চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলার আসামিদের পক্ষে জামিনের আবেদনে সহযোগিতা করা রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) নেজাম উদ্দিন বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেছেন।
জানা যায়, আসামিদের পক্ষে জামিনের আবেদন করায় আইনজীবীরা ক্ষোভে তার দপ্তরে বিক্ষোভ করেন। পরে তিনি লিখিতভাবে সরকারি কৌঁসুলির পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) আলিফ হত্যার আট আসামিকে আদালতে তোলা হলে সেখান থেকে দুইজনের জামিন আবেদন করেন আইনজীবী সানজিদা গফুর। তার দাখিল করা ওকালতনামায় এপিপি নেজাম উদ্দিনের সিল ছিল।
আইনজীবী নেজাম উদ্দিন মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মফিজুল হক ভূঁইয়ার জুনিয়র। আর জামিন আবেদনকারী সানজিদা গফুর এপিপি নেজাম উদ্দিনের জুনিয়র।
সম্প্রতি নেজাম উদ্দিন ও মফিজুল হক ভূঁইয়া একই আদেশে সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
জানা গেছে, আইনজীবী সমিতির নির্দেশ উপেক্ষা করে সানজিদা গফুর ও এপিপি নেজাম উদ্দিন ওই জামিন আবেদন করেছিলেন। জামিন আবেদনে তারা আসামি মো. নুরু ও দেলোয়ার হোসেনকে নির্দোষ উল্লেখ করেন এবং তারা ঘটনায় জড়িত বলে সাফাই গান। এ ছাড়াও তাদেরকে হয়রানি ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বানোয়াট মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও ওকালতনামায় লেখা হয়।
আইনজীবী আলিফ হত্যার ঘটনায় মোট তিনটি মামলা করা হয়। তার মধ্যে পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার একটি মামলায় আসামি নুরু ও দেলোয়ারের জামিন আবেদন করেন অ্যাডভোকেট সানজিদা গফুর ও অ্যাডভোকেট নেজাম উদ্দিনের স্টিকারযুক্ত করা হয় ওকালতনামায়। ওকালতনামাটি দেখেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন অন্যান্য আইনজীবী।
পরে আইনজীবীরা মিছিল নিয়ে এপিপির দপ্তরে যান। এ সময় তিনি চরম রোষানলে পড়ে পদত্যাগ করেন।
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ওই আইনজীবী একটি পোস্টে লেখেন, ‘আমি ইসকনের পক্ষে কোনো ওকালতনামা দিই নাই। সেটিতে আমার স্বাক্ষরও নাই। এটা সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র। এটির সত্যতা যাচাই করার অনুরোধ রইল।’
চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশনা ছিল যে আলিফ হত্যার আসামিদের পক্ষে কেউ যেন আদালতের কাছে জামিন আবেদন না করেন। কিন্তু সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে সানজিদা গফুর নামে এক আইনজীবী আবেদন করেন এবং সেটিতে সিল ছিল এপিপি নেজাম উদ্দিনের। তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে আমি শুনেছি। এ নিয়ে অনেক আইনজীবী ক্ষুব্ধ।’
এদিকে সোমবার বিকেলে আট আসামিকে আদালতে তুলে পুলিশের পক্ষ থেকে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিকের আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া আসামিরা হলেন- পার্থ চক্রবর্তী, অপূর্ব শীল, উজ্জল দাস প্রকাশ ওরফে জনি দাস, অপু চন্দ্র সাহা, নিলয় দাশ, ধ্রুব দাশ, মো. দেলোয়ার হোসেন ও মো. নুরু।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন।
গত ২৬ নভেম্বর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৬০০ থেকে ৭০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়।
ইফতেখারুল/জোবাইদা/অমিয়/