
মিসরের লাক্সর শহরে ফের নতুন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। দেশটির পর্যটন ও পুরাকীর্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, লাক্সরের দ্রা আবু আল-নাগা সমাধিক্ষেত্রে নিউ কিংডম যুগের (খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৫০-১০৭০) তিনটি নতুন সমাধির সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। সম্প্রতি মিসর সরকারের দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এটি এক গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক অর্জন। এই আবিষ্কার দেশটির গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামের পূর্ণাঙ্গ উদ্বোধনের আগে সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সুপ্রিম কাউন্সিল অব অ্যান্টিকুইটিসের মহাসচিব মোহামেদ ইসমাইল খালেদ জানান, সমাধিগুলোর দেয়ালে পাওয়া শিলালিপি ও চিত্রের মাধ্যমে মালিকদের নাম ও পদবি শনাক্ত করা গেছে। সমাধিগুলোর মালিকদের সম্পর্কে গভীর ধারণা পেতে অন্যান্য সমাধির শিলালিপি নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
নতুন আবিষ্কৃত তিনটি সমাধির মধ্যে একটি আমুন-ইম-ইপেটের, যিনি রামেসাইড যুগে দেবতা আমুনের এস্টেটে কাজ করতেন। এই সমাধিটি বেশির ভাগই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তবে অবশিষ্ট অংশে ছিল শেষকৃত্যের আসবাবপত্র বহনকারীদের এবং এক ভোজসভার চিত্র।
আমুন-ইম-ইপেটের সমাধিটি একটি ছোট উঠোন দিয়ে শুরু হয়েছে, যা একটি প্রবেশদ্বার এবং তার পর একটি বর্গাকার হলের দিকে গিয়ে কুলুঙ্গিতে শেষ হয়। এর পশ্চিম দেয়াল ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
অন্য দুটি সমাধি ছিল ১৮তম রাজবংশের আমলের। এর মধ্যে একটি সমাধি বাকি নামের একজন ব্যক্তির, যিনি শস্যভাণ্ডারের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করতেন। বাকির সমাধিতে একটি করে আঙিনা, দীর্ঘ করিডর, লম্বা হল ও অসমাপ্ত কক্ষ রয়েছে।
তৃতীয় সমাধিটি ছিল ‘এস’ নামের এক ব্যক্তির। তিনি একাধিক দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মরূদ্যানের আমুন মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক, লেখক ও উত্তর মরূদ্যানের মেয়রও ছিলেন। এই সমাধিতেও একটি ছোট আঙিনা, প্রবেশদ্বার ও লম্বা হল রয়েছে।
পর্যটন ও পুরাকীর্তিমন্ত্রী শেরিফ ফাতি এ আবিষ্কারকে মিশরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের আবিষ্কার ভবিষ্যতে সাংস্কৃতিক পর্যটন ও দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়াতে সহায়ক হবে।’
প্রসঙ্গত, চলতি বছর জানুয়ারিতেও লাক্সরের বিখ্যাত শহরের কাছে বেশ কয়েকটি সমাধি আবিষ্কৃত হয়েছিল। এর মধ্যে ৩ হাজার ৬০০ বছর আগের প্রাচীন পাথরের তৈরি সমাধি ও সমাধির কূপ রয়েছে। এগুলো নীল নদের পশ্চিম তীরে দেইর আল-বাহরিতে কুইন হাটশেপসুটের সমাধি মন্দিরের কজওয়েতে আবিষ্কৃত হয়েছিল। গত বছরের শেষদিকে মিশরীয় ও আমেরিকান প্রত্নতত্ত্ববিদরা লাক্সরের কাছে ১১টি সিল করা কবরসহ একটি প্রাচীন সমাধি খনন করেন। এই সমাধি হাটশেপসুট মন্দিরের পাশে দক্ষিণ আসাসিফ সমাধিক্ষেত্রে পাওয়া গিয়েছিল।
এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে তারিখ জানানো হয়নি। তবে এই গ্রীষ্মেই গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম পুরোপুরি চালু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গিজায় অবস্থিত এই জাদুঘরে এক লাখের বেশি পুরাকীর্তি প্রদর্শন করা হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মিশরের হাজার বছরের ইতিহাসের নানা নিদর্শন।
এ ধরনের ধারাবাহিক আবিষ্কার প্রমাণ করে, মিশরের প্রত্নতত্ত্ব এখনো বিস্ময় আর রহস্যে ঘেরা। আর নতুন জাদুঘরের দ্বার খুললে বিশ্বের নজর আরও একবার ফিরবে মিশরের অতীত ঐতিহ্যের দিকে।