অন্যের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে যাওয়া ও ব্যভিচারের অভিযোগে ক্রিকেটার নাসির হোসাইন ও তামিমা সুলতানা তাম্মির বিরুদ্ধে করা মামলার শুনানিতে বিব্রত বোধ করে অন্য আদালতে স্থানান্তরের জন্য নথি সিএমএম আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছেন বিচারক।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান মামলার নথি সিএমএম বরাবরে পাঠানোর আদেশ দেন।
সোমবার মামলায় আত্মপক্ষ শুনানির দিন ধার্য তারিখে আসামি নাসির হোসাইন এবং তামিমা সুলতানা দুজনই আদালতে হাজির ছিলেন। তাদের পক্ষে আইনজীবী দুটি আবেদন করেন।
আবেদনের একটিতে বাদীর আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন।
অন্যটিতে আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পুরো অভিযোগ না শুনিয়ে মামলার সারসংক্ষেপ পড়ে শোনানোর আবেদন করেন।
এদিকে বাদীপক্ষের আইনজীবী আদালতে অভিযোগ করেন, আসামিপক্ষের আইনজীবী আগে বাদীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন। আইন অনুযায়ী তিনি আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করতে পারেন না।
দুই পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক বলেন, ‘উভয়পক্ষেরই আবেদন দেওয়ার অধিকার রয়েছে। এ মামলার শুনানি করতে যে ধৈর্য্য দরকার, এত সময় এই আদালতের নেই। এতে অন্য মামলায় প্রভাব পড়ে। আমি আসলে বিব্রতবোধ করছি। মামলাটি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর পাঠিয়ে দিচ্ছি।’
এতে আপত্তি নেই বলে জানান দুইপক্ষের আইনজীবীরা।
এর আগে গত ১৬ এপ্রিল মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলাটিতে ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।
এ মামলায় ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি একই আদালত ক্রিকেটার নাসির হোসাইন ও তার স্ত্রী তামিমা সুলতানার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
শুনানি শেষে নাসিরের শাশুড়ি সুমি আক্তারকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
একই বছরের ৬ মার্চ নাসির ও তামিমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ বেআইনি মর্মে মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন তাদের আইনজীবী।
অন্যদিকে সুমি আক্তারকে অব্যাহতির আদেশ দেওয়ার আইনিভাবে সুযোগ নেই দাবি করে দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন বাদীপক্ষের আইনজীবী।
গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মুর্শিদ আহাম্মেদ উভয়পক্ষের রিভিশন আবেদন নামঞ্জুর করে মামলার বিচার চলবে বলে আদেশ দেন।
তবে নাসিরের শাশুড়ি সুমি আক্তারকে দেওয়া অব্যাহতির আদেশ বহাল থাকবে বলে আদেশ দেন।
এর আগে ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাম্মির সাবেক স্বামী রাকিব হাসান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
তদন্ত শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক (নিরস্ত্র) শেখ মো. মিজানুর রহমান, নাসির, তামিমা ও তামিমার মা সুমি আক্তারকে অভিযুক্ত করে ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, তামিমা পেশায় একজন কেবিন ক্রু। ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তাম্মি ও রাকিবের বিয়ে হয়। তাদের আট বছরের একটি মেয়েও রয়েছে।
২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাম্মি ও ক্রিকেটার নাসির হোসেনের বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা রাকিবের নজরে আসে। পরে পত্র-পত্রিকায় তিনি ঘটনার বিষয়ে সম্পূর্ণ জানেন।
মামলার আরজিতে আরও বলা হয়, রাকিবের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক চলমান অবস্থাতেই তাম্মি নাসিরকে বিয়ে করেন; যা ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। তামিমাকে প্রলুব্ধ করে নিজের কাছে নিয়ে গেছেন নাসির। তাদের এমন অনৈতিক ও অবৈধ সম্পর্কের কারণে রাকিব ও তার আট বছর বয়সী কন্যা মারাত্মভাবে মানসিক বিপর্যস্ত হয়েছেন। আসামিদের এমন কার্যকলাপে রাকিবের চরমভাবে মানহানি ঘটেছে যার কারনে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
জলিল উজ্জ্বল/সুমন/