ঢাকা ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪

মঙ্গল গ্রহের গিরিখাতের রহস্য জানাবে রোবট

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২০ এএম
আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২০ এএম
মঙ্গল গ্রহের গিরিখাতের রহস্য জানাবে রোবট
মঙ্গল গ্রহে আবিষ্কৃত হয়েছে ৩ হাজার কিমি. দীর্ঘ, ৬০০ কিমি. চওড়া ও ৮ কিমি. গভীর ‘ভ্যালেস মেরিনারিস’ নামের গিরিখাত। ছবি: সংগৃহীত

সৌরজগতের লাল গ্রহ মঙ্গলের অন্যতম রহস্যময় স্থান ‘ভ্যালেস মেরিনারিস’ নামের বিশাল গিরিখাত। এটি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গিরিখাত। একঝাঁক রোবটের মাধ্যমে এই গিরিখাতের রহস্য উদঘাটন করার লক্ষ্যে এগোচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

৩ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ, ৬০০ কিলোমিটার চওড়া ও ৮ কিলোমিটার গভীর এই বিশাল গিরিখাতটি মঙ্গলের সুদূর অতীতের নানা গুরুত্বপূর্ণ সূত্র ধারণ করে আছে। সেখানে একসময় প্রাণের অস্তিত্ব ছিল কি না, সে সূত্রও মিলতে পারে। মঙ্গলপৃষ্ঠের এই কঠিন অংশটি অনুসন্ধানের জন্য ‘ভ্যামেক্স’ (ভ্যালেস মেরিনারিস এক্সপ্লোরার) নামে এক প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছে জার্মান স্পেস এজেন্সি ‘ডিএলআর’, যার লক্ষ্য গুহা অনুসন্ধান, তথ্য সংগ্রহ ও পানির অস্তিত্ব রয়েছে কি না তা দেখার জন্য রোবটের একটি দল পাঠানো।

এ ক্ষেত্রে একক কোনো মহাকাশযান বা রোভারের ওপর নির্ভর করার পরিবর্তে ‘ভ্যামেক্স’ মিশনটি একঝাঁক রোবট ব্যবহার করবে। এসব রোবট বিভিন্ন উপায়ে কাজ করবে। যেমন- কিছু রোবট উড়বে, কিছু রোবট হাঁটবে ও কিছু রোবট মঙ্গলের পৃষ্ঠজুড়ে ঘুরে বেড়াবে। মঙ্গলের মাটি ও বায়ু, এমনকি গুহার ভেতরের ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করবে। যাতে করে মঙ্গলের সুরক্ষিত পরিবেশে পানির অস্তিত্ব বা প্রাণের অন্যান্য চিহ্ন রয়েছে কি না তার খোঁজ পাওয়া যায়।

মঙ্গলের এসব গুহা বিজ্ঞানীদের কাছে বিশেষভাবে আগ্রহের বিষয়। কারণ মঙ্গল গ্রহের কঠোর পরিস্থিতি, যেমন চরম ঠাণ্ডা এবং মহাকাশ থেকে আসা বিপজ্জনক বিকিরণ থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে এসব গুহা। গ্রহটির ভূগর্ভস্থ বা মাটির নিচের এসব স্থান কোটি কোটি বছর আগে থাকা প্রাণের অস্তিত্বের প্রমাণ নিজের মধ্যে ধরে রাখতে পারে, যে সময়ে মঙ্গল গ্রহটিও ছিল পৃথিবীর মতোই।

এরই মধ্যে চাঁদে বড় গুহা খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাই ধারণা করা হচ্ছে, মঙ্গল গ্রহেও একই ধরনের গুহার সন্ধান মিলতে পারে।

এ মিশনের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো- কীভাবে এসব রোবট একে অপরের সঙ্গে এবং একই সঙ্গে পৃথিবীর সঙ্গেও যোগাযোগ করবে। গুহায় প্রবেশ করার সময় এসব রোবট সরাসরি পৃষ্ঠে সংকেত পাঠাতে পারবে না। আর এ সমস্যা সমাধানের জন্য এই মিশনে ব্যবহার করা হবে বিশেষ এক ধরনের ‘রিপিটার স্টেশন’। ছোট আকৃতির এ ডিভাইসটির মাধ্যমে গুহায় থাকা রোবট থেকে মঙ্গলের পৃষ্ঠে থাকা আরেকটি রোবটের কমান্ড সেন্টারে তথ্য পাঠানো হবে। সেখান থেকে এসব তথ্য বিশ্লেষণের জন্য পৃথিবীতে ফেরত পাঠানো হবে।

ভ্যামেক্স মিশনে কিছু নতুন প্রযুক্তিও রয়েছে। যেমন- ‘অটোরোটেশন বডি’র ব্যবহার, যা ম্যাপেল বীজের মতো ছোট আকৃতির সেন্সর। এসব সেন্সর মঙ্গলের পৃষ্ঠে নামিয়ে মাটিতে আলতো করে ঘোরানো হয়, যার মাধ্যমে এরা তথ্য সংগ্রহ ও যোগাযোগ নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে কাজ করতে পারে।

আরেকটি প্রযুক্তি হলো এক বিশেষ ধরনের ‘স্কাই ক্যামেরা’, যা মঙ্গলের আকাশের দিকে লক্ষ রাখবে। আগের বিভিন্ন মিশনে মঙ্গলের পৃষ্ঠের দিকে মনোযোগ দেওয়া হলেও এ ক্যামেরাটি গ্রহটির উল্কা, বজ্রপাত ও অন্যান্য অস্বাভাবিক ঘটনার দিকেও নজর রাখবে। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য এ ‘স্কাই ক্যামেরা’ ব্যবহার করবেন বলে ধারণা করছেন গবেষকরা।

মঙ্গলে রোবট পাঠানোর আগে ২০২৫ সালে পৃথিবীতে এসব রোবটের সিস্টেম পরীক্ষা করবে দলটি। সূত্র: ইউনিভার্স টুডে।

চীনের চাঁদ জয়ের প্রস্তুতি প্রদর্শন করল নতুন প্রযুক্তির স্পেস স্যুট

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০০ পিএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০১ পিএম
চীনের চাঁদ জয়ের প্রস্তুতি প্রদর্শন করল নতুন প্রযুক্তির স্পেস স্যুট
চীনের তৈরি অত্যাধুনিক স্পেস স্যুট। ছবি: সংগৃহীত

চাঁদে মানুষ পাঠানোর অভিযানে নতুন মাত্রা যোগ করল চীন। ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে পৌঁছানোর লক্ষ্যে দেশটি তৈরি করেছে অত্যাধুনিক একটি স্পেস স্যুট। এই স্পেস স্যুটে রয়েছে চাঁদের কঠিন পরিবেশ সহ্য করার সক্ষমতা। একই সঙ্গে নভোচারীদের চলাচলে স্বাচ্ছন্দ্য দেবে। চীনের এই অগ্রগতি মহাকাশ গবেষণায় নতুন এক যুগের সূচনা করতে পারে।

চীন এর মাধ্যমে চাঁদে মানুষ পাঠানোর লক্ষ্যে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। নতুন ধরনের এই স্পেস স্যুট চাঁদের কঠিন পরিবেশে নভোচারীদের সুরক্ষা দেবে। লাল-সাদা রঙের এই স্পেস স্যুটটি চাঁদের উচ্চ তাপমাত্রা, বিকিরণ এবং ধূলিকণা সহ্য করার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।

নতুন এই স্পেস স্যুটটিতে বিল্ট-ইন ক্যামেরা, অপারেশন কনসোল এবং অ্যান্টি-গ্লেয়ার ভিসর রয়েছে। চীনা নভোচারী ঝাই ঝিগাং ও ওয়াং ইয়াপিং এই স্পেস স্যুট পরে কীভাবে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারছেন, তার একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে।

চীনের এই অগ্রগতি আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা ক্ষেত্রে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। স্পেসএক্সের সিইও ইলন মাস্ক চীনের এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করেছেন।
এদিকে, নাসা জানিয়েছে, তারা ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বরের আগে চাঁদে নভোচারী পাঠাতে পারবে না। তবে কোন দেশ প্রথমে চাঁদের পৃষ্ঠে পৌঁছাবে, তার এখনো অস্পষ্ট রয়ে গেছে। চীনের এই নতুন স্পেস স্যুট মহাকাশ গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এটি চাঁদে মানুষ পাঠানোর লক্ষ্যে দেশটির দৃঢ়প্রতিজ্ঞারই প্রমাণ।

২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে প্রথম নভোচারীদের পাঠানো এবং মঙ্গল ও বৃহস্পতি থেকে নমুনা সংগ্রহের জন্য মিশন পরিচালনার লক্ষ্য রয়েছে চীনের। এর আগে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে একটি ঘাঁটি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটি।

/আবরার জাহিন

সামুদ্রিক স্পঞ্জ থেকে ম্যালেরিয়ার নতুন প্রতিষেধক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৫৪ পিএম
সামুদ্রিক স্পঞ্জ থেকে ম্যালেরিয়ার নতুন প্রতিষেধক

ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে এক নতুন অস্ত্র। বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি সামুদ্রিক স্পঞ্জ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এক নতুন অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ড্রাগ বা ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী অত্যন্ত কার্যকর ওষুধ আবিষ্কারের দাবি করেছেন। একদল বিজ্ঞানী ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী এই ওষুধ আবিষ্কারের গবেষণা করেছেন। বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে। যেখানে নতুন ওষুধটি কী ও কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন এক গবেষক দল।

এই নতুন ওষুধ ‘এমইডি ৬-১৮৯’ নামে পরিচিত এবং এটি ম্যালেরিয়ার পরজীবীকে দুটি ভিন্ন পথে আক্রমণ করে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। বিশ্বের অন্যতম প্রাণঘাতী রোগ ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে এই আবিষ্কারকে বিজ্ঞানীরা বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন।

ম্যালেরিয়া এককোষী ‘প্লাজমোডিয়াম’ পরজীবী বহনকারী মশার কামড়ের মাধ্যমে মানবদেহে ছড়ায়। এই পরজীবী প্রথমে লিভারে লুকিয়ে থাকে এবং পরে লোহিত রক্তকণিকায় আক্রমণ করে। নতুন আবিষ্কৃত ‘এমইডি ৬-১৮৯’ ওষুধটি এই পরজীবীর এই দুটি ধাপকেই বাধাগ্রস্ত করে, ফলে পরজীবীটি বেঁচে থাকতে পারে না। এই দ্বিমুখী আক্রমণের কারণে পরজীবীর জন্য ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।

বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে আফ্রিকার সাব-সাহারান অঞ্চলের শিশুরা এই রোগের কারণে সবচেয়ে বেশি মারা যায়। বর্তমানে ব্যবহৃত অনেক ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধের বিরুদ্ধে প্লাজমোডিয়াম পরজীবী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন ওষুধটি ম্যালেরিয়া নির্মূলে এক আশার আলো হিসেবে দেখা হচ্ছে।

গবেষকরা সামুদ্রিক স্পঞ্জ থেকে পাওয়া প্রাকৃতিক যৌগের ওপর ভিত্তি করে এই নতুন ওষুধটি তৈরি করেছেন। ইঁদুর ও বানরের ওপর পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই ওষুধ ম্যালেরিয়ার পরজীবীকে সম্পূর্ণ নিধন করতে সক্ষম।

সামুদ্রিক স্পঞ্জ থেকে আবিষ্কৃত এই নতুন ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধ ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যে বড় ধরনের অগ্রগতি। তবে মানুষের ওপর এই ওষুধের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে আরও ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন। এই আবিষ্কার ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে এক নতুন আশার সঞ্চার করেছে।

/আবরার জাহিন

স্পেসএক্সের রকেটে ফিরছেন আটকে পড়া নভোচারীরা

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৫১ পিএম
স্পেসএক্সের রকেটে ফিরছেন আটকে পড়া নভোচারীরা
স্পেসএক্সের ক্যাপসুলে ফিরছেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আটকে পড়া নভোচারীরা

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) মাসের পর মাস আটকে থাকার পর অবশেষে পৃথিবীতে ফিরছেন নাসার দুই নভোচারী। স্পেসএক্সের একটি ক্যাপসুল আইএসএস-এ ডকিং করেছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোরকে নিয়ে পৃথিবীতে ফিরবে স্পেসএক্সের এই ক্যাপসুল। বোয়িংয়ের স্টারলাইনার রকেটে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে দুই নভোচারীর আইএসএস-এ আটকে থাকার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গত ৫ জুন বোয়িংয়ের স্টারলাইনার রকেটে আইএসএস-এর উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন এ দুই নভোচারী। প্রাথমিকভাবে তাদের আট দিন সময় কাটানোর কথা থাকলেও স্টারলাইনারের প্রোপালশন সিস্টেমে সমস্যার কারণে তারা বেশ কয়েক মাস ধরেই মহাকাশ স্টেশনে আটকে আছেন। আগস্টে নাসা নিশ্চিত করেছে, ২০২৫ সালের আগ পর্যন্ত তাদের ফেরার সম্ভাবনা নেই। এরপর ‘ক্রু ড্রাগন’ ক্যাপসুলে করে তাদের ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব পায় স্পেসএক্স।

গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় ড্রাগন ক্যাপসুল। এরপর রবিবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৩টায় নাসার নভোচারী নিক হগ ও রাশিয়ান নভোচারী আলেকজান্ডার গরবুনভকে নিয়ে আইএসএস অবতরণ করে। মহাকাশযানটিতে নিক হেগ ও আলেকজান্ডার গরবুনভ থাকলেও সুনিতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরের ফেরার জন্য দুটি আসন খালি রাখা হয়েছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মহাকাশ স্টেশনে আটকে পড়া দুই নভোচারীকে নিয়ে পৃথিবীতে ফেরত আসবে ড্রাগন ক্যাপসুল। তবে ওই ফিরতি যাত্রায় হগ ও গরবুনভ ফিরবেন না বলে ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

নাসা বলেছে, মহাকাশ স্টেশনে দুই নতুন নভোচারীর আগমনের মানে দাঁড়ায়, আইএসএস-এ এখন থেকে ১১ জন ব্যক্তি থাকবেন। রকেট উৎক্ষেপণের আগে হগ বলেছেন, ‘মহাকাশ যাত্রায় সবসময়ই কোনো না কোনো পরিবর্তন দেখা যায়। তবে এবার হয়তো সেটা জনসমক্ষে একটু বেশিই স্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে।’

তিনি গত সপ্তাহে কেপ ক্যানাভেরালে পৌঁছে বলেছিলেন, ‘আমাদের জন্য সামনে বড় এক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। আমরা একে অপরকে চিনি। আর আমরা পেশাদার হওয়ায় আমাদের কাছে যে নির্দেশনাই আসুক না কেন, আমরা তার জন্য প্রস্তুত আছি।’

সেপ্টেম্বরে আইএসএস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কাউকে না নিয়েই পৃথিবীতে ফিরে এসেছে বোয়িংয়ের স্টারলাইনার। এর থ্রাস্টার ব্যর্থতা ও হিলিয়াম ছিদ্র এতটাই গুরুতর ছিল যে নাসা কোনো যাত্রী না নিয়েই রকেটটির ফিরতি যাত্রা পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেয়। একই মাসে দেওয়া এক সংবাদ সম্মেলনে সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর জানিয়েছেন, মহাকাশ স্টেশন তাদের জন্য আনন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে।

প্রসঙ্গত, নাসার নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোর স্টারলাইনারের প্রথম যাত্রী হিসেবে মহাকাশে ভ্রমণ করছেন। তারা এখন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থানকারী অন্য নভোচারীদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের গবেষণামূলক কাজ করছেন।

/আবরার জাহিন

নীরবে ছড়াচ্ছে মহামারি

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৭ এএম
নীরবে ছড়াচ্ছে মহামারি
দেহের অভ্যন্তরে ছত্রাক সংক্রমণে অণু। ছবি: সংগৃহীত

নিজের অজান্তেই মানুষ মারণ ছত্রাকে আক্রান্ত হচ্ছেন। শুনে বিস্ময় জাগলেও এটাই চরম সত্য। ছত্রাক সংক্রমণ প্রতিটি মানুষের দেহে নীরবেই বাসা বেঁধে চলেছে। এগুলো সবই রোগ প্রতিরোধক ওষুধকে হার মানাতে সক্ষম। বিজ্ঞানীরা তাই একে নীরব মহামারি আখ্যা দিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি একটি সমীক্ষা চালিয়ে এমন প্রমাণ পেয়েছেন। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া অণু জীববিজ্ঞানী নরম্যান ভ্যান রিজন বলেছেন, বিশ্বজুড়ে মানুষের দেহে ছত্রাকঘটিত সংক্রমণের পরিমাণ বেড়েছে। এগুলো সব ওষুধকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম। তবে এদের মধ্যে বেশ কয়েকটি ছত্রাক প্রায় ৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন বছরের পুরোনো। এরা প্রতিবছর ঝড়ের বেগে নিজেদের বংশ বৃদ্ধি করছে। কোনো ধরনের ওষুধে এদের মৃত্যু নেই। তাই এরা মারণ ছত্রাক হিসেবেই নিজেদের বিস্তার করছে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, সাধারণ ব্যাকটেরিয়া যেখানে ওষুধে প্রতিরোধ করা যায়। কিন্তু এদের তা করা যাচ্ছে না। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন জনবহুল দেশে আগামী দিনে এই ছত্রাকঘটিত রোগ মহামারি হিসেবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। চীন, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, ব্রাজিল, ইংল্যান্ড, ভারতের মতো দেশে অজান্তেই ছড়িয়ে পড়ছে এই ছত্রাকঘটিত সংক্রমণ। এরা সরাসরি ফুসফুস থেকে শুরু করে হার্টকে বিকল করে দিতে সক্ষম।

যাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের আরও সহজে কাবু করে দেবে এই সংক্রমণ। দেহের বেশির ভাগ কোষকে এরা ধ্বংস করে দেবে। এই জীবাণু প্রতিরোধে এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সতর্ক করেছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।

উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯)-এর প্রাদুর্ভাব বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ মারা গেছে। এখনো কোনো কোনো দেশে এ ভাইরাসের সংক্রমণ থাকতে পারে। দ্রুত টিকা উদ্ভাবন করে এ রোগটি অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।  সূত্র: আজকাল

প্লাস্টিকখেকো ব্যাকটেরিয়া

প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:১১ পিএম
আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১১ পিএম
প্লাস্টিকখেকো ব্যাকটেরিয়া

প্লাস্টিক আধুনিক জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ টন প্লাস্টিক পণ্য তৈরি হয়, যার বেশির ভাগই একবার ব্যবহারের পরে ফেলে দেওয়া হয়। প্লাস্টিকের প্রধান বৈশিষ্ট্য এর শক্তি ও স্থায়িত্ব। তবে এটি উল্লেখযোগ্য পরিবেশগত বিপদেরও কারণ। সাধারণত প্লাস্টিক বর্জ্য বহু শতাব্দী ধরে বাস্তুতন্ত্রে থাকে। একই সঙ্গে এর পচনের জন্য কোনো কার্যকর প্রাকৃতিক পদ্ধতি নেই। ফলে প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে, ভূমিতে, এমনকি খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করছে। বিজ্ঞানীরা প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য উদ্ভাবনী পদ্ধতি উদ্ভাবন করছেন। এর মধ্যে একটি হলো ‘প্লাস্টিকখেকো ব্যাকটেরিয়া’। এই অণুজীবগুলো একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্লাস্টিককে পচাতে পারে। একই সঙ্গে এটিকে বিষাক্ত রাসায়নিক মুক্ত ও ক্ষতিকর নয় এমন পদার্থে রূপান্তরিত করতে পারে।

প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় নতুন ব্যবস্থা হতে পারে প্লাস্টিকখেকো ব্যাকটেরিয়ার আবিষ্কার। ২০১৬ সালে জাপানের বিজ্ঞানীরা ইডেওনালা সেকায়েসেছ (Ideonella sakaiensis) নামে পরিচিত একটি স্ট্রেন শনাক্ত করেছেন, যা পলিথিন টেরেফথালেট (পিইটি)। এটি প্লাস্টিকের একটি প্রচলিত রূপ পচানোর অনন্য ক্ষমতার অধিকারী। সাধারণত পানির বোতল ও খাদ্য প্যাকেজিংয়ের মতো পণ্যগুলোতে পাওয়া যায় পিইটি, যা ব্যাপকভাবে ভোগ্যপণ্যে ব্যবহার করা হয়। এই ব্যাকটেরিয়া কার্যকরভাবে পিইটিকে দুটি প্রাথমিক উপাদান ইথিলিন গ্লাইকল ও টেরেফথালিক অ্যাসিডে ভেঙে ফেলে, যা পরিবেশের জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করে না।

প্লাস্টিক গ্রাসকারী ব্যাকটেরিয়া প্রাথমিকভাবে এনজাইম ব্যবহারের মাধ্যমে এটি সম্পন্ন করে। বিশেষত ইডেওনালা সেকায়েসেছ ব্যাকটেরিয়া দুটি অনন্য এনজাইম ধারণ করে। এগুলো হলো PETase এবং MHETase। প্রাথমিকভাবে পিইটি এই এনজাইমগুলোর দ্বারা MHET (mono (2-hydroxyethyl) terephthalic acid) তৈরির জন্য ভেঙে যায়। এরপরে MHETase এনজাইম এটিকে টেরেফথালিক অ্যাসিড এবং ইথিলিন গ্লাইকোলে পরিণত করে। এই দুটি উপাদান প্রাকৃতিক পরিবেশে সহজেই একত্রিত হতে পারে।

ইডেওনালা সেকায়েসেছ ব্যাকটেরিয়া ছাড়াও অন্যান্য এনজাইম এবং প্লাস্টিক-বিক্ষয়কারী ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষকরা গবেষণ করছেন। ২০০৮ সালে বিজ্ঞানীরা সিউডোমোনাস থিরানামিফিডা ফাসকা (Pseudomonas) এবং থিরানামিফিডা ফাসকা  (Thermobifida fusca) নামে পরিচিত ব্যাকটেরিয়া প্রজাতি শনাক্ত করেছেন। যেগুলোর প্লাস্টিকে বিভিন্ন রূপে পচানোর ক্ষমতা রয়েছে। জার্মানির হেলমহোল্টজ সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চের গবেষকরা পলিউরেথেন প্লাস্টিক ভেঙে ফেলতে সক্ষম একটি ছত্রাক আবিষ্কার করেছেন। প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি নতুন সম্ভাবনা হতে পারে, যা নির্দিষ্ট এনজাইম ও ব্যাকটেরিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে উপলব্ধি করা যেতে পারে। প্রথাগত প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারযোগ্য পদ্ধতিগুলো ব্যয়বহুল ও অনেক ক্ষেত্রে তা অকার্যকর। যাই হোক প্লাস্টিক গ্রাসকারী ব্যাকটেরিয়া এই চ্যালেঞ্জের একটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

প্লাস্টিক খেকো ব্যাকটেরিয়া একটি আকর্ষণীয় সমাধান হলেও এই প্রযুক্তির কিছু সীমাবদ্ধতা ও সমস্যা রয়েছে। প্রথমত, ব্যাকটেরিয়া প্রাকৃতিক পরিবেশে প্লাস্টিক ভাঙার জন্য যথেষ্ট দ্রুত কাজ করতে পারে না। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া, যা বাণিজ্যিক প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এখনো যথেষ্ট নয়। দ্বিতীয়ত, এই ব্যাকটেরিয়া সব প্লাস্টিক ভেঙে ফেলতে পারে না। কিছু প্লাস্টিকের রাসায়নিক গঠন এতটাই জটিল যেন সেগুলো জৈব-বিক্ষয়যোগ্য নয়।

প্লাস্টিকখেকো ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার বাণিজ্যিকীকরণের জন্য আরও গবেষণা এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন প্রয়োজন। যদিও এটি একটি সম্ভাব্য সমাধান, এটির সফল বাস্তবায়ন এখনো প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে।