
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন শিলা খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। কানাডার কুইবেকের হাডসন উপসাগরের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এই প্রাচীন শিলাস্তর। গবেষকরা বলছেন, এখানকার নুভুয়াগিতুক গ্রিনস্টোন বেল্ট নামের অঞ্চলটিতে পাওয়া গেছে পৃথিবীর প্রাচীনতম শিলা, যার বয়স হতে পারে প্রায় ৪.১৬ বিলিয়ন বছর।
এই অঞ্চলের শিলাগুলো বহুদিন ধরে বিজ্ঞানীদের নজরে থাকলেও বয়স নিয়ে বিতর্ক ছিল। দুই দশক আগের গবেষণা ইঙ্গিত দিয়েছিল এই শিলাগুলো ৪.৩ বিলিয়ন বছর পুরোনো হতে পারে। তবে কিছু বিজ্ঞানী সে দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, নমুনায় দূষণ থাকায় ফলাফল বিকৃত হয়েছে এবং প্রকৃত বয়স সম্ভবত ৩.৮ বিলিয়ন বছর।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দুই ধরনের তেজস্ক্রিয় উপাদান বিশ্লেষণের মাধ্যমে নমুনার নতুন পরীক্ষা চালান। এই দুটি পদ্ধতি থেকে পাওয়া ফলাফল নির্দেশ করে যে শিলাগুলো প্রায় ৪.১৬ বিলিয়ন বছর পুরোনো। এই সংখ্যা আগের অনুমানগুলোর মধ্যে ব্যবধান পূরণ করে। এটি প্রাচীন ভূতাত্ত্বিক বিস্ময়গুলোর জন্য একটি আরও সুনির্দিষ্ট সময়রেখা দেয়।
এই আবিষ্কার কেবল নুভুয়াগিতুক গ্রিনস্টোন বেল্টের বয়স সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়াকে পরিমার্জন করে না, বরং পৃথিবীর গঠনের প্রাথমিক অধ্যায়গুলো ম্যাপ করার বৃহত্তর বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টাতেও উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে। কানাডার অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জোনাথন ও’নিল বলেছেন, ‘দুই পদ্ধতি একই ফলাফল দিয়েছে, যা আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে।’ নতুন গবেষণাটি গত ২৭ জুন সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে মহাকর্ষীয় ধসের মাধ্যমে গ্যাস ও ধুলার মেঘ থেকে পৃথিবীর জন্ম। তবে সেই প্রাচীন শিলাগুলো সচরাচর টিকে থাকে না। টেকটোনিক প্লেটের চলাচলের ফলে তারা গলে গিয়ে নতুন শিলায় রূপ নেয়। ফলে এ ধরনের প্রাচীন শিলা আজকের দিনে খুবই বিরল।
এর আগে কানাডার আরেকটি অঞ্চলে আকাস্টা গ্নাইস কমপ্লেক্সে ৪ বিলিয়ন বছরের পুরোনো শিলা পাওয়া গেছে। তবে নুভুয়াগিতুক অঞ্চলটির শিলা আরও প্রাচীন হতে পারে। গবেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের শিলা বিশ্লেষণ করলে পৃথিবীর প্রাথমিক ম্যাগমা মহাসাগর থেকে শুরু করে টেকটোনিক প্লেট গঠনের ইতিহাস, এমনকি জীবনের সূচনা সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
নুভুয়াগিতুক অঞ্চলটি ইনুকজুয়াক আদিবাসীদের ভূমিতে অবস্থিত। অতীতে কিছু গবেষকের সফরের পর শিলার বড় অংশ হারিয়ে গেছে এবং কিছু টুকরা অনলাইনে বিক্রি হতে দেখা গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ কারণে স্থানীয় ইনুইট সম্প্রদায় সাময়িকভাবে গবেষকদের জন্য শিলা সংগ্রহ নিষিদ্ধ করেছে। সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি টমি পালিসার জানান, তারা এখন একটি প্রাদেশিক উদ্যান গঠনের চেষ্টা করছেন, যেখানে শিলাগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করে বৈজ্ঞানিক গবেষণার সুযোগ রাখা হবে।
পালিসার বলেন, ‘এই শিলার প্রতি অনেক আগ্রহ রয়েছে, আমরা বুঝতে পারি। আমরা শুধু আর কোনো ক্ষতি চাই না।’ সূত্র: দ্য ইনডিপেনডেন্ট