বিমানে যাত্রা করার সময় হঠাৎ ঝাঁকুনি লাগার অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকের হয়েছে। চারপাশের আকাশ পরিষ্কার, নীল এবং শান্ত, তারপরও হঠাৎ করেই বিমানটি ঝাঁকুনি দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নেভাডা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিমান চালক ও বিমান ইতিহাসবিদ ড্যান বাব এই ঝাঁকুনিকে ‘ক্লিয়ার-এয়ার টার্বুলেন্স’ বলে অভিহিত করেছেন। এটি উচ্চ আকাশে বাণিজ্যিক বিমান চলাচলের সময় একটি পরিচিত ঝুঁকি।
ককপিট থেকে এটি দেখা যায় না। এটি ফ্লাইট ডেকের আবহাওয়া রাডারেও ধরা পড়ে না। বাব আরও বলেন, ‘এটি যেন প্রতি ঘণ্টা ৬০ মাইল গতিতে গাড়ি চালানোর সময় একটি গভীর গর্তে আঘাত করার মতো। এই ঝাঁকুনি যাত্রীরা অনুভব করেন, আশা করি তারা আহত হবেন না।’
তবে এতে আহত হওয়া বা তার চেয়েও খারাপ পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে। ২০২৪ সালের মে মাসে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি বিমান লন্ডন থেকে রওনা হওয়ার পরে প্রবল ঝাঁকুনির মধ্যে পড়ে। এই অপ্রত্যাশিত ঝাঁকুনিতে ৮৩ জন যাত্রী আহত হন ও একজন মারা যান।
যদিও এই ঘটনা বিশেষভাবে গুরুতর ছিল। এই ধরনের ঝাঁকুনিতে মৃত্যুর ঘটনা বিরল, তবে সামগ্রিকভাবে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর জন্য দায়ী আমাদের উষ্ণ হওয়া বায়ুমণ্ডল।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞানের অধ্যাপক পল উইলিয়ামস জানান, ‘বর্তমানে আমাদের কাছে শক্ত প্রমাণ রয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝাঁকুনি বাড়ছে। আমরা সম্প্রতি আবিষ্কার করেছি, ১৯৭৯ সাল থেকে উত্তর আটলান্টিকে গুরুতর ক্লিয়ার-এয়ার টার্বুলেন্স বা স্পষ্ট আকাশে ঝাঁকুনি ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।’ গবেষকরা স্যাটেলাইট চালু হওয়ার পর থেকে চার দশকের বায়ুমণ্ডলীয় ডেটা বিশ্লেষণ করে ক্লিয়ার-এয়ার টার্বুলেন্সের ঊর্ধ্বগতির প্রবণতা নির্ধারণ করেছেন।
গবেষকরা আরও উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মহাদেশীয় অংশেও একই রকম এই বৃদ্ধি লক্ষ করা যায়। উত্তর আটলান্টিক ও যুক্তরাষ্ট্র এই দুই জায়গায় বিশ্বের কয়েকটি ব্যস্ততম বিমান যাতায়াতের রুট রয়েছে।