ঢাকা ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, রোববার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪

ব্রাজিলে নখের চেয়েও ছোট নতুন প্রজাতির ব্যাঙের সন্ধান

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০০ এএম
ব্রাজিলে নখের চেয়েও ছোট নতুন প্রজাতির ব্যাঙের সন্ধান
ব্রাজিলে নখের চেয়েও ছোট নতুন প্রজাতির ব্যাঙের সন্ধান। সংগৃহীত

বিজ্ঞানীরা ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রেইনফরেস্টে আঙুলের নখের চেয়েও ছোট আকৃতির একটি নতুন ব্যাঙের প্রজাতি আবিষ্কার করেছেন। প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় এই প্রজাতির ব্যাঙের দৈর্ঘ্য ১ সেন্টিমিটারেরও কম। এটি পৃথিবীর অন্যতম ক্ষুদ্রতম কশেরুকা প্রাণী। ‘ব্র্যাচিসেফালাস ডাকনিস’ নামের এই ব্যাঙ পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা প্রজেক্ট ডাকনিসের নামে নামকরণ করা হয়েছে, যারা এই আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

গবেষকরা এই ছোট ‘ফ্লি টোড বা পোকার মতো ব্যাঙ’ নিয়ে গবেষণা করার সময় এদের এই ক্ষুদ্রাকৃতির জন্য বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন। এই ক্ষুদ্র ব্যাঙের আকৃতি ও তার গঠন বিজ্ঞানীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এটি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ক্ষুদ্রতম মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম। গবেষণায় বলা হয়েছে, এটি দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম উভচর প্রাণী। বিশ্বের অন্যতম ক্ষুদ্র ব্যাঙ হওয়া সত্ত্বেও এই ব্যাঙের অস্থি কাঠামো সাধারণ বড় ব্যাঙের মতোই।

গবেষণাপত্রের সহলেখক লুইস ফেলিপে তোলেদো জানান,‘বিবর্তনের ধারায় এটির হাড়ের গঠন সংকুচিত হয়ে ক্ষুদ্রাকার ধারণ করেছে, যা শরীরের কিছু অংশের অনুপস্থিতির জন্য দায়ী। আমরা জীববিজ্ঞানীরা যাকে মাইক্রোটাইজেশন বলি, এদের বিবর্তনের সময় সেই প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যেতে হয়েছে। এতে হাড়ের ক্ষয়, হ্রাস বা একীভূতকরণ ও শরীরের অন্যান্য অংশের অনুপস্থিতি ঘটে।’

এই প্রজাতি দেখতে একই অঞ্চলের আরেক প্রজাতি বি হারমোজেনেসি (B. hermogenesi) দেখতে অনেকটাই মিল রয়েছে। উভয়ের ত্বক হলুদাভ-বাদামি ও পাতার নিচে বাস করে। এ ছাড়া এরা সরাসরি ডিম থেকে ক্ষুদ্র ব্যাঙ হিসেবে জন্ম নেয়। তবে গবেষকরা নতুন প্রজাতিটির স্বতন্ত্র ডাকের মাধ্যমে এর অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগত হন। পরবর্তীতে ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়, ব্রাচিসেফালাস ডাকনিস সত্যিই একটি নতুন প্রজাতি। তোলেদো বলেন, ‘১৯৯৮ সালে বি হারমোজেনেসি বর্ণনার জন্য ব্যবহৃত নমুনাগুলোর মধ্যে নতুন প্রজাতির নমুনা থাকতে পারে।’

চীনে বিশ্বের বৃহত্তম স্বর্ণের খনির সন্ধান

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৩ এএম
চীনে বিশ্বের বৃহত্তম স্বর্ণের খনির সন্ধান
চীনের ওয়াংগু সোনার খনিতে বিশ্বের বৃহত্তম স্বর্ণের মজুত আবিষ্কৃত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

চীনের হুনান প্রদেশে ওয়াংগু স্বর্ণের খনিতে বিশ্বের বৃহত্তম স্বর্ণের মজুত আবিষ্কৃত হয়েছে। মজুত করা স্বর্ণের আনুমানিক মূল্য ৮ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে হুনানের জিওলজিক্যাল ব্যুরো জানিয়েছে, এই খনি থেকে ১ হাজার টনেরও বেশি স্বর্ণ আহরণের সম্ভাবনা রয়েছে। এই স্বর্ণের খনি প্রদেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পিংজিয়াং কাউন্টিতে অবস্থিত।

জিওলজিক্যাল ব্যুরো জানিয়েছে, প্রায় এক মাইল গভীরে ৪০টি গোল্ড ভেইনস চিহ্নিত করা হয়েছে। গোল্ড ভেইনস হচ্ছে লম্বা, সরু খাঁজ যাতে স্বর্ণ জমা থাকে। ভূতত্ত্ববিদরা মনে করছেন, শুধু এই শিলা স্তরগুলোয় ৩০০ টন স্বর্ণ রয়েছে। গভীর স্তরগুলোতেও আরও বেশি স্বর্ণ মজুত থাকতে পারে। জিওলজিক্যাল ব্যুরোর ভূতত্ত্ববিদ ও খনিজ অনুসন্ধানকারী চেন রুলিন এমনটাই জানিয়েছেন ‘খনি থেকে উদ্ধার করা শিলার বেশ কয়েকটি নমুনায় দৃশ্যমান স্বর্ণ পাওয়া গেছে।’

এই স্থানের আশপাশে পরীক্ষামূলক ড্রিলিংয়ে আরও স্বর্ণ পাওয়া গেছে, যা এই মজুত আরও বড় হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সব মিলিয়ে এই স্থান থেকে প্রায় ১ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি মূল্যবান ধাতু পাওয়া যেতে পারে। চীনা মুদ্রায় এর বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৬০ হাজার কোটি ইউয়ান বা ৮ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার। 
গবেষকদের ধারণা যদি সঠিক হয়, তাহলে চীনের হুনান প্রদেশে আবিষ্কৃত এ খনিটি মজুতের দিক থেকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বর্ণের খনি হতে যাচ্ছে। এই খনির সন্ধান পাওয়ার আগ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার সাউথ ডিপ গোল্ড মাইন বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বর্ণের খনি হিসেবে পরিচিত ছিল। খনিটিতে সর্বোচ্চ ৯৩০ টন স্বর্ণ পাওয়া গেছে।

হুনান প্রভিন্সিয়াল জিওলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের মতে, এই আবিষ্কার চীনের খনিজ সম্পদ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া এর মাধ্যমে বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যে দেশটির স্বর্ণের চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে।

এই আবিষ্কারের পর বিশ্বব্যাপী স্বর্ণের দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে দীর্ঘমেয়াদি বাজার পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। চীনে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে স্বর্ণের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই নতুন মজুত সেই চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে।

ওয়াংগু স্বর্ণক্ষেত্রটি চীনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খনি এলাকা। এই এলাকার খনিজ অনুসন্ধানের জন্য চীন সরকার প্রায় ১০০ মিলিয়ন ইউয়ান বিনিয়োগ করেছে। ২০২৩ সালের হিসাবে চীন বিশ্বের স্বর্ণের প্রায় ১ দশমাংশ উৎপাদন করেছে।

চীন খনি শিল্পে বৈশ্বিক নেতৃত্ব ধরে রেখেছে। প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব খনন পদ্ধতিতে দেশটির আধিপত্য ক্রমে বাড়ছে। নতুন প্রজন্মের ব্যাটারি ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় মূল্যবান ধাতুর উৎপাদনে চীন শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। সূত্র: ইনডিপেনডেন্ট

১৫ লাখ বছর আগের দুই প্রজাতির আদিম মানবের পদচিহ্ন

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৯ এএম
১৫ লাখ বছর আগের দুই প্রজাতির আদিম মানবের পদচিহ্ন
ধারণা করা হয়, ছবির পদচিহ্নটি প্রাচীন মানব হোমো ইরেক্টাস প্রজাতির

কেনিয়ার একটি লেকের তীরে কাদামাটিতে পাওয়া পায়ের ছাপ থেকে গবেষকরা নতুন তথ্য উন্মোচন করেছে। এই পদচিহ্ন থেকে প্রমাণ মিলেছে, ১৫ লাখ বছর আগে সেখানে দুই ভিন্ন প্রাচীন মানব প্রজাতি পাশাপাশি বাস করত। নতুন এই গবেষণা চলতি বছরের নভেম্বরে বিজ্ঞানভিত্তিক ‘সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকদের মতে, এই পায়ের ছাপগুলো মাত্র কয়েক ঘণ্টা বা সর্বোচ্চ কয়েক দিনের ব্যবধানে একই স্থানে পড়েছে। 

গবেষণার সহলেখক ও বিখ্যাত প্যালিওনটোলজিস্ট লুইস লিকি জানান, ‘এই ছাপগুলো মানব বিবর্তনের দুটি শাখা, এগুলো হলো- ‘হোমো ইরেক্টাস’ ও ‘প্যারানথ্রপাস বইসি’। এর আগে জীবাশ্মের মাধ্যমে আমরা জেনেছি, এই দুই বিলুপ্ত প্রজাতি প্রায় একই সময়ে তুর্কানা বেসিনে বাস করত।

ধারণা করা হয়, ছবির পদচিহ্নটি প্রাচীন মানব প্যারানথ্রপাস বইসি প্রজাতির। ছবি: সংগৃহীত

আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির প্যালিওনটোলজিস্ট উইলিয়াম হারকোর্ট-স্মিথ (গবেষণায় যুক্ত নন) বলেন, ‘জীবাশ্মের ক্ষেত্রে কয়েক হাজার বছরের পার্থক্য থাকতে পারে। তবে ফসিল পায়ের ছাপের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মুহূর্তকে সংরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায়। এটি একটি চমৎকার আবিষ্কার।’

২০২১ সালে কেনিয়ার কোবি ফোরা এলাকায় এই ছাপগুলো আবিষ্কৃত হয়। গবেষকরা ধারণা করছেন, লেক তুর্কানার পূর্ব পাশে এই দুই প্রাচীন মানব প্রজাতি হয়তো একই সময়ে বা মাত্র দু-এক দিনের ব্যবধানে চলাফেরা করেছে। গবেষণার আরেক সহলেখক পিটসবার্গের চ্যাথাম ইউনিভার্সিটির প্যালিওঅ্যানথ্রোপোলজিস্ট কেভিন হাতালা বলেন, ‘সম্ভবত তারা একে অপরকে দেখেছে, একে অপরের উপস্থিতি টের পেয়েছে। হয়তো একে অপরকে কোনো না কোনোভাবে প্রভাবিত করেছে।’ গবেষকরা পায়ের ছাপের আকারের ভিন্নতার মাধ্যমে দুই প্রজাতির পার্থক্য নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন। হোমো ইরেক্টাসের পদচিহ্ন আধুনিক মানুষের মতো হাঁটার ধারণা দেয়, প্রথমে পায়ের গোড়ালি মাটিতে স্পর্শ করে, তারপর ওজন পায়ের পাতা ও আঙুলের ওপর বয়ে যায় এবং আবার ঠেলে দেওয়া হয়।

অন্যদিকে প্যারানথ্রপাস বইসি প্রজাতির হাঁটার ধরন সম্পূর্ণ ভিন্ন। চ্যাথামের মানব বিবর্তন বিশেষজ্ঞ এরিন মেরি উইলিয়ামস-হাতালা জানান, এই প্রজাতির পায়ের ছাপে বড় আঙুলের বাড়তি চলন ক্ষমতার ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যা হোমো ইরেক্টাস বা আধুনিক মানুষের তুলনায় আলাদা। 

গবেষকরা বলছেন, আমাদের প্রাচীন পূর্বপুরুষদের শাখা ধরার উপযোগী ছিল হাত ও পা। তবে কালক্রমে তাদের পা দুই পায়ে হাঁটার জন্য বিবর্তিত হয়েছে। এই নতুন গবেষণা আরও বেশি করে প্রমাণ করে, দুই পায়ে হাঁটা শেখা একদিনে, এক উপায়ে হয়ে ওঠেনি। বরং প্রাচীন মানুষরা বিভিন্ন উপায়ে হাঁটা, দৌড়ানো, হোঁচট খাওয়া ও পিছলে পড়ার মতো কাজ শিখেছিল।

দুই পায়ে হাঁটতে (বিপেডালিজম) শেখা একবারে নয় বরং বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বিকশিত হয়েছে। নিউইয়র্কের আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির বিজ্ঞানী উইলিয়াম হারকোর্ট-স্মিথ বলেন, ‘বিপেডালিজমের বিভিন্ন ধরন রয়েছে, যা আমাদের পূর্বপুরুষদের চলাচলের জটিল ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।’ সূত্র: এপি

প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাসে ছাগল ও কুকুর কি সহায়ক হতে পারে?

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৭ এএম
প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাসে ছাগল ও কুকুর কি সহায়ক হতে পারে?
এক গবেষণায় দেখা গেছে, ছাগলরা অগ্ন্যুৎপাতের আগে অস্থির হয়ে ওঠে ও উঁচু জমিতে যেতে চায় না। ছবি: সংগৃহীত

ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দিতে পারে কি পোষা প্রাণীরা? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নেমেছেন বিজ্ঞানীরা। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, সিসিলি দ্বীপের সক্রিয় আগ্নেয়গিরি মাউন্ট এটনার ঢালে থাকা ছাগলরা অগ্ন্যুৎপাতের আগে অস্থির হয়ে ওঠে ও উঁচু জমিতে যেতে চায় না। এই ঘটনাটি গবেষকদের আরও জোর ধারণা দেয় যে, হয়তো পোষা প্রাণীদের আচরণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে দুর্যোগের পূর্বাভাস পাওয়া যেতে পারে।

এই লক্ষ্যে জার্মানির ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট অব অ্যানিমেল বিহেভিয়ারের বিজ্ঞানীরা একটি নতুন গবেষণা প্রকল্প শুরু করেছেন। এই প্রকল্পে কুকুর ও ছাগলসহ বিভিন্ন পোষা প্রাণী, পাখি এবং পোকামাকড়ের গায়ে ক্ষুদ্র ট্রান্সমিটার লাগানো হবে। এই ট্রান্সমিটারের সাহায্যে মহাকাশে থাকা স্যাটেলাইট থেকে প্রাণীদের চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করা যাবে।

এই গবেষণা শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাসে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এর মাধ্যমে পশুদের মধ্যে রোগ ছড়ানো, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও প্রাণীদের পরিযানের ধরন সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।

প্রকল্পের প্রধান গবেষক মার্টিন উইকেলস্কি দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘প্রাণীরা কীভাবে আগাম জানতে পারে দুর্যোগ আসছে, তা আমরা এখনো জানি না। তবে তারা জানে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য মহাকাশে ছয়টি স্যাটেলাইটের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করা। এই নেটওয়ার্কের সাহায্যে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রাণীর চলাফেরা, স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি প্রাণীরা কীভাবে ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক ঘটনার প্রতি সাড়া দেয়, তা আমরা জানতে পারব।’

পশুরা কেন এমন আচরণ করে তা এখনো অস্পষ্ট। উইকেলস্কি মনে করেন, টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়ায় শিলা থেকে আয়ন নির্গত হয়ে বাতাসে মিশতে পারে, যা প্রাণীদের আচরণে প্রভাব ফেলতে পারে।

ট্যাগিং প্রযুক্তির কারণে এখন প্রাণীদের আচরণ পর্যবেক্ষণ অনেক সহজ হয়েছে। ক্ষুদ্র ডিজিটাল ট্রান্সমিটারের সাহায্যে তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, বন্য শূকরের কানে লাগানো একটি ইলেকট্রনিক ট্যাগের মাধ্যমে গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, অত্যন্ত সংক্রামক আফ্রিকান সোয়াইন ফিভার নামের রোগটি কীভাবে দ্রুতগতিতে গৃহপালিত শূকরে ছড়িয়ে পড়ছে।একইভাবে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাণীদের অভ্যাসগত পরিবর্তন ও দীর্ঘ পরিসরের অভিবাসনও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন ফর অ্যানিমেল রিসার্চ ইউজিং স্পেস (ইকারাস) প্রকল্পটি ২০২৩ সালে রাশিয়ার সহযোগিতায় চালু হওয়ার কথা ছিল। তবে ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের কারণে তা বিলম্বিত হয়। বর্তমানে নতুন একটি ছোট উপগ্রহ নির্মাণ করা হয়েছে, যা আগামী বছর উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত।

রোগ সারাবে কৃত্রিম মস্তিষ্ক

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৮ পিএম
আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫০ পিএম
রোগ সারাবে কৃত্রিম মস্তিষ্ক
নাসার নভোচারী মাইক ব্যারট আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে কৃত্রিম মস্তিষ্কের অর্গানয়েড বৃদ্ধির কাজ করছেন। ছবি: নাসা

যারা আলঝেইমার, পারকিনসনস ও মেরুদণ্ডের আঘাতজনিত রোগে ভুগছেন, তাদের জন্য সুখবর রয়েছে। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র-সম্পর্কিত এই জটিল রোগ তিনটির চিকিৎসায় এখনো কার্যকর কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। তবে গবেষকরা একটি কৃত্রিম মস্তিষ্ক তৈরির ব্যাপারে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছেন। যদি তারা এ ক্ষেত্রে পুরোপুরি সফলতা পান, তাহলে তা ওই রোগ তিনটির চিকিৎসায় বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। 

খবরে বলা হয়েছে, বিজ্ঞানীরা এই তিনটি রোগের নতুন চিকিৎসার একটি উপায় বের করার জন্য কাজ শুরু করেছেন। গবেষণার অংশ হিসেবে তারা মহাকাশে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের (আইএসএস) গবেষণাগারে ক্ষুদ্র মানবমস্তিষ্ক তৈরি করছেন। এরই মধ্যে মাত্র ৭২ ঘণ্টায় মস্তিষ্কের অর্গানয়েড বৃদ্ধির পরীক্ষায় সফলতাও পেয়েছেন তারা। তবে এই কাজটি আমাদের পৃথিবীতে করলে তাতে কয়েক মাস লেগে যেত। 

অর্গানয়েড এমন ধরনের কোষের সমষ্টি, যা কৃত্রিমভাবে মানব-অঙ্গের গঠন ও কার্যকারিতা অনুকরণ করতে পারে। এর মাধ্যমে চিকিৎসার অযোগ্য স্নায়ুবিক রোগ নিরাময়ের জন্য নতুন পরীক্ষা নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। বায়োটেকনোলজি কোম্পানি অ্যাক্সোনিস থেরাপিউটিকস উদ্ভাবিত এই পরীক্ষায় কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের কোষে উপকারী জিন থেরাপির মাধ্যমে নতুন ঘরানার ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের পরিবর্তিত ভাইরাসকে ভাইরাল ভেক্টর বলা হয়। পৃথিবীতে মস্তিষ্কের কোষ বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করার সময় মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু মহাকাশে প্রায় শূন্য মাধ্যাকর্ষণ শক্তি থাকায় সহজেই মানুষের মস্তিষ্কের অর্গানয়েড পরীক্ষা করে নতুন অর্গানয়েড তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন তারা।

অ্যাক্সোনিস থেরাপিউটিকসের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শেন হেগার্টি বলেন, মহাকাশে মাইক্রোগ্র্যাভিটির পরিবেশে গবেষণা করার সুবিধা অনেক। ২০২৩ সালের আগস্টে অ্যাক্সোনিস থেরাপিউটিকস তাদের ভাইরাল ভেক্টর, পরিপক্ব নিউরন ও  স্নায়ুকোষ ধারণকারী অ্যাস্ট্রোসাইট হিমায়িত করে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পাঠায়। সেখানে বায়োসেল নামে একটি মেশিনে সব রাখা হয়, যা কোষ গঠনের পরিবেশ তৈরি করে।
নাসার মহাকাশচারী মাইক ব্যারট মস্তিষ্কের অর্গানয়েড নমুনা নিয়ে এ পরীক্ষা করেন। সেখানে ভাইরাল ভেক্টরের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য বায়োসেল নামে একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এরপর ত্রিমাত্রিক টিস্যুর মাধ্যমে জিন থেরাপিসংক্রান্ত পরীক্ষা করা হয়। এর ফলে মহাকাশে দ্রুত সময়ের মধ্যে মানবমস্তিষ্কের ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি করা গেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর প্রায় ৬ লাখ মানুষ আলঝেইমার ও পারকিনসনস রোগের চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। আর ১৮ হাজারের বেশি মানুষ মেরুদণ্ডের আঘাতজনিত রোগে ভুগে থাকেন। এই গবেষণা তাদের মধ্যে আশার আলো সঞ্চার করেছে। গবেষকরা বলছেন, ইতোমেধ্যে ইঁদুরের ওপর গবেষণাটি প্রযোগ করা হয়েছে। তাতে ভালো ফল পাওয়া গেছে। মানবদেহে গবেষণাটির কার্যকর প্রয়োগ সম্ভব হলে চিকিৎসা জগতে তা আমূল পরিবর্তন আনবে। সূত্র: ডেইলি মেইল

মঙ্গলে আগেই পানি ছিল

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৩ এএম
মঙ্গলে আগেই পানি ছিল
শুরুর দিকে মঙ্গলের লালচে ও শুষ্ক পৃষ্ঠ (বামে), ব্ল্যাকবিউটি উল্কাপিণ্ড (ডানে) যার গবেষণায় মিলেছে পানির অস্তিত্ব। ছবি: নাসা

সৌরজগতের লাল গ্রহ মঙ্গল সম্পর্কে জানতে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। অবস্থানের কারণে এই গ্রহের অনেক স্বতন্ত্র রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ক্লোরিন, ফসফরাস ও সালফারের মতো তুলনামূলক কম ফুটন্ত বিন্দুসহ উপাদানগুলো পৃথিবীর তুলনায় মঙ্গলে অনেক বেশি বিদ্যমান।

অতীতে মঙ্গলের পরিবেশ কেমন ছিল, তা জানার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছেন বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী মঙ্গল গ্রহ থেকে ছিটকে পড়া উল্কাপিণ্ড এনডব্লিউএ৭০৩৪-এর নমুনা বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন, অতীতের কোনো একসময়ে মঙ্গল গ্রহে গরম পানি ছিল। সেটি তাদের ভাষায় ২০০ কোটি বছরের বেশি আগে। 

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, ব্ল্যাকবিউটি নামে পরিচিত উল্কাপিণ্ডটি ২০১১ সালে সাহারা মরুভূমিতে পাওয়া গেছে। ৪৪৩ বছরের পুরোনো এই উল্কাপিণ্ড মহাজাগতিক কোনো সংঘর্ষের কারণে মঙ্গল গ্রহ থেকে পৃথিবীতে ছিটকে পড়েছে বলে ধারণা করা হয়। উল্কাপিণ্ডের জিরকন নমুনা বিশ্লেষণ করে পানির রাসায়নিকের সন্ধান পাওয়া গেছে। আর এই রাসায়নিকের উপস্থিতি ইঙ্গিত করে যে, মঙ্গল গ্রহে একসময় গরম পানি ছিল। 

বিজ্ঞানীদের মতে, ভূতাপীয় বা হাইড্রোথার্মাল সিস্টেম জীবন বিকাশের জন্য অত্যাবশ্যক। পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশের জন্য শুরুতে এই সিস্টেম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। পৃথিবীর মতো বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদান মঙ্গল গ্রহের ভূত্বক গঠনের সময়ও ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কার্টিনের স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেসের বিজ্ঞানী অ্যারন ক্যাভোসি বলেন, ‘এই আবিষ্কার মঙ্গল গ্রহের প্রাথমিক হাইড্রোথার্মাল সিস্টেম সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিয়েছে। এর মাধ্যমে মঙ্গল গ্রহ অতীতে বাসযোগ্য ছিল কি না, তা বোঝার জন্য নতুন তথ্য পাওয়া যাবে। মঙ্গল গ্রহে গরম পানির প্রাথমিক প্রমাণ শনাক্ত করতে ন্যানো- স্কেল জিওকেমিস্ট্রি ব্যবহার করা হয়েছে।’

বিজ্ঞানীরা লোহা, অ্যালুমিনিয়াম, ইট্রিয়াম, সোডিয়ামসহ জিরকন কণার প্রয়োজনীয় উপাদান শনাক্ত করতে ন্যানো- স্কেল ইমেজিং ও স্পেকট্রোস্কোপি ব্যবহার করেন। এসব উপাদানের প্যাটার্ন থেকেই ধারণা করা হচ্ছে, মঙ্গল গ্রহের প্রথম দিকে ভূত্বকে পানি ছিল। 

সূত্র: লাইভ সায়েন্স ও আর্থ ডট কম