
গণিত ক্লাসে পিথাগোরাসের উপপাদ্য নাম শুনে হয়তো অনেকে বিরক্ত হয়েছেন, আবার কেউ বা প্রশংসা করেছেন। তবে যে সমীকরণটি (a2+b2=c2) পিথাগোরাসের উপপাদ্য নামে পরিচিত। সেটি আসলে প্রাচীন গ্রিসের গণিতবিদ পিথাগোরাসের নিজের আবিষ্কার ছিল না। এটি বহু বছরের পুরোনো।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা মেসোপটেমিয়ায় খুঁজে পাওয়া একটি মাটির ফলকে এই উপপাদ্যের ব্যবহার খুঁজে পেয়েছেন। এই ফলকটির নাম ‘আইএম ৬৭১১৮’। খ্রিষ্টপূর্ব ১৭৭০ সালের এই ফলক সম্ভবত শিক্ষাদানের কাজে ব্যবহৃত হতো। পিথাগোরাসের জন্ম খ্রিষ্টপূর্ব ৫৭০ সালের, অর্থাৎ এই ফলক পিথাগোরাসের জন্মেরও ১০০০ বছরেরও বেশি পুরোনো।
এ ছাড়া খ্রিষ্টপূর্ব ১৮০০-১৬০০ অব্দের আরও একটি ফলক পাওয়া গেছে, যেখানে একটি বর্গের ভেতরে ত্রিভুজসহ একটি বর্গক্ষেত্র দেখা যায়। প্রাচীন ব্যাবিলীয়দের গণনা পদ্ধতি ছিল ৬০ ভিত্তিক। এই ফলকের চিহ্নগুলো সেই পদ্ধতির সাহায্যে ব্যাখ্যা করলে দেখা যায়, ওই সময়ের গণিতবিদরা পিথাগোরাসের উপপাদ্য (যদিও তখন এ নাম ছিল না) এবং আরও কিছু জটিল গাণিতিক ধারণার সঙ্গে পরিচিত ছিলেন।
গণিতবিদ ব্রুস র্যাটনার তার গবেষণায় লিখেছেন, ‘ব্যাবিলনীয়রা জানতেন বর্গক্ষেত্রের কর্ণ ও বাহুর মধ্যে সম্পর্ক। এটি সম্ভবত প্রথম অমূলদ সংখ্যা, যা তাদের জানা ছিল। তবে এটি বোঝায়, তারা পিথাগোরাসের তত্ত্বও জানত।’
তত্ত্বের নাম পিথাগোরাসের সঙ্গে যুক্ত হলো কীভাবে?
পিথাগোরাসের কোনো আসল লেখা এখনো টিকে নেই। তার সম্পর্কে যা জানা গেছে, তা মূলত তার স্থাপিত বিদ্যালয় ‘সেমিসার্কেল অব পিথাগোরাস’ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে। বিদ্যালয়ের সদস্যরা আবিষ্কৃত জ্ঞান মৌখিকভাবে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতেন।
র্যাটনার বলেন, ‘লেখার উপকরণের অভাবে জ্ঞান মৌখিকভাবে ছড়ানো হতো। এ ছাড়া পিথাগোরাসের প্রতি শ্রদ্ধার কারণে অনেক আবিষ্কার হিসেবে তার নামে চালিয়ে দিতেন। এভাবে ‘পিথাগোরাসের তত্ত্ব’ নামটি এসেছে।’
তত্ত্বের জনপ্রিয়তা
যদিও তত্ত্বটি পিথাগোরাসের আবিষ্কার ছিল না, তবে তার বিদ্যালয় এটিকে জনপ্রিয় করে তোলে। এ কারণে এটি আজও তার নামের সঙ্গে পরিচিত। এই গবেষণার ফলাফল থেকে প্রমাণিত হয়, প্রাচীন ব্যাবিলনীয় গণিত আধুনিক গণিতের অনেক ভিত্তি তৈরি করেছিল, যা দীর্ঘকাল ধরে আমাদের অজানা ছিল। তথ্য সূত্র: আইএফএল সায়েন্স।