পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী জীশান মির্জা এবং তাদের মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান প্রতিবেদন গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (২৯ জুলাই) দুদকের পক্ষে অনুসন্ধানের অগ্রগতিসংক্রান্ত ৫ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদন ও আনুষঙ্গিক তথ্য-উপাত্তসহ মোট ৪২ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের বেঞ্চে দাখিল করা হয়। এরপর আদালত এটি গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে মামলা হলো কি না এবং সময়ে সময়ে আরও অগ্রগতি প্রতিবেদন আকারে দাখিল করতে বলেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি আগামী ৫ নভেম্বর ধার্য করা হয়েছে। দুদকের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী খুরশিদ আলম খান এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।
অনুসন্ধানের জন্য গত ১৮ এপ্রিল তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দুদক। ১৯ ও ২০ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় এই কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করে ২১ এপ্রিল। এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ এপ্রিল হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বেনজীরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু এবং দুই মাসের মধ্যে অনুসন্ধানের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে দেখা যায়, হাইকোর্টের আদেশের দিনেই (২৩ এপ্রিল) বেনজীর আহমেদ কমিউনিটি ব্যাংক করপোরেট শাখায় তার অ্যাকাউন্ট (নম্বর-১০১৬০০০৮২০১) থেকে ৩ কোটি ৩ লাখ ২ হাজার ৮১২ টাকা তোলেন। তার স্ত্রী জীশান মির্জা একই শাখার অ্যাকাউন্ট (নম্বর-১০৩০৫৭৩৯২০১) থেকে ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৫ হাজার ১৪ টাকা উঠিয়ে নেন। এরপর দুদকের অনুসন্ধানকারী দল বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের অর্থ সম্পদের তথ্য চেয়ে ২৫ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক, রাজউক, বিভিন্ন ভূমি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসসহ ৪৬টি দপ্তরে চিঠি ইস্যু করে। ২৬ ও ২৭ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় এ চিঠি ওই সব দপ্তরে গিয়ে পৌঁছায় ২৮ এপ্রিল। এরপর ২৯ এপ্রিল বেনজীর সোনালী ব্যাংক লোকাল অফিস থেকে ০০০২৬০২০০৫৬৫৮ অ্যাকাউন্ট থেকে বহির্গামী লেনদেন নিষ্পত্তির (আউটওয়ার্ড ক্লিয়ারিং) মাধ্যমে মোট ৬ কোটি ৭ লাখ টাকা পাচার করেন। এ ছাড়া ৩০ এপ্রিল সোনালী ব্যাংকের একই শাখা থেকে নগদে আরও ১৪ লাখ টাকা এবং কমিউনিটি ব্যাংক থেকে ১৬ লাখ ৭০ হাজার ৮৮৬ টাকা উঠিয়ে নেন বেনজীরের মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর।
এ ছাড়া প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মির্জা এবং তাদের মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর, তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীর ও নাবালিকা আরেক মেয়ের মালিকানায় জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট, রিসোর্ট, বাংলোসহ বিপুল পরিমাণ স্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের নামে চলতি, সঞ্চয়ী, স্থায়ী আমানত, বৈদেশিক মুদ্রাসংক্রান্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে ১১৬টি। এসব অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। অনুসন্ধান শুরুর পর দ্রুততম সময়ে সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যরা। তাদের নামে থাকা আরও অনেক সম্পদের দলিলে কোনো মূল্য উল্লেখ করা হয়নি। সেগুলোর প্রকৃত মূল্য নিরূপণের কাজ চলছে।
অবৈধ সম্পদের অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান চলাকালে বেনজীর আহমেদ গত ৪ মে সপরিবারে দেশ ছাড়েন। তিনি ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ছিলেন। এর আগে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবেও দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেন।