মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার দুই নভোচারী আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) আটকা পড়েছেন। বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযানের বেশ কয়েকটি যান্ত্রিক সমস্যার কারণে নাসার নভোচারী ব্যারি উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামস সেখানেই অবস্থান করছেন। এ দুইজন নভোচারীকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে কাজ চলছে। তবে তাদের ফিরে আসার কোনো নির্দিষ্ট তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি।
৫ জুন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থিত কেপ ক্যানাভেরাল স্পেস ফোর্স স্টেশন থেকে স্টারলাইনার মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। ফ্লাইট কমান্ডার ব্যারি উইলমোর ও ফ্লাইট পাইলট সুনিতা উইলিয়ামসসহ একদিন পর নভোযানটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছায়। এই মিশন নাসার কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রামের অংশ, যা বোয়িংয়ের নভোযান আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নিয়মিত মিশন পরিচালনা করার জন্য যোগ্য কি-না তা পরীক্ষা করছে। মূলত এই নভোচারীদের ১৪ জুন পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা ছিল। তবে তাদের ফিরে আসা বেশ কয়েকবার পিছিয়েছে। এখনো পৃথিবীতে ফিরে আসার দিন-ক্ষণ অনির্ধারিত।
নাসার কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রামের পরিচালক স্টিভ স্টিচ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা সময় নিচ্ছি ও ভালোভাবে মিশন ব্যবস্থাপনা দলের প্রক্রিয়া অনুসরণ করছি। রনডেইভু (rendezvous) ও ডকিং (docking)-এর সময় আমরা হিলিয়াম সিস্টেমে ছোট লিকেজ ও থ্রাস্টারের কার্যক্রমের সমস্যা দেখেছি। সে জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত ডেটা ব্যবহার করছি।’
বোয়িং ও নাসা জানিয়েছে, নভোযানটিতে সমস্যা দেখা দেওয়ার পরও মহাকাশচারীরা বর্তমানে নিরাপদে আছেন। তারা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আছেন, যেখানে তাদের জন্য খাবার, পানি ও অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় সব সরবরাহ রয়েছে। আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত স্টেশনের কার্যসূচি তুলনামূলকভাবে ফাঁকা রয়েছে। মহাকাশচারীদের পৃথিবীতে ফিরে আসার জন্য কোনো চাপ নেই।
নাসা ও বোয়িং আরও জানিয়েছে, ব্যারি উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামস আইএসএসের ‘এক্সপিডিশন ৭১’ ক্রুদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। প্রয়োজন অনুসারে স্টেশন অপারেশনে সহায়তা করছেন। নাসার স্টারলাইনারের সম্ভাব্য প্রত্যয়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করছেন।
বোয়িংয়ের স্টারলাইনার প্রোগ্রামের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্ক ন্যাপি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ক্রুদের প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত ইতিবাচক ছিল। তারা জানেন ক্রু ফ্লাইট টেস্টে আমরা যা শিখেছি, তা ভবিষ্যতের ক্রুদের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত ও সুচারু করবে।’
স্টারলাইনার উৎক্ষেপণের আগে থেকে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হয়েছে। পরীক্ষামূলক এই উৎক্ষেপণের কথা ছিল চলতি বছরের ৬ মে। তবে মহাকাশযান কক্ষপথে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্সের (ইউএলএ) রকেটের অক্সিজেন ভাল্বের সমস্যা দেখা দেয়। এ কারণে উৎক্ষেপণটি বাতিল করা হয়েছে।
২৫ মে নতুন করে উৎক্ষেপণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তবে পরে মহাকাশযান পরিচালনার জন্য সাপোর্ট সিস্টেম ও যন্ত্রপাতি রয়েছে, এমন সার্ভিস মডিউলে হিলিয়াম সিস্টেমে লিকেজ ধরা পড়ে।
এরপর হিলিয়াম লিকেজ ও থ্রাস্টারের সমস্যা স্টারলাইনারের ডকিং বিলম্বিত হওয়ার শঙ্কায় পড়ে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ডকিংয়ের পাঁচ দিন পর নাসা ও বোয়িং জানায়, মহাকাশযানটিতে পাঁচটি ছোট হিলিয়াম লিকেজ হয়েছে। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, ফিরতি যাত্রার জন্য যথেষ্ট হিলিয়াম জ্বালানি রয়েছে।
মূলত নভোচারীদের এই সফরে আট দিন থাকার কথা ছিল। তবে বর্তমানে মহাকাশচারীদের সমস্যা সমাধানের জন্য কমপক্ষে এক মাস আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বোয়িং জানিয়েছে, আগামী ২ জুলাই নির্ধারিত স্পেসওয়াকের পর মহাকাশচারীদের ফিরতি সময়সূচি সমন্বয় করা হবে। নাসার বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স গত মঙ্গলবার জানিয়েছে, নতুন লক্ষ্য ফিরতি যাত্রার তারিখ ৬ জুলাই।
মহাকাশে থাকা সুনিতার জন্য নতুন কিছু নয়। এর আগে ৩২২ দিন মহাকাশে ছিলেন সুনিতা। নারী হিসেবে সবচেয়ে বেশি সময় মহাকাশে থাকার রেকর্ড তার। এবার নিয়ে তৃতীয়বার মহাকাশে গেলেন সুনিতা। ব্যারিও অভিজ্ঞ নভোচারী। তিনিও তিনবার মহাকাশে গিয়েছেন। সূত্র: এবিসি নিউজ