরুটা হয় কিন্তু একজনের হাত ধরেই!

আরব বসন্তের কথা-ই ধরা যাক

তিউনিসিয়ার সিদি বৌজিদ শহরে মোহাম্মদ বোয়াজিজি নামে এক যুবক রাষ্ট্রীয় অনিয়ম আর জুলুমের প্রতিবাদে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় ২০১০ সালের ডিসেম্বরে। একক এই প্রতিবাদ দ্রুতই পরিণত হয় লাখো কোটি মানুষের প্রতিবাদে। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশ এবং তারপর পুরো আরব বিশ্বে। পরবর্তী কয়েক বছরে দশকের পর দশক ধরে চলা স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে তিউনিসিয়া, মিশর, ইয়েমেন, সিরিয়াসহ ৯টি দেশে। এতবড় ঐতিহাসিক ঘটনার সূত্রপাতও কিন্তু মাত্র একজনের হাত ধরে!

আসুন নিজে বদলাই 

নিজেকে বদলাতে অনেক বড় বড় কাজ কিন্তু করার প্রয়োজন নেই! মাত্র একটি বিষয় যদি মাথায় রাখেন তাহলেই আপনি বদলাবেন আর আপনার হাত ধরে বদলাবে দেশ। আর তা হলো নিজের কাজ সবচেয়ে ভালোভাবে করা।

আপনি শিক্ষার্থী হলে জ্ঞানার্জনে আন্তরিক হোন, পড়ালেখা করুন ক্লাসে প্রথম হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে। যদি শিক্ষক হন তো নিজের জ্ঞানকে আরও বিকশিত করুন। আর তা সঞ্চারিত করুন শিক্ষার্থীদের মধ্যে। ডাক্তার হলে রোগীর সেবাকেই ব্রত হিসেবে গ্রহণ করুন। আর যদি সরকারি চাকুরিজীবী হন তো দুর্নীতি বর্জন করে মানুষকে দিন সর্বোত্তম সেবা। ভাবছেন আমি তো গৃহিণী, আমি কীভাবে দেশ বদলে অবদান রাখব? পরিবার ভালো হলে ভালো হয় সমাজ তথা দেশ। তাই ঘরটাকে সুন্দরভাবে সামলানো মানেই দেশ গোছানো!

আর যে পেশায় যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন, সচেতন হোন নিজের দেহমনের যত্নায়নে। নিজের যত্ন নেওয়াও কিন্তু দেশপ্রেমের পরিচায়ক! কারণ নিজে সুস্থ না থাকলে আরেকজনকে সেবা দেবেন কীভাবে? 

আমরা প্রত্যেকেই যদি নিজের যত্ন নেই, নিজের কাজটি করি সবচেয়ে ভালোভাবে, মেধাকে পরিণত করি সেবায় তাহলেই বদলে যাবে দেশ। পরিণত হবে স্বর্গভূমি বাংলাদেশে।

তথ্যসূত্র: কোয়ান্টামমেথড ডট ওআরজি ডট বিডি (quantummethod.org.bd)

পরচর্চা-গসিপ দুরাচারীর অস্ত্র

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৪৪ পিএম
আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:২৫ পিএম
পরচর্চা-গসিপ দুরাচারীর অস্ত্র
প্রতীকী ছবি

মিথ্যা ও নেতিবাচকতা ছড়িয়ে দেওয়ার সবচেয়ে বড় বাহন হচ্ছে গসিপ, পরচর্চা, পরনিন্দা বা গীবত। কোন ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার সর্ম্পকে এমন দোষ-ত্রুটি বলা যা ঐ ব্যক্তির মধ্যে রয়েছে। অন্যকে তার অসাক্ষাতে ছোট করা, তার সম্মানকে খাটো করা বা তার সম্পাদিত কর্ম বা জীবনের পরিশ্রমলব্ধ অর্জনকে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়ার গোপন প্রচেষ্টা।

আমাদের সমাজে গসিপ, পরচর্চা, পরনিন্দা বা গীবত এত বেশি প্রচলিত হয়ে গেছে যে, এখন এটিকে স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। কেউ আর একে দোষের মনে করে না। অনেকে এই বলে যে, আমি তো কারো দোষ বানিয়ে বলছি না, যা দোষ আছে তাই বলছি। কারো মধ্যে যদি দোষ থেকেও থাকে তবে তা তার অনুপস্থিতিতে বলাই গীবত।

দোষ গুণের মিশেলেই মানুষ। পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ পাওয়া যাবে না যার শুধু গুণ আছে, দোষ নেই। আবার এমন মানুষও জন্মায়নি যার শুধু দোষ আছে, কোন গুণ নেই। স্রষ্টা প্রতিটি মানুষকে দোষ-গুণের সমন্বয়ে বৈচিত্র দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। মেধা, গুণ ও শৃজনশীলতাকে সৃষ্টিকর্তা জন্মস্থান, বংশমর্যাদা, দৈহিক সৌন্দর্য, আর্থিক সামর্থ নির্বিশেষে সকল মানুষের মধ্যে বন্টন করেছেন। যারা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে তারা মানুষের গুণের দিকে তাকান আর যারা নেতিবাচক তারা দোষ-ত্রুটি খুঁজে বের করেন।

আমরা অনেক সময় সরাসরি গীবত বা পরনিন্দা করি না। অন্যরা যখন গীবত করে তখন নীরব শ্রোতা হয়ে শুনি। আর শোনার পর এ যুক্তি দেখাই যে, আমরা তো গীবত করিনি, অন্যরা যা বলছিল তা শুনেছি মাত্র। আসলে গীবত এমন এক অপরাধ যা শ্রোতা ছাড়া সংগঠিত হতে পারে না। কেউ যখন অন্য কারো নিন্দা শোনে তখন সে এ নিন্দাকর্মের অংশ হয়ে যায়। তাই গীবত করা ও শোনা সমান অপরাধ। আমাদের সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে গীবত, পরচর্চা, পরনিন্দা আজ মহামারিতে রূপ নিয়েছে। ফলে পরিবার ও সমাজে অশান্তি, বৈরিতা, হিংসা, হানাহানি লেগেই আছে। 

চিন্তা-ভাবনার সন্ত্রাস, গসিপ!

গসিপ, কানকথা, গালগল্প, গুজব- এটা হচ্ছে নেতিবাচকতা ছড়ানোর সবচেয়ে বড় মাধ্যম, সবচেয়ে বড় উপকরণ, সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। পোপ ফ্রান্সিসের বলেছেন, গসিপ হচ্ছে- a kind of terrorism. অর্থাৎ গসিপ হচ্ছে, একধরনের সন্ত্রাস। এটাকে চিন্তার সন্ত্রাস বলা যেতে পারে, ভাবনার সন্ত্রাস বলা যেতে পারে। অর্থাৎ সৎচিন্তা, সৎভাবনার ওপরে এটা একটা সন্ত্রাস। গসিপ বা গালগল্প কানকথা এটা সবসময় মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত।

গীবত, কানকথা, গসিপের বাণিজ্য করে...

গসিপ, গালগল্প, কানকথা, গীবত, পরচর্চা মানুষের শক্তির ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেওয়ার জন্য শয়তানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। কারণ শয়তানের অস্ত্রই হচ্ছে যদি তুমি কাউকে শয়তানিতে প্রলুব্ধ করতে না পারো সরাসরি চেলা বানাতে না পারো, তাকে কী করো? তাকে কনফিউজড করে দাও। তার যে বিশ্বাস, তার যে শক্তি এটাকে কনফিউজড করে দাও।

গসিপ, কানকথা, পরনিন্দা, মিথ্যা কথা এটাকে উপজীব্য করে অনেক কিছু চলছে। ব্যবসা থেকে শুরু করে, বাণিজ্য থেকে শুরু করে অনেক কিছু। কাউকে চরিত্রহনন করার জন্য এই গসিপ হচ্ছে সবচেয়ে বড় মাধ্যম এবং যে কারণে পোপ ফ্রান্সিস একে বলেছেন যে, এটা হচ্ছে একধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম।

গসিপের বিরুদ্ধে কেন সুপার পাওয়াররা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি?

একধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম হলেও গসিপের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ সুপার পাওয়াররা নেয় নি। কেন নেয়নি? কারণ গসিপ হচ্ছে তাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। তাদের ব্যবসা, তাদের বাণিজ্য সবকিছুর জন্য।

এই গসিপ-ই বা গীবত, পরচর্চা-পরনিন্দা এটা দুরাচারকে উদ্বুদ্ধ করে, দুরাচারকে বিকশিত করে। সদাচার বা শুদ্ধাচারকে জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

কারণ গসিপে যে আক্রান্ত হলো, গসিপে যে যোগ দিল, কানকথা যে শুনল যে বলল, দুজনই দুরাচার দুর্ব্যবহারের মধ্যে ডুবে যাবে এবং সদাচার, শুদ্ধাচার থেকে সে দূরে সরে যায়।

সদাচার, শুদ্ধাচার থেকে, প্রজ্ঞা থেকে, জ্ঞান থেকে, আত্মিক পরিশুদ্ধি থেকে, কাউকে দূরে নিয়ে যাওয়ার জন্য, কাউকে কনফিউজড করে দেওয়ার জন্য, কাউকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য এই গসিপ বা গালগল্প, কানকথা, পরনিন্দা, পরচর্চা ও গীবত এটাই হচ্ছে শয়তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।

ইসলামে কী বলা আছে

পবিত্র কুরআনে গীবত সর্ম্পকে বলা হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা অন্যের ব্যাপারে আন্দাজ-অনুমান করা থেকে বিরত থাক। আন্দাজ-অনুমান কোন কোন ক্ষেত্রে গুনাহের কাজ। অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপারে গোয়েন্দাগিরী করো না। তোমরা কি মৃত ভাইয়ের মাংস খেতে চাও? না, তোমরা তো তা ঘৃণা করো। (গীবত করা মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়া সমান)। তোমরা সবসময় আল্লাহ সচেতন থাকো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরমদয়ালু’।

হাদীস শরীফে গীবত, পরচর্চা-পরনিন্দাকে ব্যাভিচারের চেয়েও জঘন্য অপরাধ বলা হয়েছে। কারণ ব্যাভিচারকারী অপরাধ করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন কিন্তু গীবতের গুনাহ ততক্ষণ পর্যন্ত মাফ হবে না যতক্ষণ না গীবত দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি মাফ না করেন।

‘অন্যের অনুপস্থিতিতে তার কোনো দোষ নিয়ে আলোচনা করা গীবত। যে দোষ তার মধ্যে নেই, তেমন কথা নিয়ে আলোচনা মিথ্যা অপবাদ।’ -আবু হুরায়রা (রা); মুসলিম।

একবার হযরত আয়েশা (রা) রাসুলুল্লাহ (স)-এর কাছে বললেন যে, হযরত সাফিয়া বেঁটে। রাসুল (স.) বললেন, ‘আয়েশা তুমি এমন নোংরা কথা মুখ দিয়ে বের করেছো যা সমুদ্রে নিক্ষেপ করলে গোটা সমুদ্রই নোংরা হয়ে যেতো’ (মিশকাত)।

একজন বেঁটে মহিলাকে শুধু খর্বাকৃতি বলার কারণে যদি মারাত্মক অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে মানুষের চারিত্রিক ও আচরণগত ত্রুটির কথা প্রচার করে বেড়ালে কী অপরিমেয় গুনাহ বা অপরাধ তা সহজেই অনুমান করা যায়।

অপর এক হাদীসে রাসুল (স) বলেন, ‘যে বান্দাহ অন্য বান্দার দোষ-ত্রুটি এ দুনিয়ায় গোপন রাখবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন’ (মুসলিম)।

গীবত,পরচর্চা-পরনিন্দার পরিণাম

গীবত,পরচর্চা-পরনিন্দাকারী আল্লাহর অভিশপ্ত, রাসুল (স) সঙ্গে সর্ম্পক ছিন্নকারী, গীবতকারী সত্যিকার মুসলমান নন, গীবত মুসলমানের পারস্পরিক অধিকার লঙ্ঘন করে, গীবত ব্যক্তিগত সম্মান ভুলুন্ঠিত করে, গীবত কবরে আজাব বৃদ্ধি করে, গীবতকারী পরকালে (তার পূণ্যের অংশ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিকে পরিশোধ করে) দেউলিয়া হয়ে যাবে, গীবত মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করে, গীবত মেধা ও সৃজনশীলতা বিনষ্ট করে, সর্বোপরি ঈমান ধংস করে।

যেভাবে মুক্ত থাকবেন

গীবত থেকে মুক্ত হতে হলে মানুষকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা ও ভলোবাসতে হবে, অন্তরের অহম দূর, মন থেকে রাগ, ক্ষোভ, হীনমন্যতা দূর, অন্যকে ক্ষমা করা, সু-ধারণা পোষণ, নিজের দোষ অনুসন্ধান ও আত্মপর্যালোচনা, সর্বাবস্থায় শুকরিয়া, অন্যের কল্যাণ কামনা, কথাবার্তায় সংযমী এবং সৎসঙ্গে চলতে হবে।

তথ্যসূত্র : কোয়ান্টামমেথড ডট ওআরজি ডট বিডি (quantummethod.org.bd)।