টেলিভিশনে টকশোর এক উপস্থাপিকাকে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে সম্বোধন করার ঘটনায় তার কাছে ক্ষমা চাইলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী (মানিক)। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজের কাছে লিখিতভাবে এ ক্ষমাপ্রার্থনা করেন তিনি।
সোমবার (১২ আগস্ট) দৈনিক খবরের কাগজকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন এ আইনজীবী।
তিনি বলেন, “উপস্থাপিকা দীপ্তি চৌধুরীকে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে সম্বোধন ও অশালীন আচরণের ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী (মানিক)। একই সঙ্গে তিনি জনগণের কাছেও ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। আমাকে লেখা এক চিঠিতে তিনি এই ক্ষমা চেয়েছেন এবং আমাকে অনুরোধ করেছেন উপস্থাপিকাকে বিষয়টি জানানোর জন্য।”
এর আগে বিচারপতি মানিককে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন এই আইনজীবী। ওই নোটিশের জবাবে বিচারপতি মানিক লিখেছেন, তিনি ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশনের একজন রোগী। ঘটনার দিন তাকে দীর্ঘ পথ হেঁটে টকশো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে হয়েছিল। যার ফলে তার ব্লাড সুগার নেমে যায় ও ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায়। এ ছাড়া তিনি ভীষণ ক্লান্তবোধ করছিলেন। যে কারণে তিনি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন। সেদিনের এমন আচরণের জন্য উপস্থাপিকার কাছে গভীরভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন মানিক। উপস্থাপিকার সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বিচারপতি মানিককে ওই নোটিশ পাঠিয়েছিলেন আইনজীবী। ক্ষমা না চাইলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে আয়োজিত টকশোতে আলোচক হিসেবে অংশ নেন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তিনি আলোচনায় বেশ কয়েকবার নিজের মেজাজে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সঞ্চালক দীপ্তি চৌধুরীর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কোটা সংস্কার আন্দোলন ইস্যুতে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাওয়ার পর স্টুডিও নিজস্ব ভিডিওতে দেখা যায়, বের হয়ে যাওয়ার আগে উপস্থাপিকাকে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে আখ্যা দেন সাবেক এই বিচারপতি। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ওই ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করার আগ মুহূর্তে বিচারপতি মানিক বলে ওঠেন, ‘সে তো রাজাকারের বাচ্চা।’ তাৎক্ষণিক প্রতিবাদে সঞ্চালক দীপ্তি বলেন, ‘আপনার কোনো অধিকার নেই আমাকে রাজাকারের বাচ্চা বলার। আমি একটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান।’ তখন বিচারপতি মানিক বলেন, ‘অবশ্যই। ১০০ বার অধিকার আছে। আপনি রাজাকারের বাচ্চা।’
সঞ্চালক দীপ্তি বলে ওঠেন, ‘আমি একটা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। আপনি কোন সাহসে আমাকে রাজাকারের বাচ্চা বলেন?’ তখন বিচারপতি মানিক বলেন, ‘আপনার ব্যবহার দেখে বলেছি আমি। আপনি রাজাকারের বাচ্চা।’ এ পর্যায়ে সঞ্চালক চিৎকার করে কয়েকবার বলে ওঠেন, ‘আমি একটা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান।’ জবাবে বিচারপতি মানিক আবারও বলেন, ‘কীসের আপনি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান? আপনি রাজাকারের সন্তান।’ এরপর অনুষ্ঠানের অপর আলোচক গোলাম মাওলা রনি বিচারপতি মানিককে অনুরোধ করে অনুষ্ঠানস্থল থেকে সরিয়ে নিতে দেখা যায়।
এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল সমালোচনা হয়। তা ছাড়া অনুষ্ঠানের পরের বাগবিতণ্ডার ভিডিওটিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিচারপতি মানিকের সমালোচনা আরও বেড়ে যায়।