ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে আইএফআইসি ব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, তার ছেলে ও আইএফআইসি ব্যাংকের এমডিসহ ৩৯ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এর মধ্যে ৬৭৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২২ জনকে ও ৪৯৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১৭ জনকে আসামি করে পৃথক মামলা করা হয়। মঙ্গলবার (৩ জুন) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ মামলা দুটি করেন উপপরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান ও ইয়াছির আরাফাত। দুদকের মুখপাত্র ও মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
একটি মামলায় বলা হয়, আইএফআইসি কোনো সহায়ক জামানত বা সঠিক মূল্যায়ন ছাড়াই সম্পূর্ণ জালিয়াতি, প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ২০ মার্চ এবং ১২ জুন পরিচালনা পর্ষদের দুটি সভায় মোট ৬১৮ কোটি ৯ লাখ ৩১ হাজার ৭৫ টাকা ৮৫ পয়সার ঋণ অনুমোদন করা হয়। পরে ওইসব ঋণের টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে, যা সুদ-আসলে আত্মসাতের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৭৭ কোটি ৭৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা।
এ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বেক্সিমকো গ্রুপ মালিক সালমান ফজলুর রহমান (সালমান এফ রহমান), তার ছেলে ও আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, সাবেক পরিচালক শাহ মনজুরুল হক, সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, আর এম নাজমুস সাকিব, কামরুন নাহার আহমেদ, গুলাম মোস্তফা, জাফর ইকবাল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মুনসুর মোস্তফা, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারোয়ার, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম, চিফ বিজনেস অফিসার নুরুল হাসনাত, চিফ ইনফরমেশন অফিসার মনিতুর রহমান, হেড অব ট্রেজারি মোহাম্মদ শাহিন উদ্দিন, হেড অব ক্রেডিট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সৈয়দ হাসনুজ্জামান, সাবেক হেড অব অপারেশন হেলাল আহমেদ, সাবেক ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও চিফ রিস্ক অফিসার ইকবাল পারভেজ চৌধুরী, চিফ ম্যানেজার হোসাইন শাহ আলী, প্রিন্সিপাল শাখার অ্যাকটিং ইনচার্জ তাছলিমা আক্তার, রিলেশনশিপ ম্যানেজার সরদার মো. মমিনুল ইসলাম, ঋণগ্রহীতা আলমগীর আলম চৌধুরী ও সৈয়দা মুনিমা হোসেন।
আরেক মামলায় একইভাবে জালিয়াতি, প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঋণের নামে সুদ-আসলে ৪৯৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ মামলায় সালমান এফ রহমান, তার ছেলেসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। বাকি আসামিরা হলেন- আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, কাগুজে প্রতিষ্ঠান সার্ভ কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিডির পরিচালক সুলতানা মনামী, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল ইসলাম, আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম সারোয়ার, সাবেক পরিচালক রাবেয়া জামালী, আর এম নাজমুস সাকিব, কামরুন নাহার আহমেদ, মো. জাফর ইকবাল, সাবেক চিফ ম্যানেজার ও বর্তমানে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হেড অব আইডি শাহ মো. মঈনউদ্দিন, সাবেক চিফ বিজনেস অফিসার ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল হাসনাত, বর্তমান উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ অব আইটি মো. মনিতুর রহমান, হেড অব ট্রেজারি মোহাম্মদ শাহিন উদ্দিন, সাবেক রিলেশনশিপ ম্যানেজার ও বর্তমানে ম্যানেজার, নারায়ণগঞ্জ শাখা আবদুর রহমান এবং বেক্সিমকো গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজার (করপোরেট ফাইন্যান্স) কৌশিক কান্তি পণ্ডিত।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকিং খাতে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর লুটপাটের অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে গত বছরের আগস্ট মাসে কয়েকটি অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাৎ ছাড়াও সালমান এফ রহমান ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে জালিয়াতি, প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট এবং সেসব টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে।