ঢাকা ৪ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

স্ট্রোক ও হৃদরোগ প্রতিরোধে টিকা আবিষ্কারের দাবি চীনা বিজ্ঞানীদের

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:০০ এএম
স্ট্রোক ও হৃদরোগ প্রতিরোধে টিকা আবিষ্কারের দাবি চীনা বিজ্ঞানীদের
স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে নতুন এক ধরনের টিকা আবিষ্কারের দাবি করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। ছবি: সংগৃহীত

স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে নতুন এক ধরনের টিকা আবিষ্কারের দাবি করেছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। এই টিকা ধমনীতে চর্বিযুক্ত প্ল্যাকের জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করতে সক্ষম। ধমনীর ভেতরে প্ল্যাক জমাট বাঁধার কারণে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হতে পারে, যা স্ট্রোক, অ্যানিউরিজম বা হৃদরোগের কারণ হতে পারে। গবেষকরা আশা করছেন, এই টিকা আবিষ্কার বিশ্বজুড়ে হৃদরোগে মৃত্যুহার কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

ধমনীর ভেতরে চর্বিযুক্ত প্ল্যাক জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকে ‘অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস’ বলা হয়। এতে ধমনীর প্রাচীর শক্ত হয়ে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। বিশ্বব্যাপী হৃদরোগজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে এই রোগকে বিবেচনা করা হয়। নতুন এক গবেষণায় চীনের নানজিং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষকরা জানিয়েছেন, তাদের তৈরি টিকা ইঁদুরের ওপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস প্রতিরোধে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। সম্প্রতি গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার কমিউনিকেশনস’ নামের জার্নালে।

গবেষকরা বলছেন, অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস মূলত একটি প্রদাহজনিত রোগ, যা শরীরের সহজাত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও অ্যান্টিবডি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বর্তমানে ধমনীতে ব্লক ধরা পড়লে সাধারণত এনজিওপ্লাস্টি বা স্টেন্টের মতো অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ধমনীর ব্লক অপসারণ করা হয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে ধারণা করা হচ্ছে, টিকার মাধ্যমে এই রোগের প্রতিরোধ সম্ভব।

গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, এই টিকা তৈরিতে ‘পি২১০’ নামক একটি বিশেষ প্রোটিন ব্যবহার করা হয়েছে, যা প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া রোধ করতে ও অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের অগ্রগতি থামাতে সহায়তা করে। পি২১০ অ্যান্টিজেনকে আয়রন অক্সাইড ন্যানোপার্টিকেলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে অ্যাডজুভেন্টকে অন্য ন্যানোপার্টিকেলের সঙ্গে যুক্ত করে টিকা তৈরি করা হয়েছে।

এই ককটেল টিকাটি ইঁদুরের শরীরে প্রবেশের পর অ্যান্টিজেন ও অ্যাডজুভেন্ট গ্রহণে সাহায্য করে, যা রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে তোলে। এতে ইমিউন সিস্টেমের ‘ডেন্ড্রিটিক সেল’ নামক কোষ সক্রিয় হয় এবং শরীরে পি২১০ প্রোটিনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, এই টিকা উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা ইঁদুরের দেহে প্ল্যাক জমাট বাঁধার গতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। গবেষকরা মনে করছেন, এই টিকা প্রদাহজনিত অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তবে টিকাটি কতদিন পর্যন্ত ইঁদুরের শরীরে কার্যকর থাকে, তা জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন। মানুষের শরীরে এটি কার্যকর কি না তা নিশ্চিত হতে আরও বিস্তৃত গবেষণা ও পরীক্ষা প্রয়োজন।

মস্তিষ্কের সংকেতকে শব্দে রূপান্তর করলেন বিজ্ঞানীরা

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩৩ পিএম
মস্তিষ্কের সংকেতকে শব্দে রূপান্তর করলেন বিজ্ঞানীরা
পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিদের রিয়েল টাইমে কথা বলার সুযোগ করে দিতে নতুন এক ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিসিআই) তৈরি করেছেন গবেষকরা। ছবি: সংগৃহীত

পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিদের রিয়েল টাইমে কথা বলার সুযোগ করে দিতে নতুন এক ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিসিআই) তৈরি করেছেন গবেষকরা। এই উদ্ভাবন গুরুতর পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিদের রিয়েল টাইমে কথা বলতে সাহায্য করবে বলে দাবি করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে ও সান ফ্রান্সিসকোর একদল গবেষক এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। সম্প্রতি ‘নেচার নিউরোসায়েন্স’ জার্নালে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, এই নতুন প্রযুক্তি স্বাভাবিক উচ্চারণের মতো কথোপকথনের সুযোগ করে দিচ্ছে, যা আগে সম্ভব ছিল না।

গবেষকরা দাবি করেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তারা একটি স্ট্রিমিং পদ্ধতি তৈরি করেছেন, যা মস্তিষ্কের সংকেতকে মুহূর্তে শ্রবণযোগ্য শব্দে রূপান্তর করে। এটি অনেকটা ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যালেক্সা বা সিরি যেভাবে কথা বুঝে প্রতিক্রিয়া জানায়, তেমনই দ্রুত কাজ করে। গবেষণার অন্যতম লেখক চেওল-জুন চো জানান, পদ্ধতিটি মস্তিষ্কের মোটর কর্টেক্স থেকে স্নায়বিক ডেটা সংগ্রহ করে, যা মুখ ও বাকসংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণ করে। এরপর এআই মডেলের মাধ্যমে সেই সংকেত ডিকোড করে শব্দে রূপান্তর করে।

এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা ১৮ বছর ধরে বাকশক্তিহীন ৪৭ বছর বয়সী অ্যান নামের এক নারীর ওপর এটি পরীক্ষা করেছেন। তার মস্তিষ্কের পৃষ্ঠে ইলেকট্রোড স্থাপন করা হয়। যখন তিনি স্ক্রিনে কোনো বাক্য উচ্চারণের চেষ্টা করেন, তখন সেই স্নায়ু সংকেত সংগ্রহ করে সেগুলোকে শ্রবণযোগ্য ভাষায় রূপান্তর করা হয়। বিশেষ বিষয় হলো, এআই মডেলটি অ্যানের আগের কণ্ঠস্বর নকল করে, যা তার নিজস্ব কণ্ঠের মতো শোনায়।

ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস প্রযুক্তি বেশ কিছুদিন ধরে প্রচলিত থাকলেও, এই গবেষণার অন্যতম প্রধান অগ্রগতি হলো চিন্তাগুলোকে প্রায় রিয়েল টাইমে অডিওতে রূপান্তর করা। আগের তৈরি বিসিআই মডেলগুলোতে একটি বাক্য সম্পূর্ণ শব্দে রূপ নিতে যেখানে ৮ সেকেন্ড পর্যন্ত সময় লাগত, সেখানে নতুন প্রযুক্তিতে সেই সময় অনেক কমে এসেছে। নতুন এই প্রযুক্তি এএলএস বা স্ট্রোক-জনিত পক্ষাঘাতের মতো অবস্থার শিকার ব্যক্তিদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

প্রাচীন মহাবিশ্বের মানচিত্র তৈরি করবে ব্রিটিশ উপগ্রহ

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০৫ এএম
প্রাচীন মহাবিশ্বের মানচিত্র তৈরি করবে ব্রিটিশ উপগ্রহ
প্রাচীন মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনে চাঁদের চারপাশে উপগ্রহ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে ব্লু স্কাইস স্পেস। ছবি: সংগৃহীত

প্রাচীন মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনে চাঁদের চারপাশে উপগ্রহ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে যুক্তরাজ্যের মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ব্লু স্কাইস স্পেস। ইতালিয়ান স্পেস এজেন্সির অর্থায়নে এক প্রকল্পে প্রতিষ্ঠানটি এমন একাধিক উপগ্রহ ডিজাইন করছে, যা চাঁদের দূরবর্তী অংশ আবর্তনের মাধ্যমে মহাবিশ্বের সূচনালগ্নের ক্ষীণ রেডিও সংকেত শনাক্ত করতে পারবে।

পৃথিবী থেকে মানবসৃষ্ট রেডিও তরঙ্গের কারণে এ সংকেতগুলো শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব। তবে চাঁদের দূরবর্তী অংশ এই রেডিও গোলযোগ থেকে মুক্ত, তাই সেখানে এই সংকেত শনাক্ত করা সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ব্লু স্কাইস স্পেসের প্রধান নির্বাহী মার্সেল টেসেনি বলেন, ‘আমরা মহাবিশ্বের ‘ডার্ক এইজ’ বা অন্ধকার যুগে চোখ রাখতে চাই। আদি মহাবিশ্বের বৃহৎ কাঠামো সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে চাই। পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে এটি করা খুব কঠিন।’

ইতালীয় মহাকাশ সংস্থা ২ লাখ ইউরোর এই প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন করেছে। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য চারটি বা তার বেশি স্যাটেলাইটের একটি বহর রেডিও সংকেত শনাক্ত করতে পারবে কি না, তা খুঁজে বের করা। এই সংকেতগুলো মূলত এফএম রেডিও তরঙ্গের সীমার মধ্যে পড়ে। বিগ ব্যাংয়ের ১০ লাখ বছরেরও কম সময়ের পুরোনো এই সংকেতগুলো প্রথম নক্ষত্র গঠনের আগের সময়কালের তথ্য দিতে পারে, যখন মহাবিশ্ব মূলত হাইড্রোজেন গ্যাসে পরিপূর্ণ ছিল।

চাঁদের দূরবর্তী অংশ, অর্থাৎ পৃথিবী থেকে সব সময় আড়ালে থাকে, সেখানে এই সংকেত শনাক্তের জন্য সবচেয়ে উপযোগী বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

নাসা চাঁদে প্রথম সফলভাবে রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহার করেছে। ২০২৪ সালে ওডিসিউস ল্যান্ডারে তারা রোলসেস-১ (ROLSES-1) টেলিস্কোপ স্থাপন করেছিল। এটি অবতরণের সময় কাত হয়ে গেলেও যন্ত্রটি কার্যকর ছিল। এ বছর নাসা আরও একটি ক্ষুদ্র টেলিস্কোপ লুসি-লাইট (LuSEE-Lite) উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করেছে। ভবিষ্যতে একটি বৃহৎ টেলিস্কোপ চাঁদের গহ্বরে স্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে।

এদিকে ব্লু স্কাইস স্পেস সহজ ও কম খরচের কিউবস্যাট ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে। এটি চাঁদের কক্ষপথে ঘুরবে ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির ‘মুনলাইট’ প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। এই উপগ্রহের সাহায্যে মহাকাশ পর্যবেক্ষণের সঠিক অবস্থান নিশ্চিত করা ও পৃথিবীতে তথ্য পাঠানো সহজ হবে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এ ধরনের উদ্যোগ মহাবিশ্বের গঠনের প্রাথমিক ধাপ সম্পর্কে নতুন তথ্য এনে দেবে।

সৌরজগতের কোন গ্রহে কত তাপমাত্রা?

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২০ এএম
সৌরজগতের কোন গ্রহে কত তাপমাত্রা?
সৌরজগতের প্রতিটি গ্রহের গড় তাপমাত্রা ভিন্ন। ছবি: সংগৃহীত

সৌরজগতের প্রতিটি গ্রহের গড় তাপমাত্রা ভিন্ন, যা নির্ভর করে তাদের গঠন ও সূর্যের দূরত্বের ওপর। তবে শুক্র গ্রহের ক্ষেত্রে বিষয়টি কিছুটা ব্যতিক্রম। এর ঘন বায়ুমণ্ডল গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টি করে, যা সিসার গলনাঙ্কের চেয়েও বেশি তাপমাত্রা তৈরি করে।

নাসার তথ্যমতে, সৌরজগতে আটটি গ্রহ রয়েছে। এগুলো হলো বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন। প্লুটোকে এখন বামন গ্রহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর গড় তাপমাত্রা প্রায় -৩৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (-২২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস)।

সূর্যের তাপমাত্রা
সৌরজগতের প্রাণসূত্র সূর্যের কেন্দ্র সবচেয়ে উষ্ণ, যেখানে তাপমাত্রা ২৭ মিলিয়ন ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১৫ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়। সূর্যের পৃষ্ঠে তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে কম, যা প্রায় ১০ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট (৫ হাজার ৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। অথচ সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডল করোনার তাপমাত্রা আরও বেশি, যা প্রায় ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডিগ্রি ফারেনহাইট (২ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস)।

বুধ (Mercury)
বুধ গ্রহ সূর্যের সবচেয়ে কাছে হলেও পাতলা বায়ুমণ্ডলের কারণে তাপ ধরে রাখতে পারে না। ফলে এর দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য ১,০০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটেরও বেশি। রাতের তাপমাত্রা নেমে আসে প্রায় -২৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (-১৭৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত। বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুনের তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয় পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠের চাপের সমান বায়ুমণ্ডলীয় স্তরে।

শুক্র (Venus)
ঘন বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস প্রভাব তৈরি হয়। ফলে এখানে গড় তাপমাত্রা পৌঁছে ৮৬৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৪৬৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস), যা সিসা গলানোর তাপমাত্রারও বেশি।

পৃথিবী (Earth)
মানুষের বসবাসযোগ্য একমাত্র গ্রহ। গড় তাপমাত্রা ৫৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস)।

মঙ্গল (Mars)
পাতলা বায়ুমণ্ডলের কারণে এখানে গড় তাপমাত্রা প্রায় -৮৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (-৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস)।

বৃহস্পতি (Jupiter)
সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে পঞ্চম এবং আকার-আয়তনের দিক দিয়ে সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতি। এই গ্রহসহ আরও তিনটি গ্রহ- শনি, ইউরেনাস ও নেপচুনকে একসঙ্গে গ্যাসীয় দানব বলা হয়। গ্যাসীয় এই গ্রহে তাপমাত্রা -১৬২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (-১০৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস)।

শনি (Saturn)
বৃহস্পতির মতোই গ্যাসীয় গ্রহ শনি। এর গড় তাপমাত্রা -২১৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট (-১৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস)।

ইউরেনাস (Uranus)
সৌরজগতের অন্যতম ঠাণ্ডা গ্রহ ইউরেনাস**।** এর গড় তাপমাত্রা প্রায় -৩২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (-১৯৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস)।

নেপচুন (Neptune)
সবচেয়ে দূরের এই গ্রহে তাপমাত্রা পৌঁছায় -৩৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (-২০১ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত।

৫০ হাজার বছর আগের ম্যামথ শাবকের ময়নাতদন্ত

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০৪ পিএম
৫০ হাজার বছর আগের ম্যামথ শাবকের ময়নাতদন্ত
৫০ হাজার বছর আগের এক ম্যামথ শাবকের ময়নাতদন্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। ছবি: সংগৃহীত

সাইবেরিয়ায় আবিষ্কৃত ৫০ হাজার বছর আগের এক ম্যামথ শাবকের ময়নাতদন্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। ‘ইয়ানা’ নামের ম্যামথটিকে এ পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত ম্যামথ বলে মনে করা হচ্ছে। এটি এ পর্যন্ত পাওয়া মাত্র সাতটি পূর্ণাঙ্গ ম্যামথ দেহাবশেষের একটি।

ইয়ানা রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলে গলিত পারমাফ্রস্ট থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে, যা প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে প্রায় অক্ষত ছিল। নর্থ-ইস্টার্ন ফেডারেল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা প্রাচীন এই ম্যামথ সম্পর্কে আরও জানতে এর ব্যবচ্ছেদ করেছেন, যা ম্যামথের জীবনধারা ও মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নতুন তথ্য দেবে। বিজ্ঞানীরা এখনো গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেননি। তবে অতীতের বরফ যুগের স্তন্যপায়ী প্রাণীদের গবেষণা থেকে জানা গেছে, এ ধরনের পরীক্ষা প্রাণীর খাদ্যাভ্যাস ও আধুনিক প্রজাতির সঙ্গে সম্পর্ক বোঝাতে সহায়ক। ২০২৪ সালে ইয়ানার আবিষ্কারের সময় গবেষকরা জানিয়েছিলেন, ম্যামথটির মৃত্যুর সঠিক বয়স নির্ধারণের জন্য তারা আরও গবেষণা করার পরিকল্পনা করেছেন।

প্রাথমিকভাবে ইয়ানার মৃত্যুর সময় বয়স এ কবছর বা তার কিছু বেশি বলে ধারণা করা হয়েছিল। তবে এই ময়নাতদন্তের মাধ্যমে আরও নির্ভুল তথ্য পাওয়ার আশা করা যাচ্ছে। ইয়ানার ওজন ১৮০ কেজি, উচ্চতা ১২০ সেন্টিমিটার (চার ফুট) ও দৈর্ঘ্য দুই মিটার।

ইয়ানা ছাড়া বিশ্বের মাত্র ছয়টি ম্যামথের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পাঁচটি রাশিয়ায় এবং একটি কানাডায়। ইয়ানার ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য হলো এর অবিশ্বাস্য স্তরের সংরক্ষণ। সাধারণত যখন কোনো প্রাণী হিমায়িত মাটি থেকে বেরিয়ে আসে এবং গলতে শুরু করে, তখন কিছু শিকারি প্রাণী উন্মুক্ত নরম টিস্যু খাওয়া শুরু করে।

কিন্তু ইয়ানার পেছনের পায়ে শিকারের কিছু চিহ্ন দেখা গেলেও, এর বাকি শরীর তুলনামূলকভাবে অক্ষত ছিল। ম্যামথটি আবিষ্কারের পর নর্থ-ইস্টার্ন ফেডারেল ইউনিভার্সিটির ম্যামথ মিউজিয়াম ল্যাবরেটরির প্রধান ম্যাক্সিম চেপ্রাসভ বলেন, ‘পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাথা ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রায় অক্ষত রয়েছে, যা অত্যন্ত বিরল ঘটনা। আমরা লক্ষ করেছি, সম্ভবত চড়ুই বা ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী এর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খেয়েছে।’

এর আগের এক গবেষণায় নর্থ-ইস্টার্ন ফেডারেল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা ৪৪ হাজার বছর আগে পারমাফ্রস্টে হিমায়িত এক নেকড়ের খাদ্য আবিষ্কার করেছিলেন। যার সঙ্গে আধুনিক নেকড়ে প্রজাতির সম্পর্ক নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ম্যামথের পাকস্থলীর উপাদান অক্ষত থাকলে, গবেষকরা এর খাদ্য নির্ধারণ করতে এবং সম্ভবত এর খাওয়া গাছগুলোর জিনগত ক্রম নির্ধারণ করতে সক্ষম হবেন। আবিষ্কারের সময় গবেষকরা বলেছিলেন, তারা এই বছর ম্যামথটির জন্য বড় ধরনের পরীক্ষার পরিকল্পনা করেছেন।

ইয়ানার দেহাবশেষ রাশিয়ার ইয়াকুতিয়া অঞ্চলে অবস্থিত ব্যাটগাইকা গর্তের গলিত পারমাফ্রস্টের মধ্যে পাওয়া গেছে। ১ কিলোমিটার গভীর এই গর্ত ‘গেটওয়ে টু দ্য আন্ডারওয়ার্ল্ড’ বা ‘পাতালের প্রবেশদ্বার’ নামে পরিচিত। এর আগে এখান থেকে প্রাচীন বাইসন, ঘোড়া ও কুকুরসহ অন্যান্য প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীর দেহাবশেষ পাওয়া গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পারমাফ্রস্ট গলে যাওয়ায় এ ধরনের প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীর দেহাবশেষ আরও বেশি উন্মোচিত হচ্ছে।

স্থানীয় কিছু মানুষ ক্রেটারটি ঘুরতে গিয়ে ইয়ানাকে আবিষ্কার করেন। তারা দ্রুতই এটিকে মাটির ওপরে তোলার ব্যবস্থা করেন, যা ইয়ানাকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বা শিকারি প্রাণীদের হাতে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করেছে। চেপ্রাসভ বলেন, ‘বাসিন্দারা সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় ছিলেন।’
নর্থ-ইস্টার্ন ফেডারেল ইউনিভার্সিটির পরিচালক আনাতোলি নিকোলায়েভ বলেন, ‘ম্যামথের ব্যতিক্রমী সংরক্ষণ দেখে আমরা সবাই অবাক হয়েছিলাম।’

প্লাইস্টোসিন যুগের বিশাল প্রাণী উলি ম্যামথ

প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩০ এএম
আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০১ পিএম
প্লাইস্টোসিন যুগের বিশাল প্রাণী উলি ম্যামথ
ম্যামথ। ছবি: সংগৃহীত

উলি ম্যামথ এক সময় ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বরফাচ্ছন্ন তুন্দ্রা অঞ্চলে বিচরণ করত। প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার বছর ধরে টিকে থাকা এই প্রাণী প্লাইস্টোসিন যুগের শেষভাগে প্রায় ১০ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যায়।

উলি ম্যামথ সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারণা, তুলনামূলকভাবে স্পষ্ট, কারণ এদের দেহাবশেষ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জীবাশ্মে পরিণত না হয়ে বরফে সংরক্ষিত ছিল। ফলে এই বিশালকায় স্তন্যপায়ী প্রাণীর গঠন ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে গবেষণা করা সহজ হয়েছে।

শারীরিক গঠন ও বৈশিষ্ট্য
পুরুষ উলি ম্যামথের উচ্চতা ছিল প্রায় ১২ ফুট (৩.৫ মিটার), আর স্ত্রী ম্যামথ ছিল সামান্য ছোট। এদের লম্বা, বাঁকানো দাঁত প্রায় ১৬ ফুট (৫ মিটার) পর্যন্ত লম্বা ছিল। এদের পেটের নিচের অংশে ৩ ফুট (১ মিটার) পর্যন্ত লম্বা লোমশ চুলের একটি আস্তরণ থাকত, যা তীব্র ঠাণ্ডা থেকে সুরক্ষা দিত। এদের ছোট কান ও খাটো লেজ শরীরের তাপ ধরে রাখতে সাহায্য করত। শুঁড়ের মাথায় দুটি আঙুলের মতো অংশ ছিল, যা ঘাস, শাখা-প্রশাখা ও অন্যান্য উদ্ভিদ সংগ্রহে ব্যবহৃত হতো।

নামকরণ ও বিবর্তন
‘ম্যামথ’ শব্দটি রাশিয়ান শব্দ ‘মামুট’ বা ‘আর্থ মোল’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘মাটির তলদেশের প্রাণী’। অতীতে অনেকেই মনে করত, এই প্রাণীগুলো মাটির নিচে বাস করত এবং সূর্যের আলোতে আসার পর মারা যেত। এ কারণে তাদের সর্বদা মৃত ও অর্ধেক চাপা অবস্থায় পাওয়া যেত।

প্রথমদিকে উলি ম্যামথের কঙ্কালকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া কোনো দানব জাতির অবশেষ বলে মনে করা হতো। তবে আধুনিক গবেষণায় জানা গেছে, উলি ম্যামথ এবং বর্তমান সময়ের হাতির মধ্যে ৯৯.৪ শতাংশ জিনগত মিল রয়েছে। হাতি ও উলি ম্যামথের বিবর্তনীয় পথ আলাদা হয়ে যায় প্রায় ৬০ লাখ বছর আগে, একই সময় যখন মানুষ ও শিম্পাঞ্জির বিবর্তন পৃথক হয়। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে, উলি ম্যামথ আদিম মানুষের সঙ্গে সহাবস্থান করত। শুধু খাদ্য হিসেবে নয়, এদের হাড় ও দাঁত অস্ত্র ও শিল্পকর্ম তৈরিতে ব্যবহৃত হতো।