সৌরজগতের লাল গ্রহ মঙ্গলের অন্যতম রহস্যময় স্থান ‘ভ্যালেস মেরিনারিস’ নামের বিশাল গিরিখাত। এটি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গিরিখাত। একঝাঁক রোবটের মাধ্যমে এই গিরিখাতের রহস্য উদঘাটন করার লক্ষ্যে এগোচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
৩ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ, ৬০০ কিলোমিটার চওড়া ও ৮ কিলোমিটার গভীর এই বিশাল গিরিখাতটি মঙ্গলের সুদূর অতীতের নানা গুরুত্বপূর্ণ সূত্র ধারণ করে আছে। সেখানে একসময় প্রাণের অস্তিত্ব ছিল কি না, সে সূত্রও মিলতে পারে। মঙ্গলপৃষ্ঠের এই কঠিন অংশটি অনুসন্ধানের জন্য ‘ভ্যামেক্স’ (ভ্যালেস মেরিনারিস এক্সপ্লোরার) নামে এক প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছে জার্মান স্পেস এজেন্সি ‘ডিএলআর’, যার লক্ষ্য গুহা অনুসন্ধান, তথ্য সংগ্রহ ও পানির অস্তিত্ব রয়েছে কি না তা দেখার জন্য রোবটের একটি দল পাঠানো।
এ ক্ষেত্রে একক কোনো মহাকাশযান বা রোভারের ওপর নির্ভর করার পরিবর্তে ‘ভ্যামেক্স’ মিশনটি একঝাঁক রোবট ব্যবহার করবে। এসব রোবট বিভিন্ন উপায়ে কাজ করবে। যেমন- কিছু রোবট উড়বে, কিছু রোবট হাঁটবে ও কিছু রোবট মঙ্গলের পৃষ্ঠজুড়ে ঘুরে বেড়াবে। মঙ্গলের মাটি ও বায়ু, এমনকি গুহার ভেতরের ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করবে। যাতে করে মঙ্গলের সুরক্ষিত পরিবেশে পানির অস্তিত্ব বা প্রাণের অন্যান্য চিহ্ন রয়েছে কি না তার খোঁজ পাওয়া যায়।
মঙ্গলের এসব গুহা বিজ্ঞানীদের কাছে বিশেষভাবে আগ্রহের বিষয়। কারণ মঙ্গল গ্রহের কঠোর পরিস্থিতি, যেমন চরম ঠাণ্ডা এবং মহাকাশ থেকে আসা বিপজ্জনক বিকিরণ থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে এসব গুহা। গ্রহটির ভূগর্ভস্থ বা মাটির নিচের এসব স্থান কোটি কোটি বছর আগে থাকা প্রাণের অস্তিত্বের প্রমাণ নিজের মধ্যে ধরে রাখতে পারে, যে সময়ে মঙ্গল গ্রহটিও ছিল পৃথিবীর মতোই।
এরই মধ্যে চাঁদে বড় গুহা খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাই ধারণা করা হচ্ছে, মঙ্গল গ্রহেও একই ধরনের গুহার সন্ধান মিলতে পারে।
এ মিশনের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো- কীভাবে এসব রোবট একে অপরের সঙ্গে এবং একই সঙ্গে পৃথিবীর সঙ্গেও যোগাযোগ করবে। গুহায় প্রবেশ করার সময় এসব রোবট সরাসরি পৃষ্ঠে সংকেত পাঠাতে পারবে না। আর এ সমস্যা সমাধানের জন্য এই মিশনে ব্যবহার করা হবে বিশেষ এক ধরনের ‘রিপিটার স্টেশন’। ছোট আকৃতির এ ডিভাইসটির মাধ্যমে গুহায় থাকা রোবট থেকে মঙ্গলের পৃষ্ঠে থাকা আরেকটি রোবটের কমান্ড সেন্টারে তথ্য পাঠানো হবে। সেখান থেকে এসব তথ্য বিশ্লেষণের জন্য পৃথিবীতে ফেরত পাঠানো হবে।
ভ্যামেক্স মিশনে কিছু নতুন প্রযুক্তিও রয়েছে। যেমন- ‘অটোরোটেশন বডি’র ব্যবহার, যা ম্যাপেল বীজের মতো ছোট আকৃতির সেন্সর। এসব সেন্সর মঙ্গলের পৃষ্ঠে নামিয়ে মাটিতে আলতো করে ঘোরানো হয়, যার মাধ্যমে এরা তথ্য সংগ্রহ ও যোগাযোগ নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে কাজ করতে পারে।
আরেকটি প্রযুক্তি হলো এক বিশেষ ধরনের ‘স্কাই ক্যামেরা’, যা মঙ্গলের আকাশের দিকে লক্ষ রাখবে। আগের বিভিন্ন মিশনে মঙ্গলের পৃষ্ঠের দিকে মনোযোগ দেওয়া হলেও এ ক্যামেরাটি গ্রহটির উল্কা, বজ্রপাত ও অন্যান্য অস্বাভাবিক ঘটনার দিকেও নজর রাখবে। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য এ ‘স্কাই ক্যামেরা’ ব্যবহার করবেন বলে ধারণা করছেন গবেষকরা।
মঙ্গলে রোবট পাঠানোর আগে ২০২৫ সালে পৃথিবীতে এসব রোবটের সিস্টেম পরীক্ষা করবে দলটি। সূত্র: ইউনিভার্স টুডে।