ঢাকা ৫ চৈত্র ১৪৩১, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
English

চীনে বিশ্বের বৃহত্তম স্বর্ণের খনির সন্ধান

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৩ এএম
চীনে বিশ্বের বৃহত্তম স্বর্ণের খনির সন্ধান
চীনের ওয়াংগু সোনার খনিতে বিশ্বের বৃহত্তম স্বর্ণের মজুত আবিষ্কৃত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

চীনের হুনান প্রদেশে ওয়াংগু স্বর্ণের খনিতে বিশ্বের বৃহত্তম স্বর্ণের মজুত আবিষ্কৃত হয়েছে। মজুত করা স্বর্ণের আনুমানিক মূল্য ৮ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে হুনানের জিওলজিক্যাল ব্যুরো জানিয়েছে, এই খনি থেকে ১ হাজার টনেরও বেশি স্বর্ণ আহরণের সম্ভাবনা রয়েছে। এই স্বর্ণের খনি প্রদেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পিংজিয়াং কাউন্টিতে অবস্থিত।

জিওলজিক্যাল ব্যুরো জানিয়েছে, প্রায় এক মাইল গভীরে ৪০টি গোল্ড ভেইনস চিহ্নিত করা হয়েছে। গোল্ড ভেইনস হচ্ছে লম্বা, সরু খাঁজ যাতে স্বর্ণ জমা থাকে। ভূতত্ত্ববিদরা মনে করছেন, শুধু এই শিলা স্তরগুলোয় ৩০০ টন স্বর্ণ রয়েছে। গভীর স্তরগুলোতেও আরও বেশি স্বর্ণ মজুত থাকতে পারে। জিওলজিক্যাল ব্যুরোর ভূতত্ত্ববিদ ও খনিজ অনুসন্ধানকারী চেন রুলিন এমনটাই জানিয়েছেন ‘খনি থেকে উদ্ধার করা শিলার বেশ কয়েকটি নমুনায় দৃশ্যমান স্বর্ণ পাওয়া গেছে।’

এই স্থানের আশপাশে পরীক্ষামূলক ড্রিলিংয়ে আরও স্বর্ণ পাওয়া গেছে, যা এই মজুত আরও বড় হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সব মিলিয়ে এই স্থান থেকে প্রায় ১ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি মূল্যবান ধাতু পাওয়া যেতে পারে। চীনা মুদ্রায় এর বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৬০ হাজার কোটি ইউয়ান বা ৮ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার। 
গবেষকদের ধারণা যদি সঠিক হয়, তাহলে চীনের হুনান প্রদেশে আবিষ্কৃত এ খনিটি মজুতের দিক থেকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বর্ণের খনি হতে যাচ্ছে। এই খনির সন্ধান পাওয়ার আগ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার সাউথ ডিপ গোল্ড মাইন বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বর্ণের খনি হিসেবে পরিচিত ছিল। খনিটিতে সর্বোচ্চ ৯৩০ টন স্বর্ণ পাওয়া গেছে।

হুনান প্রভিন্সিয়াল জিওলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের মতে, এই আবিষ্কার চীনের খনিজ সম্পদ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া এর মাধ্যমে বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যে দেশটির স্বর্ণের চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে।

এই আবিষ্কারের পর বিশ্বব্যাপী স্বর্ণের দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে দীর্ঘমেয়াদি বাজার পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। চীনে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে স্বর্ণের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই নতুন মজুত সেই চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে।

ওয়াংগু স্বর্ণক্ষেত্রটি চীনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খনি এলাকা। এই এলাকার খনিজ অনুসন্ধানের জন্য চীন সরকার প্রায় ১০০ মিলিয়ন ইউয়ান বিনিয়োগ করেছে। ২০২৩ সালের হিসাবে চীন বিশ্বের স্বর্ণের প্রায় ১ দশমাংশ উৎপাদন করেছে।

চীন খনি শিল্পে বৈশ্বিক নেতৃত্ব ধরে রেখেছে। প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব খনন পদ্ধতিতে দেশটির আধিপত্য ক্রমে বাড়ছে। নতুন প্রজন্মের ব্যাটারি ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় মূল্যবান ধাতুর উৎপাদনে চীন শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। সূত্র: ইনডিপেনডেন্ট

স্ট্রোক ও হৃদরোগ প্রতিরোধে টিকা আবিষ্কারের দাবি চীনা বিজ্ঞানীদের

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:০০ এএম
স্ট্রোক ও হৃদরোগ প্রতিরোধে টিকা আবিষ্কারের দাবি চীনা বিজ্ঞানীদের
স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে নতুন এক ধরনের টিকা আবিষ্কারের দাবি করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। ছবি: সংগৃহীত

স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে নতুন এক ধরনের টিকা আবিষ্কারের দাবি করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। এই টিকা ধমনীতে চর্বিযুক্ত প্ল্যাকের জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করতে সক্ষম। ধমনীর ভেতরে প্ল্যাক জমাট বাঁধার কারণে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হতে পারে, যা স্ট্রোক, অ্যানিউরিজম বা হৃদরোগের কারণ হতে পারে। গবেষকরা আশা করছেন, এই টিকা আবিষ্কার বিশ্বজুড়ে হৃদরোগে মৃত্যুহার কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

ধমনীর ভেতরে চর্বিযুক্ত প্ল্যাক জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকে ‘অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস’ বলা হয়। এতে ধমনীর প্রাচীর শক্ত হয়ে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। বিশ্বব্যাপী হৃদরোগজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে এই রোগকে বিবেচনা করা হয়। নতুন এক গবেষণায় চীনের নানজিং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষকরা জানিয়েছেন, তাদের তৈরি টিকা ইঁদুরের ওপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস প্রতিরোধে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। সম্প্রতি গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার কমিউনিকেশনস’ নামের জার্নালে।

গবেষকরা বলছেন, অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস মূলত একটি প্রদাহজনিত রোগ, যা শরীরের সহজাত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও অ্যান্টিবডি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বর্তমানে ধমনীতে ব্লক ধরা পড়লে সাধারণত এনজিওপ্লাস্টি বা স্টেন্টের মতো অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ধমনীর ব্লক অপসারণ করা হয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে ধারণা করা হচ্ছে, টিকার মাধ্যমে এই রোগের প্রতিরোধ সম্ভব।

গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, এই টিকা তৈরিতে ‘পি২১০’ নামক একটি বিশেষ প্রোটিন ব্যবহার করা হয়েছে, যা প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া রোধ করতে ও অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের অগ্রগতি থামাতে সহায়তা করে। পি২১০ অ্যান্টিজেনকে আয়রন অক্সাইড ন্যানোপার্টিকেলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে অ্যাডজুভেন্টকে অন্য ন্যানোপার্টিকেলের সঙ্গে যুক্ত করে টিকা তৈরি করা হয়েছে।

এই ককটেল টিকাটি ইঁদুরের শরীরে প্রবেশের পর অ্যান্টিজেন ও অ্যাডজুভেন্ট গ্রহণে সাহায্য করে, যা রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে তোলে। এতে ইমিউন সিস্টেমের ‘ডেন্ড্রিটিক সেল’ নামক কোষ সক্রিয় হয় এবং শরীরে পি২১০ প্রোটিনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, এই টিকা উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা ইঁদুরের দেহে প্ল্যাক জমাট বাঁধার গতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। গবেষকরা মনে করছেন, এই টিকা প্রদাহজনিত অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তবে টিকাটি কতদিন পর্যন্ত ইঁদুরের শরীরে কার্যকর থাকে, তা জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন। মানুষের শরীরে এটি কার্যকর কি না তা নিশ্চিত হতে আরও বিস্তৃত গবেষণা ও পরীক্ষা প্রয়োজন।

চীনের নতুন স্প্যাই স্যাটেলাইট

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৪:০৩ পিএম
চীনের নতুন স্প্যাই স্যাটেলাইট
ছবি: সংগৃহীত

চীনের বিজ্ঞানীরা এমন একটি স্যাটেলাইট তৈরি করেছে, যা লেজার-ইমেজিং প্রযুক্তির সাহায্যে ৬০ মাইলেরও (১০০ কিলোমিটার) বেশি দূর থেকে মানুষের মুখের খুঁটিনাটি চিত্র ধারণ করতে সক্ষম। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই নতুন প্রযুক্তি স্প্যাই ক্যামেরা এবং প্রচলিত টেলিস্কোপের তুলনায় ১০০ গুণ বা তার থেকেও উন্নত।

নতুন এই লেজার-ইমেজিং প্রযুক্তি ৬০ মাইলেরও বেশি দূর থেকে মিলিমিটার আকারের বস্তুর চিত্র ধারণ করতে সক্ষম। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে অপারেটররা বিদেশি স্যাটেলাইটের ওপর নজরদারি করতে পারবে, যা আগে কখনো সম্ভব হয়নি।

চীনের একাডেমি অব সায়েন্সেসের অ্যারোস্পেস ইনফরমেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকরা ‘চাইনিজ জার্নাল অব লেজার্স’-এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছেন।

নতুন এই সিস্টেমটি সিনথেটিক অ্যাপারচার লিডার (এসএএল) নামের প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যা এক ধরনের লেজার রাডার। এটি দ্বি-মাত্রিক বা ত্রি-মাত্রিক ছবি তৈরি করতে সক্ষম। এসএএল অন্য বিম-স্ক্যানিং রাডার ইমেজিং সিস্টেমের তুলনায় আরও সূক্ষ্ম রেজল্যুশনের ছবি সরবরাহ করতে স্যাটেলাইটের মতো চলমান বস্তুর গতির ওপর নির্ভর করে। আগের এসএআর সিস্টেমগুলোতে মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশন ব্যবহার করা হতো, যার তরঙ্গদৈর্ঘ্য দীর্ঘ হওয়ায় ছবির রেজল্যুশন কম ছিল।

তবে এই নতুন সিস্টেমটি অপটিক্যাল তরঙ্গদৈর্ঘ্যে কাজ করে, যার তরঙ্গদৈর্ঘ্য মাইক্রোওয়েভের তুলনায় অনেক ছোট এবং আরও স্পষ্ট ছবি তৈরি করতে সক্ষম। যদিও মাইক্রোওয়েভ দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের কারণে বস্তুর ভেতর পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে, এসএএল সিস্টেম এটি করতে সক্ষম নয়।

গবেষকরা চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কুইংহাই হ্রদের ওপর নতুন এই প্রযুক্তির পরীক্ষা চালান। পরীক্ষায় লিডার সিস্টেমটি ১০১ দশমিক ৮ কিলোমিটার (৬৩.৩ মাইল) দূরে রাখা প্রতিফলক প্রিজমের সারি লক্ষ্য করে। এই পরীক্ষায় সিস্টেমটি ১ দশমিক ৭ মিলিমিটার (০.০৭ ইঞ্চি) পর্যন্ত ছোট চিত্র শনাক্ত করতে সক্ষম হয় এবং দূরত্ব মাপতে ১৫ দশমিক ৬ মিলিমিটার (০.৬১ ইঞ্চি) দূরত্বের মধ্যে পরিমাপ করতে সক্ষম হয়েছে।

আগের কিছু পরীক্ষার তুলনায় এটি অনেক বেশি কার্যকর। ২০১১ সালে ডিফেন্স ফার্ম লকহিড মার্টিনের একটি পরীক্ষা মাত্র ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার (১ মাইল) দূর থেকে ০.৭৯ ইঞ্চি (২ সেন্টিমিটার) রেজল্যুশন অর্জন করতে সক্ষম হয়। এ ছাড়া চীনের আরেকটি পরীক্ষায় ৬ দশমিক ৯ কিলোমিটার (৪.৩ মাইল) দূর থেকে ৫ সেন্টিমিটার (১.৯৭ ইঞ্চি) রেজল্যুশন অর্জন করে।

এই নতুন উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে গবেষকরা লিডার সিস্টেমের লেজার বিমকে ৪x৪ মাইক্রো-লেন্স অ্যারের মাধ্যমে বিভক্ত করেছেন। এর ফলে সিস্টেমটির অপটিক্যাল অ্যাপারচার বা আলোর প্রবেশের পরিমাণ ১৭ দশমিক ২ মিলিমিটার থেকে ৬৮ দশমিক ৮ মিলিমিটার (০.৬৮ ইঞ্চি থেকে ২.৭১ ইঞ্চি) পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি কার্যকরভাবে ফিল্ড অব ভিশন বনাম অ্যাপারচারের আকারের মধ্যকার সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে সহায়তা করেছে।

তবে এটি উল্লেখযোগ্য যে, এই পরীক্ষা আদর্শ আবহাওয়া ও বায়ুমণ্ডলীয় পরিস্থিতিতে পরিচালিত হয়েছে। মেঘলা আবহাওয়া বা দৃষ্টিশক্তি বিঘ্নিত হওয়ার মতো পরিস্থিতিতে সিস্টেমটির নির্ভুলতা ও কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হতে পারে।

কলম্বিয়ার রেইনফরেস্টে বিরল প্রজাতির বিছে আবিষ্কার

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ১১:১০ এএম
কলম্বিয়ার রেইনফরেস্টে বিরল প্রজাতির বিছে আবিষ্কার
নতুন প্রজাতির বিছে ‘টিটিয়াস অ্যাকিলিস’। ছবি: সংগৃহীত

কলম্বিয়ার রেইনফরেস্টে বিজ্ঞানীরা একটি বিরল প্রজাতির বিছে আবিষ্কার করেছেন, যা কয়েকগুণ দূরত্বে বিষ ছুড়তে পারে। নতুন এই প্রজাতির নাম ‘টিটিয়াস অ্যাকিলিস’। সম্প্রতি ‘জুলজিক্যাল জার্নাল অব দ্য লিনিয়ান সোসাইটি’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় এই বিছের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এটি প্রায় ৩৬ সেন্টিমিটার (১ ফুট) দূরত্বে বিষ ছুড়তে পারে। এটি শিকারি প্রাণীর চোখে বিষ নিক্ষেপ করে আঘাত করতে সক্ষম।

গবেষণার প্রধান লেখক লিও ল্যাবোরিউক্স জানিয়েছেন, শিকারিদের প্রতিহত করতে এই বিষ ছুড়ে মারার কৌশল বিছের মধ্যে বিকশিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বিছেটি দুই ধরনের পদ্ধতিতে বিষ ছুড়ে মারে।
প্রথমত এটি স্পিটিং কোবরার মতো জোরালোভাবে বিষ স্প্রে করে। দ্বিতীয়ত এটি লেজের দ্রুত নড়াচড়ার মাধ্যমে বিষের ফোঁটা ছুড়ে দেয়।

এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৫০০ প্রজাতির বিছের মধ্যে মাত্র দুটি প্রজাতি বিষ স্প্রে করতে সক্ষম বলে নথিভুক্ত করা হয়েছে। একটি প্রজাতি উত্তর আমেরিকায় ও অন্য প্রজাতিটি আফ্রিকায় শনাক্ত হয়েছিল। দক্ষিণ আমেরিকায় এই ধরনের প্রজাতি এই প্রথম আবিষ্কৃত হলো।

আবিষ্কারের পেছনের গল্প
জার্মানির লুডভিগ ম্যাক্সিমিলিয়ান ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখের মাস্টার্সের ছাত্র ল্যাবোরিউক্সের প্রথমে কলম্বিয়ার সেন্ট্রাল রেইনফরেস্টে বিছে নিয়ে গবেষণা করার পরিকল্পনা ছিল না। মথ ধরার প্রাথমিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে, তিনি বিছে নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তার পাত্রে ধরা পড়া বিছে বিষ স্প্রে করে। পরে ল্যাব পরীক্ষায় ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটি সত্যিই বিষের ফোঁটা স্প্রে করছে।

গবেষকদের ধারণা, এই বিষ মূলত শিকার ধরার জন্য নয়; বরং ইঁদুরের মতো শিকারিদের প্রতিহত করার অভিযোজন হিসেবে বিকশিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, টিটিয়াস অ্যাকিলিস প্রজাতির বিছেটি সাধারণত কম ক্ষতিকর ‘প্রিভেনম’ ব্যবহার করে স্প্রে করে। তবে যখন বিপদ বেশি হয় তখন এটি আরও শক্তিশালী ও বিষাক্ত তরল ছোড়ে।

গবেষক ল্যাবোরিউক্স বলেছেন, ‘এই প্রজাতি বিষ স্প্রে করার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকভাবে বেশি পরিমাণ প্রিভেনম ব্যবহার করে, যা অন্যান্য বিষ স্প্রে করা বিছার তুলনায় বেশ ব্যতিক্রমী।’ তবে গবেষকরা এখনো নিশ্চিত নন যে, এই বিষ মানুষের জন্য কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে। আফ্রিকান প্রজাতি ‘প্যারাবুথাস ট্রান্সভালিকা’-এর বিষ মানুষের চোখে লাগলে সাময়িক অন্ধত্ব সৃষ্টি করতে পারে। তবে টিটিয়াস অ্যাকিলিসের বিষের প্রভাব সম্পর্কে অস্পষ্টতা রয়েছে। এ নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা চলছে।

ম্যামথ ফিরিয়ে আনতে বিজ্ঞানীরা তৈরি করলেন ‘উলি ইঁদুর’

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৫, ১০:০৫ এএম
আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৫, ০১:০০ পিএম
ম্যামথ ফিরিয়ে আনতে বিজ্ঞানীরা তৈরি করলেন ‘উলি ইঁদুর’
বিজ্ঞানীরা তৈরি করলেন ‘উলি ইঁদুর’। ছবি: সংগৃহীত

বিলুপ্ত ম্যামথ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে নতুন সাফল্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি কলোসাল বায়োসায়েন্সেসের বিজ্ঞানীরা এশিয়ান হাতিকে জেনেটিক্যালি পরিবর্তন করে ম্যামথের বৈশিষ্ট্য যুক্ত করার মাধ্যমে প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীটিকে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছেন।

গবেষণার অংশ হিসেবে ম্যামথের জিনগত বৈশিষ্ট্য এশিয়ান হাতির দেহে প্রবেশ করানোর আগে তারা ইঁদুরের দেহে একই পদ্ধতি প্রয়োগ করে তৈরি করেছেন ‘উলি ইঁদুর’। এই ইঁদুরগুলোর লোমের ধরন, রঙের ক্ষেত্রে ম্যামথের মতো ঠাণ্ডা সহনশীল বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে। তারা আশা করছেন, ২০২৮ সালের মধ্যে জেনেটিক্যালি পরিবর্তিত প্রথম ম্যামথ শাবক জন্ম নেবে।

কলোসালের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী বেন ল্যাম জানিয়েছেন, তারা প্রাচীন ম্যামথের জিনোম বিশ্লেষণ করে এশিয়ান হাতিদের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যাতে তাদের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করা যায়। এরই মধ্যে তারা হাতির কোষের জিনোম এডিটিং প্রযুক্তি শুরু করেছেন।

সম্প্রতি তারা সুস্থ ও জেনেটিক্যালি পরিবর্তিত ইঁদুর তৈরি করেছেন, যাদের শরীরে উলি লোমের মতো ঠাণ্ডা সহনশীল বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে। ল্যাম বলেন, ‘এটি ম্যামথ ফিরিয়ে আনার গতি বাড়াবে না, তবে আমাদের গবেষণার বৈধতা প্রমাণের জন্য এটি একটি বড় পদক্ষেপ।’

গবেষণায় জিন এডিটিংয়ের বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে, যার মাধ্যমে নিষিক্ত ইঁদুরের ডিমকে জেনেটিক্যালি পরিবর্তন করেছেন বিজ্ঞানীরা। অথবা ভ্রূণীয় ইঁদুরের স্টেম সেল পরিবর্তন করে ইঁদুরের ভ্রূণে ইনজেক্ট করা হয়েছে। এর পর সারোগেট মায়ের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

লোমের রং, টেক্সচার, দৈর্ঘ্য, বিন্যাস ও গঠন সম্পর্কিত নয়টি জিন পরিবর্তন করার লক্ষ্য ছিল বিজ্ঞানীদের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা এমন জিন বেছে নিয়েছেন, যা সাধারণত ইঁদুরের লোমের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে। এই পরিবর্তনের ফলে ইঁদুরগুলোর লোম ম্যামথের মতো ও সোনালি রঙের হয়েছে।

গবেষকরা মনে করেন, শুধু লোমযুক্ত চেহারা নয়, বরং ঠাণ্ডা সহনশীলতা বাড়ানোর জন্য ম্যামথের আরও বেশ কিছু জিন পরিবর্তন করতে হবে। এ জন্য তারা ফ্যাট মেটাবলিজম-সংশ্লিষ্ট জিনও পরিবর্তন করেছেন, যা ঠাণ্ডা পরিবেশে শরীরের সঞ্চিত চর্বি কাজে লাগানোর ক্ষমতা বাড়াতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ম্যামথের আচরণগত ও শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্য পুরোপুরি বুঝতে না পারলে শুধু জিন পরিবর্তন করাই যথেষ্ট নয়। 

লন্ডনের ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের স্টেম সেল গবেষক রবিন লাভেল-ব্যাজ বলেন, ‘কেবল লোম পরিবর্তন করলে ম্যামথ তৈরি হয় না, তাদের আসল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য জটিল জিনগত উপাদান দরকার।’  
এই গবেষণার যৌক্তিকতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিলুপ্ত ম্যামথ ফিরিয়ে আনার চেয়ে বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতিগুলোর সংরক্ষণে বিনিয়োগ করা আরও কার্যকর হতে পারে।  

শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. টরি হেরিজ বলেন, ‘হাতিদের ম্যামথের মতো করার জন্য অনেক জটিল জিনগত পরিবর্তন প্রয়োজন, যা এখনো পুরোপুরি চিহ্নিত হয়নি।’  

তবে কলোসাল বায়োসায়েন্সেসের গবেষকরা মনে করেন, এই গবেষণা শুধু ম্যামথ ফিরিয়ে আনার জন্য নয়, বরং জিন এডিটিং প্রযুক্তির উন্নয়ন ও নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সম্ভাবনা তৈরির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।  

যদিও উলযুক্ত ইঁদুর তৈরি করা সম্ভব হয়েছে, ম্যামথ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এখনো বহু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, এটি এখনো বাস্তবায়নের পর্যায়ে আসেনি এবং ম্যামথের পুনর্জন্ম শিগগিরই সম্ভব হবে না। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

খাবারের স্বাদ নেওয়া যাবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৫ এএম
খাবারের স্বাদ নেওয়া যাবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে
ই-টেস্ট নামের ডিভাইস মিষ্টি, নোনতা, টক, তেতো ও উমামি পাঁচটি মৌলিক স্বাদের সংমিশ্রণ তৈরি করে ব্যবহারকারীর মুখে স্বাদের অনুভূতি জাগাতে সক্ষম। ছবি: সংগৃহীত

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির (ভিআর) জগতে নতুন সংযোজন করেছেন একদল বিজ্ঞানী। এবার শুধু দেখা বা শোনা নয়, স্বাদও নেওয়া যাবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) পরিবেশে থাকা অবস্থায়। এমনই এক যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ই-টেস্ট’। এটি মিষ্টি, নোনতা, টক, তেতো ও উমামি এই পাঁচটি মৌলিক স্বাদের সংমিশ্রণ তৈরি করে ব্যবহারকারীর মুখে স্বাদের অনুভূতি জাগাতে সক্ষম। উমামি হলো একটি জাপানি শব্দ, যার অর্থ ‘সুস্বাদু স্বাদ’। এটি মিষ্টি, টক, নোনতা ও তেতো এই চার স্বাদের মতো একটি মৌলিক স্বাদ হিসেবে বিবেচিত হয়। উমামি স্বাদ সাধারণত মাংস, মাশরুম, টমেটো, পনির ও সয়া সসের মতো খাবারগুলোতে পাওয়া যায়।

এই উদ্ভাবন ভিআর প্রযুক্তির বর্তমান সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। বর্তমানে ভিআর প্রযুক্তি ভিজ্যুয়াল অডিওর মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে ই-টেস্ট যন্ত্রটি স্বাদ গ্রহণের অভিজ্ঞতাও যোগ করবে ভিআর পরিবেশে। গবেষক দলের প্রধান ও ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জিংহুয়া লি বলেন, ‘বর্তমান ভিআর এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর) প্রযুক্তিতে ঘ্রাণ ও স্বাদের মতো রাসায়নিক অনুভূতি তুলনামূলকভাবে উপেক্ষিত ছিল। ই-টেস্ট সেই শূন্যতা পূরণ করতে পারে। আমরা পরবর্তী প্রজন্মের সিস্টেমে তৈরি করেছি। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা ভবিষ্যতে ভার্চুয়াল জগৎকে আরও বাস্তবসম্মত করে তুলবে।

কীভাবে কাজ করে ই-টেস্ট?
ই-টেস্ট ডিভাইসের প্রোটোটাইপটি দেখতে একটি ছোট কিউবের মতো, যা একটি প্লাস্টিক স্ট্রিপের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এতে থাকা বৈদ্যুতিক সেন্সর ভার্চুয়াল রিয়েলিটি পরিবেশে খাবার শনাক্ত করতে পারে।  এর পর প্লাস্টিকের স্ট্রিপের মাধ্যমে খাদ্য-গ্রেডের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করে সেই স্বাদ তৈরি করে। মানুষের ওপর পরীক্ষার সময় কেক, কফি, মাছের স্যুপ, ভাজা ডিম ও লেবুর শরবতের মতো স্বাদ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া স্বাদের তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ করারও ক্ষমতা রয়েছে ডিভাইসটির। এর আগে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে স্বাদ তৈরি করার জন্য ললিপপ আকৃতির ডিভাইস বা পরিবর্তিত চামচ ব্যবহার করা হয়েছে। তবে সেগুলো এত বিস্তৃত পরিসরের স্বাদ তৈরি করতে পারেনি। 

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
গবেষকরা এখন ডিভাইসটি আরও ছোট ও উন্নত করতে কাজ করছেন, যেন ই-টেস্ট ডিভাইস ব্যবহার করে নতুন ধরনের ভিআর অভিজ্ঞতা তৈরি করা যায়। ভিআর শপিং ও ভার্চুয়াল রেস্টুরেন্টের মতো ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তির প্রয়োগ হতে পারে।

জিংহুয়া লি বলেন, ‘এই প্রযুক্তি মানুষকে ভার্চুয়াল স্পেসে সংযুক্ত করতে সাহায্য করবে। এটি মেটাভার্সের একটি ছোট অংশ হওয়ার দিকে প্রথম পদক্ষেপ।’

‘এ সেন্সর-অ্যাকচুয়েটর-কাপলড গাস্টেটরি ইন্টারফেস কেমিক্যালি কানেক্টিং ভার্চুয়াল অ্যান্ড রিয়েল এনভায়রনমেন্টস ফর রিমোট টেস্টিং’ শিরোনামের এক গবেষণাপত্রে ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ জার্নালে ই-টেস্ট ডিভাইস সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণা প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। এই উদ্ভাবন ভবিষ্যতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অভিজ্ঞতাকে আরও বাস্তবসম্মত ও সমৃদ্ধ করতে পারে বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র: দ্য ইনডিপেনডেন্ট