ঢাকা ২৫ কার্তিক ১৪৩১, রোববার, ১০ নভেম্বর ২০২৪

চীনের চাঁদ জয়ের প্রস্তুতি প্রদর্শন করল নতুন প্রযুক্তির স্পেস স্যুট

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০০ পিএম
আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০১ পিএম
চীনের চাঁদ জয়ের প্রস্তুতি প্রদর্শন করল নতুন প্রযুক্তির স্পেস স্যুট
চীনের তৈরি অত্যাধুনিক স্পেস স্যুট। ছবি: সংগৃহীত

চাঁদে মানুষ পাঠানোর অভিযানে নতুন মাত্রা যোগ করল চীন। ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে পৌঁছানোর লক্ষ্যে দেশটি তৈরি করেছে অত্যাধুনিক একটি স্পেস স্যুট। এই স্পেস স্যুটে রয়েছে চাঁদের কঠিন পরিবেশ সহ্য করার সক্ষমতা। একই সঙ্গে নভোচারীদের চলাচলে স্বাচ্ছন্দ্য দেবে। চীনের এই অগ্রগতি মহাকাশ গবেষণায় নতুন এক যুগের সূচনা করতে পারে।

চীন এর মাধ্যমে চাঁদে মানুষ পাঠানোর লক্ষ্যে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। নতুন ধরনের এই স্পেস স্যুট চাঁদের কঠিন পরিবেশে নভোচারীদের সুরক্ষা দেবে। লাল-সাদা রঙের এই স্পেস স্যুটটি চাঁদের উচ্চ তাপমাত্রা, বিকিরণ এবং ধূলিকণা সহ্য করার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।

নতুন এই স্পেস স্যুটটিতে বিল্ট-ইন ক্যামেরা, অপারেশন কনসোল এবং অ্যান্টি-গ্লেয়ার ভিসর রয়েছে। চীনা নভোচারী ঝাই ঝিগাং ও ওয়াং ইয়াপিং এই স্পেস স্যুট পরে কীভাবে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারছেন, তার একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে।

চীনের এই অগ্রগতি আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা ক্ষেত্রে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। স্পেসএক্সের সিইও ইলন মাস্ক চীনের এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করেছেন।
এদিকে, নাসা জানিয়েছে, তারা ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বরের আগে চাঁদে নভোচারী পাঠাতে পারবে না। তবে কোন দেশ প্রথমে চাঁদের পৃষ্ঠে পৌঁছাবে, তার এখনো অস্পষ্ট রয়ে গেছে। চীনের এই নতুন স্পেস স্যুট মহাকাশ গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এটি চাঁদে মানুষ পাঠানোর লক্ষ্যে দেশটির দৃঢ়প্রতিজ্ঞারই প্রমাণ।

২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে প্রথম নভোচারীদের পাঠানো এবং মঙ্গল ও বৃহস্পতি থেকে নমুনা সংগ্রহের জন্য মিশন পরিচালনার লক্ষ্য রয়েছে চীনের। এর আগে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে একটি ঘাঁটি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটি।

/আবরার জাহিন

মানবমস্তিষ্কে ভাইরাসের হানা

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৩ এএম
আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৮ এএম
মানবমস্তিষ্কে ভাইরাসের হানা
মস্তিষ্কের কোষে এইচএসভি-১ ভাইরাসের সংক্রমণ। ছবি: এনডিটিভি

মস্তিষ্ক মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের কেন্দ্রীয় অঙ্গ। এটি মানবদেহের সিংহভাগ কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। তবে একটি নতুন ভাইরাস বা জীবাণু মানবমস্তিষ্কের জন্য বড় বিপদ বয়ে আনছে। মুখের ভেতর যেমন ঘা হয়, ঠিক তেমনি আমাদের মগজে এই ধরনের নতুন ঘা তৈরি হচ্ছে। এ নিয়ে সম্প্রতি সতর্কবাণী শুনিয়েছেন চিকিৎসকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জানিয়েছেন, মগজের বিভিন্ন স্থানে জায়গা করে নিচ্ছে এই ঘা। এইচএসভি-১ নামের এই ভাইরাস মগজের কাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। পাশাপাশি স্নায়ুতন্ত্রকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে এই নতুন ধরনের ঘা। এটি সরাসরি মুখে ও চোখের বিভিন্ন কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বাতাসের মধ্যে ভেসে বেড়াচ্ছে এই ভাইরাস।

কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ক্রিস্টি নেইমেয়ার ভাইরাসটির নাম দিয়েছেন এইচএসভি-১। তবে ভাইরাসটি কেন্দ্রীয় নার্ভ সিস্টেমকে কীভাবে আক্রমণ করে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তিনি শুধু বলছেন, ভাইরাসটি বাতাসের মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে। তবে এটি মস্তিষ্কে ঢুকে এর কোন কোন অংশকে বিপন্ন করে ফেলে তা তিনি বলতে পারেননি। ভাইরাসটি মস্তিষ্কের ভেতর কীভাবে চলাচল করে থাকে তার একটি পথনকশা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন চিকিৎসকরা। 

গবেষকরা বলছেন, বাতাসের মধ্য দিয়েই এই ভাইরাস সরাসরি প্রবেশ করছে আমাদের মগজে। এরপর নিজের কাজ শুরু করে সে। মাথার বিভিন্ন অংশের ওপর সরাসরি প্রভাব খাটাচ্ছে এই ভাইরাস। এমনকি রাতের দিকে যাদের ভালো ঘুম হচ্ছে না তারাও এই ভাইরাসের শিকার হতে পারেন। মগজের কার্যক্ষমতা নষ্ট করার পাশাপাশি মাথার ভেতরের বিভিন্ন অংশে ঘা ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভাইরাসের আক্রমণে আলঝেইমারের মতো রোগও হতে পারে।

এই ভাইরাসের চিকিৎসা করতে গিয়ে চিকিৎসদের রীতিমতো হিমশিম অবস্থা। চিকিৎসকরা সতর্ক করে বলছেন, একবার যদি মগজে এই জীবাণু প্রবেশ করতে পারে তাহলে আর রক্ষা নেই। এর হাত থেকে বাঁচা মুশকিল। আপাতত এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। শুধু একে খানিক সময় ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির স্নায়ুবিক কার্যক্রম বিঘ্ন ঘটে মারাত্মকভাবে। তাই নতুন এই ভাইরাস ভয় ধরাচ্ছে সবার মনে। সূত্র: এনডিটিভি

নতুন বিশাল গ্রহের সন্ধান

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ এএম
নতুন বিশাল গ্রহের সন্ধান
নতুন গ্রহের প্রতীকী। ছবি: নাসা
সৌরজগতের বাইরে ধাতব কেন্দ্রসমৃদ্ধ একটি নতুন বিশাল গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এটি নেপচুনিয়ান অঞ্চলে অবস্থিত। এই গ্রহটি পৃথিবীর চেয়ে পাঁচ গুণ বড়। এর ওজন পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ৬০ গুণ বেশি এবং এটি সূর্য থেকে প্রায় ৬৯০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
 
ভারতের ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক দল ‘টিওআই-৬৬৫১বি’ নামে পরিচিত এই গ্রহটি আবিষ্কার করেছেন। রাজস্থানের মাউন্ট আবুতে অবস্থিত পিএআরএএস-২ টেলিস্কোপের মাধ্যমে নতুন এই গ্রহটির অস্তিত্ব শনাক্ত করা হয়।
 
জার্নাল অব অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকসে প্রকাশিত গবেষণায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গ্রহটির আকৃতি নেপচুন ও শনি গ্রহের মাঝামাঝি। এই গ্রহটিকে নেপচুনিয়ান অঞ্চলের চতুর্থ এক্সো-গ্রহ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশি। নেপচুন আকারে পৃথিবীর ৪ গুণ বড় ও ১৭ গুণ ভারী। এ অঞ্চলে যেসব গ্রহের খোঁজ মিলেছে বা ভবিষ্যতে মিলবে, সেগুলো এমন প্রকৃতির হবে।
 
ভারতের ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা জানান, নতুন গ্রহটি তার কেন্দ্রীয় নক্ষত্রের চারপাশে মাত্র পাঁচ দিনে ঘোরে। গ্রহটির ৮৭ শতাংশই লোহার মতো শক্ত ধাতু দিয়ে গঠিত, আর বাহ্যিক স্তরে রয়েছে হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের একটি কম ঘনত্বের মেরু। নতুন এই গ্রহটির পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ১২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়ায় এটি মানুষের বসবাসের জন্য পুরোপুরি অনুপযোগী।
 
এর আগে নেপচুনিয়ান অঞ্চলে তিনটি অন্য এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কৃত হয়েছিল, যা পৃথিবীর চেয়ে ১২ থেকে ১৩ গুণ বড়। বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতে আরও এমন গ্রহ আবিষ্কারের ব্যাপারে আশাবাদী। এই নতুন গ্রহ আবিষ্কারটি মহাকাশ নিয়ে আমাদের জানার পরিধি আরও সম্প্রসারিত করবে।
 
উল্লেখ্য, এক বছর আগে আরেকটি নতুন গ্রহের সন্ধান পেয়েছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তারা বলেছিলেন, নেপচুনের পেছনে কুইপার বেল্টে ওই গ্রহ শনাক্ত করা হয় যার আকার ‘পৃথিবীর মতো’। তখন অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, কুইপার বেল্টে সন্ধান পাওয়া বস্তুকে ‘প্ল্যানেট নাইন’ নামে ডাকা হচ্ছে। এর বিচিত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন- অন্যান্য বস্তুর ওপর এর মহাকর্ষীয় প্রভাব রয়েছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি গ্রহ। সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি কত?

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৫ এএম
ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি কত?
ঝোড়ো আবহাওয়ার ছবি। সংগৃহীত

আপনি কি কখনো ভেবেছেন পৃথিবীতে কোন ঝড়ের গতি সবচেয়ে বেশি ছিল? অথবা কোন গ্রহে ঝড়ের গতি সবচেয়ে বেশি?- এ প্রশ্নের উত্তর খুবই আকর্ষণীয়। তাই বিজ্ঞানীরাও এ প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে বছরের পর বছর কাজ করে যাচ্ছেন।

১৯৩৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের মাউন্ট ওয়াশিংটন অবজারভেটরিতে ঝোড়ো বাতাসের গতিবেগ রেকর্ড করা হয় প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৩৭২ কিলোমিটার, যা ‘বিগ উইন্ড’ নামে পরিচিত। আবার ২০১৭ সালে হারিকেন ইরমার বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ২৯৮ কিলোমিটার, যার আঘাতে ছাদ উড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে গাছ উপড়ে পড়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।

তা হলে এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি কত? এ প্রশ্নের উত্তর বাতাসের উৎস, অবস্থান এবং পরিমাপের যন্ত্রের ওপর নির্ভর করে।

সৌরজগতে সবচেয়ে শক্তিশালী বাতাসের প্রবাহ পাওয়া যায় নেপচুন গ্রহে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তথ্য অনুসারে, সেখানে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১ হাজার ১০০ মাইল বা ১ হাজার ৭৭০ কিলোমিটার গতিতে বাতাস প্রবাহিত হয়, যা শব্দের গতির দেড় গুণ। 

পৃথিবীতে কৃত্রিমভাবে তৈরি সুপারসনিক উইন্ড টানেলেও শব্দের চেয়ে দ্রুতগতির বায়ুপ্রবাহ তৈরি করা যায়। সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠে প্রতি ঘণ্টায় ১ হাজার ২২৫ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি গতির ঝড়কে সুপারসনিক বলা হয়। নাসার গ্লেন রিসার্চ সেন্টারের ১০×১০ সুপারসনিক উইন্ড টানেলে ঘণ্টায় প্রায় ৪ হাজার ৩২১ কিলোমিটার পর্যন্ত বাতাসের গতি তৈরি করা সম্ভব।

আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও) পরিচালিত ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যান্ড ক্লাইমেট এক্সট্রিমস আর্কাইভ অনুযায়ী, প্রাকৃতিকভাবে রেকর্ডকৃত সর্বোচ্চ বাতাসের গতি ছিল প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৪০৭ কিলোমিটার। এই গতি রেকর্ড করা হয়েছে ১৯৯৬ সালের ১০ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ার ব্যারো আইল্যান্ডে ট্রপিক্যাল সাইক্লোনের সময়। ট্রপিক্যাল সাইক্লোন হারিকেনের মতোই একটি ঘূর্ণিঝড়। তবে এটি সাধারণত দক্ষিণ প্যাসিফিক ও ভারত মহাসাগরে দেখা যায়। ব্যারো আইল্যান্ডের আবহাওয়া স্টেশনে অ্যানিমোমিটার নামের বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যেমে এই বাতাসের গতি পরিমাপ করা হয়। তখন মাত্র ৩ থেকে ৫ সেকেন্ডের জন্য এই তীব্র বায়ুপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়।

ব্যারো আইল্যান্ডে বায়ুপ্রবাহের রেকর্ডের সত্যতা নিশ্চিত করতে এক দশক লেগেছে আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থার। অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির জিওগ্রাফিক্যাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক র‌্যান্ডাল সার্ভেনি জানান, অস্ট্রেলিয়ার এই দ্বীপ জ্বালানি তেল কোম্পানি শেভরনের মালিকানাধীন হওয়ায় তথ্যটি প্রাথমিকভাবে নজরে আসেনি। সার্ভেনি আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থার আবহাওয়া ও জলবায়ুর চরম ঘটনা পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন। তার দল অস্ট্রেলিয়া সফর করে ওই দ্বীপে ব্যবহৃত অ্যানিমোমিটারটি পরীক্ষা করেন। এরপর নিশ্চিত হন, রেকর্ডটি স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে। ফলে ওই রেকর্ডকৃত বাতাসের গতিবেগ নির্ধারণে কোনো ভুল ছিল না।

আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা শুধু সরাসরি পরিমাপ করা তথ্যকে রেকর্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সার্ভেনি জানান, ব্যারো আইল্যান্ডের গতির চেয়ে দ্রুত গতিবেগের রেকর্ড পাওয়া গেছে, তবে সেগুলো অনুমান বা হিসাবভিত্তিক যন্ত্র দিয়ে পরিমাপ করায় সেগুলো রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অ্যানিমোমিটারে পরিমাপের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। এগুলো প্রচণ্ড বাতাসে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কেবল সেখানেই স্থাপন করা যেতে পারে, যেখানে মানুষ যেতে পারে। যেমন- জেট স্ট্রিমে বাতাস প্রতি ঘণ্টায় ৪৪৩ কিলোমিটার গতিতে প্রবাহিত হতে পারে। সেখানে অ্যানিমোমিটার স্থাপন করা বেশ কঠিন।

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়ের খোঁজে বিজ্ঞানীরা টর্নেডোর গতিবেগ নিয়ে নতুন নতুন তথ্য উন্মোচন করেছেন। জাপান ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের ওপরে দিয়ে সর্বোচ্চ ৪৮৩ কিলোমিটার বেগে বয়ে চলা বাতাসপ্রবাহের রেকর্ড তদন্ত করছেন সার্ভেনি ও তার দল। এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা গেলে, এটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ ঝড়ের গতি হিসেবে নতুন স্বীকৃত পেতে পারে।

এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে রেডিওসন্ড নামক একটি যন্ত্রের সাহায্যে, যা একটি আবহাওয়া বেলুনের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এই যন্ত্র বায়ুমণ্ডলে উঠে গিয়ে সরাসরি বাতাসের গতি পরিমাপ করে। সার্ভেনি বলেন, ‘এটি হতে পারে আমাদের দেখা পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহের মধ্যে একটি।’

অন্যদিকে, ঝড়ের গতি পরিমাপের আর একটি উপায় হলো ডপলার প্রযুক্তির রাডার। তবে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা রাডারের তথ্যকে সর্বোচ্চ ঝড়ের গতির রেকর্ড হিসেবে গণ্য করে না। কারণ রাডার দূর থেকে আনুমানিক হিসাব করে গতি পরিমাপ করে, সরাসরি পরিমাপ করে না। ইউনিভার্সিটি অব আলাবামার ফ্লেক্সিবল অ্যারে অব রাডারস অ্যান্ড মেসোনেটমসের পরিচালক জশুয়া ওয়ারম্যান বলেন, ‘রাডারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো- এটি দূরবর্তী জিনিস পরিমাপ করতে পারে। রাডার দিয়ে দ্রুত গতিসম্পন্ন টর্নেডোর গতিও পরিমাপ করা যায়।

টর্নেডোর রহস্য উন্মোচনে নতুন মাত্রা

টর্নেডো বা ঘূর্ণিঝড় প্রকৃতির এক বিশাল শক্তির প্রকাশ। এই শক্তিশালী বায়ুবৃত্তের গতি কতটা হতে পারে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা বহুকাল ধরে গবেষণা করে আসছেন। জশুয়া ওয়ারম্যান টর্নেডোর গতি পরিমাপে ব্যবহার করছেন ‘ডপলার অন হুইলস’ নামের একটি বিশেষ রাডার। এই রাডারটি একটি ট্রাকে বসানো থাকে। এর সাহায্যে টর্নেডোর খুব কাছাকাছি গিয়েও নিরাপদে তথ্য সংগ্রহ করা যায়। 

রেকর্ড ভাঙার সম্ভাবনা

১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমার ব্রিজ ক্রিকে ঘণ্টায় প্রায় ৪৮৬ কিলোমিটার বেগে একটি টর্নেডো আঘাত হানে। এটি দীর্ঘদিন ধরে সর্বোচ্চ গতির টর্নেডো হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল। তবে ২০২৪ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়ার গ্রিনফিল্ডে একটি টর্নেডোর গতি ঘণ্টায় ৪৯৭ থেকে ৫১২ কিলোমিটারের মধ্যে ছিল বলে ওয়ারম্যানের দলের গবেষণায় উঠে এসেছে। যদিও রাডারের পরিমাপে কিছুটা ত্রুটি থাকতে পারে। তবে এই নতুন তথ্য পুরোনো রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।

ওয়ারম্যান বলেন, ‘আমি মনে করি, এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, খুব কম ক্ষেত্রেই টর্নেডোর গতি ঘণ্টায় ৪৮৩ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়। সম্ভবত ঘণ্টায় ৬৪৪ কিলোমিটারের বেশি গতিবেগের কোনো টর্নেডোই নেই। কারণ আমরা এখনো এত উচ্চগতির কোনো টর্নেডো দেখিনি।’ 
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে ঝড়ের গতি আরও সঠিকভাবে পরিমাপ করা সম্ভব হবে।

মিল্কিওয়ের কৃষ্ণগহ্বরের বিখ্যাত ছবি সঠিক নাও হতে পারে

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৭ পিএম
আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০০ পিএম
মিল্কিওয়ের কৃষ্ণগহ্বরের বিখ্যাত ছবি সঠিক নাও হতে পারে
এটি আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রস্থলের ব্ল্যাকহোল স্যাজিটেরিয়াস এ* (Sagittarius A*) এর প্রথম ছবি। ছবি: রয়র্টাস

আমাদের ছায়াপথের নাম মিল্কিওয়ে। এই ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের প্রথম বিখ্যাত ছবিটি সঠিক নাও হতে পারে, এমনটাই দাবি করা হয়েছে নতুন এক গবেষণায়।

২০২২ সালে প্রকাশিত ছবিটি আন্তর্জাতিক গবেষণা দল ‘ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ (ইএইচটি)’ প্রকল্পের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফসল। ছবিটি ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত ব্ল্যাকহোলের বিস্ময়কর দৃশ্য উপস্থাপন করে।

প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, কমলা রঙের ডোনাট আকৃতির বৃত্তাকারের মাঝখানে একটি কালো গর্তের মতো অংশ। মাঝের অন্ধকার অংশটিই হলো আসল কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোল। আর কমলা রঙের অংশটি হলো কৃষ্ণগহ্বরের চারপাশে থাকা উত্তপ্ত গ্যাস, যা কৃষ্ণগহ্বরের শক্তিশালী মহাকর্ষীয় বলের কারণে সৃষ্টি হয়েছে।

নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এই চিত্রের আকার প্রকৃতপক্ষে সঠিক নয়। জাপানের ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরি (এনএওজে) পরিচালিত গবেষণা অনুযায়ী, ব্ল্যাকহোলের চারপাশে থাকা ডিস্কটির আকার আরও লম্বাটে হতে পারে।

প্রাথমিক ছবিটি তৈরিতে ব্যবহৃত তথ্য সংগ্রহ ও যাচাইয়ে গবেষকরা অনেক কাজ করেছেন। তবে নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রক্রিয়ায় কিছু ত্রুটির কারণে হয়তো ডেটা বিশ্লেষণে ভুল হয়েছে। ২০১৭ সালে সংগ্রহ করা মূল ডেটা পুনরায় পর্যবেক্ষণ করে এই দাবি জানিয়েছেন গবেষকরা। ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরির গবেষক মিওশি মাকোতো বলেন, ‘আমাদের প্রাপ্ত ছবিতে পূর্ব-পশ্চিম দিকে কিছুটা লম্বাটে আকৃতি দেখা যাচ্ছে এবং পূর্বের অংশটি পশ্চিম অংশের চেয়ে উজ্জ্বল। এই আকৃতি ইঙ্গিত দেয়, ব্ল্যাকহোলের চারপাশের থাকা জমা পদার্থের ডিস্কটি আলোর গতির প্রায় ৬০ শতাংশ গতিতে ঘুরছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তা হলে কিভাবে এই বলয়াকার ছবিটি পাওয়া গেল? আসলে কোনো টেলিস্কোপই কোনো জ্যোতির্বিদ্যাসংক্রান্ত ছবি নিখুঁতভাবে ধারণ করতে পারে না। আমাদের ধারণা হলো, ইএইচটির ইমেজিং বিশ্লেষণে ত্রুটির কারণে ডোনাট আকৃতির চিত্রটি তৈরি হয়েছে, যা প্রকৃত জ্যোতির্বিদ্যাগত কাঠামোর প্রতিফলন নাও হতে পারে।’

এসব দাবির বিস্তারিত উঠে এসেছে ‘অ্যান ইনডিপেনডেন্ট হাইব্রিড ইমেজিং অব এসজিআর এ* ফ্রম দ্য ডেটা ইন ইএইচটি ২০১৭ অবজারভেশন্স’ শীর্ষক এক গবেষণাপত্রে। ‘মান্থলি নোটিসেস অব দ্য রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি’ নামের বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নালে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। সূত্র: দ্য ইনডিপেনডেন্ট

মঙ্গলে বিস্ময়কর ‘সবুজ দাগ’

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০১ এএম
আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০২ এএম
মঙ্গলে বিস্ময়কর ‘সবুজ দাগ’
মঙ্গলে পাথরের মধ্যে দেখা গেছে বিস্ময়কর সবুজ দাগ। ছবি: নাসা

মঙ্গল গ্রহে ফের নতুন কিছু দেখতে পেলেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি লাল গ্রহটিতে বিস্ময়কর ‘সবুজ দাগ’ খুঁজে পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। দাগগুলো নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। দাগগুলো তাদের অবাকও করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, দাগগুলো কিসের। এটা নিয়ে তারা বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন বলে জানিয়েছেন। তাদের প্রত্যাশা, এর ফলে সেখানে প্রাণের স্পন্দন সৃষ্টিতে  আরও একধাপ এগিয়ে যেতে সক্ষম হবেন তারা। 

নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিভিন্ন অণুজীবের কার্যকলাপের ফলে এমন দাগ বা চিহ্ন দেখা যায় পৃথিবীতে। তবে নাসা সতর্ক করে বলেছে, মঙ্গল গ্রহেও ঠিক একই কারণে এমনটি ঘটেছে তা ভাবার মতো কিছুই নেই। মঙ্গলে থাকা পাথরের বিস্ময়কর ও অপ্রত্যাশিত বৈশিষ্ট্য হতে পারে এটি, যা গ্রহটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক আবিষ্কার।

খবরে বলা হয়েছে, সবুজ দাগের সন্ধান মিলেছে মঙ্গলে থাকা নাসার পার্সিভিরেন্স রোভারের কাছ থেকে। ৫ সেন্টিমিটারের এই সবুজ দাগকে পাথরের রঙের ‘স্ট্রাইকিং অ্যারে’ বা আকর্ষণীয় বিন্যাস হিসেবে বর্ণনা করেছে নাসা, যা পাথরের মধ্যে তৈরি করেছে সাদা, কালো ও সবুজ রঙের ছোপ ছোপ দাগ। এই আবিষ্কারে সবচেয়ে বড় চমক গাঢ় সবুজ রঙের দাগ।

নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর মতো পাথরের গঠন রয়েছে মঙ্গল গ্রহেও। তবে সেই পাথরের ওপর দেখা গেল এই সবুজ দাগ। মঙ্গলের পৃষ্ঠে থাকা পানি শক্ত হয়ে পাথরে পরিণত হওয়ার আগে যখন পলির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন তৈরি হয় এমন রং, যা রাসায়নিক বিক্রিয়াকে পরিবর্তন করে ও ভিন্ন ধরনের সবুজ রঙের এক রাসায়নিক উপাদান তৈরি করে।

পৃথিবীতে এই প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কখনো কখনো অণুজীবও জড়িয়ে থাকে। তবে এটি অন্যান্য কারণেও ঘটতে পারে। যেমন– সালফার ও আয়রনের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার কারণে এমনটি ঘটতে পারে। 

নাসা বলেছে, পার্সিভিরেন্স রোভারের কাছে অন্যান্য যন্ত্র দিয়ে এই দাগ সম্পর্কে আরও ভালোভাবে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ছিল না। তাই এখনো ‘রহস্য’ হিসেবেই রয়ে গেছে এই সবুজ দাগ। মঙ্গল গ্রহের পাথরের এসব অপ্রত্যাশিত বৈশিষ্ট্যের পেছনের কারণ জানতে অনুসন্ধান চালিয়ে যাবে নাসা। মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটির অনুমান, ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পেতে সহায়ক হবে তাদের এই অনুসন্ধান এবং শিগগিরই তারা নতুন কিছু জানাতে পারবে। সূত্র: ইনডিপেনডেন্ট