
টেলিগ্রাফ গাছ বা ডেসমোডিয়াম জাইরান্স এক অদ্ভুত উদ্ভিদ, যা নাচের গাছ বা ড্যান্সিং প্ল্যান্ট নামেও পরিচিত। কারণ এ উদ্ভিদ অদ্ভুতভাবে নড়াচড়া করে। এর বড় প্যাডেল আকৃতির পাতার গোড়ায় ছোট ছোট পত্রক বা লিফলেট থাকে। দিনের বেলায় এই ছোট পত্রকগুলো কোনো সুস্পষ্ট কারণ ছাড়া ক্রমাগত বৃত্তাকারে নড়াচড়া করতে থাকে।
কীভাবে নড়ে টেলিগ্রাফ গাছের পাতা?
এই অদ্ভুত নড়াচড়া বিশেষ মোটর কোষের কারণে হয়, যা লিফলেটগুলোর গোড়ায় অবস্থিত। এই কোষগুলো পানির পরিমাণ কমানো বা বাড়ানোর মাধ্যমে প্রসারিত ও সংকুচিত হয়, যার ফলে পাতা নড়ে। আলো উজ্জ্বল হলে বা তাপমাত্রা বাড়লে এই নড়াচড়ার গতি আরও তীব্র হয়।
অবাক করা বিষয় হলো, ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই লিফলেটগুলো প্রায় ৯০ সেকেন্ডে একবার সম্পূর্ণ ঘূর্ণন সম্পন্ন করতে পারে।
ডারউইনের বিস্ময়
১৮৮১ সালে বিখ্যাত বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন এই উদ্ভিদকে ‘ভেজিটেবল ওয়ান্ডার’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তবে তিনি একে নিয়ে বেশ রহস্যের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ডারউইন বলেছিলেন, ‘কেউই মনে করে না যে এই পত্রকগুলোর দ্রুত নড়াচড়া গাছটির কোনো কাজে লাগে। তবে কেন এগুলো এমন আচরণ করে, তা পুরোপুরি অজানা।’
নড়াচড়ার কারণ কী?
ডারউইনের পর থেকে বিজ্ঞানীরা অনেক ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে লিফলেটগুলোর নড়াচড়া হয়তো প্রধান পাতাগুলোকে সর্বোত্তম আলো খুঁজে পেতে সাহায্য করার জন্য সূর্যের গতি অনুসরণ করা বা প্রজাপতিদের ডিম পাড়া থেকে বিরত রাখা। পোকামাকড়ের ডানার ঝাপ্টানোর অনুকরণ করে এমনভাবে দেখানো যেন উদ্ভিদটি ইতোমধ্যেই দখল হয়ে আছে বা কেবল পোকামাকড়কে উদ্ভিদটি খাওয়া থেকে বিরত রাখা। তবে এটি এখনো একটি রহস্য।
প্রকৃতির বিস্ময়
টেলিগ্রাফ গাছ প্রকৃতির এক অনন্য উদাহরণ, যা শুধু বিজ্ঞানীদের নয়, সাধারণ মানুষকেও অবাক করে। এর অদ্ভুত নাচ এখনো গবেষণার বিষয়বস্তু এবং আরও নতুন তথ্য উদ্ঘাটনের অপেক্ষায় রয়েছে।
প্রকৃতির এমন বিস্ময়কর আচরণ আমাদের চারপাশের জীবজগৎ সম্পর্কে আরও জানার আগ্রহ বাড়ায়। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে আরও আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে এই রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান