
জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে রাষ্টদ্রোহ মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর (৩৮) জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলাম এর আদালত এই আদেশ দেন।
শুনানির পর ইসকন নেতাকে বহনকারী পুলিশের প্রিজনভ্যান আটকে বিক্ষোভ করেন সনাতনীরা।
দুপুর ১টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চট্টগ্রাম জজ কোর্টের সামনে প্রিজনভ্যান আটকে রাখা হয়েছে। এখনও সেখানে বিক্ষোভ চলছে।
এর আগে বেলা ১১টা ১০ মিনিটে মেট্টোপলটিন ম্যাজিস্ট্রেট ষষ্ঠ আদালতে তোলা হয়। শুনানির পর আদালতের বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পরে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আদালতের বাইরে বিক্ষোভ শুরু করেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী সজল কান্তি দাস বলেন, রাষ্টদ্রোহ মামলাটি মিথ্যা ও ভুয়া। আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। জাতীয় পতাকা অবমাননার যে অভিযোগ আনা হয়েছে চিন্ময় দাসের বিরুদ্ধে, তা মিথ্যা। তিনি ওইদিন ঘটনাস্থলে ছিলেন না। আমাদের যুক্তিতর্ক শুনেও আদালত জামিন নামঞ্জুর করেছে।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে হাজির করাকে কেন্দ্র করে আদালত চত্বরের আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়ন করা হয়।
আদালতে শুনানির পর তাকে প্রিজনভ্যানে তোলার জন্য নেওয়া হলে তা আটকে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তারা ‘জয় শ্রীরাম, জয় শ্রীরাম, জেলের তালা ভাঙবো, চিন্ময়কে আনবো, জেগেছে রে জেগেছে সনাতনী জেগেছে, সনাতনী সনাতনী, এক হও এক হও, চেয়েছিলাম অধিকার, পেয়ে গেলাম কারাগার, তুমি কে আমি আমি, চিন্ময় চিন্ময়’ স্লোগান দিতে থাকে।
গতকাল সোমবার বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসার সময় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা তাকে গ্রেপ্তার করে। তার গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে গতকাল সন্ধ্যা থেকে নগরীর চেরাগি পাহাড়ে জড়ো হতে থাকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। বিক্ষোভ হয়েছে রাজধানীসহ সারাদেশে।
গত ৩১ অক্টোবর বিএনপি নেতা ফিরোজ খান (পরে বহিষ্কৃত) বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় চিন্ময় দাসসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়। মামলা অভিযোগ করা হয়, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর নগরের নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্টে স্তম্ভের ওপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা একটি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে, যা এখনো সেখানে রয়েছে। ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে লালদীঘির মাঠে একটি মহাসমাবেশ হয়। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো মানুষ ওই সমাবেশে যোগ দেন। ওইদিন চন্দন কুমার ধরসহ ৯ জন আসামির ইন্ধনে বাকি আসামিরা নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্ট স্তম্ভ ও আশপাশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপর ধর্মীয় গোষ্ঠী ইসকনের গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করে সেখানে স্থাপন করে দেয়। এ নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এই মামলার পর ইসকন প্রবর্তক ধাম অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও বার্তায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা প্রসঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি মামলাটি সনাতনীদের আট দফা দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা হিসেবে আখ্যা দেন। ওই বিবৃতিতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘৫ আগস্টের পর সনাতনীদের ওপর চালানো হামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদে আমাদের আন্দোলন। এই আন্দোলন বর্তমান সরকার কিংবা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়।’
অমিয়/