বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও দলবাজি করার কারণে প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ৭ ও হাইকোর্ট বিভাগের ৫০ বিচারপতিসহ মোট ৫৭ বিচারপতির পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের সাধারণ আইনজীবীরা।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টে সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের আপামর জনগণ সে সময়ের প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং তার ওপর জনগণ আস্থা রেখেছিল। কিন্তু গত ৫ আগস্ট দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরেই বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বাসভবন, বিচারপতি ভবন জনরোষানলের শিকার হয়। এ ছাড়া ১৫ দিন ধরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশের প্রায় সব আদালত ভবন জনগণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়, যা গত ২০০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার। ১৬ বছর ধরে দেশের আপামর জনগণ এই আওয়ামী লীগের বিচার বিভাগের কাছ থেকে কোনো বিচার পায়নি। বরং খুনি, গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা সরকারের সব অন্যায় পাপের সহযোগী হয়েছে প্রধান বিচারপতিদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ। সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, মো. মোজাম্মেল হোসেন, সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ গত ১৫ বছরের দলবাজ বিচারপতিদের পদত্যাগ করতে হবে। আইনজীবী সমাজ এসব সংবিধান লঙ্ঘনকারী প্রধান বিচারপতিসহ অন্য বিচারপতিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আদালতে বিচারের দাবি জানাচ্ছে। পাশাপাশি সৎ, দক্ষ, নিরপেক্ষ যোগ্য ব্যক্তিদের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে।’
এ ছাড়া সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, শেখ ফজলে নূর তাপস, সদ্য পদত্যাগকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ফকির, দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খানসহ ১২ আইনজীবীকে সামাজিকভাবে বয়কট ও অসহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়।
এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট মহসীন রশিদ, অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল, অ্যাডভোকেট গোলাম রহমান, অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী, ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম প্রমুখ।
এর আগে সুপ্রিম কোর্ট আইন সমিতির সভাপতির কক্ষে একই বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিতর্কিত-দলবাজ বিচারপতিদের দ্রুত পদত্যাগ করতে হবে। বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে রবিবারের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট খুলে দিতে হবে।
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সব বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করেছেন, আমরা এই দাবির সঙ্গে একমত। আজকের মধ্যে তাদের পদত্যাগ করতে হবে। যেসব বিচারপতি সততা ও সাহসিকতার সঙ্গে বিচারকাজ পরিচালনা করেছেন তাদের ভয় নেই।’
এ সংবাদ সম্মেলনে সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম ও ফাতিমা আক্তার উপস্থিত ছিলেন।